বিশ্বের ছয়টি আশ্চর্য্যজনক অমীমাংসিত রহস্য
এ বিশ্বের চারপাশে অনবরত ঘটে যাচ্ছে কত রহস্যময় ঘটনা। কিছু রহস্যের সমাধান হয়ে যায় অল্প কিছুদিনের মধ্যেই, আর কিছু রহস্য টিকে থাকে যুগ যুগ ধরে। মানুষ স্বভাবতই প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যায় এসব রহস্যের সমাধান করতে। কালান্তরে টিকে থাকা এসব রহস্যময় স্থান আর বস্তুর মাঝেই মানুষ খুঁজে ফিরে অজানা ঐতিহাসিক ঘটনা। বিশ্বের এ ধরনের অদ্ভুত ও রহস্যময় ৬ টি বিষয় নিয়ে আজকের এই আয়োজন। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক বিশ্বের রহস্যময় স্থান ও বিষয়গুলো সম্পর্কে।
১. সান বার্নার্ডোর মমিঃ
আন্দিজ পর্বতমালা বেষ্টিত কলম্বিয়ার ছোট্ট একটি শহর সান বার্নার্ডো এক অদ্ভুত রহস্যের জন্য বিখ্যাত। সাধারণভাবে অন্য দশটি সাধারণ শহরের মত হলেও এ শহরে লুকিয়ে আছে এমন একটি রহস্য যার সমাধান বিজ্ঞানীরা আজো করতে পারেনি।
১৯৫৭ সালে এই এলাকায় একটি বন্যা হয় যাতে এখানকার কবরগুলো ডুবে যায়। তাই কবর শ্রমিকরা কবরের মৃতদেহাবশেষ গুলো স্থানান্তরের কাজ শুরু করেন। কিন্তু মৃতদেহ বের করতে গিয়ে দেখেন দীর্ঘদিন কবরে পরে থাকার পরও মৃতদেহগুলো অক্ষত অবস্থায় আছে এবং তাদের শরীরে কাপড় পর্যন্ত নষ্ট হয়নি। মৃতদেহ গুলো এক বিশেষ ধরণের প্রাকৃতিক মমিতে পরিণত হয়েছে। পরবর্তীতে এ খবর স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে জানানো হয় এবং মৃতদেহগুলো নিয়ে গবেষণা করে দেখা যায় এতদিন মাটিতে থাকার পরও বিশেষ কোন ধরণের মেডিসিন বা ব্যবস্থা ছাড়াই মৃতদেহের শরীর অক্ষত ও অপরিবর্তিত রয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে এই শহরের স্থানীয়দের খাদ্যাভ্যাস বিশেষ করে Guatila এবং Balu নামক দুটি স্থানীয় ফল প্রচুর খাওয়ার কারণে এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অধিক উচ্চতার কারণে এমন হতে পারে। কিন্তু শুধু এই শহরেই কেন এমন হবে এবং মৃতদেহের কাপড় গুলো কিভাবে অক্ষত থাকবে এটার ব্যাখ্যা কেউ দিতে পারেনি।
বর্তমানে একটি জাদুঘরে কাঁচের ভেতর কোন রকম কৃত্রিম ব্যবস্থা ছাড়া মৃতদেহগুলো মমির মতো রাখা হয়েছে এবং এখনো সেগুলো অপচনশীল অবস্থায় রয়েছে।
২. চেঙ্গিস খানের লুকানো কবরঃ
পৃথিবীতে সর্বকালের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর মানুষদের তালিকা করলে চেঙ্গিস খানের (আসল নাম তেমুজিন) নাম নিঃসন্দেহে একদম শুরুর দিকে থাকবে। চেঙ্গিস খান জীবদ্দশায় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আক্রমণ করেন এবং প্রায় চার কোটির মত মানুষ হত্যা করেন, যা পৃথিবীর তখনকার মোট জনসংখ্যার এক দশমাংশেরও বেশি।
১২২৭ সালে ৬৫ বছর বয়সে চেঙ্গিস খানের মৃত্যু হয়। কিন্তু কিভাবে তাঁর মৃত্যু হয় তা কেউই স্পষ্টভাবে বলতে পারেনি। চেঙ্গিস খান ছিলেন একজন দক্ষ ঘোড়াচালক, তাঁকে বলা হয় “Master Horse Rider”। কিন্তু অনেকে বলেন, এই ঘোড়ার পিঠ থেকে পরে আহত হয়েই নাকি মৃত্যু হয়েছিলো চেঙ্গিস খানের। আবার অনেকে বলে চীনের সাথে যুদ্ধাবস্থায় ঘোড়া থেকে পতিত হয়ে মারা গিয়েছিলেন তিনি।
চেঙ্গিস খানের মৃত্যুই একমাত্র রহস্য নয়, তাঁকে কোথায় কবর দেয়া হয়েছিলো এটাও অনেক বড় একটি রহস্য। কারণ চেঙ্গিস খান নাকি মারা যাওয়ার আগে তাঁর কবরটি খুবই গোপনে দিতে বলেছিলেন। তাই তাঁর উত্তরসূরিরা তাঁর কবর দেয়ার ব্যাপারে ব্যাপক গোপনীয়তা রক্ষা করেছিলেন। বলা হয়ে থাকে, তাঁর শেষকৃত্যে যারা উপস্থিত ছিলেন সবাইকে মেরে ফেলা হয়েছিলো। এমনকি তাঁকে কবর দিতে নিয়ে যাওয়ার সময়ও রাস্তায় যাদের পাওয়া গেছে সবাইকে মেরে ফেলা হয়েছিলো। যারা তাঁকে কবর দিয়েছিলো তাদেরও মেরে ফেলা হয়েছিলো।
লোকমুখে শোনা যায়, একটি নদীর গতিপথ পরিবর্তন করে নদীটি তাঁর কবরের উপর দিয়ে প্রবাহিত করা হয়েছিলো যাতে তাঁর কবরটি খুঁজে না পাওয়া যায়। আবার অনেকে বলেন, তাঁর কবরের উপর দিয়ে ১০০০ ঘোড়া দৌড়ানো হয়, তারপর সেখানে গাছ লাগিয়ে দেয়া হয়। আরো প্রচলিত আছে, তাঁর কবরে তাঁর সাথে ব্যাপক ধনসম্পদ ও তাঁর জয় করা বিভিন্ন রাজার মুকুটগুলো দিয়ে দেয়া হয়েছিলো। তাই কোথায় তাঁকে কবর দেয়া হয়েছে প্রত্নতাত্ত্বিকরা এখনও তা খুঁজে বেড়াচ্ছেন এবং সেটা অমীমাংসিতই রয়ে গেছে।
৩. কালাহারির হারানো শহরঃ
১৯৮৫ সালের নভেম্বর মাসে গুইল্লারমো ফারিনি নামক একজন অভিযাত্রী দক্ষিণ আফ্রিকার কালাহারি মরুভূমিতে একটি অদ্ভুত ও রহস্যময় শহরের সন্ধান পাওয়ার খবর প্রকাশ করেন। পরবর্তীতে তিনি তাঁর এই আবিষ্কারের কথা বিস্তারিত লিখে ১৯৮৬ সালে একটি বইও প্রকাশ করেন। উক্ত বইয়ে কালাহারি মরুভূমিতে সন্ধান পাওয়া এই শহরে রহস্যময় পাথরের বিভিন্ন স্থাপনার কথা বিশদভাবে বর্ণনা করে বলেন যে তিনি বিশ্বাস করেন এটা অবশ্যই পুরনো কোন শহরের ধ্বংসাবশেষ। তিনি বলেন শহরটি একটি বৃত্ত চাপের মত যার কিছু অংশ বালির আড়ালে লুকানো, আর কিছু অংশ দৃশ্যমান। তাঁর মতে শহরটি হাজার বছরের পুরনো হতে পারে।
পরবর্তীতে আরো অনেকবার কালাহারি মরুভূমিতে ফারিনির বর্ণিত শহরের খোঁজ করা হয়, কিন্তু কেউই উল্লেখযোগ্য তেমন কোন কিছুর সন্ধান পায়নি। তাই এটি একটি রহস্যে পরিণত হয়েছে যে আদৌ কালাহারিতে এমন কোন শহর আছে কিনা, আর থাকলে সেটা কোথায়ই বা আছে।
সর্বশেষ ২০১৬ সালে কালাহারির হারানো শহরের খোঁজে একটি অভিযান চালানো হয় যা একটি ভ্রমণ বিষয়ক চ্যানেলে সম্প্রচারিত হয়। এই অভিযানে ফারিনির বর্ণনার মতো দেয়াল ও পাথরের সন্ধান পাওয়া যায়। কিন্তু এ স্থাপনা গুলো মানুষের তৈরি কিনা এখনও তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
৪. লরেটো চ্যাপেলের প্যাঁচানো সিঁড়িঃ
১৯৮৭ সালের শেষের দিকে নিউ মেক্সিকোর শান্তে ফে-তে লরেটো চ্যাপেল নামক একটি গির্জার নির্মাণ কাজ চলছিলো। নির্মাণ কাজ যখন প্রায় শেষের দিকে তখন আকস্মিক ভাবে প্রধান নির্মাতা মারা যায়। গির্জাটির উপরের দিকে গায়কদলের জন্য চিলেকোঠা বা মাচা তৈরি করা হয়েছিলো, কিন্তু সমস্যা হলো সেখানে উঠার জন্য কোন সিঁড়ি তৈরি করা হয়নি। গির্জার কক্ষটিও এতো ছোট ছিলো যে সবাই খুব টেনশনে পরে গিয়েছিলেন কিভাবে এর মধ্যে একটি সিঁড়ি আঁটানো সম্ভব তা নিয়ে।
এ অবস্থার সমাধান না পেয়ে গির্জার নানরা সেন্ট জোসেফের কাছে টানা নয় দিন প্রার্থনা করেন এর সমাধানের জন্য। এই ম্যারাথন প্রার্থনা শেষ হওয়ার পরের দিন, এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটে। একজন অপরিচিত লোক গির্জার দরজায় এসে দাঁড়ায় এবং সিস্টারদের বলে, সে এই ছোট্ট রুমের জন্য একটি সিঁড়ি তৈরি করে দিতে পারবে যা খুবই অল্প যায়গা নিবে। কিন্তু শর্ত হচ্ছে তাকে গোপনে এবং নীরবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে।
এরপর প্রায় তিন মাস সে একা সামান্য একটি করাত,বাটল, হাতুড়ি আর কাঠ দিয়ে একটি পেঁচানো (হেলিক্স) সিঁড়ি তৈরি করে। মজার ব্যাপার হচ্ছে,সিঁড়িটি তৈরি করেই লোকটি কাউকে কিছু না জানিয়ে উধাও হয়ে যায়। লোকটির নাম পর্যন্ত কেউ জানেনা। সিঁড়িটি দেখে বিশ্বাস করা কঠিন যে এটা কোন মানুষের ভর নিতে পারবে এবং টিকে থাকবে। আজো এই সিঁড়িটি টিকে আছে যা নানা যায়গা থেকে মানুষ দেখতে আসে। গির্জার নানরা মনে করে এটা স্বয়ং সেন্ট জোসেফের কাজ এবং কিভাবে এতো সরল কয়েকটা যন্ত্রের সাহায্যে এমন সিঁড়ি তৈরি করা সম্ভব এটা এখনো রহস্যই রয়ে গেছে।
৫. পমোরি সমাধিস্থল, বুলগেরিয়াঃ
বুলগেরিয়ায় অবস্থিত পমোরি শহরের কাছেই একটি রহস্যময় সমাধিস্থল রয়েছে যা দেখতে অনেকটা অর্ধ নলাকার গম্বুজের মতো। সমাধিস্থলটির বাইরের দিকে একটি দেয়াল আছে। ধারণা করা হয় সমাধিস্থলটি দ্বিতীয় থেকে চতুর্থ শতাব্দীর মাঝে নির্মাণ করা হয়েছিলো। এটি প্রথম আবিষ্কারের সময় এর ভেতরে একটি সর্পিলাকার সিঁড়ির অবকাঠামো পাওয়া যায়। ১৯৫০ সালের দিকে এটি পুনঃনির্মাণ করা হয়।
প্রত্নতত্ত্ববিদরা এই স্থাপনার নির্দিষ্ট কোন নাম খুঁজে বের করতে ব্যর্থ হয়েছেন এবং কিভাবে এতো নিখুঁত করে সেসময় এটি তৈরি করা হয়েছিলো তাতে বিস্মিত হয়েছেন। কিছু বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই সমাধিস্থলটি তখনকার কোন বীরের সম্মানার্থে নির্মাণ করা হয়েছিলো। এই সমাধিস্থলটি কে বা কারা নির্মাণ করেছিলো, কেন নির্মাণ করা হয়েছিলো তা নিয়ে এখনো গবেষণা চলছে।
৬. সিবিও পাণ্ডুলিপি (The Sibiu Manuscript):
১৯৬১ সালে সিবিও পাণ্ডুলিপি (The Sibio Manuscript) নামক একটি নথি আবিষ্কৃত হয়। ধারণা করা হয়, ৪৫০ পাতার এই নথিটি প্রায় ১৫০০ সালের দিকে লিখা। এ পাণ্ডুলিপির যে বিষয়টা দেখে বিশেষজ্ঞদের চোখ কপালে উঠেছে তা হলো এতে কামান, ক্ষেপণাস্ত্র ও একাধিক প্রকোষ্ঠ বিশিষ্ট রকেট তৈরির প্রযুক্তিগত বিবরণী রয়েছে।
তাছাড়া এই পাণ্ডুলিপিতে ১৫৫৫ সালে সিবিও শহরে হাজার হাজার মানুষের সামনে একাধিক টায়ার বিশিষ্ট একটি রকেটের সফল উৎক্ষেপণেরও বর্ণনা রয়েছে। পাণ্ডুলিপিটির লেখক কনরাড হাস (Conrad Haas) এতে তাঁর নকশাকৃত এবং তৈরি রকেটের বিভিন্ন ছবিও এঁকেছেন।
ধারণা করা হয় যে, এটিই বিশ্বের প্রথম পাণ্ডুলিপিই যেখানে রকেট তৈরি প্রক্রিয়ার বিবরণী দেয়া আছে। কনরাড হাস তাঁর পাণ্ডুলিপিতে মহাকাশযান, জলীয় জ্বালানি এবং ত্রিভুজাকৃতির পাখনার (Delta Wings) বর্ণনা দেন।
শত শত বছর আগে কিভাবে একজন মানুষ রকেট সায়েন্সের এতো জটিল বিষয়ে এতো কিছু গবেষণা করে বের করেছেন তা সবার কাছেই রহস্য।
rybelsus for sale – purchase desmopressin online order generic DDAVP
purchase terbinafine online cheap – order terbinafine 250mg without prescription griseofulvin online buy