মুসলিম শাসকদের মধ্যে যে স্থাপত্যশৈলীর প্রতি বিশেষ দুর্বলতা আছে তা যুগে যুগেই প্রামাণিত হয়েছে। উমাইয়া শাসক থেকে শুরু করে আব্বাসীয় শাসকদের হাত ধরে মুসলিম স্থাপত্যকলার উৎকর্ষতা আরো বৃদ্ধি পায়। তারপর আটোমান সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে মুসলিম স্থাপত্যশিল্প আরো অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে যায়। আমাদের উপমহাদেশেও এর ছোঁয়া লেগেছিল। এমনকি বঙ্গদেশেও মুসলিম খিলাফত প্রতিষ্ঠার শুরুর দিকে বগুড়ার আদিনা মসজিদ, ষাটগম্বুজ মসজিদ সহ নানান মসজিদের সমাহার ঘটেছে সমগ্র উপমহাদেশে। এতে ইরানী ও তুর্কি স্থাপত্যবিদদের প্রভাব ছিল ব্যাপক। যাহোক অতীত যুগ পেড়িয়ে আমরা আধুনিক যুগে প্রবেশ করেছি। অতীতের অনেক কিছুই সংস্কার করা হয়েছে আধুনিকতার আদলে। আজ এমন সব ইসলামী স্থাপত্য শিল্পের ঐতিহাসিক নিদর্শন পাঁচটি মসজিদ নিয়ে আজকের এই লেখাটা সাজানো হল ।
১.আল মসজিদ আল হারাম,মক্কা:
মক্কা নগরীতে অবস্থিত এই মসজিদটির আরেক নাম হল “পবিত্র মসজিদ”, এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এবং ইসলাম ধর্মের পবিত্রতম স্থান বলে বিবেচিত হয়। ৪০০,৮০০মিটার জুড়ে এটির অবস্থান।
একসাথে প্রায় চল্লিশ লক্ষ মুসল্লি একসাথে নামাজ আদায় করতে পারে। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে যে, ইব্রাহীম (আঃ) ও তার পুত্র ইসমাইল (আঃ) সর্বপ্রথম এই মসজিদের ভিত্তি স্থাপন করেন এবং যুগে যুগে তা সংস্কার করা হয়। মুহাম্মদ (সঃ) এর মক্কা বিজয়ের প্রাক্কালে এই মসজিদে ৩৬০টি মূর্তি পর্যন্ত ছিল।
২. আল মসজিদ এ নববী, মদিনা:
নবীর মসজিদ নামে খ্যাত এই মসজিদ হজরত মুহাম্মদ (সঃ) এর মদিনা হিজরতের পর ৬২২ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠা পায়। এই মসজিদকে কেন্দ্র করে মদিনা রাষ্ট্রের ভিত্তিভূমি গড়ে উঠেছিল। এটিই ছিল মুহাম্মদ (সঃ) এর রাষ্ট্রীয় কার্যালয় এবং তার প্রাথমিক বাসগৃহ। বিভিন্ন ধাপে ধাপে এটি সংস্কার করা হয়। ১৯৭৪ সালে বাদশাহ ফয়সাল এটি সংস্কার করেন। নব্বইয়ের দশকে এটি ১.৭ বিলিয়ন স্কয়ার ফিটে পরিণত করা হয়। ২০১২ সালে ছয় বিলিয়ন ডলার খরচ করে এটিকে আরো বিস্তৃত করা হয়। বর্তমানে প্রায় ১৬ লক্ষ মানুষ একসাথে মসজিদে নববীতে নামাজ আদয় করতে পারে। মসজিদটির সবুজ মিনারের সৌন্দর্য সকলকে তাক লাগয়ে দেয়।
৩.আল আকসা মসজিদ, জেরুজালেম:
এটি বাইতুল মুকাদ্দাস নামে অধিক পরিচিত। ইসলামের তিনটি পবিত্রতম মসজিদের অন্যতম একটি। মুসলিমরা বিশ্বাস করে থাকেন যে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সঃ) আল্লাহর সাথে দেখা করতে যাওয়ার সময় মেরাজ এর রাতে এই মসজিদে কিছু সময়ের জন্য অবস্থান করেন। এই মসজিদের নগরীকে ঘিরেই বর্তমানে ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের মধ্যকার চরম অসন্তোষ চলছে। এর পাশাপাশিই অবস্থিত ট্যাম্পেল মাউন্ট,ডোম অব রক।
৪.নীল মসজিদ, ইস্তাম্বুল:
এটিকে সুলতান আহমেদ মসজিদ বলা হলেও এর নীলা রঙের টাইলসের কারণে একে ব্লু-মসজিদ বলেই সবাই জানে। মসজিদটি ১৬০৯ থেকে ১৬১৬ সালের মধ্যে সুলতাম প্রথম আহমেদের সময় স্থাপিত হয়। মসজিদটি প্রধান পাঁচটি গম্বুজ ও আটটি ছোট গম্বুজ এবং ছয়টি মিনারের সমন্বয়ে গড়ে উঠে। এটি বিখ্যাত হাইজে সুফিয়ার পাশেই অবস্থিত। সুলতান মুহাম্মদ আগা এটির নকশা করেন।
৫. শেখ জায়েদ গ্রান্ট মসজিদ, আবুধাবি:
উল্লেখিত চারটি মসজিদই প্রাচীন কালের। এবারের মসজিদটি আধুনিক সময়ে স্থাপিত। ২০০৭ সালে সম্পূর্ন হয়। সিরিয়ান স্থাপতি আবদালি এটি মুঘল, পার্সিয়ান ও আলেকজান্ডারীয়ান স্থাপত্যকলার সমন্বয়ে ডিজাইন করেন।
শেখ জায়েদ গ্রান্ট মসজিদ সম্বন্ধে একটি মজার তথ্য জেনে রাখা ভালো। আপনি যদি খুঁজতে চান যে পৃথিবীর সবথেকে বড় কার্পেট কোথায় দেখতে পাওয়া যাবে? তাহলে আপনাকে অবশ্যই শেখ জায়েদ গ্রান্ট মসজিদে যেতে হবে।
আধুনিক সময়ে স্থাপিত বড় মসজিদগুলোর একটি শেখ জায়েদ গ্রান্ট মসজিদে একসাথে প্রায় চল্লিশ হাজার মানুষ নামাজ আদায় করতে পারেন। ভ্রমণকারীদের কাছে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থান এই মসজিদটি।
তথ্যসূত্র:
১.উইকিপিডিয়া
২.আর্কিটেক.অর্গ
৩.হাইকনজাম্পশন.কম