১ম পর্বের পর-
হিটলারের ইহুদীবিদ্বেষী আইন কানুনঃ
১৯৩৩ থেকে শুরু করে ১৯৩৯ সালে যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত হিটলার নাৎসি সরকারের অধীনে ইহুদীদের সমাজচ্যুত করার জন্য অন্ততপক্ষে একশটি আইন প্রবর্তন করেন। ইহুদীদের কোণঠাসা করতে সরকারের সকল পর্যায়ে এই ইহুদীবিদ্বেষী আইন স্বীকৃত করা হয়েছিল।
১লা এপ্রিল ১৯৩৩ সালে হিটলার ইহুদীদের সকল প্রকার ব্যবসা বানিজ্য জাতীয়ভাবে বর্জন করেন। তার পরপরই ১৯৩৩ সালের ৭ই এপ্রিল ‘পেশাগত বেসামরিক চাকুরী পুনরুদ্ধার আইন’ নামের একটি আইন জারি করে ইহুদীদের সকল প্রকার রাষ্ট্রীয় চাকরী থেকে বরখাস্ত করা হয়। এই আইন সমূহ নাৎসি বাহিনীর আর্যজাতীয় অনুচ্ছেদে বর্ণিত ছিল, যার উদ্দেশ্য ছিল জার্মানি থেকে সকল ইহুদী ও অনার্যদের সকল প্রতিষ্ঠান এবং চাকরী থেকে উচ্ছেদ করা।
অন্যান্য আইনসমূহের মাধ্যমে স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইহুদী শিক্ষার্থীদের বের করে দেওয়া, চিকিৎসা ও অন্যান্য ন্যায্য পেশায় তাদের সংখ্যা হ্রাস করা এবং ট্যাক্স কনসাল্টেন্টসদের লাইসেন্স বাতিল করা ছিল অন্যতম। প্রেস এবং রাজনৈতিক প্রচারণা ছড়ানোর কাজে ব্যবহৃত জার্মান ছাত্র ইউনিয়নের প্রধান কার্যালয় ও “অ জার্মানদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ” এর মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে। নাৎসিবাদ প্রচারণা ও জার্মান জাতির শেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে জার্মান ছাত্রদের দ্বারা অন্য ভাষার প্রায় ২৫,০০০ বই পুড়িয়ে ফেলা হয়। ১৯৩৪ সালে সকল ইহুদী অভিনেতা অভিনেত্রীদের চলচ্চিত্র ও মঞ্চে অভিনয় নিষিদ্ধ করা হয়।
১৫ই সেপ্টেম্বর ১৯৩৫ সালে রাইখশট্যাগে একটি ন্যুরেমবার্গ আইন চালু করা হয় যেটি অনুযায়ী একজন ব্যক্তি সে বর্তমানে যেই ধর্মেরই হোক না কেন তার ৩য় বা ৪র্থ পূর্বপুরুষের কেউ যদি ইহুদী হয়ে থাকে তবে সেও ইহুদী বলে গণ্য হবে। ন্যুরেমবার্গে “জার্মান রক্ত ও সম্মান কে বিশুদ্ধ রাখা”র নাম দিয়ে ইহুদী ও অইহুদী জার্মানদের মধ্যে বিয়ে নিষিদ্ধ করে আইন পাশ করা হয়। রাইখ নাগরিকত্ব আইনে সংশোধনী এনে অ জার্মানদের জার্মান নাগরিকত্বের সুবিধাসমূহ থেকে বঞ্চিত করা হয়।
১৯৩৬ সালে জার্মানি শীত ও গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের আয়োজক দেশ ছিল। বিশ্বদরবারে সমালোচনা এড়াতে ও পর্যটন শিল্পকে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে হিটলার এবং তার সরকার ইহুদীদের ব্যাপারে এ সময় কিছুটা নিশ্চুপ হয়ে যায়।
অলিম্পিক শেষ হলে নাৎসি বাহিনী “আর্যবাদ” নাম দিয়ে ইহুদীদের ওপর নতুন মাত্রায় অত্যাচার শুরু করে। ইহুদী সাধারণ কর্মজীবিদের গুলি করে হত্যা করতে শুরু করে এবং ইহুদী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো বাজেয়াপ্ত করে অ-ইহুদীদের মাঝে বন্টন করে দিতে থাকে। নাৎসিরা ইহুদীদের জার্মান সমাজ, সরকারী বিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয়, মঞ্চ, ক্রীড়াঙ্গন এবং আর্য এলাকা থেকে বিতাড়িত করতে থাকে। ইহুদী ডাক্তারদেরও অইহুদী রোগীর চিকিৎসা করা নিষিদ্ধ করা হয়। ইহুদীদের জন্য আলাদা পরিচয়পত্র তৈরি করা হয় এবং তাদের তা বহন করতে বাধ্য করা হয়। ১৯৩৮ সালের শেষের দিকে ইহুদীদের পাসপোর্টে (J) চিহ্নের সিলমোহর দিয়ে তাদের আলাদা করা হয়।
৯ ও ১০ই নভেম্বর ১৯৩৮ সালে জার্মানি, অস্ট্রিয়ার কিছু অংশে ইহুদী দমন কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়। নাৎসি বাহিনী ইহুদীদের বাড়িঘর, বিদ্যালয়, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সবকিছু ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয় এবং প্রায় ১০০ জনের মতো ইহুদীকে হত্যা করে ইতিহাসে যা “নাইট অব ক্রিস্টাল” বা ভাঙ্গা কাঁচের রাত নামে পরিচিত। কারণ এই হত্যাযজ্ঞের পর শুধু কিছু ভাঙ্গা কাঁচই অবশিষ্ট ছিল। আরও প্রায় ৩০,০০০ ইহুদীকে আটক করে বন্দী-শিবিরে প্রেরণ করা হয় যেখানে তাদের জন্য আরও অমানবিক শাস্তি অপেক্ষা করছিল।
সমকামী ও প্রতিবন্ধীদের উপর নির্যাতনঃ
হিটলারের সুপ্রজনন নীতি থেকে বাদ পড়েনি প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এবং শিশুরাও। এই নীতি অনুসারে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও শিশুদের চিহ্নিত করে তাদের কষ্টবিহীন মৃত্যুর ব্যবস্থা করা হত। তার সময়ে সমকামীতা কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ ছিল । ১৯৩৩ থেকে ১৯৪৫ সালের মধ্যে প্রায় ১ লক্ষ ব্যক্তিকে সমকামীতার দায়ে গ্রেফতার করা হয় এবং তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যককে আবার নির্যাতন শিবিরেও প্রেরন করা হয়। নাৎসি বাহিনীর চোখে সমকামিতা এক প্রকার অপরাধ ও রোগ, তাই নির্যাতন শিবিরে আটককৃত সমকামী পুরুষদের শাস্তি হিসেবে গোলাপী রঙের ত্রিকোণার কাপড়ের টুকরো পরে থাকতে বাধ্য করা হয়।
নির্যাতন শিবির ও হলোকাস্টঃ
১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু থেকে ১৯৪৫ সালে শেষ হওয়া পর্যন্ত নাৎসি বাহিনী ও তাদের সহযোগীরা প্রায় ৬০ লক্ষ ইহুদী যা তৎকালীন ইউরোপের মোট ইহুদীর দুই-তৃতীয়াংশ সহ আরও প্রায় এক লক্ষ নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা করে। হিটলারের “চূড়ান্ত সমাধান” হিসেবে ইহুদী নিধনের এই গনহত্যা ইতিহাসে হলোকাস্ট নামে পরিচিত।
অন্যান্যদের গণহত্যার সাথে নির্যাতন শিবিরে অসউইজ-বিরকেনো, বারগেন-বেলসেন, ডাচু এবং ট্রেবলিঙ্কার ও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। অন্যান্য নির্যাতিত দলসমূহের মধ্যে ছিল পোল, সাম্যবাদী, সমকামী, যেহোবার সাক্ষী এবং শ্রমিক কল্যান সমিতির সদস্যবৃন্দ। এ সকল বন্দিদের জোরপূর্বক নতুন নির্যাতন শিবির নির্মান কাজে শ্রমিক হিসেবে ব্যবহার করা হত। কখনো তাদের অনাহারে রেখে চিকিৎসা বিজ্ঞানের অদ্ভুত সব পরীক্ষা নিরীক্ষা সহ নানা রকম অমানুষিক নির্যাতন করা হত।
সম্ভবত হিটলার নিজে কোনদিন নির্যাতন শিবির পরিদর্শন করেননি এবং জনসম্মুখে কখনো এ নিয়ে কোন কথা ও কখনো বলেননি। কিন্তু জার্মানরা চলচ্চিত্র, পত্র-পত্রিকা ও বিভিন্ন লেখনির মাধ্যমে এই নারকীয় হত্যাকান্ডের ঘটনা ইতিহাস করে রেখেছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধঃ
১৯৩৮ সালে কয়েকজন ইউরোপীয় নেতাকে সঙ্গে নিয়ে হিটলার মিউনিখ চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তি অনুসারে সুডেটল্যান্ডকে জার্মানির একটী জেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয় যা ছিল ভার্সাই চুক্তির ঠিক উল্টোটা । এই চুক্তির জন্য হিটলারকে ১৯৩৮ সালে টাইমস ম্যাগাজিনে “বর্ষ সেরা ব্যক্তি”র উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
এই কূটনৈতিক সাফল্য জার্মানির কর্তৃত্বকে নতুনভাবে শানিত করে। যার ফলে ১লা সেপ্টেম্বর ১৯৩৯ সালে জার্মানির পোল্যন্ড আক্রমনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা হয়। পোল্যান্ড আক্রমনের দুই দিন পর ব্রিটেন ও ফ্রান্স জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে।
১৯৪০ সালে নরওয়ে, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, লুক্সেমবার্গ, নেদারল্যান্ডস এবং বেলজিয়াম আক্রমনের মাধ্যমে হিটলার তার সামরিক পরিসর বৃদ্ধি করতে থাকেন। জুলাই মাসে হিটলার যুক্তরাজ্য আক্রমনের উদ্দেশ্যে বোমা নিক্ষেপের নির্দেশ দেন। জার্মানির পূর্বের সহযোগী জাপান এবং ইতালি সহ এই তিন দেশকে বলা হত অক্ষশক্তি। অক্ষশক্তি সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে যুক্তরাষ্ট্রকে ভয় দেখিয়ে যুক্তরাজ্যকে সহযোগিতা করার থেকে নিবৃত করার ব্যাপারে একমত হয়।
২২ শে জুন ১৯৪১ সালে হিটলার ১৯৩৯ সালে জোসেফ স্ট্যালিনের সাথে করা ‘অনাক্রমণ চুক্তি’ ভেঙ্গে সোভিয়েত ইউনিয়নে বিপুল পরিমান জার্মান সৈন্য প্রেরণ করেন। হিটলার তার আক্রমণকারী বাহিনীকে সাময়িক যুদ্ধ বিরতি দিয়ে লেনিনগ্রাদ এবং কিয়েভ ঘিরে ফেলার নির্দেশ দিতে দিতেই তার বাহিনী রাশিয়ার বিশাল ভূখন্ড দখল করে ফেলে। তার নির্দেশ পেয়ে জার্মান বাহিনী সাময়িক যুদ্ধ বিরতি দেয় এবং সুযোগে ১৯৪১ এর ডিসেম্বরে রাশিয়ার রেড আর্মি বাহিনী হিটলার বাহিনীকে প্রতিআক্রমণ করে মস্কোর মধ্যে তাদের কোণঠাসা করে ফেলে।
ডিসেম্বরের ৭ তারিখে জাপান যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই এ অবস্থিত পার্ল হারবার আক্রমণ করে। জাপানের সাথে জোটের সম্মান রক্ষার্থে হিটলার তখন প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিলের নেতৃত্বে থাকা বিশ্বের বৃহৎ সাম্রাজ্য ব্রিটেন, প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্টের নেতৃত্বে থাকা বিশ্বের বৃহত্তর অর্থনৈতিক শক্তি যুক্তরাষ্ট্র এবং স্ট্যালিনের নেতৃত্বে থাকা বিশ্বের বৃহত্তম সেনাবাহিনীর দেশ সোভিয়েত উইনিয়নের সম্মিলিত মিত্র শুক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন।
যদিও প্রাথমিকভাবে আশা করা হচ্ছিল যে তিনি মিত্রশক্তিগুলোকে একে একে নিরস্ত করে দিতে পারবেন কিন্তু হিটলারের সামরিক রায় আরও জটিল হয়ে উঠতে থাকে ফলশ্রুতিতে অক্ষীয় শক্তিসমূহ আর তাদের আক্রমণাত্মক এবং বিস্তৃত যুদ্ধ বজায় রাখতে পারে না। ১৯৪২ সালের শেষের দিকে, জার্মান বাহিনী সুয়েজ খাল আটকে রাখতে ব্যর্থ হয়, যার ফলে উত্তর আফ্রিকার উপর জার্মান বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ হারাতে হয়। এরপর জার্মান সেনাবাহিনী কুর্স্কের যুদ্ধ (১৯৪৩) এবং স্ট্যালিনগ্রান্ডের যুদ্ধে (১৯৪২-৪৩) পরাজিত হয় যা যুদ্ধকে একটি নতুন দিকে মোড় দেয়।
৬ই জুন ১৯৪৪ যা ইতিহাসে ডি-ডে নামে পরিচিত সেদিন পশ্চিমা মিত্র বাহিনী ফ্রান্সের উত্তরাংশে অবতরণ করে । এই উল্লেখযোগ্য বিপর্যয়ের ফলে, অনেক জার্মান কর্মকর্তারা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে এবার তাদের পরাজয় নিশ্চিত এবং হিটলারের নিয়মিত শাসনের ফলে দেশটির ধ্বংসের মুখে। ফলে স্বৈরশাসককে হত্যা করার জন্য সংগঠিত প্রচেষ্টায় একটি অভিযান পরিচালিত হয় এবং বিরোধীরা ১৯৪৪ সালে কুখ্যাত জুলাই প্লেটের সাথে হাত মেলায়,যদিও এটি শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়।
কখন এবং কিভাবে হিটলারের মৃত্যু হয়ঃ
১৯৪৫ সালের প্রথম দিকে হিটলার উপলব্ধি করেন যে জার্মানি যুদ্ধে হারতে বসেছে। সোভিয়েত বাহিনী জার্মান বাহিনীকে চাপের মুখে পশ্চিম ইউরোপে ঠেলে পাঠাতে থাকে এবং মিত্রবাহিনী পশ্চিম জার্মানির দিকে অগ্রসর হতে থাকে। এমতাবস্থায় ১৯৪৫ সালের ২৯ শে এপ্রিল মধ্যরাতে হিটলার তার প্রেমিকা ইভা ব্রাউনকে বার্লিনের বাংকারে একটি ছোট্ট বেসামরিক অনুষ্ঠানে বিয়ে করেন। ইতোমধ্যে হিটলারের কাছে ইতালির স্বৈরশাসক বেনিতো মুসোলিনির মৃত্যুদন্ডের সংবাদ পৌঁছে। শত্রু সৈন্যদের হাতে ধরা পড়ার ভয়ে হিটলার এবং ব্রাউন ১৯৪৫ সালের ৩০ এপ্রিল অর্থাৎ তাদের বিয়ের পরের দিন আত্মহত্যা করেন। তাদের মৃতদেহ রাইখ চ্যান্সেলেরির বাইরে একটি বোমা বিস্ফোরক এলাকাতে নিয়ে গিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হয়। ২ মে, ১৯৪৫ সালে বার্লিনের পতন হয় এবং জার্মানি নিঃশর্তভাবে মিত্রশক্তির কাছে আত্মসমর্পন করে।
হিটলারের মৃত্যুর পরেঃ
হিটলারের রাজনৈতিক কর্মসূচী একটি বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে আসে, যার মধ্যে রয়েছে যুদ্ধ বিধ্বস্ত জার্মানি সহ একটি দারিদ্রতাপূর্ণ পূর্ব ও মধ্য ইউরোপ। তাঁর নীতিসমূহ একটি বৃহৎ মাত্রায় মানুষের দুঃখকষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল এবং সোভিয়েত ইউনিয়নে ২০ মিলিয়নেরও বেশি এবং ইউরোপের ৬ মিলিয়ন ইহুদী সহ দশ লক্ষ সাধারণ মানুষের মৃত্যু ঘটে। হিটলারের পরাজয় ইউরোপের ইতিহাসে জার্মানির আধিপত্যের অবসান এবং ফ্যাসিবাদের পরাজয়কে চিহ্নিত করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের এই বিধ্বংসী সহিংসতার পর আবারও একটি নতুন মতাদর্শিক বৈশ্বিক সংঘাত আবির্ভূত হয় যা স্নায়ুযুদ্ধ নামে পরিচিত।
order semaglutide 14mg generic – order DDAVP sale DDAVP ca
order prandin 1mg online – order repaglinide 1mg without prescription order jardiance 25mg