কোন একটি অঞ্চলের উন্নতির প্রথম সোপান সহজ এবং উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা। আর সহজ যোগাযোগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও বহুল ব্যবহৃত মাধ্যম হলো সড়ক পথ। শুধু যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে নয়, পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য সড়ক পথের বৈচিত্র্যও কম নয়। অদ্ভুত ও বৈচিত্র্যময় এ সকল রাস্তাঘাট সত্যিই সবাইকে মুগ্ধ করে। কিছু কিছু রাস্তা আবার সুন্দরের পাশাপাশি ভয়ঙ্করও হয়ে উঠে। ভয়ঙ্কর সুন্দর এ সকল রাস্তায় যাতায়াত মানুষকে যতটা না মুগ্ধ করে তার চেয়ে বেশি শিহরিত করে। আজকে আমরা জানব এমনই কিছু রাস্তা সম্পর্কে-
ব্লু স্ট্রীট: শেফশাওয়ান, মরক্কো
আটলান্টিক সাগর পাড়ে অবস্থিত আফ্রিকার ছোট্ট সুন্দর দেশ মরক্কো। মরক্কোর উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত শেফশাওয়ান নামক এক জাদুময় শহর যা Blue Pearl of Morocco বা Blue City নামেও পরিচিত। আসলে এই শহরটির নামের মধ্যেই এর বৈশিষ্ট্য লুকায়িত রয়েছে কারণ এই শহরটি পুরোপুরি নীল রঙে আচ্ছাদিত। শহরের ঘরবাড়ির দেয়াল, দরজা আর রাস্তাঘাট সবই নীল রঙের যা এই শহরে এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশ সৃষ্টি করে রেখেছে। শহর জুড়ে এই নীলের রহস্য খুঁজতে গিয়ে জানা যায় যে, স্পেন থেকে পালিয়ে আসা ইহুদিরা এই শহরে বসবাস করতে শুরু করে এবং তারাই শহরটি কে নীল রঙে রাঙিয়েছে।
পিংক স্ট্রীট: লিসবন, পর্তুগাল
সমুদ্র তীরবর্তী লিসবন শহরের পিংক স্ট্রীট নামক এলাকার রাস্তা আর অলিগলি সব ঝলমলে গোলাপি রঙের। এছাড়াও এর দুপাশের ফুটপাতে রয়েছে খোলামেলা আর্ট গ্যালারি। সমুদ্র তীরবর্তী হওয়ায় টুরিস্টদের উপস্থিতি ছাড়াও এখানে রয়েছে অসংখ্য নাইট ক্লাব ও বার এবং এর ফলে লিসবনের নৈশ জীবনের কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়েছে পিংক স্ট্রীট। দ্যা নিউইয়র্ক টাইমস একে ইউরোপের সবচেয়ে পছন্দনীয় ১২টি রাস্তার মাঝে স্থান দিয়েছে।
ম্যাজিক কার্পেট স্ট্রীট: লা ওরোটাবা, ক্যানারি দ্বীপ
রাস্তার নাম শুনে কেউ ভাববেন না যেন এখানে রাস্তা জুড়ে রেশমি–পশমি কার্পেট বিছানো থাকে। এই পথে বিছানো কার্পেট আসলে সম্পূর্ণ বালির তৈরি যা স্যান্ড আর্ট নামে পরিচিত। ক্যানারি দ্বীপের লা ওরোটাবা শহরে অবস্থিত ম্যাজিক কার্পেট স্ট্রীট বিশ্বের সবচেয়ে স্টাইলিশ রাস্তা গুলোর মাঝে একটি। গিনেস বুকে ২০০৭ সালে এই রাস্তাটি বিশ্বের সর্ব বৃহৎ স্যান্ড পেইন্টিং এর খেতাব জিতে নেয়। চমৎকার সুন্দর রাস্তা আর তার দু পাশে কাঠের ব্যালকনি দেয়া সতেরো ও আঠারো শতকের তৈরি বাড়ি গুলো সত্যিই এক মুগ্ধতার সৃষ্টি করে।
আমব্রেলা স্ট্রীট: এগুইডা, পর্তুগাল
এই রাস্তা জুড়ে কিন্তু ছাতা বিছানো থাকেনা বরং রাস্তার উপরে খোলা আকাশে সারি সারি খোলা ছাতা প্রদর্শিত থাকে। প্রতি বছর জুলাই-এ একটি আর্ট ফেস্টিভালকে কেন্দ্র করে পর্তুগালের এগুইডা শহরের একটি গলিকে সাজিয়ে তোলা হয় রঙ বেরঙের ছাতার রঙে। রাস্তা জুড়ে ছাতা টাঙানো থাকে বলেই এই রাস্তার নাম হয়েছে আমব্রেলা স্ট্রীট।
জিওমেট্রিক স্ট্রীট: ভারকরিন, সুইজারল্যান্ড
সুইজারল্যান্ডের ভারকরিন নামক ছোট্ট গ্রামের রাস্তাগুলো জ্যামিতিক নকশায় ঝলমলে রঙে রাঙানো। প্রতিটি রাস্তা গ্রামের প্রধান চত্বরে এসে মিলিত হয়েছে। এমনকি এই শহরের রাস্তার পাশের দেয়াল গুলোতেও জ্যামিতিক নকশা অঙ্কিত রয়েছে। কাঠের তৈরি পুরনো ঘরবাড়ির বিপরীতে ঝলমলে রঙিন রাস্তাগুলো সবার নজর কাড়ে।
লম্বার্ড স্ট্রীট: সানফ্রান্সিস্কো, যুক্তরাষ্ট্র (পৃথিবীর সবচেয়ে বক্রাকৃতির রাস্তা)
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের সানফ্রান্সিস্কোতে অবস্থিত লম্বার্ড স্ট্রীট পৃথিবীর সবচেয়ে বক্রাকৃতির রাস্তা। এই অদ্ভুত রাস্তাটি মূলত দীর্ঘ লম্বার্ড স্ট্রীটের একটি অংশমাত্র যার দৈর্ঘ্য মাত্র এক (১) মাইল এবং এখানে ড্রাইভিং এর সর্বোচ্চ গতি মাত্র ৫ কি.মি./ঘণ্টা। এত আঁকাবাঁকা রাস্তা তৈরির মূল কারণ হচ্ছে সানফ্রান্সিস্কোর ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য। এখানে সোজা রাস্তা তৈরি করতে গেলে তা অতিরিক্ত খাড়া আর বিপজ্জনক হয়ে যাবে। আর তাই এই রাস্তার পরিকল্পনাকারী রাস্তাটিকে আঁকাবাঁকা করে তৈরির সিদ্ধান্ত নেন।
এবিনেজার প্লেইস: স্কটল্যান্ড (সবচেয়ে স্বল্পতম দৈর্ঘের রাস্তা)
স্কটল্যান্ডের এবিনেজার প্লেইস স্ট্রীট পৃথিবীর সবচেয়ে স্বল্পতম দৈর্ঘ্যের রাস্তা হিসেবে গিনেস বুকে অন্তর্ভুক্ত। যার দৈর্ঘ্য মাত্র ৬ ফুট ৯ ইঞ্চি। এই অদ্ভুত রাস্তাটিতে একটি মাত্র ঠিকানা আছে যা ১৮৮৩ সালে তৈরি একটি হোটেলের অংশ। ১৮৮৭ সালে অফিসিয়ালি এই রাস্তাটিকে একটি স্বতন্ত্র রাস্তা হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
বাল্ডউইন স্ট্রীট: নিউজিল্যান্ড (পৃথিবীর সবচেয়ে খাড়া রাস্তা)
নিউজিল্যান্ড এর দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর ডুনেডিন এ অবস্থিত বাল্ডউইন স্ট্রীট পৃথিবীর সবচেয়ে খাড়া রাস্তা হিসেবে পরিচিত। ডুনেডিন সিটি সেন্টার থেকে ৩.৫ কি.মি. উত্তর-পূর্বে এই রাস্তাটির অবস্থান। এই খাড়া রাস্তা কিন্তু ইচ্ছাকৃত ভাবে তৈরি নয়, বরং নিউজিল্যান্ড এর ভূপ্রকৃতির কথা মাথায় রেখে বাধ্য হয়েই এভাবে রাস্তা তৈরি করতে হয়েছে। পাহাড়ি অঞ্চল হওয়ার কারণে এখানকার সব রাস্তা গ্রীড প্যাটার্নে তৈরি যেগুলোর পরিকল্পনা করেছেন লন্ডনের ডিজাইনাররা।
এই রাস্তাটিতে অনুভূমিকভাবে প্রতি ২.৮৬ মিটার ভ্রমণে ১ মিটার করে উচ্চতা বৃদ্ধি পায়। তাই রোমাঞ্চকর ভ্রমণের অভিজ্ঞতা লাভ করতে পর্যটকদের কাছে দিন দিন আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে এই রাস্তাটি।
স্প্রয়্যুরহফস্ট্রসা: জার্মানি (পৃথিবীর সবচেয়ে সংকীর্ণ রাস্তা)
স্প্রয়্যুরহফস্ট্রসা জার্মানির র্যুটলিঙ্গেন শহরে অবস্থিত বিশ্বের সবচেয়ে সংকীর্ণ রাস্তা। এই রাস্তাটির প্রস্থ ১২ ইঞ্চি থেকে ২০ ইঞ্চি পর্যন্ত। ১৭২৬ সালে এক বিশাল অগ্নিকান্ডে সম্পূর্ণ শহরটি ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর ১৭২৭ সালে এর পুন:নির্মাণের অংশ হিসেবে এই রাস্তাটি তৈরি করা হয়। ভূমি রেজিস্ট্রি অফিসে ৭৭ নাম্বার রাস্তা হিসেবে এটি অফিসিয়ালি অন্তর্ভুক্ত আছে।
দ্য জুলিও স্ট্রীট: বুয়েন্স আয়ার্স, আর্জেন্টিনা (পৃথিবীর সবচেয়ে প্রশস্ত রাস্তা)
আর্জেন্টিনার প্রধান রাজপথ নাইন (9) দ্য জুলিও স্ট্রীট পৃথিবীর সবচেয়ে প্রশস্ত রাস্তা। ১৮১৬ সালের ৯ ই জুলাই আর্জেন্টিনা স্বাধীনতা লাভ করে। আর তাদের স্বাধীনতা দিবসকে স্মরণীয় করে রাখতে এই রাস্তার নামকরণ করা হয় 9 দ্য জুলিও স্ট্রীট। এটি শুধুমাত্র একটা সাধারণ রাস্তা নয় বরং ১৮ লেন বিশিষ্ট বিশালাকার একটি রাজপথ যা সাজানো রয়েছে অসংখ্য বৃক্ষরাজির সমারোহে। এছাড়াও ট্রাফিক পয়েন্ট গুলোতে রয়েছে সবুজে ঘেরা পার্ক যাতে বসার জন্য রয়েছে বেঞ্চ। চলাচলের পথে ক্লান্ত হয়ে গেলে পার্কে বসে একটু বিশ্রাম নিয়ে নেওয়াই যাবে।
ম্যাজিক রাউন্ড এবাউট: সুইনডন, ইংল্যান্ড (বিশ্বের সবচেয়ে বিভ্রান্তিকর রাউন্ড এবাউট)
লন্ডনের সুইনডনে ১৯৭২ সালে স্থাপিত ম্যাজিক রাউন্ড এবাউটটি বিশ্বের সবচেয়ে বিভ্রান্তিকর রাউন্ড এবাউট যার নামকরণ করা হয়েছে “ম্যাজিক রাউন্ড এবাউট” নামে নির্মিত শিশুতোষ টেলিভিশন সিরিজ থেকে। এই রাউন্ড এবাউট কে ঘিরে পাঁচটি রাস্তা এসে মিলিত হয়েছে এবং বড় রাউন্ড এর ভেতর আরও পাঁচটি ছোট রাউন্ড এবাউট রয়েছে। এই রাস্তায় যারা ড্রাইভ করে তাদের কাছে এই স্থানটি রীতিমত ভীতিকর।
জাজ হ্যারি প্রেগারসন ইন্টারচেঞ্জ: লস এঞ্জেলস, যুক্তরাষ্ট্র (বিশ্বের সবচেয়ে জটিল ইন্টারচেঞ্জ)
ক্যালিফোর্নিয়ার লস এঞ্জেলসে অবস্থিত জাজ হ্যারি প্রেগারসন ইন্টারচেঞ্জ বিশ্বের সবচেয়ে জটিল ইন্টারচেঞ্জ। এর জটিলতার মূল কারণ হচ্ছে অনেকগুলো স্তরে স্থাপিত সেতুগুলো, যেখানে সব দিক থেকে গাড়ি প্রবেশ ও প্রস্থান করতে পারে। চারটি স্তরে স্থাপিত এই ইন্টারচেঞ্জটি প্রধান সড়কগুলোর মধ্যে সহজ সংযোগ স্থাপন করে।
ডেথ রোড: বলিভিয়া (বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক রাস্তা)
বলিভিয়ার রাজধানী লাপাজ থেকে করোইকো পর্যন্ত ৬৯ কি.মি. দীর্ঘ রাস্তাটি স্থানীয়ভাবে ডেথ রোড নামে পরিচিত কারণ প্রতি বছর এই রাস্তায় গড়ে ২০০-৩০০ জন লোক প্রাণ হারায়। ঘন পাহাড়ি জঙ্গলের ভেতর দিয়ে নির্মিত এই রাস্তাটি শুরু হয়েছে ১৫,৪০০ ফুট উচ্চতা থেকে এবং একটি গভীর খালের পাশে গিয়ে মিশেছে।
আটলান্টিক ওশেন রোড: নরওয়ে
নরওয়ের ৯ কি.মি. দৈর্ঘ্যের এই রাস্তাটির একটি মজার বিষয় হচ্ছে যে এই স্বল্প দৈর্ঘ্যের রাস্তাটিতে সেতু রয়েছে ৮ টি। সমুদ্রের জল ছুঁয়ে চলে যাওয়া এই রাস্তাটি যে কাউকেই মুগ্ধ করে। চমৎকার সুন্দর এই রাস্তাটি মাঝে মাঝে বিপজ্জনকও হয়ে উঠতে পারে কারণ প্রায়ই পূর্বাভাস ছাড়াই তুষার ঝরের কবলে পরতে হয় এই পথে চলাচলকারীদের।
পাসো ডেলো স্টেভিও: লম্বারডি, ইতালি
ইতালির স্টেভিও পাস রোড আল্পস পর্বতের ৩,১১৬ ফুট উচ্চতায় শুরু হয়ে হেয়ারপিনের মত ৪৮ টি বাঁক নিয়ে ৯,০৫০ ফুট উচ্চতায় এসে শেষ। সাইক্লিস্ট ও মোটরবাইকদের নিকট জনপ্রিয় এই রাস্তাটির সৌন্দর্য অতুলনীয়।
তথ্য সুত্রঃ
১. https://www.oddee.com/item_97252.aspx
২. https://moco-choco.com/2013/04/11/most-unusual-streets-and-roads-in-the-world/
৩. https://www.oddee.com/item_98846.aspx
৪. https://10mosttoday.com/10-most-unique-roads-in-the-world/
semaglutide 14 mg drug – buy DDAVP medication how to get desmopressin without a prescription