জার্মান রূপকথার শুরুর নাম “ফ্রিৎস ওয়াল্টার আবহাওয়া”
৪ জুলাই, ১৯৫৪! দিনটি ছিল রবিবার! সুঠাম গড়নের একজন মানুষ হোটেলের বারান্দাতে দাঁড়িয়ে থুন হ্রদের অপরূপ সকাল উপভোগ করছিলেন । শান্ত হ্রদ, দিনের প্রথম সূর্যরশ্মিগুলো তখন আল্পস পর্বতের ফাঁক দিয়ে উঁকি মারছে আর সোনালি-লালচে আভা ছড়াচ্ছে। স্বভাবতই দিনটি সুন্দর ও হাস্যজ্জ্বল হতে চলেছে। তবে কোন একটা কারণে মানুষটি খুশি নন। তিনি হোটেলের রুমে গিয়ে আবারো শুয়ে পড়লেন। সকাল ৯ টায়ও তিনি জ্বলজ্বল সূর্য দেখতে পান। তবে দুপুর সাড়ে বারটার দিকে তার ভাই হঠাৎ বারান্দা থেকে দৌঁড়ে এসে চিৎকার করে বলতে থাকে, “দেখো! বৃষ্টি হচ্ছে! বৃষ্টি হচ্ছে!” আশ্চর্য চোখে মুখে মানুষটি বারান্দায় এসে দেখতে লাগলেন । ধূসর মেঘগুলো হ্রদের উপর আকাশে বাসা বেঁধেছে। তিনি ভাবতে লাগলেন, বৃষ্টির জল অবশ্যই মাঠে ঠাণ্ডা আবহাওয়া আর কাঁদার সৃষ্টি করবে । আধো আধো হাসি নিয়ে তিনি নিজেকে বললেন, “এখন আর কোন পদক্ষেপই ভুল হবে না!”
আর আড়াই ঘণ্টা পরই যে তিনি এবং তার সতীর্থরা একটি গুরুত্বপূর্ণ ফুটবল ম্যাচ খেলতে যাচ্ছেন, বিপক্ষে থাকবে ফুটবলের সর্বসেরা দল হাঙ্গেরি, যারা কিনা কয়েক দিন আগেই তাদের ৮-৩ গোলে হারিয়ে লজ্জায় ভাসিয়েছে। তবে দল যত দুর্বলই হোক, তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের কোন কমতি নেই। নেই কোন হারের ভয়, আছে শুধু জয়ের প্রবল ইচ্ছা।
শুনছিলেন ১৯৫৪ ফুটবল বিশ্বকাপে পশ্চিম জার্মান কাপ্তান ফ্রিৎস ওয়াল্টারের গল্প । আর যে ম্যাচটির কথা বলছিলাম সেটি ছিল ১৯৫৪ ফিফা বিশ্বকাপের ফাইনাল । ১৯৫৪ সালে পশ্চিম জার্মানির বিশ্বকাপ জয় ছিল ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা দুর্ঘটনা । বিশ্বকাপ শুরুর আগে কেউ কল্পনাতেও ভাবেনি যে পশ্চিম জার্মানি বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হতে পারে। অন্যদিকে বিশ্ব ফুটবলে আগমনীর জানান দেয় জার্মান পাওয়ার হাউজ। বর্তমান যুগের এই সময়েও জার্মানরা বিশ্বাস করে যে, তুমুল বৃষ্টি তাদের জন্য অনেক বড় একটি আশীর্বাদ। তাদের কাছে ১৯৫৪ বিশ্বকাপ ফাইনালের এই আবহাওয়ার নাম “ফ্রিৎস ওয়াল্টার আবহাওয়া”। স্বভাবতই এটির নামকরণ হয়েছে ১৯৫৪ সালের বিশ্বকাপজয়ী জার্মান কাপ্তান ফ্রিৎস ওয়াল্টারের নামানুসারে ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কলঙ্ক মুখে মেখে ১৯৫০ সালের ফিফা বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করা হয়নি কোন জার্মানিরই। অন্যদিকে ১৯৫৪ এর বিশ্বকাপই ছিল বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে অনুষ্ঠিতব্য প্রথম বিশ্বকাপ যেটির বাছাইপর্ব কোন রকমে উৎরিয়েছিল পশ্চিম জার্মানি। বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করা যুদ্ধবিদ্ধস্ত পশ্চিম জার্মানির কাছে অবশ্যই ছিল গর্বের বিষয়। তবে বিশ্বকাপ জয় করার স্বপ্ন থেকে তারা ছিল বহুদূর কারণ আন্তর্জাতিক ম্যাচগুলোতে হাঙ্গেরি ফুটবল দল প্রায় অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছিল যারা কিনা টানা ৪ বছর ধরে অপরাজিত থেকে স্বাগতিক সুইজারল্যান্ডের মাটিতে পা রেখেছিল। তাই ১৯৫৪ সালের এই টুর্নামেন্টে তাদের বিশ্বজয় ছিল অনেকটাই সুনিশ্চিত।
সুইজারল্যান্ড রাজধানী বার্নের ওয়াঙ্কডর্ফ স্টেডিয়ামেই শুরু আন্ডারডগ পশ্চিম জার্মানির বিশ্বকাপ যাত্রা। প্রথম প্রতিপক্ষ তুরস্ক। খেলা শুরুর প্রথম ২ মিনিটের মাথায়ই গোল খেয়ে বসলো জার্মান দল। কিন্তু একে একে গোল পরিশোধ করলেন শেইফার, ক্লোড, অটোমার ওয়াল্টার এবং মরলক। শেষ পর্যন্ত ৯০ মিনিটের এই খেলা ৪-১ গোল ব্যবধানে শেষ হল। গ্রুপ পর্বের পরের খেলার প্রতিপক্ষ ফেভারিট হাঙ্গেরি। “মাইটি ম্যাগইয়ার্স” খ্যাত হাঙ্গেরিয়ানরা দুর্বল জার্মানদের ভাসাল গোল বন্যায়। হারাল ৮-৩ গোলের বিশাল ব্যবধানে ।
এই বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের ফরমেটটি ছিল একটু ভিন্ন। গ্রুপের প্রথম দল সরাসরি কোয়ার্টার ফাইনালে খেলতে পারবে। আর ২য় ও ৩য় দলকে খেলতে হত প্লে-অফ ম্যাচ। তাই প্লে অফ ম্যাচে আবার দেখা পশ্চিম জার্মানি ও তুরস্কের। এবার আর জার্মানরা কোন রকম ভুল করল না। ৭-২ এ সমাপ্তি ঘটা এই ম্যাচে দারুণ নৈপুণ্যতা দেখালেন কাপ্তান ফ্রিৎস ওয়াল্টার। কোয়ার্টার ফাইনালে জার্মানরা শক্তিশালী যুগোস্লাভিয়াকে হারায় ২-০ গোলে। সেমিফাইনালে এই বারের প্রতিপক্ষ প্রতিবেশী রাষ্ট্র অস্ট্রিয়া । পশ্চিম জার্মানি এবারও এই ম্যাচ জিতে নিল ৬-১ ব্যবধানে । পেনাল্টি থেকে দুটি গোল পেলেন ওয়াল্টার। বিশ্বকাপের সবকিছুই স্বপ্নের মত উপভোগ করছিল জার্মানরা। তবে ফাইনালে এবার আবার দেখা হাঙ্গেরির সাথে।
বার্নের ওয়াঙ্কডর্ফ স্টেডিয়ামেই ফিরে আসতে হল ফ্রিৎস ওয়াল্টার ও তার সতীর্থদের। খেলার মাত্র আট মিনিট পেরিয়েছে। ফ্রিৎস ওয়াল্টার বৃষ্টিভেজা অর্ধমাঠে দাঁড়িয়ে ঘাসের দিকে তাকিয়ে সেকেন্ডের জন্য কি যেন একটা ভাবছেন। অকল্পনীয় কোন গল্প মনে হচ্ছে তার কাছে সব । পশ্চিম জার্মানি ৮ মিনিটের মধ্যেই ফেভারিট হাঙ্গেরির কাছে দুই দুইটি গোল খেয়ে বসেছে।
ফ্রিৎস ওয়াল্টার, যিনি কিনা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে একজন সামরিক যোদ্ধা হিসেবে কর্মরত ছিলেন, অবশ্যই বিশ্বযুদ্ধের পর অনেকটাই বদলে গেছেন। তার ফুটবলে জয় পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা ছিল প্রবল, তবে তিনি হয়ে উঠেছিলেন খামখেয়ালী ও সংবেদনশীল। মাঠের কোন প্রতিকূল অথবা অনুকূল অবস্থাই তার ভারসাম্যকে অস্থির করে তুলত। রেফারির বাজে সিদ্ধান্ত, শঙ্কটপূর্ণ মন্তব্য, বিশেষ করে আবহাওয়া! যুদ্ধকালীন সময়ে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার পর থেকেই তিনি গরম রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়ায় খেলতে অস্বস্তিবোধ করতেন । তিনি মূলত বৃষ্টিতে খেলতে ভালবাসতেন । তাই জার্মানিতে এখনও ভারিবর্ষণকে “ফ্রিৎস ওয়াল্টার আবহাওয়া” নামে ডাকা হয় ।
ওয়াল্টার ফাইনালের এই ম্যাচে মে, ১৯৪২ সালে খেলা তার একটি ম্যাচকে প্রেরণা হিসেবে নিয়েছিলেন, যে ম্যাচে একি প্রতিপক্ষ এই হাঙ্গেরির বিপক্ষেই তারা ৩-১ গোলে পিছিয়ে পড়েছিলেন । কিন্তু ঐ ম্যাচে খুব শিগগিরই জার্মানি বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠে । বিশ্বকাপ ফাইনালের এই ম্যাচেও তেমনটিই করার চেষ্টা করলেন তিনি। তার ধারাবাহিকতায়, মাত্র ২ মিনিট পরেই হাঙ্গেরিয়ান গোলরক্ষক গ্রসিক্সকে ধোঁকা দিয়ে পশ্চিম জার্মানির পক্ষে প্রথম গোলটি করলেন ম্যাক্স মারলক। জার্মানরা খুব তাড়াতাড়িই খেলার গতির সাথে নিজেদের মানিয়ে নিল। খেলার ৩০ মিনিটের মাথায় ম্যাক্স মারলক তিন হাঙ্গেরিয়ান ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে শেষ পর্যন্ত একটি কর্নার জয় করেন । সেই কর্নার থেকেই হেলমুট ‘ডার বস’ রান দুর্দান্ত ভলির মাধ্যমে দলকে ২-২ সমতায় ফেরান।
ম্যাচের অর্ধসময়ের পর প্রথম ১৫ মিনিট ম্যাগইয়ার্সরাই খেলায় প্রাধান্য বিস্তার করতে থাকে। পশ্চিম জার্মান গোলরক্ষক টনি তুরেক কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সেভ করেন, ক্রসবারে লেগেও ফিরে আসে একটি শট। ক্রসবার থেকে বল ফিরে আসার পর হাঙ্গেরিয়ানরা নিজেদের উপর কিছুটা বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছিল। আর এরই সুযোগ নিল জার্মান উদ্যমীরা।
খেলার মাত্র আর ৬ মিনিট বাকি! পশ্চিম জার্মান রেডিও ধারাভাষ্যকার হারবার্ট জিমারম্যান অন্যদিকে বলছেন, “বক্সে একটি ক্রস শানালেন শেইফার……… হেডার করে ক্লেয়ার করলেন ডিফেন্ডার………হেলমুট রানের পায়ে বল……ডান পা দিয়ে ফেক শট নিলেন, ঘুরেছেন এবং বাম পা দিয়ে শট নিলেন”। “গোলরক্ষক গ্রসিক্সের ধরাছোঁয়ার বাইরে দিয়ে গোল!!!!!! গোল!!!!!! গোল!!!!!! গোল!!!!! ৩-২ গোলে লিড পেল জার্মানি!” জিমারম্যান কাঁদতে কাঁদতে রেডিওতে বললেন।
৩-২ ব্যবধানেই শেষ পর্যন্ত পশ্চিম জার্মানি জিতে যায় ১৯৫৪ সালের ফুটবল বিশ্বকাপ। ফুটবল ইতিহাসে এটি ছিল একটি অসম্ভাব্য ও উদ্দীপক বিপর্যয়, যেটির সুনাম ক্রীড়াবিশ্বকেও ছাপিয়ে গেছে। এই বিজয় নতুন জার্মানিকে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে সহায়তা করে, দেশজুড়ে এক নতুন আত্মবিশ্বাসের যোগান দেয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দুর্দশা পেরিয়ে জার্মানরা প্রথম বারের মত প্রশান্তির মুক্তি অনুভব করে।
১৯৫০ থেকে ১৯৫৬ সালের মধ্যে হাঙ্গেরিয়ান ‘ম্যাজিকাল ম্যাগইয়ার্স’রা মোট ৫০ টি ফুটবল ম্যাচ খেলে। যার মাঝে ছিল ৪২ টি জয়, ৭ টি ড্র ও মাত্র ১ টি পরাজয়। আর এই একটি পরাজয়ই হাঙ্গেরিয়ানদের কপালে শনি হয়ে এল। এই হার দিয়েই বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্নকে হাতছাড়া করে তারা। অন্যদিকে বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের নায়ক বনে যান পশ্চিম জার্মান কাপ্তান ফ্রিৎস ওয়াল্টার।
ওয়াল্টার প্রথম কোন ফুটবলার হিসেবে দেশের সর্বোচ্চ সম্মাননা “গ্র্যান্ড ক্রস অফ দা অর্ডার অফ মেরিট অফ দা ফেদারাল রিপাবলিক অফ জার্মানি” অর্জন করেন । বহু বছর পরও ওয়াল্টার সেই ১৯৫৪ এর স্পর্শকাতর স্মৃতি গুলোই রোমন্থন করেছেন। জার্মান এই কিংবদন্তির ৮০তম জন্মবার্ষিকীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে জার্মান টেলিভিশন ১৯৫৪ সালের সেই ফাইনালকে সম্প্রচার করে। ওয়াল্টার চোখে জল নিয়ে তখন বলেছিলেন, “এটা দেখে এখনও আমার গাঁয়ে কাঁটা দেয়”!
তথ্যসূত্রঃ
http://www.goaldentimes.org/
জার্মান রূপকথার শুরুর নাম “ফ্রিৎস ওয়াল্টার আবহাওয়া” – ইতিবৃত্ত
http://umfp.ma/?p=4794
জার্মান রূপকথার শুরুর নাম “ফ্রিৎস ওয়াল্টার আবহাওয়া” – ইতিবৃত্ত
http://themasterscall.net/december-2014/
https://canadaph24.pro/# canada drugs online review
http://indiaph24.store/# online pharmacy india
https://indiaph24.store/# best online pharmacy india
https://mexicoph24.life/# purple pharmacy mexico price list
canadian pharmacy 24h com safe: Prescription Drugs from Canada – best rated canadian pharmacy
https://indiaph24.store/# cheapest online pharmacy india
http://mexicoph24.life/# mexico drug stores pharmacies
https://mexicoph24.life/# mexico pharmacies prescription drugs
http://canadaph24.pro/# legitimate canadian online pharmacies
pharmacies in mexico that ship to usa: cheapest mexico drugs – mexican mail order pharmacies
http://indiaph24.store/# online shopping pharmacy india
http://canadaph24.pro/# canada pharmacy reviews
http://mexicoph24.life/# mexican mail order pharmacies
http://indiaph24.store/# india online pharmacy
medicine in mexico pharmacies: mexican online pharmacies prescription drugs – buying prescription drugs in mexico online
buy terbinafine 250mg sale – buy griseofulvin pills for sale buy griseofulvin tablets
https://canadaph24.pro/# legitimate canadian mail order pharmacy
https://mexicoph24.life/# buying prescription drugs in mexico
http://mexicoph24.life/# mexican online pharmacies prescription drugs
reliable canadian pharmacy: canadian pharmacies – canadian drug prices
https://indiaph24.store/# top 10 online pharmacy in india
https://canadaph24.pro/# ed drugs online from canada
http://mexicoph24.life/# medication from mexico pharmacy
http://indiaph24.store/# pharmacy website india
http://mexicoph24.life/# buying prescription drugs in mexico online
https://mexicoph24.life/# mexico drug stores pharmacies
https://canadaph24.pro/# canadian pharmacy meds
http://canadaph24.pro/# legit canadian pharmacy
http://canadaph24.pro/# best canadian online pharmacy