বার্সেলোনা বিশ্বের বড় বড় ফুটবল ক্লাবগুলোর মধ্যে একটি। ফুটবল বিশ্বে এর আধিপত্যের কথা আমাদের সকলেরই কম বেশি জানা থাকলেও এই স্প্যানিশ ফুটবল ক্লাবটি সম্পর্কে অনেক চমকপ্রদ তথ্যই আমরা জানি না । যদি আপনার মনে হয় আপনি বার্সেলোনা ফুটবল ক্লাব নিয়ে সব জানেন, তবে বাজি ধরে বলতে পারি নিচের যেকোনো একটি আপনার অজানা থাকবেই। চলুন জেনে নেয়া যাক বার্সেলোনা সম্পর্কে কিছু জানা-অজানা তথ্য –
১. “মোর দ্যান আ ক্লাব”:

আপনি কি কখনও ভেবে দেখেছেন এই মোর দ্যান আ ক্লাব, বাক্যটি কিভাবে এসেছে? যা ক্যাম্প নূ স্ট্যাডিয়ামের মুল আলোড়ন। এই বাক্যটি স্প্যানিশ একনায়কতন্ত্র চলাকালীন সময় থেকে চলে আসছে। ফ্রাংকো যখন একনায়কতন্ত্র চালাচ্ছিল, সেই সময় থেকে চলে আসছে। ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনার পরিচায়ক হলো এই বাক্যটি। একনায়কতন্ত্র চলাকালীন সময়ে কাতালুনীয় প্রতিষ্ঠাগুলো অবদমিত ছিল এবং ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনা ছিল সেই কয়েকটি অল্প প্রতিষ্ঠানের একটি যেখানে মুক্তভাবে মনের ভাব প্রকাশ করা যেত। তাই ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনা তার সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক অনুষ্ঠানাদির কারণে “মোর দ্যান আ ক্লাব” হিসেবে পরিচিত হতে থাকে।
২. বার্সেলোনা এর একের অধিক ক্লাব রয়েছে :
হ্যাঁ! ঠিক পড়েছেন, বার্সেলোনার আরেকটি ফুটবল ক্লাব রয়েছে যা বার্সেলোনা শহরের ওপর ভিত্তি করে গঠিত। অনেক ফুটবল ভক্তদেরই এই তথ্যটি অজানা। এখন যেহেতু জেনে গিয়েছেন তাহলে বন্ধুদের জানিয়ে কিছুটা সবজান্তা ভাব নিলে কিন্তু খারাপ হয়না। “এফসি বার্সেলোনা” এর পাশাপাশি, “আরসিডি এস্পানিওল” হলো বার্সেলোনার আরেকটি ক্লাব। এটি বার্সেলোনা শহরে গঠিত এবং ভক্তদের প্রচুর সমর্থন পেয়ে থাকে এই ক্লাবটি । “আরসিডি এস্পানিওল” ১৯০০ সালে গঠিত এবং স্পেনের একমাত্র ফুটবল টিম যা সম্পূর্ণ স্প্যানিশ খেলোয়াড় নিয়ে গঠিত হয়েছিল। দলটি ধনী প্রতিবেশী “সারিয়া” এর সাথে গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত যা স্পেনের প্রান্তদেশে অবস্থিত এবং নগর প্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনার দলের সাথে প্রতিযোগিতা রয়েছে।

৩. ফ্রাংকো ক্লাবের নাম এবং ক্লাবের দাপ্তরিক নাম পরিবর্তন করেছে :
কাতালুনীয় গর্বের ইতিহাসের কারণে ফ্রাংকোর একনায়কতন্ত্র চলাকালীন ক্লাবটি কর্তৃত্বকারীদের নেতিবাচক আকর্ষণের মূল কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়ায়। তাদের কাতালুনীয় ভাষা ব্যবহার করতে দেয়া হয় না এবং সকল কাতালুনীয় পতাকা, প্রতীক তাদের জার্সি থেকে সরাতে বলা হয়। তাই জোরপূর্বক ক্লাবটির নাম পরিবর্তন করে ‘ক্লাব দে ফুটবল দে বার্সেলোনা’ রাখা হয় যা পুনরায় পরিবর্তন করে ১৯৭৪ সালে আগের নাম রাখা হয়।

৪. তারা তাদের নিজস্ব খেলার ধরন তৈরি করেছিল :
হয়তো বার্সেলোনার সর্বকালের সেরা খেলোয়াড় এবং কোচ ছিলেন জোহান ক্রুফ। তিনি ১৯৭৩ সালে আয়াক্স থেকে বার্সেলোনা যোগ দিয়েছিল। পরবর্তীতে আমেরিকায় স্থানান্তরের আগে কিছুকাল বার্সেলোনায় খেলেছিলেনও। এরপর ১৯৮৮ সালে তিনি আবার বার্সেলোনায় ফিরেন তবে এইবার খেলোয়াড় হয়ে নয়, কোচ হয়ে। তিনি পেপ গার্ডিওয়ালা, জোসে মারিও বাকেরো, বেগিরিস্টেইন দের নিয়ে তৈরি করেন ইতিহাস বিখ্যাত “ড্রিম টিম” এবং তিনিই বার্সেলোনার স্বতন্ত্র খেলার ধরন “টিকি টাকা” বা “সম্পূর্ণ ফুটবল দর্শনকারী” এর পিছনের মূল নায়ক।

৫. ক্লাবের সদস্যরাই এই ক্লাবের মালিক :
এফসি বার্সেলোনা সেই কয়েকটি অল্প সংখ্যক ক্লাবের একটি যার মালিক ক্লাবের সদস্যরা নিজেরাই। ব্যাপারটা মজার না? পৃথিবীতে এমন দৃষ্টান্ত খুব কম আছে যেখানে এমন দেখা যায়। সুইস ব্যবসায়ী Joan Gamper এবং তার ১০ জন বন্ধু ( Gualteri Wild, Lluís d’Ossó, Bartomeu Terrados, Otto Kunzle, Otto Maier, Enric Ducal, Pere Cabot, Carles Pujol, Josep Llobet, John Parsons and William Parsons ) ১৮৮৯ সালের ২৯শে নভেম্বর ক্লাবটি প্রতিষ্ঠা করে। একত্রে এইসব সদস্যরা ক্লাবের মূল গঠন তৈরি করে এবং মূল অবকাঠামোগত কাজে ভূমিকা রাখে এবং ২০১৬ সালে সেখানে ১৪০,০০০ কাতালান সদস্য ছিল। কিছু নির্দিষ্ট সংখ্যক কাজে এই সদস্যদের মতামতের যথাযথ গুরুত্ব দেয়া হয়। পৃথিবীর ২য় ধনী ক্লাবের সদস্য হওয়াটা খুব একটা খারাপ না কিন্তু!

৬. কাতালান জাতীয়তাবাদীর আন্দোলনের সাথে অন্তর্ভুক্তির ইতিহাস :
গোঁড়া থেকেই কাতালান জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সাথে ক্লাবটির শক্ত বন্ধন ছিল। উভয় সমর্থক এবং ব্যবস্থাপকেরা ক্লাবটিকে স্থানীয় পরিচয়ের চিহ্ন হিসেবে দেখতো । গৃহযুদ্ধ বিরতির সময় ক্লাব প্রেসিডেন্ট জোসেফ সুনয়ুল যে কিনা একজন মুক্তির সমর্থক ছিলেন। তিনি ফ্যালাংগিস্ট সৈন্য কর্তৃক নিহত হন। ১৯৫১ সালে একদিন সমর্থকেরা ম্যাচ শেষে ট্রামে করে না ফিরে বৃষ্টিতে পায়ে হেটে শহরে ফিরে, ট্রাম চালকদের সমর্থনে যারা কর্তৃত্বকারীদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছিল।

৭. একজন সুইস ব্যক্তি ক্লাবটি গঠন করেছিলেন :
ক্লাবটির কাতালুনীয় পরিচয়ের সাথে গভীর সম্পর্ক থাকলেও ক্লাবটি হ্যানস গ্যামপার নামক একজন সুইস ব্যবসায়ী গঠন করেছিলের যিনি “এফসি জুরিচ” ক্লাবটি গঠনেও ভূমিকা রাখেন। একটি স্থানীয় ক্লাব গঠনের উৎসাহে তিনি স্থানীয় আখড়ায় আলোচনার জন্য স্থানীয় পত্রিকায় একটি বিজ্ঞাপন দেন যার ফলে ১১ জন মানুষ অংশগ্রহণ করেন। তিনি পরবর্তীতে ক্লাবটির প্রেসিডেন্ট হন, এবং স্থানীয়দের উচ্চারণের সুবিধার্থে নাম পরিবর্তন করে রাখেন জন গ্যামপার।

৮. ঘরোয়া খেলায় সমর্থকদের অংশগ্রহণ খুবই কম :
দেশে- দেশান্তরে এত জনপ্রিয় ক্লাব হয়েও নিজেদের স্ট্যাডিয়াম “নূ ক্যাম্প” এ সমর্থকদের অংশগ্রহণের স্বল্পতার কুখ্যাতি রয়েছে। শহর জুড়ে বার এবং ক্যাফেতে খেলা সম্প্রচার করায় খুব অল্প মাথা স্ট্যাডিয়ামের দিকে যায়। অনেকের এমনও মনে করেন টিকেটের অধিক দাম। এসকল কারণেই মূলত সমর্থকদের অংশগ্রহণের ঘাটতির দেখা মেলে। তবে পর্যটকদের ম্যাচের প্রতি আকর্ষণ এর কোনো কমতি নেই ।
৯. ইউরোপের ২য় সর্বোচ্চ জনপ্রিয় দল:
পরিসংখ্যান থেকে দেখা গিয়েছে, যখন ইউরোপের কোন ফুটবল ভক্তকে জিজ্ঞেস করা হয়, তোমাদের ২য় পছন্দের ফুটবল দল কোনটি সকলের দ্রুত উত্তর ছিল, এফসি বার্সেলোনা। ক্লাবটি প্রচুর ফুটবল ভক্তের মন জয় করেছে। তাছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ফুটবল ক্লাব এফসি বার্সেলোনা খুবই জনপ্রিয়।

১০. পৃথিবী ব্যাপি সর্বোচ্চ ব্যালন ডি’অর জয়ীদের ক্লাব:
এফসি বার্সেলোনার ১১ টি খেলোয়াড় এই মূল্যবান পুরস্কার পেয়েছে। জুভেন্টাস, এসি মিলান থেকে ৩টি বেশি ( দুইটি দলেরই আটটি করে ব্যালন ডি’অর জয়ী রয়েছে) । ক্লাবের প্রতি আর্জেন্টাইন লিওনেল মেসির অবদান অন্যদের তুলনায় সর্বোচ্চ, তিনি এই পর্যন্ত ৫ টি ব্যালন ডি অ’র জিতেছেন।
১১. ক্লাবটির সমর্থকদের ডাক নাম ছিল “দি আর্সেস”:
সমর্থকদের এই নামটি বার্সেলোনার প্রথমদিকের সময়ে ছিল যখন তারা তাদের প্রথম স্ট্যাডিয়ামে খেলতো যা ছিল “লেস কোর্টেস” এর পাশে। গুজব শোনা যায়, স্ট্যাডিয়ামের সবচেয়ে উঁচু সারিতে সমর্থকেরা তাদের পিছনের দিকে ঝুঁকে বসত যার ফলে পথচারীরা উপরের দিকে তাকালে শুধুই সারি সারি ভাবে “কিউল” দেখত। (কিউল অর্থ পশ্চাৎদেশ)

১২. রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব :
রিয়াল মাদ্রিদের সাথে বার্সেলোনার চরম প্রতিনিধিত্ব কোন কাকতালীয় ব্যাপার নয়। রাজনীতিই এর মূল কারণ ছিল বহু আগে যা পরবর্তীতে ভিন্নধর্মী প্রতিযোগিতার রূপ নেয়। দুটি ক্লাবের মাঝেই চরমভাবে রাজনীতি বিরাজমান যা বহু আগে থেকে তাদের প্রতিদ্বন্ধিতার মূল কারণ। ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনা স্পেনের রাজধানী থেকে কাতালুনীয় স্বায়ত্তশাসনের প্রতিনিধিত্ব করে। রাজনৈতিক দিক থেকে যার মনমালিন্য রয়েছে, যা পরবর্তীতে প্রতিদ্বন্দ্বীন্তায় রূপ নেয়।

১৩. ইয়ুথ একাডেমী “লা মাসিয়া”:
বার্সেলোনার নিজেদের ইয়ুথ একাডেমী রয়েছে যেখান থেকে অনেক বিখ্যাত খেলোয়াড় বের হয়ে এসেছে। কার্লোস পুয়েল, এন্দ্রেস ইনিয়েস্তার মতো বহু কিংবদন্তী এর ফুটবল শিক্ষার হাতেখড়ি এই লা মাসিয়া। শুধু তাই নয়, ম্যানচেস্টার সিটির কোচ পেপ গার্ডিওয়ালা ও সেরা খেলোয়ার লিওনেল মেসির ফুটবল এর প্রথম পর্যায় এই লা মাসিয়া। তাছাড়া লা মাসিয়ার তরুণ খেলোয়াড়েরা নিজেদের তৈরি “ মিনি এল ক্লাসিকো ” খেলে। তাদের খেলা দেখলে বোঝা যায় যে ফুটবলের ভবিষ্যৎ কতটা উজ্জ্বল।

১৪. নিজস্ব স্ট্যাডিয়াম “দি ক্যাম্প নূ” :
বার্সেলোনার স্ট্যাডিয়াম “ক্যাম্প নূ” বা “ক্যমপো নূয়েভা” ১৯৫৭ সালে তৈরি হয়। এই স্ট্যাডিয়ামের ধারণ ক্ষমতা ৯৯০০০ যা স্ট্যাডিয়ামটিকে ইউরোপের সর্ববৃহৎ এবং পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম স্ট্যাডিয়ামের তালিকায় রাখে। যদিও স্ট্যাডিয়ামটি প্রথমে ব্রাজিলের মারাকানো স্ট্যাডিয়ামের সমান দর্শকদের খেলা দেখার অনুমতি দিতে পারত। তবে নিরাপত্তাজনিত কারণে প্রথমদিকে তা করা হত। বার্সেলোনার হোম গ্রাউন্ড নূ ক্যাম্প পৃথিবীর আধুনিকতম স্ট্যাডিয়ামগুলোর একটি যা আরো বড় আকারে সংস্কার করার জন্য ইতিমধ্যে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

১৫. জার্সি তৈরির জন্য ছিল না কোন ব্র্যান্ড:
এটা শুনতে একটু অদ্ভুত লাগলেও সত্য যে ১৯৮২ সালে আধুনিক যুগ শুরু হওয়ার এত পরও বা বলতে পারেন প্রায় আধুনিক যুগের মাঝামাঝি সময়েও ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনার ছিল না জার্সি তৈরির কোন ব্র্যান্ড। তখন ছিল না ‘পুমা’ অথবা ‘উম্রো’ সহ অনেক জনপ্রিয় ব্র্যান্ডও। প্রথম জার্সি ব্র্যান্ড হিসেবে স্থানীয় “মেইবা” নামক প্রতিষ্ঠান নিযুক্ত হয়। তারপর থেকে টানা ছয় বছর ‘কাপ্পা” নামক ইতালিয়ান ব্র্যান্ড জার্সি তৈরিকারক হিসেবে নিযুক্ত থাকে এবং ১৯৯৮ থেকে ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনার টেকনিকাল স্পন্সর হয় “নাইক” ।

তথ্যসূত্র – the culturetrip.com, worthseeing.com,Wikipedia, google,youtube
dutasteride online order celebrex without prescription zofran buy online
levaquin pills levofloxacin 500mg tablet