লিওনেল মেসি বর্তমান সময়ের অন্যতম সেরা ফুটবলার এবং অনেকেই মেসিকে সর্বকালের সর্বসেরা ফুটবলার হিসেবে আখ্যা দিয়ে থাকেন ।
“La Pulga” বা “The Atomic Flea” খ্যাত মেসি গত এক দশক ধরে ফুটবল বিশ্বকে মাতিয়ে রেখেছেন তার অসাধারন ড্রিবলিং আর বল পাসিং দক্ষতার মাধ্যমে । তার বয়স এখন ৩০ । তবে তার বর্তমানের পারফর্মেন্স দেখলেই বোঝা যায় বয়স নিয়ে থোড়াই কেয়ার করেন তিনি। বয়স মেসির খেলায় কোনো প্রকার আঁচ ফেলতে পারেনি সেটা তার সাম্প্রতিক পারফর্মেন্স দেখলেই বোঝা যায়।
এক দশকের অধিক সময়ে তিনি ক্ল্যাব ফুটবল খেলেছেন ফ্র্যাঙ্ক রাইকার্ড, পেপ গার্দিওলা এবং লুইজ এনরিকের মতো ম্যানেজারদের অধীনে ।
জিতেছেন বার্সেলোনার হয়ে অসংখ্য সব ট্রফি । তার অসাধারন সাফল্যের বদৌলতে সারা বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ পরিনত হয়েছে তার ভক্তে , আর্জেন্টাইন এ সেনসেশন সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য জানলে মন্দ হয় না ।
১. মেসির পুর্বপুরুষদের ইতিহাস
মেসির জন্ম হয়েছে আর্জেন্টিনার রোজারিও শহরে এবং কাতালান জায়ান্ট বার্সেলোনার হয়ে খেলার জন্যে স্পেন যাওয়ার পুর্বে এই শহরেই তিনি তার শৈশব কাটান । তবে একটি ব্যাপার অনেকেই জানেন না যে মেসির পুর্ব পুরুষগন বহু সময় আগে ইতালি থেকে আর্জেন্টিনায় আসেছিলেন ।

২. মেসির প্রথম ক্লাব
অনেকেই মনে করে থাকেন মেসির প্রথম ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনা আর যারা ফুটবল সম্পর্কে মোটামুটি আগ্রহ রাখেন তারা হয়তো জানেন মেসির প্রথম ফুটবল ক্লাব ছিলো নিউওয়েলস ওল্ড বয়েজ । নিউওয়েলস ওল্ড বয়েজ ক্লাব তার জন্মস্থান রোজারিওর স্থানীয় একটি ফুটবল ক্লাব । তবে একটি ব্যাপার সম্পর্কে অনেকেই জানেন না যে নিউওয়েলস বয়েজ ক্ল্যাবের হয়ে মাঠে নামার আগে স্থানীয় ক্লাব ফুটবলে তার অভিষেক হয় স্থানীয় ক্লাব গ্র্যান্ডোলিতে যে ফুটবল ক্ল্যাবের কোচ চিলেন মেসির বাবা হোর্হে ।

;Source: busybuddiesng.com
৩. অস্বস্তিকর শৈশব
মেসির শৈশবটি মোটে সুখকর ছিলো না , মাত্র এগারো বছর বয়সে growth hormone deficiency নামক অদ্ভুত এক রোগ তার শরীরে বাসা বাঁধে । অল্প বয়সে এই রোগের কারণে তার শরীরের স্বাভাবিক বৃদ্ধির হার কমে যায় ।

৪. প্রথম বড় ক্লাবে খেলার সুযোগ
এ ব্যাপারটি অনেক প্রসিদ্ধ যে নিউওয়েলস ওল্ড বয়েজের হয়ে খেলার সময়ে বার্সেলোনা মেসিকে তাদের দলে নেওয়ার আগ্রহ দেখায় এবং পরবর্তিতে বার্সেলোনার হয়ে খেলতে স্পেনে পাড়ি জমান তিনি। তবে বার্সেনোলার আগেই আর্জেন্টিনার প্রসিদ্ধ ক্লাব রিভারপ্লেট মেসিকে তাদের দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করে কিন্তু মেসির গ্রোথ সিন্ড্রোম ব্যাধির ব্যাপারে জানতে পেরে এই রোগের ব্যায়বহুল চিকিৎসার পেছনে অর্থ ব্যয় করার ঝুঁকি নেয়নি ।

৫. বার্সেলোনাতে যোগদান
আর্জেন্টাইন ক্লাব রিভারপ্লেট তাকে দলে নিতে চাইলেও গ্রোথ সিন্ড্রম ডিফিসিন্সি রোগে আক্রান্ত হওয়ার খবর জানতে পেরে ক্লাবের পক্ষ থেকে তার চিকিৎসা খরচ বহন সম্ভব নয় বলে জানায় । বার্সেলোনার তখনকার স্পোর্টিং ডিরেক্টর এ ব্যাপারটি জানতে পেরে মেসিকে আর্জেন্টিনায় বার্সেলোনার ট্রায়াল টিমের হয়ে খেলার সুযোগ করে দেন । ট্রায়ালে মেসির অসাধারন ফুটবল প্রদর্শনীতে মুগ্ধ হয়ে তাকে বার্সেলোনার হয়ে খেলার জন্যে বাছাই করা হয় ।

মজার ব্যাপার হচ্ছে মেসির কন্ট্রাক্ট পেপারটি সাইন হয়েছিলো একটি ন্যাপকিনের কাপড়ে কারণ তখন কোনো কাগজ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো না ।

মেসির কন্ট্রাক্টে ছিলো যে ক্লাব বার্সেলোনা মেসির সম্পুর্ন চিকিৎসার খরচ বহন করবে এবং বার্সেলোনার হয়ে খেলার জন্যে মেসিকে স্পেনে চলে আসতে হবে ।

৬. লাজুক স্বভাবের মেসি
ছোটোবেলা থেকেই মেসি অত্যন্ত লাজুক স্বভাবের এবং বর্তমানেও তিনি আগের মতোই রয়েছেন। তার ঘনিষ্ঠ সুত্র থেকে জানা গেছে যে মেসি ফোনে কথা বলতে চরম অস্বস্তিবোধ করেন । তার সাথে যত গুরুত্বপুর্ন কথায় হোক না কেনো সেটা এসএমএসের মাধ্যমে তাকে জানাতে হয় এবং তার জবাবও তিনি এসএমএসের মাধ্যমেই দেন।

৭.ভোজন রসিক
বার্সেলোনার মুল দলে খেলা শুরু করার প্রথমদিককার সময়ে খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারে তেমন একটা বাছবিচার করতেন না মেসি । অনিয়ন্ত্রিত ডায়েটের কারণে তার ফিটনেসের অবস্থা তেমন একটা সুবিধার ছিলো না। ফিটনেস ঘাটতির কারণে বার্সেলোনা মুল একাদশে মেসির স্থান নিশ্চিত ছিলো না ।

যখন গর্দিওলা বার্সেলোনার ম্যানেজার হিসেবে যোগদান করেন তখন তিনি মেসির খাদ্য নিয়ে এ অনিয়মের কথা জানতে পেরে তার জন্যে একজন ফিজিওথেরাপিস্ট ঠিক করে দেন । গার্দিওলা বার্সেলোনার ট্রেনিং সেন্টার থেকে কোক ভেন্ডিং মেশিন সরিয়ে ফেলার আদেশ দেন । যে মেশিনটা সবচেয়ে বেশি ব্যাবহার করতেন লিও ।
৮. মেসি র গোল উদযাপন
মেসির আকাশের দিকে দুহাত হাত উঁচিয়ে করা গোল উদযাপনটি বিশ্ব বিখ্যাত । এই উদযাপনটি করার মাধ্যমে তিনি তার প্রয়াত হওয়া দাদীকে শ্রদ্ধা জানান ।

যিনি মেসির অত্যন্ত প্রিয় একজন মানুষ ছিলেন এবং মেসির ১০ বছর বয়সে তার দাদী মৃত্যুবরণ করেন । লিও মনে করেন তার দাদী মারা গেলেও তার ছায়া এখনো লিও’র মাথার উপরে রয়েছে এবং তিনি উপর থেকে সব সময় তাকে দেখছেন । এ কারণেই আকাশের দিকে দু হাত উঁচিয়ে এ ভঙ্গিমার মাধ্যমে লিও তার দাদীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ।
৯.ফুটবলারময় পরিবার
মেসির পরিবারের শুধু তিনি একাই ফুটবলার নন । তার পরিবারে তিনি ছাড়াও আরো অনেকেই প্রফেশনাল ফুটবলের সঙ্গে জড়িত আছেন । তার বাবা হোর্হে অতীতে একটি ফুটবল ক্লাবের কোচ ছিলেন। মেসির কয়েকন কাজিন রয়েছেন প্রফেশনালি ফুটবল খেলে থাকেন । তার কাজিন ম্যাক্সি প্যারাগুয়ের ক্ল্যাব অলিম্পিয়ার হয়ে ক্লাব ফুটবল খেলেন । তার আরেকজন কাজিন ইমানুয়েল গিরোনা এফসি নামক দলের হয়ে ক্লাব ফুটবল খেলেন।

১০.মেসি র দানশীলতা
২০০৭ সালে লিও মেসি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠা করেন মেসি । এ ফাউন্ডেশনটির মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত ও অসুস্থ শিশুদের সাহায্য করা হয় । তাদের চিকিৎসা,পড়াশোনা এবং অন্যান্য খরচ বহন করা হয় ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে । লিও তার দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান , শৈশবে তিনি কঠিন একটি সময় পার করেছিলেন শারীরিক অসুস্থতার কারণে । শারীরিকভাবে অসুস্থ শিশুদের অসহনীয় যন্ত্রনাকর সময় কাটাতে হয় সেটা তিনি জানেন । এই ফাউন্ডেশনটির মাধ্যমে তিনি দুস্থ শারীরিকভাবে অসুস্থতার স্বীকার অসহায় শিশুদের সাহায্য করার চেষ্টা করেন।