বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে ঘটে যাওয়া প্রথম বিশ্বযুদ্ধ আধুনিক কালের ভয়াবহ একটি ঘটনা। যুদ্ধকে কেন্দ্র করে নিতে হয় নানান কৌশল ও পরিকল্পনা। আর এই কৌশল থেকে বেড়িয়ে আসে নানান সৃষ্টি। আবার ধ্বংসও হয়ে যায় নানান কিছু। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মধ্য দিয়েও এমন কিছু জিনিষ বেড়িয়ে এসেছিল যা পূর্বে অত প্রচলিত ছিলনা। এমন দশটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আবিষ্কার নিয়েই আজকের লেখাটি সাজানো হল। জেনে অবাক হবেন যে এগুলো প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মাধ্যমেই এসেছে।
১. স্যানিটারি টাওয়েলঃ
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের জনপ্রিয় একটি আবিষ্কার হল স্যানিটারি গামছা। কেননা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় সৈন্যদের জন্য যথেষ্ট স্বাস্থ্যকর পরিবেশ ছিলনা তাই আমেরিকার কিম্বলে-ক্লার্ক নামের একটি প্রতিষ্ঠান অধিক শোষণ ক্ষমতা সম্পন্ন এই টাওয়েল বা গামছা তৈরি করে। আমেরিকান সৈন্যরা ও তার মিত্র বাহিনী এই স্যানিটারি টাওয়েলের সরবরাহ পেত। এছাড়াও রেড ক্রসের নার্সরাও এই টাওয়েল ব্যবহার করত।
পরবর্তীতে এই অধিক পানি শোষণ ক্ষমতা সম্পন্ন টাওয়েল এর ধারণা থেকে আজকের ন্যাপকিন এর ধারণা এসেছে।
২. হ্যানকিস কাগজ বা টিস্যুঃ
আজকে আমরা সে টয়লেট টিস্যু বা মুখ মোছার জন্য ফেসিয়াল টিস্যু ব্যবহার করি তা মূলত প্রথম বিশ্বযুদ্ধকালীন সময় থেকে শুরু। এটি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম একটি আবিষ্কার।
৩. সূর্যের আলোঃ
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার সময় জার্মানের প্রায় অর্ধেক শিশুই রিকেটস রোগে আক্রান্ত হয়েছিল। এই রোগের কোন চিকিৎসা কেউ খুঁজে পাচ্ছিল না। তখন একজন জার্মান কার্ড হার্লেডেলন্সকি চারটি বাচ্চার উপর এক্সপেরিমেন্ট করে পেলেন যে রোদের আলোর মাধ্যমে রিকেটস রোগের সমাধান সম্ভব। কেননা রোদে ভিটামিন ডি থাকে যার অভাবে রিকেটস রোগ হয়। তার এই আবিষ্কার প্রকাশিত হবার পর সৈন্যরাও রিকেটস রোগ থেকে মুক্তি পাবার জন্য রোদ পোহাতে শুরু করে।
৪. হাত ঘড়িঃ
এটা সত্য যে হাত ঘড়ি প্রথম বিশ্বযুদ্ধকে কেন্দ্র করেই তৈরি হয়। কেননা হাত ঘড়ি থাকার ফলে সৈন্যরা সময় জ্ঞান সম্বন্ধে অবহিত হয়। ফলে তারা সময়মত কাজ করতে সমর্থ হয়। কখন যুদ্ধে যেতে হবে, কখন ঘুমাতে হবে কিংবা খেতে হবে। এসকল কিছু একটা রুটিনের আওতায় চলে আসে। যার হেতু সৈনিকদের মধ্যে শৃঙ্খলা আসে।
৫. দিবালোক সংরক্ষণ সময়ঃ
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রথম দিকে সময় সম্পর্কে জ্ঞাত হওয়ার জন্য কোন ব্যবস্থা ছিলনা। যার কারণে সৈন্য কখন ঘুমাবে সেটাও নির্ধারণ করা কষ্টসাধ্য ছিল। কিন্তু দিবালোক সংরক্ষণ আবিষ্কার হওয়ার ফলে সময় একটু এগিয়ে দেয়া হয়। এই যেমন রাত ১১টাকে বারোটা করে দেয়া হয় ফলে সৈন্যরা ঘড়ি দেখে সত্যিকার সময়ের আগেই ঘুমাবে। ফলে আগে ঘুম থেকে জেগে উঠবে এবং দিনে কাজ করার জন্য সময় বাড়বে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় বিভিন্ন দেশে এই নিয়ম চালু করে দেয়া। এমনকি বাংলাদেশেও শেখ হাসিনা সরকার ঘড়ির কাটা পিছিয়ে দিয়েছিলেন।
৬. টি ব্যাগঃ
অনেক পূর্বেই চায়ের আবিষ্কার হলেও প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় টি ব্যাগের আবিষ্কার হয়। ফলে চা বানানো সহজ হয়ে যায়। এবং সৈন্যরা চা খেয়ে অনেকক্ষণ না ঘুমিয়ে থাকতে পারতো।
৭. নিরামিষ খাবারঃ
এটা মনে করা হত যে আমিষ খাবারই সৈনিকদের শক্তি মেটাতে সবচেয়ে বেশি কার্যকরী। কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় দেখা যায় যে, সেনাদের ক্যালরি পূরণে নিরামিষ খাবার খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। ফলে নিরামিষ খাবারের মধ্যে বেশ বৈচিত্র্যও আসে।
৮. চেনঃ
জামাকাপড়ে ফিতা ব্যবহার একটু সময় সাপেক্ষ কিন্তু চেইনের ব্যবহার বেশ দ্রুত। এজন্যই সৈন্যদের পোশাকে চেন ব্যবহার করা হয় যাতে তারা দ্রুত ও সহজেই কাপড় খুলতে ও পড়তে সক্ষম হয়। আর যেহেতু যুদ্ধের সময় বেশি সময় পাওয়া যায় না তাই পোশকে চেন লাগানোর ফলে তা খুলতে সুবিধা হয়।
৯. স্টেইনলেস স্টিলঃ
হেনরি বেয়ারলি স্টেইনলেস স্টিল এর আবিষ্কার করেন। লোহার থেকে এটি বেশ মজবুত ও শক্তিশালী। ফলে ব্রিটিশ সেনাবাহিনী স্টিলের বন্দুক তৈরি করে যা যুদ্ধকে সহজ করে এবং বুলেটের অপচয় রোধ করে।
১০. কাটা চামচঃ
এটা শুনতে কিছুটা লেইম লেইম মনে হতে পারে কিন্তু কাটা চামচের ব্যবহার প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে। এটি তখন বেশ গুরুত্ব বহন করেছিল। কেননা যুদ্ধের সময় হাত দিয়ে খাবার খেলে আবার হাত ধোয়ার প্রয়োজন হয়। তাতেও পানিরও অপচয় ঘটে ও জীবাণু পেটে গেয়ে আক্রান্ত হবারও আশঙ্কা থাকে।
তথ্যসূত্রঃ
১. http://www.bbc.com/news/magazine-26935867
২. http://mentalfloss.com/article/31882/12-technological-advancements-world-war-i
৩. http://nautil.us/blog/the-6-most-surprising-important-inventions-from-world-war-i
৪. http://www.bbc.co.uk/history/0/26936615
৫. wikipedia