প্রকৃতির অত্যাশ্চর্য সৃষ্টি গুলোর মধ্যে জলপ্রপাত একটি। অবাক করা জলের পতন একই সাথে সৌন্দর্য, শক্তি, এডভেঞ্চার আর বিপদের আধার। চলুন জেনে নেয়া যাক পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কিছু নয়নাভিরাম জলপ্রপাত সম্পর্কে-
১. নায়াগ্রা ফলসঃ
আমেরিকা এবং কানাডা এই দুই দেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত নায়াগ্রা ফলস পানি পতনের দিক থেকে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ জলপ্রপাত। এটি মূলত তিনটি জলপ্রপাতের সমন্বয়ে সৃষ্ট একটি বিশাল জলপ্রপাত। এর আমেরিকার অংশের নাম আমেরিকান ফলস এবং কানাডার অংশের নাম কানাডিয়ান ফলস।১৬৭ ফুট উচ্চতার এই জলপ্রপাত থেকে প্রতি মিনিটে ৬ মিলিওন ঘনফুট পানি নিচে পড়ে যা বিশ্বের সর্বোচ্চ জলপতনের হার। এই জলপ্রপাত এর সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হচ্ছে যে এটি কিন্তু পাহাড় থেকে সৃষ্ট নয়। বরং সমতলে বয়ে চলা একটি নদীতে বিশাল ফাটলের ফলে এই জলপ্রপাতের সৃষ্টি হয়েছে। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক এই জলপ্রপাতের সৌন্দর্য অবলোকন করতে এখানে ভিড় জমায়।
২. এঞ্জেল ফলস, ভেনিজুয়েলাঃ
এঞ্জেল ফলস পৃথিবীর সর্বোচ্চ নিরবিচ্ছিন্ন জলপ্রপাত। এটি দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ভেনিজুয়েলার ‘কানাইমা ন্যাশনাল পার্ক’ এ অবস্থিত। ‘আওয়ান্তেপুই’ নামক পাহাড় থেকে সৃষ্ট জলপ্রপাতটি ‘কেরিপ’ নদীতে গিয়ে মিশেছে। এঞ্জেল ফলস এর উচ্চতা ৩,২১২ ফুট বা প্রায় এক কিলোমিটার। এই জলপ্রপাতের নামকরণ করা হয়েছে জিমি এঞ্জেল নামক একজন আমেরিকান বৈমানিক এর নামানুসারে যিনি সর্বপ্রথম গভীর জঙ্গলে এই জলপ্রপাতটি আবিষ্কার করেন। বিমানে করে এই জলপ্রপাতের উপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় তিনি এর সন্ধান পান। নিরক্ষীয় অঞ্চলের চিরসবুজ বনের ভেতর বয়ে চলা এই জলপ্রপাতের স্থানীয় ভাষায় আরও কয়েকটি নাম রয়েছে। যেমনঃ স্থানীয়দের ‘পেমন’ ভাষায় এর কয়েকটি নাম হচ্ছে ‘কেরেপাকুপাই ভেনা’ যার অর্থ ‘গভীরতম স্থানের জলপ্রপাত’, ‘পারাকুপা ভেনা’ বা ‘সর্বোচ্চ জলপ্রপাত’ ইত্যাদি। স্প্যানীশ ভাষায় এর নাম ‘সালতো এঞ্জেল’। এই জলপ্রপাতের সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে যে এই নির্ঝরের বিশাল জলরাশির উৎস কোনো নদী, হ্রদ, হিমবাহ বা ভূগর্ভস্থ পানি নয়। নিরক্ষীয় রেইনফরেস্ট এ সারাবছর জুড়ে যে বৃষ্টিপাত হয় তার পানিই এই জলপ্রপাতের নিরবচ্ছিন্ন বিশাল জলরাশির উৎস। এই জলপ্রপাতের আরও একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে এতো উপর থেকে পানি পতনের ফলে এর বেশির ভাগ পানি নিচে পড়ার আগেই বাষ্পে পরিণত হয়ে যায় এবং চারপাশে কুয়াশার আস্তরণ তৈরি করে যা এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্যের অবতারণা করে।
৩. ভিক্টোরিয়া ফলসঃ
ভিক্টোরিয়া ফলস বা স্থানীয় ভাবে পরিচিত ‘মসি-ওয়া-তুনয়া’ যার মানে ‘বজ্রপাত সৃষ্টিকারী ধোঁয়া ’ জাম্বিয়া এবং জিম্বাবুয়ে এ দুটি দেশের সীমানা ঘেঁষে অবস্থিত একটি জলপ্রপাত যার উৎপত্তি জাম্বেসি নামক নদী থেকে। তীব্র গতিতে পানি নিচে আছড়ে পড়ে চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে প্রচুর ধোঁয়া সৃষ্টি হয় বলে স্থানীয় বাসিন্দারা একে ‘মসি-ওয়া-তুনয়া’ নামে ডাকে। এই জলপ্রপাতের ‘ভিক্টোরিয়া’ নামকরণ করা হয়েছে রাণী ভিক্টোরিয়ার নামানুসারে। ডেভিড লিভিংস্টোন নামে এক পর্যটক প্রথম এই জলপ্রপাতটি দেখতে পান এবং তিনিই এই নামকরণ করেন। ভিক্টোরিয়া ফলস এর উচ্চতা ১০৮ মিটার হলেও এর প্রস্থ ১,৭০৮ মিটার বা ১.৭ কিলোমিটার এবং প্রতি সেকেন্ডে এটা ১ মিলিয়ন লিটার পানি প্রবাহিত করে। এটা একক ভাবে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ জলপ্রপাত। ইউনেস্কো এই জলপ্রপাতটিকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে ঘোষণা করেছে।
৪. ইগুয়াজু ফলসঃ
দুই কিলোমিটার প্রশস্ত নয়নাভিরাম ইগুয়াজু ফলস ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার সীমান্তবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত যার উৎস ব্রাজিলের ইগুয়াজু নদী।এই জলপ্রপাতটি ইগুয়াজু নদীটিকে দুই ভাগে বিভক্ত করেছে। প্রতি সেকেন্ডে ১,০০০ ঘন মিটার পানি বয়ে নিয়ে চলা ইগুয়াজু ফলস মূলত ২৭৫ টি আলাদা আলাদা জলপ্রপাতের সমষ্টি। এই জলপ্রপাতকে ঘিরে রয়েছে বিশাল রেইনফরেস্ট। ইগুয়াজু ফলস এর বেশিরভাগ অংশই আর্জেন্টিনায় অবস্থিত এবং বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে এর সৌন্দর্য অবলোকন করা যায়। এখানে এমন একটি পয়েন্ট রয়েছে যেখান থেকে একজন দর্শনার্থীকে ঘিরে জলপ্রপাতটির ২৬০ ডিগ্রি কোণ উৎপন্ন হয়।পানি পতনের ফলে সৃষ্ট কুয়াশায় আলোর প্রতিফলনের ফলে এখানে চমৎকার রংধনুর সৃষ্টি হয়।
৫. প্লিটভাইস ফলস, ক্রোয়েশিয়াঃ
ক্রোয়েশিয়ার নর্দার্ন ডালমেশিয়ার প্লিটভাইস ন্যাশনাল পার্কে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অগণিত জলের ধারা যা প্লিটভাইস ফলস নামে পরিচিত। এই জলপ্রপাত গুলোর উচ্চতা যদিও খুব বেশি নয় কিন্তু সৌন্দর্য অতুলনীয়। এই জলপ্রপাতের জলের রঙেও রয়েছে বৈচিত্র্য, কোথাও আকাশী নীল বা কোথাও ফিরোজা, আর কোথাও বা আবার স্ফটিক স্বচ্ছ।
৬. কাইট্যর ফলস, গায়ানাঃ
কাইট্যর ফলস গায়ানার কাইট্যর ন্যাশনাল পার্কে পোটারো নদীতে অবস্থিত। এটাকে বলা হয় পৃথিবীর দীর্ঘতম একক জলপ্রপাত। এর উচ্চতা ৭৪১ ফুট এবং প্রতি সেকেন্ডে ৬৬৩ ঘনমিটার পানি প্রবাহিত হয়। পৃথিবীর প্রাচীনতম ও অক্ষত রেইনফরেস্টে অবস্থিত এই জলপ্রপাত গুলোর সৌন্দর্য অতুলনীয়।
৭. ইয়োসেমাইট ফলস,ক্যালিফোর্নিয়াঃ
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার ইয়োসেমাইট ন্যাশনাল পার্কে অবস্থিত ইয়োসেমাইট ফলস পৃথিবীর উচ্চতম জলপ্রপাত গুলোর একটি। এই জলপ্রপাতের উচ্চতা প্রায় ২,৪২৫ ফুট এবং এটি তিনটি স্তরে বিভক্ত। এই জলপ্রপাতের জলের উৎস বরফ গলা পানি। ফলে সারা বছর জুড়ে এখানে জলের পতন হয়না। সাধারণত বসন্তের শেষের দিকে এটি পানিতে ভরা থাকে।
৮. সাদারল্যান্ড ফলস, নিউজিল্যান্ডঃ
নিউজিল্যান্ড এ অবস্থিত সাদারল্যান্ড ফলস এর উচ্চতা ১,৯০২ ফুট। কুইল হ্রদ থেকে এই জলপ্রপাতের উৎপত্তি এবং তিনটি ধাপে এটি পতিত হয়েছে। সবার উপরের ধাপটির উচ্চতা ২২৯ মিটার, মাঝের ধাপটি ২৪৮ মিটার এবং শেষেরটি ১০৩ মিটার । ডোনাল্ড সাদারল্যান্ড নামে একজন স্কটিশ নাগরিক এই ফলসটি প্রথম আবিষ্কার করেন এবং তিনি দাবি করেন যে এর উচ্চতা ১,০০০ মিটার (৩,৩০০) এর উপরে। কিন্তু অনুসন্ধানের ফলে জানা যায় যে এর উচ্চতা মাত্র ১,৯০২ ফুট।
৯. গালফস বা গোল্ডেন ফলস, আইসল্যান্ডঃ
দক্ষিণ-পশ্চিম আইসল্যান্ডে অবস্থিত গালফস জলপ্রপাতটি হিমবাহ গলিত নদী থেকে সৃষ্ট। এর উচ্চতা ১০৫ ফুট। এটি আইসল্যান্ডের একটি দৃষ্টিনন্দন পর্যটন সাইট। এই জলপ্রপাতের প্রধান আকর্ষণ এর অদ্বিতীয় আকৃতি যা ৯০ ডিগ্রি কোণে রয়েছে।
১০. পামুক্কালে, তুরস্কঃ
তুর্কি ভাষায় পামুক্কালে মানে হচ্ছে তুলার প্রাসাদ। ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে ঘোষিত এই স্থানটি দক্ষিণ-পশ্চিম তুরস্কে অবস্থিত। এর ধাপ গুলো কার্বনেট মিনারেল এর তৈরি। এর চমৎকার প্রাকৃতিক কাঠামো টির উচ্চতা ৫২৫ ফুট, দৈর্ঘ্য ৮,৮৬০ ফুট, প্রস্থ ১,৯৭০ ফুট। প্রাচীন গ্রীক এবং রোমানরা উষ্ণ জলের এই ঝর্ণা আবিষ্কার করেন। জলে প্রবাহমান চুনাপাথর জমাট হয়ে সৃষ্ট ঝকঝকে সাদা এই জলাধারের সৌন্দর্য অতুলনীয়।
তথ্যসুত্রঃ
১. https://www.world-of-waterfalls.com/top-10-waterfalls.html
২. https://www.tripzilla.com/12-of-the-most-awe-inspiring-waterfalls-around-the-world/23655
৩. https://www.pandotrip.com/top-10-most-beautiful-waterfalls-in-the-world-709/
৪. https://ecophiles.com/2016/04/25/6-things-you-didnt-know-about-pamukkale/
order rybelsus 14mg pills – semaglutide 14mg canada buy desmopressin paypal
where to buy lamisil without a prescription – diflucan where to buy oral grifulvin v