ভালো থাকুক চোখ – দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখা উচিত

4

দুই চোখ মেলে সুন্দর এই পৃথিবী দেখা বিধাতার এক আশীর্বাদ! কিন্তু বয়সের কারণে, পারিবারিক সমস্যা, টিভি/কম্পিউটার/মোবাইল বা বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিক গ্যাজেট ব্যবহার জনিত সমস্যা দৃষ্টিশক্তিতে প্রভাব ফেলে। তবে কিছু সতর্কতা ও সাবধানতা অবলম্বন করলেই এই সমস্যাগুলো প্রতিরোধ করা সম্ভব। আজকের লেখায় এমন কিছু খাবারের কথা উল্লেখ করবো যা দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে। তাই দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে খাবারের তালিকায় এই খাবারগুলো রাখতে অবশ্যই ভুলবেন না। চলুন তাহলে জানা যাক দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখা খাবারগুলো সম্পর্কে এবং সেই সাথে চোখের যত্ন সম্পর্কে কিছু টিপসও জেনে নেই।

গাজর

মাটির নিচে জন্মানো এই সবজিটি পুষ্টিগুণে অনন্য। এর রয়েছে বহুমুখী গুণাগুণ এবং যেকোনো রান্নায় গাজরের রঙিনভাব লোভনীয়তা বাড়ায়। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে বেটা-ক্যারোটিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন এ। বিজ্ঞানীদের মতে, গাজর রাতের বেলার দৃষ্টিশক্তি প্রখর করে এবং দৃষ্টিশক্তির ঘাটতি কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও গাজর অক্সিডেটিভ ক্ষয় (কঞ্জাংকটিভা বা নেত্রনালীর সমস্যা) প্রতিরোধ করে ও চোখের জ্বালাপোড়া কমায়। এই দুইটি সমস্যা চোখের প্রধান দুটি সমস্যা।

কাঁচা গাজরে পুষ্টিগুণ অধিক পরিমাণে বজায় থাকে;
কাঁচা গাজরে পুষ্টিগুণ অধিক পরিমাণে বজায় থাকে; Image Source: StyleCraze

ইন্টারনেট ঘেঁটে গাজরের স্যুপের বিভিন্ন রকমের রেসিপি পেতে পারেন। হাতের নাগালে থাকলে যেকোনো তরকারি রান্নার সময় গাজর দিতে ভুলবেন না! তবে রান্নার চাইতে কাঁচা গাজরে পুষ্টিগুণ অধিক পরিমাণে বজায় থাকে। কারণ চুলার আঁচে থাকলে অনেক পুষ্টিগুণই নষ্ট হয়ে যায়। হুটহাট ক্ষুধা লাগলে স্ন্যাকস না খেয়ে একটি কাঁচা গাজর কামড়ে খেয়ে ফেলুন অথবা সালাদে দিয়েও খেতে পারেন। আর হ্যাঁ, অবশ্যই প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন। লক্ষ্য রাখবেন, গাজর যেন পরিমাণে বেশি না খাওয়া হয়। কারণ গাজর বেশি খেলে মাত্রাতিরিক্ত ভিটামিন এ শরীরে প্রতিক্রিয়া ঘটাতে পারে।

ফ্যাটি মাছ

ফ্যাটি মাছে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড। আর ওমেগা-৩, ওমেগা- ৬ এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডের অনুপাত নিয়ন্ত্রণ করে চোখে জ্বালাপোড়াভাব কমায়।  জ্বালাপোড়াভাব কম হলে আপনার শরীর ও মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত হয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও আমাদের চোখের রেটিনার পাশের অংশ ডিএইচ দিয়ে ভরপুর, যা হলো এক ধরনের ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড।

স্যামন
স্যামন Source: Smrt English

তাই স্যামন, টুনা ও ম্যাক্রল জাতীয় সামুদ্রিক মাছ চোখের স্বাস্থ্যের জন্য বেশ ভালো কাজ করে। যদি আপনি একেবারেই মাছ খেতে পছন্দ না করেন তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী মাছের তেল সাপ্লিমেন্ট হিসেবে খেতে পারেন। মাছ গ্রিল করে খেলে এর ফ্যাটি এসিডের গুণাগুণ সর্বোচ্চ মাত্রায় বজায় থাকে। ভেজে বা বেশি রান্না করে খেলে এর পুষ্টিগুণ অপেক্ষাকৃত কম বজায় থাকে।

পালং শাক

পালং শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, বি ও সি। এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন রকম মিনারেল যেমন- আয়রন, জিংক ও ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস (লুটিন এবং জিজেন্থিন)। ক্যারোটিনয়েড, লুটিন এবং জিজেন্থিনে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও জ্বালাপোড়াভাব কমানোর গুণ। তাই প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পালং শাক খেলে ম্যাকুলার অবক্ষয় (দৃষ্টিশক্তি হারানোর অন্যতম কারণ) এবং ছানি প্রতিরোধ করা সম্ভব। যেহেতু এতে জিংক রয়েছে, তাই এটি কর্নিয়ার স্বাস্থ্যও ভালো রাখে। পালং শাকের স্মুদি এখন বেশ জনপ্রিয় খাবার।

এতে জিংক রয়েছে, তাই এটি কর্নিয়ার স্বাস্থ্যও ভালো রাখে
এতে জিংক রয়েছে, তাই এটি কর্নিয়ার স্বাস্থ্যও ভালো রাখে; Image Source: Rodale’s Organic Life

তাই রেসিপি দেখে আপনিও ঘরে তৈরি করে নিতে পারেন এটি। এর সাথে কিছু ফলমূল যোগ করে নিলে এর পাতা ও তিক্ত জাতীয় স্বাদ দূর হয়। এছাড়াও ডালের সাথে দিয়ে বা স্যুপ বানিয়েও খেতে পারেন পালং শাক। কচি পালং পাতা স্যান্ডুইচ বা পাস্তা দিয়ে খেলে কচমচে স্বাদটা বেশ ভালোই উপভোগ করতে পারবেন।

ডিম

ডিমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অপরিহার্য অ্যামাইনো এসিড এবং পানি-দ্রবণীয় ও চর্বি-দ্রবণীয় ভিটামিন। ডিমের কুসুমে কোলেস্টেরলের পরিমাণ অপেক্ষাকৃত বেশি এবং লুতিন ও যিযানথানের ভালো একটি উৎস যার কারণে কুসুমের রং হলুদ বর্ণের হয়ে থাকে।

ডিম
ডিম
Source: www.today.com

ভালো দৃষ্টিশক্তি পেতে প্রতিদিন একটি বা দুটি ডিম অবশ্যই খান। সেদ্ধ, পোচ বা রান্নার যেকোনো আইটেমেও ডিম দিলে খাবারের স্বাদ বেড়ে যায়।

দুগ্ধজাত খাবার

দুধ ও টক দই দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে। ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস ছাড়াও এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে জিংক ও ভিটামিন এ। ভিটামিন এ কর্নিয়া রক্ষা করতে সাহায্য করে এবং জিংক যকৃত ও চোখে ভিটামিন এ এর কার্যকারিতা বাড়ায়।

দুগ্ধজাত খাবার
দুগ্ধজাত খাবার
Source:: 9Coach – Nine

এছাড়াও জিংক রাতের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে এবং ছানি প্রতিরোধ করে। সকালে নাস্তার সাথে বা রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এক গ্লাস দুধ খেতে ভুলবেন না। দুপুরের খাবার ও স্ন্যাকস খাওয়ার পর টক দই খাওয়ার অভ্যাস করুন।

বাদাম

বাদাম হলো স্বাস্থ্যসম্মত ফ্যাট এবং ভিটামিন ই এর উৎস যা জ্বালাপোড়াভাব কমায়। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, ভিটামিন ই সমৃদ্ধ বাদাম বয়সের সাথে সাথে যে ছানির সমস্যা দেখা দেয় তা প্রতিরোধ করে। দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখার জন্য প্রতিদিন এক মুঠো বাদাম খেতে পারেন।

বাদাম হলো স্বাস্থ্যসম্মত ফ্যাট এবং ভিটামিন ই এর উৎস
বাদাম হলো স্বাস্থ্যসম্মত ফ্যাট এবং ভিটামিন ই এর উৎস; Image Source: hindustantimes.com

বিভিন্ন রকম বাদাম একসাথে মিলিয়ে রাখলে প্রতিবার আলাদা আলাদা করে সব বাদাম খেতে হবে না। এছাড়া বিভিন্ন রকম সালাদ ও মিষ্টি আইটেমেও বাদাম দিয়ে খেতে পারেন।

লাল ক্যাপসিকাম

ভিটামিন এ, ই, সি এবং লুতিন ও যিযানথানের বেশ ভালো উৎস হলো এই লাল ক্যাপসিকাম। এই ভিটামিন এবং ফাইতোনিউট্রিইয়েন্টস গুলো ম্যাকুলার অবক্ষয় থেকে চোখকে রক্ষা করে রেটিনাকে ভালো রাখতে সাহায্য করে।

লাল ক্যাপসিকাম
লাল ক্যাপসিকাম
Source: Wikipedia

এটি কাঁচা খেতে পারেন সালাদের সাথে। তবে রান্নার সময় গ্রিল বা অল্প রান্না করলেই এর পুষ্টিগুণ যথাযথভাবে বজায় থাকবে।

ব্রকলি

ব্রকলি হলো এমন এক ধরনের সবজি যার রয়েছে বহু স্বাস্থ্যগুণ। এতে যেই ভিটামিন এ, ই, সি এবং লুতিন রয়েছে তা চোখের জন্য বেশ উপকারী।

ব্রকলি
ব্রকলি
Source: Good Housekeeping

এটি ফটোড্যামেজ (সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি থেকে চোখের যে সমস্যাটি হয়) এবং অক্সিডেটিভ ক্ষয়ের সমস্যা প্রতিরোধ করে চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে। গ্রিল বা ওভেনে বেক করা ব্রকলিতে গুণাগুণ বেশি বজায় থাকে।

টক জাতীয় ফল

চোখ এর রয়েছে বিপাকীয় হার এবং বিপাকীয় প্রতিক্রিয়া কারণে চোখে যা উৎপন্ন হয় তা বের করে দেয়ার জন্য প্রতিনিয়ত এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দরকার হয়। টক জাতীয় ফল যেমন- কমলা, আমড়া, বড়ই, আমলকীতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর গুণাগুণ। এছাড়াও এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি যা চোখের রক্তনালীর স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।

চোখের যেকোনো সমস্যা প্রতিরোধের জন্য কীভাবে চোখের যত্ন নিবেন:

বিভিন্ন ধরনের খাবার ও এর গুণাগুণ চোখ ভালো রাখতে সাহায্য করে। তবে এই খাবারগুলো চোখের জন্য যেন যথাযথভাবে কার্যকরী হতে পারে সেজন্য আপনারও কিছু কিছু কাজ করা দরকার। নিচের এই পদ্ধতিগুলো অনুযায়ী কাজ করলে আপনার চোখের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।

চোখের ব্যায়াম

চোখ এর মাংসপেশির শক্তি বাড়ানোর জন্য চোখের ব্যায়াম করা দরকার। হাত দিয়ে চোখের উপর আলতোভাবে মালিশ করা, চোখ ঘুরানো হতে পারে চোখের জন্য ভালো ব্যায়াম।

চোখ এ পানির ঝাপটা দেয়া

সারাদিন ল্যাপটপ, টিভি বা মোবাইল ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকার কারণে এর মধ্য দিয়ে ক্ষতিকর রশ্মি বিচ্ছুরণ হতে থাকে। যতখানি সুরক্ষামূলক গ্লাস বা যেকোনো কিছু ব্যবহার করা হোক না কেন, এতে চোখের ওপর প্রভাব পরবেই। তাই কাজ করার প্রতি এক থেকে দুই ঘণ্টা পরপর চোখে পানির ঝাপটা দিতে ভুলবেন না।

প্রতি এক থেকে দুই ঘণ্টা পরপর চোখে পানির ঝাপটা দিন;
প্রতি এক থেকে দুই ঘণ্টা পরপর চোখে পানির ঝাপটা দিন; Image Source: Victoria’s Glamour

 

চোখ বন্ধ করে রাখুন

কাজ করার মাঝে মাথা নিচু করে ২-৩ মিনিট চোখ বন্ধ করে রাখুন। প্রতি ৩০ মিনিট অন্তর অন্তর এমনটি করলে তফাৎটা আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন।

ডিভাইসের আলো নিয়ন্ত্রণ করুন

কম্পিউটার, মোবাইল ফোনে আলো কম বেশি করার উপায় থাকে। চোখের আরাম বুঝে তা ঠিক করে নিন। এতে করে ফটোড্যামেজ থেকে আপনার চোখকে প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।

রোদ চশমা ব্যবহার করুন

সূর্যের আলো থেকে আপনার চোখকে রক্ষা করা খুব দরকার। বাইরে বের হওয়ার আগে লক্ষ করুন যে রোদের প্রখরতা কেমন এবং সে অনুযায়ী রোদ চশমা ব্যবহার করুন। এতে করে আপনার চোখকে ফটোড্যামেজ ও সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।

ইতিবৃত্ত

Source Featured Image
Leave A Reply
sativa was turned on.mrleaked.net www.omgbeeg.com

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More