ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায় অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাতকৃত খাবার !

অফিস বা বাড়িতে ব্যস্ততার কারনে অথবা ক্ষুধা লাগার কারনে চটজলদি এক কাপ ইন্সট্যান্ট নুডলস খেয়ে নিজের সময় বাঁচালেন কিংবা দ্রুত নিজের ক্ষুধা নিবারন করলেন অতি দ্রুত। কিন্তু আপনি নিজের অজান্তে কত বড় ক্ষতি করে যাচ্ছেন সেটা বুঝতে পারছেন না।

সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে যারা অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার বিশেষ করে যেম চিকেন নাগেট এবং ইন্সট্যান্ট নুডলস খেতে অভ্যস্ত তাদের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার উচ্চ মাত্রার ঝুঁকি রয়েছে।

সম্প্রতি ফান্সের একদল গবেষক ফ্রান্স এবং ব্রাজিলে এক গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য থেকে রিপোর্টে তারা বলেন, অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার ক্যান্সারের  অতিরিক্ত ঝুঁকি বাড়ায়। এই ধরণের খাদ্য গুলো শরীরে পুষ্টির জন্য খারাপ। সর্বমোট ১ লাখ ৫ হাজার মানুষের উপর এই গবেষণা করা হয়।

ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালের অনলাইন প্রকাশনা দ্যা বিএমজে তে প্রকাশিত রিপোর্ট টি তে গবেষকেরা বলেছেন, ” অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত করা খাবার ক্যান্সারের  ঝুঁকির সাথে পুরোপুরি সম্পর্কিত।”

তারা আরো বলেন,”অতিরিক্ত প্রক্রিয়া করা খাবারের মাত্র ১০ শতাংশ ডায়েট হিসেবে বৃদ্ধি পেলেও কিন্তু অন্য সকল ক্যান্সার এবং স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি ১০ শতাংশের চেয়েও বেশী বৃদ্ধি পাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে এই খাবারের দরুণ।”

অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার বলতে বোঝানো হয়েছে যে সকল খাবার বেশী বেশী করে প্রক্রিয়া জাত করা হয়েছে।

যে সকল খাবারে ক্যান্সারের অতিরিক্ত ঝুঁকি রয়েছে

  • প্যাকেট জাত ব্রেড বা পাউরুটি ও বেকড করা খাবার যেমন – কেক
  • সোডা এবং মিষ্টিজাতীয় পানীয়
  • ইন্সট্যান্ট নুডলস ও স্যুপ
  • মিষ্টি অথবা মসলাদার প্যাকেট জাতীয় স্ন্যাকস
  • শিল্পজাত মিষ্টান্ন এবং ডেজার্ট
  • মাংসের বল, মুরগী ও মাছের নাগেট
  • অন্যান্য মাংস জাত পণ্য লবণ ছাড়া অতিরিক্ত প্রিজারভেটিবস দ্বারা সংক্ষরণ করা হয়।
  • হিমায়িত বা নিজ থেকে স্থিতিশীল খাবার
  • যে সকল খাদ্য পণ্য পুরোপুরি বা আংশিক চিনি, তেল ও চর্বি হতে তৈরি।
  • চকলেট বার

পাস্তা, চিজ ও কৌটাজাত সবজি, যেগুলো কম প্রক্রিয়া করা সে সকল খাদ্য থেকে ক্যান্সারের  ঝুঁকি বাড়ায় না।

অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার
অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার Source: independentnurse.co.uk

ফ্রান্সের জাতীয় গবেষণাগারের বার্নার্ড স্রোয়ার ও তার সহকর্মীরা এই সকল তথ্য গুলো বের করেছেন।

ডায়েট করা কে ইতিমধ্যে ক্যান্সারের  অন্যতম কারন হিসেবে মনে করা হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে প্রক্রিয়াজাত গরুর মাংসও ক্যান্সারের  কারন হয়ে গেছে। কিন্তু অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবারের বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য এখন পর্যন্ত কিছু না জানালেও গবেষণায় এ বিষয়ে উঠে এসেছে যে অতিরিক্ত প্রক্রিয়া জাত খাবার এর সাথে ক্যান্সার হওয়ার সম্পর্ক রয়েছে।

গবেষণা দল টি ইউনিভার্সিটি অব সোরবনের প্যারিস সিটি মানুষ কি খাচ্ছে সে বিষয়ে দুই দিনের একটি ফুড সার্ভে করা হয়।

যাদের উপর গবেষণা টি করা হয়েছে তাদের মধ্যে অধিকাংশ মধ্যবয়সী নারী,তাদের কে গড়ে ৫ বছর পর্যবেক্ষণে রাখে গবেষণা দল টি।

গবেষণার সময়ে দেখা যায় –

  • গড়ে ১৮% মানুষ অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবারের দ্বার ডায়েট করছে।
  • প্রতি ১০০০০ জন মানুষের মধ্যে গড়ে ৭৯ জন ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন।
  • প্রক্রিয়াজাত খাবারের কারনে ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ই চলছে, ১০% মানুষ যারা প্রক্রিয়াজাত খাবার খাচ্ছেন, তাদের মধ্যে প্রতিবছর ১০০০০ জনের মধ্যে ৯ জন ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন।

গবেষকেরা বলেন যে, ” এই গবেষণার ফলাফল হতে বোঝা যাচ্ছে বর্তমানে এই সকল খাদ্যের পিছনে দ্রুত বর্ধিত খরচ পরবর্তী কয়েক দশকগুলি তে ক্যান্সারের  ক্রমবর্ধমান খরচের বোঝা বহন করবে।”

অর্থ্যাৎ বর্তমানে যে সকল অর্থ খরচ করে চিকেন নাগেট,ফ্রেঞ্চ ফ্রাই,ইন্সট্যান্ট নুডলস, চিপস,চকলেট বার প্রভৃতি ধরণের খাবারের পিছনে ব্যয় করছে পরবর্তী সময়ে এ সকল খাবার হতে ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার যে সম্ভাবনা রয়েছে সেটি হলে পরবর্তী তে এ সকল অর্থ এই রোগের চিকিৎসার পেছনে ব্যয় হবে।

কিন্তু গবেষকেরা বলেছেন যে, এর পিছনে কি কারন রয়েছে সেটি খুজে দেখে নিশ্চিত হওয়ার জন্য বড় মাপের গবেষণা  ও অনুসন্ধান চালাতে হবে।

ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী
ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী Source: cancersahayta.com

এটি কি সতর্ক বার্তা?

এই গবেষণা নির্দিষ্ট ভাবে বলতে পারছে না যে অতি প্রক্রিয়াকৃত খাবারের কারনে ক্যান্সার হচ্ছে। যারা প্রচুর পরিমাণে অতিরিক্র প্রক্রিয়া করা খাবার খান তাদের মধ্যে ক্যান্সারের  রোগীদের যে সকল পরিবর্তন হয় সেগুলো ধীর গতি তে দেখা দিচ্ছে।

গবেষণায় দেখা গেছে যারা প্রচুর ধূমপান করত, কাজ কর্ম কম করত, সামগ্রিক ভাবে ক্যালরি কম ক্ষয় করত এবং যারা গর্ভনিরোধক ঔষুধ গ্রহণ করত তাদের দেহেও এক ই রকমের আচরণ লক্ষ্য করা গেছে। যুক্তরাজ্যের ক্যান্সার রোগের গবেষক প্রফেসর লিন্ডা বাউল্ড বলেন,” এটা ইতিমধ্যে জানা হয়ে গেছে যে যারা এই সকল খাবার খাচ্ছেন তাদের ওজন বৃদ্ধি পায় এবং অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি বা স্থূলকায় হওয়ার কারনেও ক্যান্সারের  ঝুঁকি বৃদ্ধি পেতে  পারে। তবে ক্যান্সারের  সাথে অতিরিক্ত ওজন ও ডায়েট এর যে সম্পর্ক সেই জট এখনো পুরোপুরি খোলা কঠিন।”

তিনি বলেন, আমাদের জন্য এটা একটি সতর্কবাণী যে আমাদের স্বাস্থ্যকর ডায়েট করতে হবে কিন্তু মানুষ এখানে সেখানে অল্পবিস্তর যে প্রক্রিয়াজাত খাবার খাচ্ছে সে বিষয়ে তারার চিন্তিত নন। কিন্তু আমাদের উচিৎ এসব খাবারের পরিবর্তে প্রচুর পরিমাণে ফল, শাক,সবজি ও আঁশ জাতীয় খাবার খেতে হবে।

আমরা জানি শাক-সবজি ও ফলমূলে কম ক্যালরি থাকে সে কারনে ডায়েট হিসেবে এ ধরণের খাবার স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ এবং উপকারি।

ক্যান্সারের ঝুকি কমায় ফল, শাক,সবজি ও আঁশ জাতীয় খাবার
ক্যান্সারের ঝুকি কমায় ফল, শাক,সবজি ও আঁশ জাতীয় খাবার Source: rd.com

নরউইচ এর কোয়াড্রাম ইনস্টিটিউটের ডা. ইয়ান জনসন বলেন, এই গবেষণার কিছু দূর্বল দিক চিহ্নিত হয়েছে।

তিনি গবেষণায় অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবারের অস্পষ্টতা নিয়ে সমালোচনা করে বলেন,”তারা আল্টা প্রসেসেড বা অতি প্রক্রিয়াজাত খাবার কে তারা বিস্তৃত এবং দূর্বল ভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। এর ফলে যদিও ক্যান্সারের  সাথে এই খাবার গুলোর সম্পর্ক থেকে থাকে সেটা কোন খাবার গুলি হতে সেটা নিশ্চিত করা অসম্ভব। কারন তারা শুধুমাত্র আলট্রা প্রসেসেড শব্দটি ব্যবহার করেছেন।

লন্ডনের কিংস কলেজের প্রফেসর টম স্যান্ডার্সের মতে তারা অতি প্রক্রিয়াকৃত খাবারের যে সংজ্ঞা দিয়েছেন সেটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কে পাশ কাটিয়ে গেছে।

তিনি বলেন,” প্যাকেটজাত ভারী পাউরুটি অতি প্রক্রিয়াকৃত শ্রেণীর খাবার হলেও বাড়িতে তৈরিকৃত বা কোন স্থানীয় বেকারিতে তৈরি পাউরুটি একই শ্রেণীর হবে না।”

এই গবেষণার শ্রেণীকরণ নিয়ে স্যান্ডার্স আরো বলেন,”যে সকল খাদ্য শিল্প প্রতিষ্ঠানে উৎপাদিত হয় সে সকল খাদ্যে ভিন্ন পুষ্টির ও কেমিক্যাল সংযুক্ত করার একটা বিষয় থাকে কিন্তু বাড়িতে তৈরি খাবারে সেটা থাকে না। তাই সেক্ষেত্রে এ বাড়িতে তৈরি খাবার ও ঐ খাবার এক হবে না এবং কোন সমস্যার মধ্যেও পার্থক্য থাকবে।”

তবে এই গবেষণা হতে এটা উঠে এসেছে যে আলট্রা প্রসেসেড বা অতি প্রক্রিয়াজাত খাবারের কারনে মানুষের যে সকল সমস্যা হচ্ছে, সেগুলো ক্যান্সারের কিছু কিছু লক্ষণের বা যেসব কারন হতে ক্যান্সার ছড়ায় সেটার সাথে সম্পর্ক রয়েছে।

মেক্সিকোতে ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব পাবলিক হেলথের মার্টিন লাজাস এবং আদ্রিয়ানা মঞ্জে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, “আমরা  আমাদের স্বাস্থ্যের ও সর্বোপরি ভালো থাকার জন্য খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের যে তাৎপর্য তা আমরা বুঝতে পারছি না,তা থেকে আমি আমরা অনেক দূরে সরি।এই গবেষণা টি আমাদের প্রাথমিক অন্তর্দৃষ্টি খুলে দিয়েছে।”

তিনি সকল কে খাদ্য গ্রহণের ক্ষেত্রে বেশী বেশী ফলমূল ও শাক-সবজির উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

তথ্যসূত্র : http://www.bbc.com/news/health-43064290

Leave A Reply
sativa was turned on.mrleaked.net www.omgbeeg.com

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More