বাংলায় একটি প্রবাদ প্রচলিত আছে, ‘চুরি বিদ্যা মহা বিদ্যা, যদি না পড় ধরা।’ তা ধরা পড়ুক আর না পড়ুক, পৃথিবীর ইতিহাসে এমন কিছু চোর বা জালিয়াত আছেন, যারা এই চুরিবিদ্যা নামক ‘মহাবিদ্যা’ টিকে একদম শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। তা চলুন, আজ এমনই কিছু ‘শিল্পী’ সম্পর্কে জানা যাক যারা কিনা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের পুলিশের দিনের আরাম, রাতের ঘুম হারাম করে দিয়েছিলেন।
১. নটবর লাল:
তাজমহলের নাম কে না শুনেছেন। সম্রাট শাহজাহান দ্বারা নির্মিত সপ্তাশ্চর্যের একটি আশ্চর্যকে যদি কেউ দিনের আলোয় ‘চুরি’ করার পায়তারা করে, তবে তা কেমন শুনাবে? মিথিলেশ কুমার শ্রীবাস্তব, যে কিনা নটবর লাল নামেই অধিক পরিচিত, সে এই অসাধ্যটি সাধন করেছিল।
তবে এখানে চুরি বলতে পুরো তাজমহলটিকে তুলে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া বোঝাচ্ছে না, বরং জালিয়াতি করে অন্যের কাছে বিক্রি করে দেয়াকে বুঝানো হচ্ছে। সে শুধু তাজমহলই নয়, লাল কেল্লা, রাষ্ট্রপতি ভবন এমনকি পার্লামেন্ট হাউজ পর্যন্ত নানান ক্রেতার কাছে বিক্রি করে দেয়। অবশ্যই জালিয়াতির মাধ্যমে। কেননা একথা সবাই জানে যে, এগুলা বিক্রি করা সম্ভব নয়। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল, এই কিংবতন্তীসম চোর কিন্তু কখনোই পুলিশের হাতে ধরা পড়েনি। সবসময়ই সে অধরা থেকে গেছে এবং এভাবেই হয়তো মৃত্যুবরণ করেছে।
২. ভিন্সেঞ্জো পেরুজ্ঞিয়া:
লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির অমর সৃষ্টি মোনালিসা এখন যদিও প্যারিসের ল্যুভরে অত্যন্তে গর্বের সাথে অবস্থান করছে, এর ভাগ্যে কিন্তু সবসময় এমনটা সুপ্রসন্ন ছিল না। ভিন্সেঞ্জো পেরুজ্ঞিয়া নামক এক গ্যালারির কর্মচারী দিনের আলোতে মোনালিসা চিত্রকর্মটি চুরি করে নিয়ে যায় এবং ইতালি তে পাচার করে দেয়।
সেখানে এটি অনেকদিন ছিল। যদিও সে পরে ধরা পড়ে যায়, কিন্তু তার এমন বিরল প্রতিভার জন্য সে সর্বদা স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
৩. ভিরাপ্পান:
এখন যার কথা আলোচনা করতে যাচ্ছি, তাকে ঠিক চোর বা জালিয়াত বলা যায় না। বরং ডাকাত উপাধিতেই যেন তাকে মানায় ভাল। এই লোকটি ইন্ডিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের বনাঞ্চলে প্রায় ২০ বছরের অধিক সময় ধরে পালিয়ে বেড়িয়েছে, বিস্তার করেছে ত্রাসের রাজ্য।
এই পুরো সময়টা জুড়ে সে হাজার হাজার টন আইভরি (হাতির দাঁত), বিরল পশুর চামড়া, চন্দনকাঠ ইত্যাদি চোরাচালান করেছে। একজন ফরেস্ট অফিসারসহ বহুসংখ্যক পুলিশ তার হাতে প্রাণ দিয়েছে। শেষ পর্যন্ত সরকার বাধ্য হয়ে তার মৃত্যু পরোয়ানা জাড়ি করে এবং তাকে সমূলে ধ্বংস করতে সক্ষম হয়।
৪. বিল মেসন:
বর্তমান সময়ের উন্নত নিরাপত্তা ব্যবস্থার কল্যাণে রত্ন চুরির ঘটনা তেমন একটা ঘটে না। যার ফলে এরূপ দুঃসাহসিক কর্মকাণ্ড প্রত্যক্ষ করার জন্য আমাদের মুভির শরণাপন্ন হতে হয়। কিন্তু জেনে অবাক হবেন যে, বাস্তবেও মুভির মত দুঃসাহসিক চুরির নজির রয়েছে। বিল মেসন নামক এক আমেরিকান চোরের কথাই ধরা যাক। যে কিনা নানান ব্যক্তিগত সংগ্রহশালা থেকে প্রায় ৩৫ মিলিয়ন ইউএস ডলার সমমূল্যের রত্নালংকার চুরি করে। তার সবচেয়ে দুঃসাহসিক চুরিগুলোর মাঝে এথলেট জনি উইস্মুলারের অলিম্পিক গোল্ড ম্যেডেল চুরির ঘটনাটি উল্লেখযোগ্য, যেটা সে পরবর্তীতে ডাক যোগে ফিরিয়ে দিয়েছিল।
৫. জেসি উডসন জেমস:
এই ব্যক্তি আমেরিকান সিভিল ওয়ারের সময়কার মোস্ট ওয়ান্টেড আসামীদের মধ্যে অন্যতম। তার ভাই ফ্রাঙ্ক কে নিয়ে জেসি অনেক হাই-প্রোফাইল ব্যাংক ডাকাতি করে। তারা সেসময় ট্রেন ডাকাতির সাথেও জড়িত ছিল। জেসি এটেনশন স্বীকার ছিল। সংবাদমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য সে সদা প্রস্তুত ছিল।পুলিশ তার নামে হুলিয়া বের করলেও তার গ্যাং এর এক সদস্যের হাতেই সে খুন হয়।
৬. আলবার্ট স্পাজ্ঞিয়ারি:
ফ্রেঞ্চ ব্যাংক গুলো তাদের উচ্চ মানের নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য বিখ্যাত হওয়া সত্ত্বেও আলবার্ট স্পাজ্ঞিয়ারি নামক এক চোর তাদের রাতের ঘুম হারাম করে দিয়েছিল। এই চোর ‘Societe Generale’ ব্যাংকের ভল্ট খালি করে দেয়। যা কিনা তৎকালীন সময়ের নিরাপদ ব্যাঙ্কগুলোর মাঝে একটা ছিল।
মাটির নিচে টানেল কেটে সে এবং তার গ্যাং ব্যাংকের ভল্টে প্রবেশ করে এবং প্রায় ৬০ মিলিয়ন ফ্রাঙ্ক লুট করে নিরাপদে সেই পথেই বের হয়ে আসে। তারা যদিও পরবর্তীতে ধরা পড়ে, কিন্তু এমন হাই প্রোফাইল ভল্ট খালি করার জন্য তারা এখনো স্মরণীয় হয়ে আছে।
৭. ফ্রাঙ্ক উইলিয়াম জুনিয়র:
লিওনার্দো ডিকপ্রিয় অভিনীত ‘ক্যাচ মি ইফ ইউ ক্যান’ মুভিটার কথা মনে আছে? ওই মুভিটি নির্মিত হয়েছিল এই মহাশয়ের ‘মহান’ কর্মকাণ্ডের উপর নির্ভর করেই। সে এখন পর্যন্ত দুনিয়ার সবচেয়ে সফল জালিয়াত হিসেবে পরিচিত।
যে কিনা একই সাথে একজন এয়ারলাইন পাইলট, একজন ডাক্তার, একজন উকিল এবং একজন জেলার হিসেবে নিজের পরিচয় নকল করেছিল। সে তার কাজে এতই নিখুঁত ছিল যে, FBI তাকে পাকড়াও করার পর জেলখানায় পাঠানোর পরিবর্তে তাদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত উপদেষ্টার পদে নিয়োগ দান করে যেন সে তার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে জালিয়াত এবং চোরদের পাকড়াও করতে সহায়তা করতে পারে।
৮. কার্ল জুগাসিয়ান:
প্রায় ২ মিলিয়ন পাউন্ডের সমপরিমাণ বিভিন্ন দ্রব্যাদি এবং অর্থ চুরি করার মাধ্যমে সে বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত চোরদের তালিকায় স্থান করে নিতে পেরেছে। গাড়ি চুরির মাধ্যমে চুরির পেশায় নাম লেখালেও পরবর্তীতে তার নজর বিভিন্ন ব্যাংকের দিকে পড়ে।
শুধু মাত্র শুক্রবার রাতে চুরি করার ফলে তাকের সবাই ‘ফ্রাইডে নাইট রবার’ নামে ডাকা শুরু করে। চুরি করার সময় মুখে মুখোশ থাকত বলে,তার পরিচয় সম্পর্কে কারও সঠিক কোন ধারণা ছিলনা।যদিও পরবর্তীতে জুগাসিয়ান ধরা পড়ে এবং তার কারাবাস হয়।
৯. ডেরেক ‘বেরটি’ স্মলস:
১৯৬০-৭০ এর দশক ছিল ব্রিটিশ আর্মড রবারির স্বর্ণযুগ। আর সবার নাম ছাপিয়ে উঠে এই ডেরেক স্মলস এর নাম।মাত্র ১৫ বছর বয়সে অপরাধ জগতে পা রাখা এই ব্যক্তি অত্যন্ত সফলতার সাথে একটি ব্রিটিশ ব্যাংক লুট করে প্রায় ২৩০০০০ পাউন্ড হাতিয়ে নেয়। এই চুরির পর সে প্রথমে প্যারিসে পালিয়ে যায়, তারপর সেখান থেকে কোস্টা ডেল সোল এ। পরবর্তীতে যদিও সে নিজেকে ব্রিটিশ পুলিশের হাতে সোপর্দ করে এবং পুলিশের হয়ে কাজ করা শুরু করে।
১০. ডোরিস পেইন:
এই লিস্টের একমাত্র মহিলা চোর হলেও তার ‘কৃতিত্ব’ অন্যদের তুলনায় কোন অংশে কম নয়। সে সবসময় বড় বড় রত্নালংকারের দোকান গুলো টার্গেট করত। তারপর একজন ধনী ক্রেতা সেজে সেইসব দোকানে ঢুকত, এমন একজন ক্রেতা যে কিনা একটি এনগেজমেন্ট আংটির সন্ধানে আছে কিন্তু পছন্দের আংটি টি খুঁজে পাচ্ছে না।
দোকানদাররা তাই একগাদা আংটি তার সামনে রাখতে বাধ্য হতো এবং সুযোগ বুঝে তার মধ্যে থেকে ১-২ টি আংটি সে তার নিপুণ হাত সাফাইয়ের দক্ষতার মাধ্যমে হাতব্যাগে ঢুকিয়ে ফেলত।প্রায় ৫ যুগেরও অধিক সময় অত্যন্ত সফলতার সাথে চুরি করে শেষপর্যন্ত সে ৮৩ বছর বয়সে ধরা পড়ে এবং মাত্র দুইবছরের কারাদণ্ড পায়।
order terbinafine for sale – buy griseofulvin 250 mg order grifulvin v without prescription
purchase semaglutide pill – order rybelsus 14 mg online desmopressin for sale