ঘুরে আসুন “দ্য সিটি অফ জয়” বা উল্লাসের শহর কলকাতা থেকে

0

 

শিল্প, সাহিত্য, ইতিহাস, ঐতিহ্যের দিক দিয়ে ভারতের সব শহরকে এখনো পেছনে ফেলে দেয় ব্রিটিশ শাসনামলের এ রাজধানী শহর । কলকাতা শহরে রঙ লেগে আছে সবখানেই; খাবারে, বাড়িতে, পথে, মানুষে । কলকাতা শহর ভ্রমণে যে কয়টি জায়গা না দেখলেই নয়, তা নিয়ে ইতিবৃত্তের এ আয়োজন ।

হাওড়া ব্রিজ

হাওড়া ব্রিজ
হাওড়া ব্রিজ
Source: The Indian Wire

হাওড়া ব্রিজ হল পৃথিবীর ৬ষ্ঠ বৃহত্তম ক্যান্টিলিভার (cantilever) ঘরানার ব্রিজ যা কলকাতার অন্যতম ল্যান্ডমার্ক । এই ব্রিজটিকে আগে বলা হত নিউ হাওড়া ব্রিজ, কারণ হুগলি নদীর ওপর পুরাতন একটি পন্টুন ব্রিজের পরিবর্তে এই হাওড়া ব্রিজ নির্মিত হয় । এই ব্রিজটিকে ভারতের অনন্য জাতীয় স্থাপনা হিসেবে ভাবা হয় এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সম্মানে এটিকে “রবীন্দ্র সেতু” নামেও ডাকা হয়ে থাকে ।

জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি

জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি
জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি
Source: Wikipedia

জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি ঠাকুর পরিবারের পৈত্রিক নিবাস । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতামহ প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর ১৮শতকে এ বাড়ি নির্মাণ করেন । এ বাড়িটিতে বর্তমানে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থিত । এছাড়াও একটি জাদুঘর আছে যেখানে ঠাকুর পরিবারের জীবন, কর্ম ও সময় নিয়ে লেখা বিভিন্ন লেখালেখি রয়েছে।

পার্ক স্ট্রীট

পার্ক স্ট্রীট
পার্ক স্ট্রীট
Source: Flickr

কলকাতার পার্ক স্ট্রীটকে “ফুড স্ট্রীট” নামেও ডাকা হয়ে থাকে এবং এ জায়গাটা কখনো ঘুমায় না । অজস্র রেসটুরেন্ট, বার ও পাব ছড়িয়ে রয়েছে পুরো এলাকায় । ৭০ ও ৮০ এর দশকে এ জায়গাটি কলকাতা শহরের প্রথমসারির নাইটলাইফ প্লেস ছিল । কলকাতা শহরের অন্যতম এই আকর্ষণীয় স্থানে বহু পর্যটক ও জনতা ভিড় করে থাকে ।

ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম

ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম
ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম
Source: Wikimedia Commons

“দ্য ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম” হল ভারতের সবচেয়ে বড় ও সবচেয়ে পুরনো জাদুঘর যা প্রতিষ্ঠা পায় ১৮১৪ সালে । জাদুঘরটি ৬ টি ভাগে ৩৫ টি গ্যালারিতে বিভক্ত যেখানে সারি সারি এন্টিক সামগ্রী, পেইন্টিং ও মমি রয়েছে । ড. নাথানিয়েল উইচ নামে এক ডাচ বোটানিস্ট ইংরেজ শাসনামলে কলকাতায় এই জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করেন যা পৃথিবীর প্রাচীন জাদুঘরগুলোর একটি ।

ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল

ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল
ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল
Source: Wikimedia Commons

ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের অবস্থান হুগলি নদীর সমতল পাড়ে যার নির্মাণকাজ শেষ হয় ১৯২১ সালে । রাণী ভিক্টোরিয়ার স্মৃতি রক্ষার্থে এটি নির্মিত হয় যা বর্তমানে একটি জাদুঘর । ১৯০১ সালে রাণী ভিক্টোরিয়ার মৃত্যুর পর লর্ড কার্জন এক অনন্য স্থাপত্যশৈলীর সংমিশ্রন ঘটিয়ে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের নির্মান শুরু করেন । বৃটিশ ও মুঘল স্থাপত্যশৈলীর মিশ্রনে অনবদ্য রুপ লাভ করে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল । এর ভিতরের জাদুঘরটি ২৫ টি গ্যালারিতে বিভক্ত ।

জলদাপাড়া বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য

জলদাপাড়া বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য
জলদাপাড়া বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য
Source: The Portal of North Bengal Development Department

এই অভয়ারণ্যের অবস্থান হিমালয়ের পূর্বাঞ্চলে । এক শিং বিশিষ্ট জলহস্তীর জন্য এ স্থানটি বিখ্যাত । ২১৬.৫১ বর্গকিলোমিটার অঞ্চল নিয়ে এই সংরক্ষিত বনটি বিপুল সংখ্যক প্রাণী ও উদ্ভিদের আশ্রয়স্থল । এই বনাঞ্চলে বাস করে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, ইন্ডিয়ান এলিফ্যান্ট, সাম্বার, ইন্ডিয়ান বাইসন ও বন্য ভালুক ।

বিরলা মন্দির

বিরলা মন্দির
বিরলা মন্দির
Source: Just For Fun, Sharing and Knowledge…………. – blogger

১৯৭০ সালে নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে ২৬ বছর সময় লেগে যায় বিরলা মন্দিরের নির্মাণ কাজ শেষ হতে । কলকাতার বিরলা মন্দিরটি ভারতের বড় বড় শহরে ছড়িয়ে থাকা বিখ্যাত ও ধনাঢ্য বিরলা পরিবার দ্বারা নির্মিত মন্দিরগুলোর একটি । মন্দিরটি রাঁধা ও কৃষ্ণের ভালোবাসার সম্মানার্থে নির্মিত হয় । সাদা মার্বেল পাথর দিয়ে নির্মিত এই মন্দিরটি প্রায় ১৩০ একর ভুমির ওপর ছড়িয়ে আছে ।

কলকাতা রেসকোর্স

কলকাতা রেসকোর্স
কলকাতা রেসকোর্স
Source: Travelogy India Blog

১৮৪৭ সালে বৃটিশ ভারতের “দ্য রয়েল ক্যালকাটা টার্ফ ক্লাব” হল ভারতের প্রথম ঘোড়াদৌড়ের সংগঠন । কলকাতা রেসকোর্স তৈরি হয় ১৮২০ সালে এবং এটি ভারতের পুরনো রেসকোর্সগুলোর একটি । বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর এবং নভেম্বর থেকে মার্চ মাসের শনিবার ও ছুটির দিনগুলোতে এখনো কলকাতা রেসকোর্সে ঘোড়াদৌড় অনুষ্ঠিত হয় ।

ইডেন গার্ডেন

ইডেন গার্ডেন
ইডেন গার্ডেন
Source: Travelogy India Blog

ভারতে বৃটিশ আগমনের অন্যতম সেরা উপহার হল ক্রিকেট । ইডেন গার্ডেন হল এক বিশাল ধারণক্ষমতার ক্রিকেট গ্রাউন্ড যাকে অনেকেই ক্রিকেট কলোসিয়াম নামেও ডেকে থাকে । ধারণক্ষমতার দিক দিয়ে ভারতের সবচেয়ে বড় ও পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম ক্রিকেট গ্রাউন্ড ।

মার্বেল পেলেস ম্যানশন

মার্বেল পেলেস ম্যানশন
মার্বেল পেলেস ম্যানশন
Source: Travelogy India Blog

১৮৩৫ সালে রাজা রাজেন্দ্র মল্লিক নির্মাণ করেন এই প্রাসাদতুল্য বাড়িটি যা এখনো তার বংশধরদের আবাসস্থল । এই মার্বেল প্যালেস ম্যানশনটি নিওক্লাসিকেল ঘরানার স্থাপত্যশৈলীর অন্যতম নিদর্শন । এই প্রাসাদের ভেতর এন্টিক আসবাব, পুরোনো পেইন্টিং সংবলিত একটি জাদুঘরও রয়েছে । প্রাসাদের কাছেই অবস্থিত “মার্বেল প্যালেস জু”ও পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় স্থান ।

কলকাতা ভ্রমণকালে আপনি ঘুরে আসতে পারেন এ স্থানগুলির সবগুলি বা বেছে বেছে আপনার পছন্দমত স্থানগুলি । তবে এটুকু আশ্বস্ত হতেই পারেন যে, আপনি কলকাতা শহরে এসে কোনো গলির মুখে দাঁড়িয়ে মানুষ দেখতে থাকলেও এ শহর অল্প সময়েই আপনার কাছে আপন-আপন ঠেকবে ।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

sativa was turned on.mrleaked.net www.omgbeeg.com

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More