বিভীষিকাময় এক যুদ্ধের করুণ পরিণতি : যে যুদ্ধ এখনো আমাদের দেয় নি স্বস্তি (প্রথম পর্ব)

26

১৯২২ খ্রিস্টাব্দে ইতালিতে মুসোলিনীর নেতৃত্বে ফ্যাসিবাদের উন্মেষ ঘটে ফ্যাসিবাদ শুধু ইতালির রাজনীতিতেই পরিবর্তন আনে নি, বরং পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রেও ইতালি একটি সক্রিয় বিস্তারধর্মী নীতি অনুসরণ করতে থাকে ফ্যাসিস্টগণ সাম্রাজ্যবাদ যুদ্ধনীতিতে বিশ্বাসী ছিলো তাদের উদ্দেশ্য ছিলো আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ইতালির মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করা

ডানপন্থী রাজনীতির উত্থান : প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী রাজনীতি

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শত্রুপক্ষ জার্মানির অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙে পড়ে বিপর্যয় ঘটে অর্থনীতি সামরিক বাহিনীর, বিচ্ছিন্নতা ঘটে রাজনৈতিকভাবে এবং অবনমিত হয় জাতীয় মর্যাদা প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পরাজয়ের ফলে জার্মান জাতীয়তাবাদে দেখা দেয় অসন্তোষ দায়ী করা হয় জার্মান সম্রাট দ্বিতীয় উইলিয়ামকে জার্মান সম্রাট প্রাণভয়ে সপরিবারে হল্যান্ডে পলায়ন করেন ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দর নভেম্বর ফলে অবসান ঘটে জার্মান রাজতন্ত্রের জার্মান সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক দলের নেতা হের এবার্টের নেতৃত্বে জার্মানি পরিণত হয় প্রজাতান্ত্রিক যুক্তরাষ্ট্রে এসময় বিশেষ প্রসার লাভ করতে থাকে সাম্যবাদ রুশ বিপ্লবের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে জার্মান কমিউনিস্টগণ তথা স্পার্টাকাসগণ প্লোলেতারিয়েতদের একনায়কতন্ত্র ঘোষণা করে সর্বত্র সোভিয়েত গঠন করে সমগ্র জার্মানিতে সৈনিক শ্রমিকদের সংঘটিত করে বিপ্লব সংঘটিত করতে উদ্যোগ নিতে থাকে। চলতে থাকে অরাজকতা জার্মান অন্তর্বিপ্লবের সূচনা হলে এবার্ট তাঁর সমাজতন্ত্রী সমর্থকগণ কমিউনিস্টদের নির্মমভাবে দমন করেন

উইমার প্রজাতন্ত্র

১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে সমগ্র জার্মানিতে গণভোটের মাধ্যমে গণপরিষদের নির্বাচন সম্পন্ন হয় একই বছরে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা জার্মানির উইমার নামক স্থানে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জার্মানির জন্য একটি সংবিধান রচনা করেন এটি Weimar Constitution নামে পরিচিত সংবিধান অনুযায়ী একজন প্রেসিডেন্ট দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট গঠিত হয় উচ্চ পরিষদের নাম হয় রাইখস্ট্যাডেট নিম্ন পরিষদের নাম হয় রাইখস্ট্যাগ সংবিধান অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট তার মন্ত্রিসভাকে রাইখস্ট্যাগের ভোটের ওপর নির্ভরশীল করা হয় বিশ বছর বয়সের উর্ধ্বে সকল নরনারীর ভোটাধিকার প্রয়োগ করা হয় উদারপন্থী সমাজতন্ত্রী এবার্ট এই প্রজাতন্ত্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন

জার্মানি
উইমার প্রজাতন্ত্র Source: SlideShare

জার্মানির বিভিন্ন অঞ্চলে উইমার প্রজাতন্ত্রের অবস্থান

এই প্রজাতন্ত্র সীমাবদ্ধতার বাইরে ছিলো না অভ্যন্তরীন সমস্যা ছিলো নানাবিধ শাসনব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা অর্থনৈতিক সংকট ছিলো প্রকট ফলে জার্মানিতে কমিউনিস্টদের আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে মস্কোর সহায়তায় তারা জার্মানিতে শ্রমিকরাজ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে তবে সেই চেষ্টা সফলকাম হয় নি কমিউনিস্টগণ ছাড়াও অন্যান্য প্রতিক্রিয়াশীল দল প্রজাতন্ত্রকে বিপন্ন করে তোলে ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়ার এক সামরিক কর্মচারী . কাপ বলপ্রয়োগ করে বার্লিন দখল করেন এবং এবার্ট পলায়ন করেন কিন্তু . কাপের সাফল্য বেশিদিন স্থায়ী হয় নি কারণ কাপের বিরুদ্ধে এবার্ট ট্রেড ইউনিয়নগুলোকে কাজে লাগিয়ে লাগাতার শ্রমিক ধর্মঘট চালিয়ে সাত দিনের মধ্যে ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করেন ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে জার্মান ওয়ার্কাস পার্টির জেনারেল লুন্ডেনড্রফের সাহায্যে এই প্রজাতন্ত্র ধ্বংস করার প্রচেষ্টা চালায় এসময তাঁর সহকর্মী ছিলেন হিটলার প্রজাতন্ত্রের সরকার তাদের এই প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দেয় ফলে হিটলার কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন কারাগারে বসে হিটলার Mein Kampf  নামে একটি আত্মজীবনী লেখেন এই বইটি তখনকার তরুণদের কাছে অবশ্যপাঠ্য বই হিসেবে সমাদৃত হয়

হিটলার
Source: ABC News

এই প্রজাতান্ত্রিক সরকারের অন্যতম সমস্যা ছিলো বিশ্বযুদ্ধের ক্ষতিপূরণস্বরূপ বিরাট ঋণের বোঝা ক্ষতিপূরণ কমিশন ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে ক্ষতিপূরণ বাবদ ৬৬০ কোটি পাউন্ড জার্মানির মোট দেয় অর্থ বলে নির্ধারণ করে কিন্তু এই বিরাট অঙ্কের ক্ষতিপূরণ প্রদান এক জটিল সমস্যার সৃষ্টি করে সমগ্র জার্মানি ক্ষতিপূরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে থাকে এমতাবস্থায় জার্মানি কয়েক কিস্তিতে ক্ষতিপূরণ প্রদান করে থামিয়ে দেয় ফলে ফ্রান্স বেলজিয়াম যুগ্মভাবে ক্ষতিপূরণ আদায়ের উদ্দেশ্যে জার্মানির শিল্পসমৃদ্ধ অঞ্চল রুঢ় দখল করে নেয় প্রত্যুত্তরে ওই অঞ্চলের জার্মানরা বিদ্রোহ শুরু করলে অর্থনৈতিক অবস্থা ভেঙে পড়ে

দেশের এই সংকটময় মুহুর্তে স্ট্রেসম্যান নামে এক বিশিষ্ট রাজনীতিক ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে জার্মান প্রজাতন্ত্র আবার পুনরুজ্জীবিত হয়ে ওঠে তিনি রুঢ় অঞ্চলের ধর্মঘট প্রত্যাহার করান এবং ফ্রান্স বেলজিয়ামকে ক্ষতিপূরণের বাবদ  অর্থপ্রদান শুরু করেন তিনি যুক্তরাষ্ট্র ইংল্যান্ডসহ মিত্র রাষ্ট্রসমূকে বোঝাতে সক্ষম হন যে জার্মানির অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নত না হলে ক্ষতিপূরণ আদায় অসম্ভব এমতাবস্থায় ক্ষতিপূরণ আদায়ের বিষয়ে জার্মানির অর্থনৈতিক সামর্থ্য বিবেচনার জন্য ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে মার্কিন অর্থনীতিবিদ চার্লস ডওজের নেতৃত্বে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠিত হয় এই কমিশন অল্প অল্প করে জার্মানির কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করার সুপারিশ করে এই পরিকল্পনা মিত্ররাষ্ট্রসমূহ জার্মানি অনুমোদন করে ফ্রান্স বেলজিয়াম রুঢ় অঞ্চল থেকে তাদের সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করে এই পরিকল্পনা জার্মানির অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের নতুন মেরুকরণ হয় ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে জার্মানি ফ্রান্স ইউরোপের অন্যান্য রাষ্ট্রের সাথে লোকার্নো চুক্তি স্বাক্ষর করে এই চুক্তির ফলে জার্মানি লীগ অব নেশনসের সদস্যপদ লাভ করে এর কৃতিত্ব স্ট্রেসম্যানের ডওজ কমিশনের সুপারিশের ফলে জার্মানির বিদেশী ঋণলাভের যে সুযোগ ঘটে তার ফলে শিল্পবণিজ্যের অভূতপূর্ব উন্নতির সূচনা হয় বেকারত্ব হ্রাস পায় এবং জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়

এই উন্নতি স্থায়ী হলো না ক্রমশ জনগণ ক্ষতিপূরণ দানের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুললে মিত্রশক্তি যুক্তরাষ্ট্রের অপর এক অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞ ওয়েন ইয়ং এর সভাপতিত্বে একটি কমিশন গঠন করে এই কমিশনের সুপারিশে জার্মানির প্রদেয় মোট ক্ষতিপূরণের পরিমাণ হ্রাস করা হয় জার্মানিকে সহজ কিস্তিতে ক্ষতিপূরণের অর্থ পরিশোধ করতে দেওয়া হয় এছাড়াও জার্মানির আর্থিক উন্নতির জন্য যুক্তরাষ্ট্র তিনশত মিলিয়ন ডলার ঋণ প্রদান করে

উইমার প্রজাতন্ত্রের অবসান

১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে স্ট্রেসম্যানের অকস্মাৎ মৃত্যু হলে জার্মানিতে প্রজাতন্ত্র রক্ষার আর কোনো উপর্যুক্ত কোনো লোক ছিলো না উল্লেখ্য, ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে এবার্টের মৃত্যুর পর হিন্ডেনবার্গ জার্মানির রাষ্ট্রপতি হলেও জার্মানিকে স্থিতিশীল করার মত শক্তি তাঁর ছিলো না ইতঃপূর্বে ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে জার্মানিতে ভয়াবহ অর্থমন্দা হয় এর ফলে প্রজাতন্ত্রের প্রাণশক্তি নিঃশেষিত হয় ইংল্যান্ড যুক্তরাষ্ট্র জার্মানিকে ঋণস্বরূপ অর্থ সহায়তা দেওয়ার অক্ষমতা প্রকাশ করলে জার্মানির অর্থনীতিতে ধ্বস নামে ফলে জার্মানির পক্ষে ক্ষতিপূরণ দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে জার্মানি বার্ষিক কিস্তি পরিশোধ করার অক্ষমতা জানায় অর্থমন্দার ফলে এই প্রজাতন্ত্রের প্রতি জনগণের আস্থা বিনষ্ট হয় এই সুযোগে ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের নির্বাচনে নাৎসি দল কমিউনিস্টরা বহু আসন দখল করে নেয় ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের নির্বাচনে জার্মানির রাইখস্ট্যাগে নাৎসি দল ৬০৮ টি আসনের মধ্যে ২৩০ টি আসন লাভ করে ফলে বৃদ্ধ প্রেসিডেন্ট হিন্ডেনবার্গ পরিস্থিতির চাপে পড়ে হিটলারকে প্রধানমন্ত্রী তথা চ্যান্সেলর করতে বাধ্য হন ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট হিন্ডেনবার্গ মারা গেলে হিটলার রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী উভয় পদ একীভূত করে জার্মানির সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হন এভাবে উইমার প্রজাতন্ত্রের অবসান ঘটে

হিটলারের উত্থান

হিটলার ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ
হিটলার

এডলফ হিটলার (Adolf Hitler): জন্ম ২০ এপ্রিল ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দ, অস্ট্রিয়ার ব্রাউনাউয়ে পিতা ছিলেন অস্ট্রিয়ার শুল্ক বিভাগের সাধারণ কর্মচারী এবং মাতা ছিলেন নারী কৃষক হিটলার তাঁর আত্মজীবনী বইয়ে উল্লেখ করেন, অর্থাভাবে তাঁকে স্কুলত্যাগ করতে হয় তাঁর বয়স যখন ১৩ বছর তখন তাঁর পিতা মারা যান ফলে শুরু হয় তাঁর সংগ্রামী জীবন ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে ভিয়েনায় আসেন এবং চারুকলায় ভর্তি হন সেখানে জীবনের কয়েকটি বছর অতিবাহিত করেন এবং এসময় তিনি ইহুদিবিদ্বেষী সাম্যবাদবিরোধী মনোভাবাপন্ন হয়ে ওঠেন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি জার্মান সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন যুদ্ধের পর তিনি মিউনিখে ফিরে আসেন এবং সেখানে প্রায় পাঁচ বছর ভবঘুরে হিসেবে অতিবহিত করেন যুদ্ধে জার্মানদের শোচনীয় পরাজয় হিটলারকে বিক্ষুব্ধ করে তোলে এবং তিনি স্বদেশের হৃতগৌরব পুনরুদ্ধার এবং ভার্সাইয়ের অপমানজনক সন্ধির প্রতিশোধ গ্রহণের দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করেন ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে হিটলার জার্মান জাতীয় সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক দল তথা নাৎসি দল গঠন করেন তিনি এই দলের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এবং দলীয় প্রধান তথা ফ্যুয়েরার (Fuhrer) হিসেবে ক্ষমতার অধিকারী হন। তিনি একটি আধাসামরিক বাহিনী প্রতিষ্ঠা করেন প্রাক্তন সামরিক কর্মচারী বেকার যুবকদের সমন্বয়ে এই আধাসামরিক বাহিনী গঠিত হয় এই বাহিনী S A নামে পরিচিত ছিলো শীঘ্রই এই বাহিনীর সহায়তায় জার্মানির রাজনৈতি মহলে হিটলার বেশ প্রভবশালী হয়ে ওঠেন ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে জার্মান সেনাধ্যক্ষ লুন্ডেনডর্ফ অন্য কয়েকজন সহযোগীর সহায়তায় বলপূর্বক ক্ষমতা দখলের প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে হিটলার কারাবরণ করেন কারাগারে বসে হিটলার Mein Kampf নামে একটি আত্মজীবনী লেখেন এই বইটি তখনকার তরুণদের কাছে অবশ্যপাঠ্য বই হিসেবে সমাদৃত হয়

নাৎসি দল গঠন করার মধ্য দিয়ে নতুন ভাবাদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে উদ্যোগী হন হিটলার স্বস্তিকাছিলো নাৎসি দলের প্রতীক দলের সদস্যগণ কতৃক নির্দিষ্ট হারে চাঁদা দেওয়া এবংস্বস্তিকাচিহ্নিত বিশেষ পোশাক দলীয় সদস্যদের ইউনিফর্ম করা হয় সমগ্র জার্মানিতে হিটলার তাঁর কর্মসূচিকে জনপ্রিয় করার চেষ্টা করেন তাঁর কর্মসূচি ছিলো

১/ ভার্সাই সন্ধির নিন্দা করা

২/ সমগ্র জার্মান ভাষাভাষী জনগণকে নিয়ে এক ‍বৃহৎ জার্মান রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব

৩/ জার্মানির ইহুদি সম্প্রদায়কে রাষ্ট্রদ্রোহী বলে অভিযুক্ত করা ও প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পরাজয়ের জন্য ইহুদিদের দায়ী করা

৪/ জার্মানিতে মার্কসীয় সমাজতন্ত্রের বদলে জাতীয় সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা

মুসোলিনীর উত্থান

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ
Source: Time Magazine

উনবিংশ শতাব্দির শেষভাগে ইতালি ঐক্যবদ্ধ রাষ্ট্রে পরিণত হয় কিন্তু গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা জাতীয়তাবোধের বিকাশের অভাবে নবগঠিত ইতালি ইউরোপীয় তথা আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে যথেষ্ট মর্যাদার আসনে উন্নীত হতে পারে নি জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধি এবং প্রাকৃতিক সম্পদের অভাব ইতালির অগ্রগতির পথে প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছিলো ইতালিয় জনগণের জীবনমানের নিম্নমান এবং দারিদ্র্য যখন সরকারের কাছে স্থায়ী সমস্যা হিসেবে প্রতিভাত হচ্ছিলো তখনই শুরু হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ইতালি জার্মানির সাথে মৈত্রী চুক্তি করলেও শেষ পর্যন্ত ইতালি মিত্রপক্ষে যোগদান করে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে ইতালিতে অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়। এছাড়া উগ্রপন্থী সমাজতন্ত্রী সাম্যবাদীগণের ব্যাপক ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের ফলে শিল্পপতি মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মধ্যে আতংক সৃষ্টি হয় মধ্যবিত্ত শ্রেণী উদারতন্ত্রী সরকারের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলে এবং একটি শক্তিশালী সরকার প্রতিষ্ঠার উপর জোর দিতে থাকে

বলপ্রয়োগে মুসোলিনী ইতালির ক্ষমতা গ্রহণ করেন ফ্যাসিস্ট দলের নেতা ছিলেন মুসোলিনী তাঁর আবির্ভাব ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় ঘটনা প্রথম বিশ্বযুদ্ধ অবসানের পর ইউরোপে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি কয়েকশত কর্মচ্যুত সৈনিক সমাজতন্ত্রবিরোধী একদল উৎসাহী জাতীয়তাবাদীদের নিয়ে মিলান শহরে ফ্যাসিস্ট সংগ্রামী দল গঠন করেন ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে ইতালিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে ফ্যাসিস্টরা ভোটারদের ভীতি প্রদর্শন করেও আইনসভায় মাত্র ৩১ টি আসন পায় ব্যালটের মাধ্যমে ক্ষমতা পাওয়া অসম্ভব জেনে মুসোলিনী বলপ্রয়োগের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের সিদ্ধান্ত নেন ১৯২২ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাসে মুসোলিনীর ডাকে হাজার হাজার সশস্ত্র ফ্যাসিস্ট স্বেচ্ছাসেবক রাজধানী রোমে প্রবেশ করে। এমতাবস্থায় ইতালির সম্রাট ভিক্টর তৃতীয় ইমানুয়েল মুসোলিনীকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করতে বাধ্য হন ১৯২২ খ্রিস্টাব্দের ৩০ অক্টোবর মুসোলিনী ফ্যাসিস্ট মন্ত্রিসভা গঠন করে ইতালির শাসনভার গ্রহণ করেন। এভাবে মুসোলিনী ইতালিতে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করতে সক্ষম হন।

(চলবে) – দ্বিতীয় বা শেষ পর্বে থাকছে ” দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ”, ” ভার্সাই সন্ধি ও জার্মানির উগ্র জাতীয়তাবাদ”, “সাম্রাজ্যবাদ ও তোষণ নীতি”, “দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঘটনা প্রবাহ”, “দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলাফল” । শেষ পর্বটি প্রকাশিত হবে আগামিকাল। চোখ রাখুন আমাদের সাইট বা ফেইসবুক পেইজ এ। 

Leave A Reply
26 Comments
  1. Mfxvxe says

    order rybelsus 14 mg online – buy DDAVP cheap buy generic desmopressin

sativa was turned on.mrleaked.net www.omgbeeg.com

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More