রাশিয়া বিশ্বকাপ ২০১৮ এর চোখ ধাঁধানো স্টেডিয়ামগুলো

1

ঘরের দরজায় বিশ্বকাপের ঘণ্টা বাজছে। এখুনি শুরু হয়ে গেছে বিশ্বকাপ নিয়ে উন্মাদনা। এক্ষেত্রে স্টেডিয়ামও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। হয়ত ব্রাজিলের মারাকানার মতো অমন বিখ্যাত স্টেডিয়াম না থাকলেও রাশিয়ার স্টেডিয়ামগুলো মোটেও আধুনিকতা কিংবা ইতিহাসের দিক দিয়ে পিছিয়ে নেই। নতুন ৯টি স্টেডিয়াম তৈরির পাশাপাশি পুরনো তিনটিকে করা হয়েছে সংস্কার। এই মোট ১২ স্টেডিয়ামেই রাশিয়া বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে। চলুন দেখে আসি সেসব স্টেডিয়ামগুলোকে। এগুলোই হয়ত সৃষ্টি করবে নতুন ইতিহাস কিংবা জন্ম দেবে কোন তরুণ তুর্কি খেলোয়াড়ের।

১. কাজান এরিনা:

কাজান এরিনা
কাজান এরিনা Source: StadiumDB.com
কাজান এরিনা
কাজান এরিনা

এই স্টেডিয়ামটি বিশ্বকাপকে সামনে রেখেই ৪৩৯ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে তৈরি করা হয়। এটি আধুনিক সময়ের সকল সুবিধাসহ জাঁকজমক ও অসাধারণ আকৃতি দিয়ে তৈরি করা হয়। এটির নকশাকার ছিলেন উইম্বলি কিংবা আমিরাতের স্টেডিয়ামের নির্মাতা পপুলাস। একই সময়ে স্টেডিয়ামে প্রায় ৪৫ হাজারের মত দর্শক বসে খেলা উপভোগ করতে পারবে। এছাড়াও এই স্টেডিয়ামের সবথেকে চমকপ্রদ যে সুবিধা আছে তা হল স্টেডিয়ামের বাইরে বিশাল পর্দা। ইউরোপের সবচেয়ে খেলা দেখার বড় পর্দা এখানেই পাবেন। তাই স্টেডিয়ামের ভেতরে খেলা দেখার সুযোগ না হলেও ফ্রিতে বাইরে থেকে খেলা দেখে আসতে পারেন বিনা বাঁধায়।

. একটারিনবুর্গ এরিনা :

একটারিনবুর্গ এরিনা
একটারিনবুর্গ এরিনা
একটারিনবুর্গ এরিনা
একটারিনবুর্গ এরিনা

এটি রাশিয়ার শীতল অঞ্চলে অবস্থিত। মস্কো থেকে প্রায় হাজার মাইল দূরে অবস্থিত। বিশ্বকাপের শুরুর দিকের পাঁচটি ম্যাচ এখানে অনুষ্ঠিত হবে। এই স্টেডিয়ামটি প্রথম স্থাপিত হয় ১৯৫৭ সালে। ২১৫মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে স্টেডিয়ামটি নতুন করে ঢেলে সাজানো হয়। ৩৫ হাজার দর্শক বসার স্থান থাকার কথা থাকলেও বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে এখানে একসাথে বসে ৪৩ হাজার মানুষ খেলা দেখতে পারবে। ২০১৭ সালের কনফেডারেশন কাপও এই স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

মূলত স্টেডিয়ামটি রাশিয়ান ক্লাব স্পার্টাক মস্কোর হোম গ্রাউন্ড হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

৩. ফিস্ট অলিম্পিক স্টেডিয়াম:

ফিশ্‌ট অলিম্পিক স্টেডিয়াম
ফিস্ট অলিম্পিক স্টেডিয়াম
ফিশ্‌ট অলিম্পিক স্টেডিয়াম
ফিস্ট অলিম্পিক স্টেডিয়াম
Source: Team Canada

রাশিয়ার শোচিতে অবস্থিত এই স্টেডিয়ামটি মূলত ২০১৪ সালের শীতকালীন অলিম্পিক ও প্যার্যাম্পিকের জন্য ৫১৯ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে তৈরি করা হয়েছিল। স্টেডিয়ামটি অনেকটা তুষারের আদলে তৈরি করা। এছাড়াও স্টেডিয়ামটির উত্তর পাশ খোলা যাতে ক্রাসনায়া পোলিয়ানা পর্বত দেখা যায়। স্টেডিয়ামটিতে একসাথে প্রায় ৪৭ হাজার দর্শক একসাথে খেলা দেখতে পারবে।

৪. কালিনিনগ্রাদ স্টেডিয়াম:

কালিনিনগ্রাদ স্টেডিয়াম
কালিনিনগ্রাদ স্টেডিয়াম Source: The Stadium Guide
কালিনিনগ্রাদ স্টেডিয়াম
কালিনিনগ্রাদ স্টেডিয়াম

বিশ্বকাপকে সামনে রেখে এই স্টেডিয়ামটি সম্পূর্ণ নতুনভাবে ৩০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে তৈরি করা হয়। খুব সম্প্রতি স্টেডিয়ামটির কাজ সম্পূর্ণ হয়। স্টেডিয়ামটি ওয়াঙ্কিয়াব্রিস্কি দ্বীপের প্রোগোলীয়া নদীর পাশে অবস্থিত। প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে স্টেডিয়ামটি দেখতে আরো মহনীয় লাগে, যদিও কিছুটা দুর্গম অঞ্চলে এটি অবস্থিত। মোটামুটি ৩৫ হাজার দর্শকের ধারণক্ষমতা সম্পন্ন এই স্টেডিয়ামটি এখন বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুত।

৫. স্পার্টাক স্টেডিয়াম:

স্পার্টাক স্টেডিয়াম
স্পার্টাক স্টেডিয়াম
Source: tropki.com
স্পার্টাক স্টেডিয়াম
স্পার্টাক স্টেডিয়াম
Source: RT.com

এতেক্রিয়েন্ত স্টেডিয়ামে স্পার্টাক মস্কো ক্লাবের হোম গ্রাউন্ডের খেলাগুলো পড়ত। কিন্তু তাদের নিজস্ব কোন স্টেডিয়াম ছিল না। অনেক চড়াই উতরাই এর পর তাদের নিজস্ব স্টেডিয়াম হিসেবে ২০১৪ সালে এটি প্রতিষ্ঠা পায়। পাশাপাশি ২০১৮ বিশ্বকাপের ভেন্যুও এখানে পড়ে। ৪৩০ মিলিয়ন ব্যয়ে নির্মিত স্টেডিয়ামটি ৪৫ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতাসম্পন্ন।

৬. লুঝনিকি স্টেডিয়াম:

লুঝনিকি স্টেডিয়াম
লুঝনিকি স্টেডিয়াম
Source: dala.xyz
লুঝনিকি স্টেডিয়াম
লুঝনিকি স্টেডিয়াম

মস্কোয় অবস্থিত এই স্টেডিয়ামটি রাশিয়ার সর্ববৃহৎ স্টেডিয়াম ও জাতীয় স্টেডিয়ামে ভূষিত। ১৯৫৫-৫৬ সালে ‘লেনিন সেন্ট্রাল স্টেডিয়াম’ নামে এই স্টেডিয়ামের যাত্রা শুরু হয়। ১৯৮০ সালের অলিম্পিকের হোস্ট ছিল এই স্টেডিয়াম। ২০০৮ সালে চেলসি ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মধ্যকার উয়েফা চেম্পিয়স লীগের ফাইনালও এই স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়। ৪০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে স্টেডিয়ামকে ঢেলে সাজানো হয় নতুনভাবে।

৭. নিঝনি নভগোরোদ স্টেডিয়াম:

নিঝনি নভগোরোদ স্টেডিয়াম
নিঝনি নভগোরোদ স্টেডিয়াম
Source: skyscrapercity.com
নিঝনি নভগোরোদ স্টেডিয়াম
নিঝনি নভগোরোদ স্টেডিয়াম

মস্কো ও কাজন শহরের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত নিঝনি নভগোরোদ স্টেডিয়াম। ২৯০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে তৈরি করা হয় ৪৫ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতাসম্পন্ন এই স্টেডিয়ামটি। খুব সম্প্রতি এর কাজ শেষ হয়। আগুন লাগার ফলে কাজে কিছুটা বিঘ্ন ঘটলেও ঠিকাদার কাজ তুলে নিতে সমর্থ হন। এই স্টেডিয়ামের পাশ দিয়েই বয়ে গেছে ভলগা ও ওকা নদী। সবমিলিয়ে অত্যন্ত সুন্দর একটি অবকাঠামোই পেল এই স্টেডিয়ামটি।

৮. রোস্তভ এরিনা:

রোস্তভ এরিনা
রোস্তভ এরিনা
রোস্তভ এরিনা
রোস্তভ এরিনা

বিশ্বকাপ উপলক্ষে তৈরি আরেকটি নতুন স্টেডিয়াম এটি। ডোন নদীর পাশেই এই স্টেডিয়ামটি তৈরি করা হয়। অবশ্য প্রথমদিকে ভুলভাবে কিছু নকশা করা হলেও স্টেডিয়ামটি এখন বিশ্বকাপ খেলার জন্য প্রায় সম্পন্ন। ৩৩০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নির্মিত এই স্টেডিয়ামটির দর্শক ধারণক্ষমতা ৪৫ হাজার।

৯. সেইন্ট পিটার্সবার্গ স্টেডিয়াম:

সেইন্ট পিটার্সবার্গ স্টেডিয়াম
সেইন্ট পিটার্সবার্গ স্টেডিয়াম
সেইন্ট পিটার্সবার্গ স্টেডিয়াম
সেইন্ট পিটার্সবার্গ স্টেডিয়াম

এই স্টেডিয়ামটি কয়েকটি নামে পরিচিত।

ক্রেস্তভস্তি কিংবা জেনিট এরিনা নামেও অনেকে জেনে থাকবেন। স্টেডিয়ামটির কাজ অনেক আগে শুরু হয়ে ২০০৯ সালে শেষ হবার কথা থাকলেও অবশেষে গতবছরের এপ্রিলে শেষ হয়। মাঝে ঠিকাদারও বদলাতে হয়। যাহোক এই মাঠের প্রথম ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয় স্টেডিয়াম তৈরির শ্রমিক ও মালিক পক্ষের মধ্যে। যাহোক প্রায় দেড় বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে তৈরি স্টেডিয়ামটিতে প্রায় ৬৮ হাজার দর্শক একসাথে খেলা দেখতে পারবেন।

১০. সামারা এরিনা:

সামারা এরিনা
সামারা এরিনা
সামারা এরিনা
সামারা এরিনা

এটি কসমস এরিনা নামেও পরিচিত। প্রথমত স্টেডিয়ামটি একটি দূরবর্তী দ্বীপে করার ইচ্ছে থাকলেও স্থান পরিবর্তন করে রাশিয়ান কর্তৃপক্ষকে স্টেডিয়ামটি সামুরা শহরে এটি তৈরি করতে হয়। সবকিছু মিলিয়ে স্টেডিয়ামটি এখন বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুত। যদিও রাশিয়ান কর্তৃপক্ষকে ফিফার অনেক কথা শুনতে হয়েছিল কাজে ঢিলামির জন্য।

১১. মর্ডোভিয়া এরিনা:

মর্দোভিয়া এরিনা
মর্ডোভিয়া এরিনা
 মর্দোভিয়া এরিনা
মর্ডোভিয়া এরিনা

বিশ্বকাপের জন্য তৈরি করা আরেকটি নতুন স্টেডিয়াম হল মর্দোভিয়া স্টেডিয়াম যা সারানস্ক স্টেডিয়াম নামেও পরিচিত। ৩০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নির্মিত এই স্টেডিয়ামে ৪৫ হাজার দর্শক একসাথে বসে খেলা দেখতে পারবে। যদিও পরবর্তীতে আসন সংখ্যা কমিয়ে আনা হবে। ২০১৭ সালে স্টেডিয়ামটি খেলার জন্য উন্মুক্ত করা হয়।

১২. ভলগোগ্রাদ এরিনা:

ভলগোগ্রাদ এরিনা
ভলগোগ্রাদ এরিনা
ভলগোগ্রাদ এরিনা
ভলগোগ্রাদ এরিনা

আরেকটি চোখ ধাঁধানো স্টেডিয়াম হল এই ভলগোগ্রাদ স্টেডিয়াম। পুরাতন স্টেডিয়ামটিকে ভেঙ্গে নতুন স্টেডিয়াম তৈরিতে ব্যয় হয় প্রায় ২৮০ মিলিয়ন ডলার। ধারণক্ষমতা ৪৫ হাজারের ঘরে। স্টেডিয়ামের প্রধান আকর্ষণ হল এর ঝুলন্ত গ্যালারি আর বাই সাইকেলের স্পোকের মতো যার আকৃতি।

ছবি ও তথ্যসূত্রঃ

১. Getty Image

২. Pinterest

৩. The Stadium Guide

৪. Fifa Official Website

৫. The guardian

৬. Daily Mirror

Leave A Reply
sativa was turned on.mrleaked.net www.omgbeeg.com

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More