যারা মোটামুটি টেনিস খেলা দেখতে ভালোবাসেন কিংবা টুকিটাকি খবরাখবর রাখেন তাদের কাছে টেনিসের রজার ফেদেরার অপরিচিত কেউ নন। টেনিসকে নিয়ে গেছেন শিল্পের পর্যায়ে। আর নিজের নামকে আজীবনের জন্য খোদাই করে নিয়েছেন টেনিস দুনিয়ায়। খুব সম্প্রতি রটারডাম জয়ের মধ্য দিয়ে তিনি তার ব্যক্তিগত ২০তম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয় করেন। আজকে আমরা খোঁজার চেষ্টা করবো এই কিংবদন্তী খেলোয়াড়ের জীবনের নানা দিক।

বাল্যকাল:
টেনিস তারকা রজার ফেদেরার ১৯৮১ সালের ৮ আগস্ট সুইজারল্যান্ড এর বাসেল এ জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা সুইস নাগরিক ও ব্যবসায়ী রবার্ট ফেদেরার। অবশ্য রজার ফেদেরারের মা একজন দক্ষিণ আফ্রিকান। ছোট বেলা থেকেই রজার ফেদেরার টেনিসের প্রতি ভীষণ অনুরক্ত ছিলেন। আট বছর বয়স থেকেই তিনি দিব্যি ভালো খেলতে শুরু করেন আর ১১ বছর বয়সের মধ্যে তিনি সুইজারল্যান্ড এর জুনিয়রে সেরা তিনের মধ্য অন্যতম একজন ছিলেন। ১৪ বছর বয়সে পুরোপুরি টেনিস খেলার দিকে মনোযোগ দেন। পড়াশুনা ফেলে চলে যেতেন বিভিন্ন টুর্নামেন্ট খেলতে। পাশাপাশি দিনরাত পরিশ্রম করে যান দক্ষতা বাড়াতে। তার আদর্শের কোটায় ছিলেন বরিস বেকার ও স্টিফান এডবার্গ। অবশ্য ছোট বেলায় রজার খুব বদমেজাজি ছিলেন। খেলায় হেরে গেলে ব্যাট ছুড়ে মারা ছিল তার নিত্য অভ্যাস। অবশ্য এখন তিনি অন্যতম শান্ত ও ভদ্র মানুষ বলেই বিবেচিত হন।

১৪ বছর বয়সে তিনি সুইজারল্যান্ড জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপ অর্জন করেন। পরবর্তীতে তিনি আন্তর্জাতিক টেনিস ফেডারেশন এর সাথে যুক্ত হন এবং ১৯৯৬ সালে প্রথম স্পন্সরশীপ পান এবং তার পরই তিনি ১৯৯৮ সালে প্রথম জুনিয়র উইম্বলডন কাপ জয় করেন এবং ভালো পারফরম্যান্স এর ফল স্বরূপ অরেঞ্জ বল জয় করেন।

টেনিসে বর্ণালী ক্যারিয়ার:
১৯৯৮ সালে সিঙ্গেল ও ডাবলে জুনিয়র উইম্বলডন জয় করার পর থেকেই তার প্রফেশনাল ক্যারিয়ার শুরু হয়ে যায়। ২০০১ সালে উইম্বলডেন এ চতুর্থ রাউন্ডে সিঙ্গেল এ তৎকালীন চ্যাম্পিয়ন পেতে সাম্প্রাসকে হারিয়ে চারদিকে হইচই ফেলে দেন। ২০০৩ সালে উইম্বলডনের ঘাসের কোর্টে প্রথম সুইস হিসেবে উইম্বলডনে গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতে এক সোনালী অধ্যায় শুরু করেন। এরপর আর তাকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। পরের বছর অর্থাৎ ২০০৪ ছিল তার জন্য অন্যতম একটি সোনালী বছর। এই বছরের শুরুতে তার বিশ্ব ব্যাংকিং ছিল ২ নম্বরে। একই বছরে তিনি আরও জয় করেন ইউএস ওপেন, এটিপি মাস্টার্স ও পাশাপাশি উইম্বলডেনেও শিরোপা ধরে রাখেন।
২০০৫ সালের শুরু থেকেই রজার ফেদেরারের র্যাঙ্কিং ছিল ১ নম্বরে। এই বছর তিনি তৃতীয়বারের মতো পরপর তিনবার উইম্বলডেন জয় করেন এবং ইউএস ওপেনেও শিরোপা ধরে রাখতে সমর্থ হন। ২০০৪ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত টানা ২৩৭ সপ্তাহ নাম্বার ওয়ানে থেকে এক বিশ্ব রেকর্ড তৈরি করেন।

২০০৮ সালে ইউএস ওপেন জিতলেও তার পরবর্তী অবস্থা আগের মতো সুখকর রইলোনা রজারের জন্য। এ বছরই তিনি তৎকালীন রাইভাল রাফায়েল নাদালের কাছে ফ্রেঞ্চ ওপেন ও উইম্বেলডনে হেরে যান। এরপরই এ বছর অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে তিনি হেরে যান বর্তমান সময়ের আরেক তারকা খেলোয়াড় জোকোভিচের কাছে। এতেই চার বছর পর প্রথমবারের মতো নাদালের কাছে রজার ফেদেরারের র্যাঙ্কিং ১ থেকে ২ এ নেমে আসে। ২০০৯ সালটা ছিল টেনিস রাজা রজার ফেদেরারের বিশ্ব টেনিসের মুকুট উদ্ধারের মতো। এ বছরই তিনি ফ্রেঞ্চ ওপেন ও উইম্বলডন জিতে ১৫টি একক গ্র্যান্ড স্লাম জয়ের অনবদ্য রেকর্ড তৈরি করেন। এ ছাড়াও ইউএস ওপেন ও অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ফাইনালে উঠেন। এবং ১ নম্বর র্যাঙ্কিং পুনরুদ্ধার করতে সমর্থ হন। এরপর কয়েকবছর বেশ টানাপোড়নের মধ্য দিয়ে ফেদেরারের ক্যারিয়ার গিয়েছে।

২০১২ সালে পুরনো চেহারায় ফেরেন রজার ফেদেরার। এ বছর তিনি এন্ডি মারেকে হারিয়ে সপ্তমবারের মতো নাম্বার ওয়ান র্যাঙ্কিং এ আসেন। অবশ্য এর পরের বছরই আবার তার ফর্ম খারাপ হয়ে যায়। উইম্বলডন ও ইউএস ওপেনে খুব চেষ্টা করেও ভালো খেলতে পারেননি। র্যাঙ্কিং এ পিছিয়ে থাকাদের সাথে হেরে ব্যাপক লজ্জিতও হন। পরের বছর ২০১৪ সালে উইম্বলডনে জোকোভিচের বিরুদ্ধে ফাইনালে প্রতিযোগিতা করেও জিততে পারেননি। ইউএস ওপেনেও হেরে যান। তবে পরের বছর ২০১৫ সালে দুবাই চ্যাম্পিয়নশিপ এ জোকোভিচকে হারিয়ে নিজেকে খুঁজে পান ফেদেরার। এ বছরই উইম্বলডন এর ফাইনালে জোকোভিচের কাছে হেরে অষ্টম উইম্বলডন একক জিততে অসমর্থ হন। ২০১৬ সালেও বাজেভাবে কাটে ফেদেরারের। বারবারই জোকোভিচের কাছে হেরে যাচ্ছিলেন তিনি। তবে অনেকদিন পর অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে তিনি রাফায়েল নাদালকে হারিয়ে ১৮তম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয় করেন।এরপর ছয় মাসের মতো মাঠের বাইরেও ছিলেন। কয়েকটি টুর্নামেন্টে না খেলে তিনি ২০১৭ এর জুলাই উইম্বলডন এর জন্য প্রস্তুতি নেন। এবং এবার তিনি সত্যিই আরেকবার নিজেকে ফিরে পান। অষ্টমবারের মতো উইম্বলডন ৩৫ বছর বয়সী হিসেবে জিতে এক রেকর্ড সৃষ্টি করেন। এরপর ২০১৮ তে এসেই অস্ট্রেলিয়া ওপেনে ১৯ তম এক গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয় করে বছর শুরু করলেন। বর্তমান তার র্যাঙ্কিং ১ এ। কে জানে আবার কতদিন একক স্থান দখল করে থাকেন!

ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবন:
২০০৯ সালে আরেক টেনিস খেলোয়াড় মিরকা ভার্ভিচকে বিয়ে করেন এই কিংবদন্তী খেলোয়াড়। এরপর তাদের ঘরে আসে যমজ দুই কন্যা। ২০১৪ সালে আবারো তারা যমজ সন্তানের জন্ম দেন।

তিনি রজার ফেদেরার ফাউন্ডেশন নামে একটি চ্যারিটি সংস্থা বিশ্বব্যাপী বাচ্চাদের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। এবং তিনি নিজেও ইউনিসেফ এর একজন এম্বাসেডর। তার বাৎসরিক আয় প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলার। স্পোর্টস-ম্যান হিসেবে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ইনকাম করেন এই খেলোয়াড়।

টেনিসের ইতিহাসে অবিসংবাদিত রাজা হিসাবে রজার ফেদেরার ছাড়া আর কোন নাম এখন পর্যন্ত স্থায়ী আসন গড়তে পারেনি। হয়তো আর পারবেওনা নিকট ভবিষ্যতে। টেনিসের সর্বকালের সেরা বলতে তার নামই হয়তো উচ্চারিত হবে যুগে যুগে।
cheap levofloxacin 250mg brand levofloxacin 500mg
[…] রজার ফেদেরার : টেনিসের অবিসংবাদিত রা… […]