২০১৭ বলিউডের তেমন ভালো যায় নি। না ব্যবসার দিক থেকে না মানের দিক থেকে। তারপরও কিছু সিনেমা মানুষের মন জয় করে নিয়েছে, আর সাদি মেয় জারুর আনা তার মধ্যেই একটি। অনেকদিন ধরেই দর্শক বলিউড ফ্লেভারের একটা সিনেমা চাচ্ছিল। কিন্তু কোরিয়ান, তামিল রিমেক আর হলিউডকে ফলো করতে গিয়ে বলিউড নিজের নিজস্বতাই ভুলে গিয়েছিল।
কাহিনীর শুরুতেই নায়ক নায়িকার পারিবারিক ভাবে দেখা সাক্ষাত। তারপর পছন্দ, ভালো লাগা আর বিয়ে। কিন্তু বিয়ের দিনটায় ঘটল এক অঘটন। মেয়ে গেল বিয়ের আসর থেকে ভেগে। বিয়ের আসর থেকে ভাগার অবশ্য একটা কারণও ছিল। বিয়ের দিনই খবর আসে যে নায়িকা পিসিএসে পাশ করেছে। অন্যদিকে ছেলের পরিবার পুরাপুরি প্রস্তুতি নিয়ে হাজির। দুই পরিবারের মান সম্মান সব শেষ।
কিন্তু ৫ বছর পর হঠাৎ নায়ক নায়িকার দেখা হয়ে যায়। আর শুরু হয় এক নতুন অধ্যায়। নায়ক প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য উঠে পরে লাগে। আর ঘটতে থাকে একের পর এক ঘটনা। জানতে হলে দেখুন “সাদি মেয় জারুর আনা”।
অভিনয়ে আছেন রাজকুমার রাও, ক্রিতি খারবান্ধা। রাজকুমার রাও বরাবরের মতই এবারো তার অভিনয় দিয়ে সবাইকে মুগ্ধ করেন। একজন সাধারণ সাদাসিধে ছেলের ভূমিকায় খুব ভালমতোই নিজের অভিনয়ের জাদু দেখিয়েছেন। ২ ঘন্টা ১৭ মিনিটের মুভিতে দেখানো হয়েছে ভারতীয় সমাজের বিভিন্ন দিক।
যৌতুকের মত বিষয়কে খুব ভালমতোই স্থাপন করা হয়েছে। দেখা যায় ছেলে-পক্ষ সবসময়ই মেয়ে-পক্ষের কাছ থেকে একটা মোটা অঙ্কের টাকা দাবী করে। মেয়ের বাবারা জীবনের আয় করা সব টাকা পয়সা দিয়েও মেয়ের বিয়ে দিতে চান।
সিনেমার শুরু থেকেই রাজকুমার ও ক্রিতির কেমিস্ট্রিটা দারুণ ছিল। বলতে গেলে রত্না সিনহা খুব ভালো মতই সাজিয়ে গুছিয়ে সাধারণ কাহিনীর এক অসাধারণ সিনেমার জন্ম দেন। বলতে গেলে বছরের সেরা বলিউড মুভির কাতারে থাকবে “সাদি মেয় জারুর আনা”।
সিনেমার কিছু বেসিক তথ্যঃ
নামঃ সাদি মেয় জারুর আনা
ডাইরেক্টঃ রত্না সিনহা
রানটাইমঃ ২ ঘন্টা ১৭ মিনিট
লেখকঃ কামাল পান্ডে
মিউজিকঃ আনন্দ রাজ, অর্ক
অভিনয়েঃ রাজকুমার রাও, ক্রিতি খারবান্ধা
imDb রেটিংঃ ৮.৪
১০ নভেম্বর মুক্তি পাওয়া মুভিটি, দর্শকের কাহিনী পছন্দ হলেও বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পরে। ১৫ কোটি রূপী বাজেটের মুভিটি ভারতে শেষ পর্যন্ত ৬ কোটি রূপী ঘরে তুলতে পারে।
মুভিটি দেখবো কেন???
মনে তো প্রশ্ন জাগতেই পারে, কেন এই মুভি দেখবো? না আছে নামীদামী কোন নায়ক, না আছে একশন মারধর।
তো চলুন জেনে নেওয়া যাক কারণ গুলোঃ
★ রাজকুমার রাও নামটাই যথেষ্ট মুভি কেমন হবে তার পূর্বাভাস পাওয়ার জন্য। তো যদি রাজকুমারের অভিনয় পছন্দ করে তবে অবশ্যই দেখুন সিনেমাটি।
★ মুভিতে রয়েছে কিছু ভিন্নধর্মী ম্যাসেজ তার মধ্যে একটি হল মেয়ে পালালে বরপক্ষের কি অবস্থা হয়। হ্যাঁ, কনে যখন বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে যায় তখন বরপক্ষের পরিবারকেও সমাজের কাছ অনেক কথা শুনতে হয়, অনেক বাধা বিপত্তিতে পরতে হয়। কারণ আমাদের গ্রামীণ সমাজ এমনই।
★ মেয়ে ধোঁকা দিলে বা বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে গেলে তার প্রতিশোধ কিভাবে নিতে হয় তা ভালোভাবেই দেখিয়েছেন রাজকুমার রাও। তাই যারা ধোঁকা খেয়েছেন তাদের জন্য মলম হিসেবেই কাজ করবে “সাদি মেয় জারুর আনা”
★ সিনেমায় একাধিক চমকের দেখা মিলবে। আর কিছু কিছু তো মিলবে একদম অপ্রত্যাশিত। তাই চমক-প্রেমীদের জন্য দারুণ একটি সিনেমা।
★ সিনেমার নাম অবশ্য দারুণ একটা ফ্যাক্ট। “সাদি মেয় জারুর আনা” আসলে সিনেমার মূল রহস্যের একটা ক্লু। যার সন্দিহান সিনেমার শেষেই হবে।
অবশেষে বলতে চাই, সিনেমাটি না দেখে থাকলে দেখে ফেলুন। বলিউডে এমন সিনেমার দেখা মেলে নি অনেকদিকই।