অলিভার টুইস্ট (২০০৫) – হতভাগ্য পথশিশুর জরাজীর্ণ শৈশব

1

পৃথিবীর ইতিহাসে কয়েকজন জনপ্রিয় লেখকের নাম বললে তাদের মধ্যে চার্লস ডিকেন্স অন্যতম। ডিকেন্স ভিক্টোরিয়ান যুগের লেখক। তার জন্ম ইংল্যান্ডে হলেও জীবন কাটে লন্ডনে। শৈশব থেকেই দারিদ্র্যতার কশাঘাতে জর্জরিত হয়ে তিনি বুঝতে শিখেন পৃথিবীর নির্মমতাকে। “অলিভার টুইস্ট” উপন্যাসেও দেখা যায় এমনিভাবে নিষ্ঠুরতায় জর্জরিত এক ছেলের শৈশবকে।

পোলীয় চিত্রপরিচালক রোমান পোলাস্কি এই উপন্যাস অবলম্বনে “অলিভার টুইস্ট” সিনেমাটি পরিচালনা করেন। সিনেমাটি মুক্তি পায় ২০০৫ সালে।

অলিভার টুইস্ট ২০০৫
অলিভার টুইস্ট ২০০৫ Source: Film Europe

সিনেমাতে প্রথমে দেখা যায় যে অনাথ ছেলেদের আশ্রমে কঠোর কাজ করতে হয় এবং বিনিময়ে তারা খুব সামান্যই খেতে পায়। একদিন খাবার সময় অলিভার সাহস করে একটু বেশি খাবার চায়। সিনেমার এই সময়ে অলিভারের পাত্র এগিয়ে দিয়ে করুণ স্বরে আকুতি “দয়া করে আমাকে আরেকটু দিন, স্যার” দর্শকের মনকে বিদীর্ণ করে দেয়। অলিভারকে বাড়তি খাবার দেয়া হয়নি। বরং তার মতো আশ্রমের অন্যান্যরাও যাতে বেশি খাবার না চায়, তার জন্য তাঁকে পাঠিয়ে দেয়া হয় মিঃ সোয়ারবেরী নামক এক কফিন ব্যবসায়ীর বাসায়।

কিন্তু সে বাসায়ও তাঁকে একইভাবে নির্যাতনের স্বীকার হতে হয়। তার ঘুমের জন্য দেয়া হয় টেবিলের নিচের জায়গা। সে বাসার গৃহপরিচারিকার ছেলে অলিভারের মা-কে নিয়ে কটাক্ষ করায় অলিভার ক্ষেপে গিয়ে তার উপর হামলে পরে। এতে বাড়ির বাকি সবাই অলিভারকে বেধড়ক মারধোর করে। একদিন সকালে অলিভার লন্ডন যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি ছেড়ে পালায়।

পথ চলতে চলতে ক্লান্ত হয়ে অলিভার মাটিতে লুটিয়ে পরে। এক বৃদ্ধা তাকে দেখে তুলে বাড়ি নিয়ে আসে। একটু সুস্থ হয়ে অলিভার আবার পথচলা শুরু করে। ৭দিন পায়ে হেঁটে সে যখন লন্ডনে পৌঁছায়, তখন তার পা ফেটে রক্ত বেরোচ্ছে। অলিভারের সাথে পরিচয় হয় ডজার নামের এক পকেটমারের সাথে। ডজার তাকে নিয়ে যায় তার ডেরায়। এখানে অলিভারের পরিচয় হয় সেই চক্রের সর্দার ফ্যাগিনের সাথে। এছাড়াও তার সাথে পরিচয় হয় বিল ও ন্যান্সীর।

সর্দার ফ্যাগিনের সাথে অলিভার
সর্দার ফ্যাগিনের সাথে অলিভার
Source: Roger Ebert

একদিন অন্যান্যদের সাথে বের হয় অলিভার। এক লোকের পকেট-মারার সময় সে ধরা পরে এবং তাকে পুলিশ নিয়ে যায়। পরে মিঃ ব্রাউনলো নামক এক ভদ্রলোক, যার পকেট মারা হয়েছিলো, এসে জানান যে অলিভার নির্দোষ এবং দোষীরা পালিয়েছে। পুলিশের হাত থেকে মুক্ত করে তিনি অলিভারকে তার বাড়িতে নিয়ে যান এবং নিজের সন্তানের মতোই স্নেহ করেন।

একদিন বই’র দোকানে যাবার পথে বিল ও ন্যান্সী অলিভারকে দেখতে পেয়ে তাকে তুলে নিয়ে যায় এবং তাদের সাথে জোর করে রেখে দেয়। বিল অলিভারকে নিয়ে ব্রাউনলোর বাসায় যায় চুরি করতে। সেখানে অলিভারের হাতে গুলি লাগে এবং ব্যর্থ হয়ে বিল অলিভারকে নিয়ে আবার ফিরে আসে।

ন্যান্সী অলিভারের এ দুর্দশায় বেশ দুঃখিত বোধ করে। এক রাতে সে ব্রাউনলোকে সব কথা খুলে বলে এবং অলিভারকে উদ্ধার করার জন্য ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করে। এ খবর পৌঁছে যায় ফ্রাগিন আর বিলের কাছে। সে রাতেই ফ্রাগিন সবাইকে নিয়ে পালিয়ে যায় এবং বিল ন্যান্সীকে হত্যা করে লন্ডন ছেড়ে পালায়। পুলিশ বিল আর ফ্রাগিন, দুজনকেই খুঁজতে থাকে। কিছুদিন পর বিল ফিরে আসে লন্ডনে। সে ফ্রাগিনের নতুন আস্তানায় পৌঁছালে পুলিশ এবং জনতাও পৌঁছে যায় সেখানে। বিল পালানোর চেষ্টা করতে গিয়ে মারা যায় এবং ফ্রাগিনকে পুলিশ গ্রেফতার করে।

বিল ও ন্যান্সী
বিল ও ন্যান্সী
Source: Prisma

অনেক সিনেমা-বোধ্যা সিনেমাকে জীবনের প্রতিচ্ছবি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। “অলিভার টুইস্ট”-এর মতো সিনেমা এমন দাবীকে আরো জোরালো ভাবে প্রতিষ্ঠিত করে তুলেছে। অলিভারের জীবন সংগ্রাম উপন্যাসের লেখক চার্লস ডিকেন্সের জীবন সংগ্রামের-ই যেনো এক প্রতিচ্ছবি। সিনেমাটিতে অলিভারকে দেখা যায় একজন সাধারণ বালক হিসেবে যে অন্য সবার মতো স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে চায়। কিন্তু অন্যায়ের যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে বারবার তাকে ফিরে যেতে হয়েছে অন্যায়ের জগতে। শিশুদের স্বভাবজাত আবেগ, ভালবাসা, সততা-ও তার মধ্যে লক্ষণীয়। সে কারণেই যখন বিল আর ন্যান্সী তাকে তুলে নিয়ে যায়, সে বারবার বলছিলো যে বই আর টাকাগুলো যেনো বইয়ের দোকানে পৌঁছে দেয়া হয়। অন্যদিকে মিঃ ব্রাউনলো’র বাড়িতে চুরি করতে গিয়েও সে আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলো যাতে ব্রাউনলো’র কোন ক্ষতি না হয়। সিনেমার সর্বশেষ দৃশ্যে ফ্রাগিনের সাথে তার আবেগঘণ মুহূর্তের দৃশ্য তার চরিত্রের কোমলতাকে প্রকাশ করে।

সিনেমাটিতে অপরাধ জগতের যেমন চিত্র পাওয়া যায়, তেমনি পাওয়া যায় অলিভারের সে জগত থেকে মুক্তি পাবার চরম আকাঙ্ক্ষা। লন্ডন যাবার পথে পথ চলতে চলতে অলিভারের পরে যাবার দৃশ্য দর্শককে কাঁদিয়ে তোলে।

অলিভার টুইস্ট” সিনেমাটির পরিচালক রোমান পোলাস্কি
অলিভার টুইস্ট” সিনেমাটির
পরিচালক রোমান পোলাস্কি

সিনেমাটিতে এই সমাজ, রাষ্ট্রকে আরো দায়িত্বশীল, শিশুবান্ধব হবার আহ্বান পাওয়া যায়। একবিংশ শতাব্দীর এই আধুনিক যুগে এসেও এ সিনেমার বার্তা একই গুরুত্ব বহন করে চলেছে। আমাদের সমাজ, আমাদের পৃথিবী আজও শিশুদের জন্য নিরাপদ হয়ে উঠতে পারেনি। শিশুরা আগামীর ভবিষ্যৎ। সেই শিশুরা-ই যদি অপরাধচক্রে জড়িয়ে পরে, অন্ধকার জীবনের দিকে ধাবিত হয়, তাহলে সেটা আমাদের জন্য সুখকর হবে না। তাই অলিভারের কিংবা ডজারের মতো অন্য কোন শিশুর জীবনকে যেনো অন্ধকার গ্রাস করতে না পারে, সেদিকে নজর দেয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

সিনেমার মূল চরিত্রে রয়েছেন বার্নে ক্লার্ক (অলিভার টুইস্ট), বেন কিংসলে (ফ্রাগিন), হ্যারি ইডেন (ডোজার), জ্যামি ফোরম্যান (বিল), লিন রো (ন্যান্সী) এবং এডওয়ার্ড হার্ডউইক (মিঃ ব্রাউনলো)।

Leave A Reply
1 Comment
  1. Rzuogo says

    prandin canada – jardiance sale cost jardiance 25mg

sativa was turned on.mrleaked.net www.omgbeeg.com

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More