বন্ধুদের সাথে আড্ডা মারছিলাম, হঠাৎ সামনে দিয়ে একটি হোন্ডা ফিফটি বাইকে করে একজন মুরুব্বী চলে গেলেন। পাশ থেকে এক বন্ধু বলে উঠল, “এই ‘মান্ধাতা’র আমলের বাইক এখনো কেউ চালায়!” বন্ধুর মুখের দিকে তাকাতেই মাথায় খেলে গেল এক চিন্তা, কে এই মান্ধাতা, যার সময়কাল নিয়ে আমাদের এত চিন্তা!!
পুরনো সময় বা প্রাচীন কালের যে কোন সময়কেই আমরা ‘মান্ধাতা‘র আমল বলে থাকি। এই মান্ধাতা কিন্তু আসলেই একজন রাজা ছিলেন, তবে কিনা তিনি সত্যিকার অর্থে একজন মিথোলজিক্যাল চরিত্র। ইন্ডিয়ান মিথোলজি অনুযায়ী তিনি ইক্ষাকু বংশের অযোধ্যার রাজা যুবনাশ্বের পুত্র। তাঁর জন্ম নিয়ে বেশ একটা অদ্ভুত কাহিনী প্রচলিত আছে। বলা হয়ে থাকে তিনি মাতৃগর্ভে জন্ম নেননি, তিনি জন্ম নিয়েছেম পিতৃগর্ভে। যুবনাশ্বের কোন পুত্র ছিল না, তো একদিন তিনি বনে শিকার করতে গিয়ে প্রচুর পরিশ্রান্ত হয়ে পড়েন। পিপাসায় কাতর হয়ে তিনি পানির খোঁজে বনের ভিতর হাঁটতে হাঁটতে ঋষি ভৃগুর আশ্রমে যান। কিন্তু তখন আশ্রমে কেউই ছিলেন না। অনেক ডাকাডাকি করে কারো কোন সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছিল না। এমন সময় উনার চোখে পড়ল ঘরের কোনায় রাখা এক কলস পানি। প্রচণ্ড পিপাসায় তিনি ঐ কলসের পানি পান করে ফেলেন। কিছুক্ষণ পর যখন ঋষি ভৃগু এলেন তখন তিনি জানালেন যে এই পানি উনার স্ত্রীর জন্য রাখা ছিল, যাতে তাঁর বাচ্চা হয়। যেহেতু যুবনাশ্ব এই পানি পান করে ফেলেছেন সুতরাং যুবনাশ্বের গর্ভের বাচ্চা হবে। এর একশত বছর পর যুবনাশ্বের পেটের বাম দিক বিদীর্ণ করে মান্ধাতা জন্মগ্রহণ করেন।
জন্মের কিছুদিন পরেই তিনি পড়াশোনায় এবং অস্ত্রবিদ্যায় অতুলনীয় হয়ে পড়েন। তিনি চন্দ্রবংশীয় রাজকন্যা বিন্দুমতিকে বিয়ে করেন। বিন্দুমতির গর্ভে তাঁর তিন পুত্র এবং পঞ্চাশ কন্যা জন্মগ্রহণ করে। রাজ্য লাভ করেই তিনি স্বীয় রণনৈপুণ্যে সমগ্র পৃথিবীর সম্রাট হন, বিভিন্ন রাজারা তাঁর বশ্যতা স্বীকার করে নেন। তিনি বেশ দানশীল রাজা বলেও বলা হয়ে থাকে। এক জায়গায় উনার দানের কথা এরকম বলা আছে তিনি তাঁর প্রজাদের প্রায় দশপদ্ম অর্থাৎ প্রায় দশ কুইন্টিলিওন (দশ এর পর ১৮ টি শূণ্য, কারো কারো মতে ৩০ টি) উত্তম জাতের গরু দান করেছেন। নিজ বাহুবলে এবং অস্ত্রবিদ্যার সহায়তায় প্রথমে তিনি সমগ্র পৃথিবী অর্থাৎ ভূলোক নিজ শাসনে নিয়ে আসেন, তারপর তিনি জয় করেন পাতাল লোক। কিন্তু তাতেও আশ মেটেনি তাঁর। তিনি তখন হাত বাড়ান স্বর্গরাজ্যের দিকে। তখন তাকে বলা হয় ভূলোক, পাতাল লোকই তার সম্পূর্ণ আয়ত্তে নেই তো সে কেন স্বর্গরাজ্যের দিকে তাকাচ্ছে। মধূ পুত্র লবনাসুর মান্ধাতার বশ্যতা স্বীকার করেনি। এই কথা শুনে মান্ধাতা লবনাসুরের সাথে যুদ্ধ শুরুর পায়তারা করতে লাগলেন। লবনাসুরের কাছে এক বিশেষ ত্রিশূল ছিল যেটা থাকলে সে কখন যুদ্ধে হারত না। এই যুদ্ধে মান্ধাতা পরাজিত এবং নিহত হলেন। এই লবনাসুরকে অবশ্য মান্ধাতারই বংশধর শত্রুঘ্ন পরাজিত ও নিহত করেছিলেন।
মজার ব্যাপারটা হল মিথোলজি অনুযায়ী সমগ্র বিশ্বের অধিপতি ছিলেন এই মান্ধাতা। কিন্তু আমরা তার নামটা এখন ব্যবহার করি বাতিল হয়ে যাওয়া জিনিস বা প্রথার ক্ষেত্রে। বেচারা মান্ধাতা।
order generic levaquin buy levofloxacin pill