“কি কারণে এই নৈসর্গিক প্রভিভা ফ্রান্সের রাস্তায় বিলিয়ে বেড়াচ্ছো” – কোনো এক জলসা ঘরের প্রযোজকের এই কথা এ্যানেটা জিয়ভানানা মিলার্ডকে এমন ভাবে নাড়া দেয় যে তিনি ভাবতে সময় নেন নি প্রযোজকের সেই কথা কি আসলে অনুপ্ররণা ছিলো নাকি ক্ষনিকের উৎসাহ । অনুপ্রেরণা হোক আর ক্ষনিকের উৎসাহ তা যাই হোক মিলার্ডের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত ছিলো । তিন বছরের মেয়ে আর স্বামীকে ছেড়ে চলে যান কনস্টান্টিনোপল(বর্তমান ইস্তানবুল) । সেই সময় ফ্রান্সের অন্যতম সেরা সঙ্গিত শিল্পী ছিলেন “ফ্রেহেল” ।
কনস্টান্টিনোপলে পাড়ি জমিয়ে “ফ্রেহেল” বনে যাবেন রাতারাতি , যশ-খ্যাতির পোকা মাথায় ঢুকে তা ক্ষত-বিক্ষত করে ফেলে মিলার্ডকে । তার আর “ফ্রেহেল” হয়ে উঠা হয়নি কিন্তু সংসারাসক্ত মানুষটি একা হয়ে যান । মেয়েকে সাথে নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে যা দু-পাই আসতো তা দিয়ে দিব্যি চলতো । এখন আর চাইলেও পারবেন না আগের অতীতে ফিরে যেতে কারণ তার চলে যাওয়ার কিছুদিন পরে-ই তিন বছরের মেয়েকে নানীর কাছে দিয়ে লুইসও অনিচ্ছা সত্ত্বে যোগদেন প্রথম বিশ্বযুদ্ধে(সেই সময় নিয়ম ছিলো যুবকের বাধ্যতামূলক যুদ্ধে অংশগ্রহন) । এভাবে-ই এডিথ হারিয়ে ফেলেন মা-বাবা দু’জনকে-ই ।
এখন আর বাবার কসরত দেখে কেউ টাকা দেয় না বড় জোর দু’চারটি মৃদ্যু হাতের চাপড় জোটে । সেইদিন-ই প্রথম এডিথের গলায় সুরের গুঞ্জন শোনা যায় যখন আর কেউ এডিথের বাবার কসরতে মুগ্ধ হয়নি । ছোট্ট এডিথকে উপস্থিত দর্শকের সামনে ঠেলে দিয়ে বলে দেন এই দর্শকের মনরঞ্জনের দায়িত্ব এখন তোমার । ছোটবেলায় মায়ের কাছে শোনা একটি গান গেয়ে উঠে দিশেহারা এডিথ । বাবাকে সাথে নিয়ে এভাবে চললো বেশ কয়েক বছর । যদিও তখন পর্যন্ত এডিথের সাথে “পিয়াফ” যোগ করা হয়নি । যে মেয়ে বাবার সাথে থেকে শুধু হ্যাট পেতে টাকা তুলতো সে এখন নিজে-ই আয়ের উৎস, “টাকা ছাড়া স্টেজে উঠবে না” ছোটবেলা মায়ের সাথে থেকে এই বিষয়টি আত্মস্থ করে নিয়েছে সে ।
ছোট্ট এডিথ অনেক বড় হয়েছে, বুঝতে শিখেছে, উপলব্ধি করতে শিখেছে । তার গায়িকী শক্তি শ্রোতাকে সম্মোহন করতে পারে তা সে অনুধাবন করতে পারে । চলতে শুরু করে দেন মায়ের দেখানো পথে, বাবার সঙ্গ ছেড়ে এখন সে একাই ফ্রান্সের “স্ট্রিট সিঙ্গার” হিসেবে নিজেকে মেলে ধরে । এডিথ অনেক ভালো গাইতে পারতো, মুগ্ধ করে দিতো তাদের যারা তার গান শুনতো কিন্তু তার সমস্যা ছিলো সে গানের কথাগুলো হৃদয়ে নিতো না, গানের কথাগুলো অনুভব করে গাইতো না, এক প্রকার যন্ত্র-ই বলা যেতো তাকে যখন সে গান গাইতো, যে যন্ত্রের শব্দ বিরক্তির পরিবর্তে দিতো মানসিক প্রশান্তি । যান্ত্রিক এডিথকে বিশুদ্ধ করার দ্বায়িত্ব নেন লুইস লিপলে, যিনি কিনা রাস্তা দাড়িয়ে-ই আবিস্কার করে ছিলেন এই শিল্পীকে পরিচর্যার মাধ্যমে অনেক দূর নিয়ে যাওয়া সম্ভব । যদিও লুইস লিপলে এডিথকে শুধু সুযোগ দিয়েছিলেন নিজেকে ফ্রান্সের সামনে তুলে ধরার, ভেতরের এডিথ তখনও ঘুমন্ত । লুইস লিপলের সাহায্যে এডিথ ফেমাস ক্যাবারে-ইস( অফিস শো,রেস্তোরা ইত্যাদিতে আহাররত অতিথিদের সামনে আয়োজিত বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান) হয়েছিলো কিন্তু সে যে আরো বহুদূরের যাত্রী তা লুইস লিপলের বুঝতে একটু দেরী হয়েছিলো । যখন বুঝতে পারলেন তখন নিয়ে গেলেন স্টুডিওতে আর রেকর্ড করলেন এডিথের প্রথম গান “Les Mômes de la cloche” । এরমাঝে হঠাৎ একদিন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান লুইস লিপলে, যদি মারা যাওয়ার পূর্বে এডিথের নামের পরে যোগ করে দেন “পিয়াফ” । ফরাসি ভাষায় পিয়াফ বলতে বোঝায় ” যে কোকিল পাখি মিষ্টি কন্ঠে গান গায়” । এভাবে-ই এডিথ হয়ে যান “এডিথ পিয়াফ” । লুইস লিপলে হত্যার অন্যতম আসামী হিসেবে পুলিশ পিয়াফকে দায়ী করে । আর এই হত্যার দায় তার ক্যারিয়ারকে অনেক পেছনে নিয়ে যায় ।
এরপর অনেক কষ্টে পিয়াফ তার ট্র্যাকে ফিরে আসেন শুরু করেন নতুন যাত্রা আর এবার সঙ্গী হিসেবে ছিলেন রেমন্ড আসসো । এই রেমন্ড-ই যান্ত্রিক পিয়াফকে বিশুদ্ধ করে একজন ক্ল্যাসিক সিঙ্গারে পরিনত করেন । রেমন্ডের ছোয়ায় পিয়াফ হয়ে উঠেন ইউরোপের অন্যতম সেরা গায়িকা ।
পিয়াফের বিখ্যাত গানের সংখ্যা বহুহলেও এরমাঝে “লা ভিয়ে এন রোজ” এর স্থান একটু বেশি উপরে । এরজন্য এই নামে-ই এই সিনেমার নামকরণ করা হয় ।
পিয়াফের জীবনী সম্পর্কে বহুআগে পড়ে ছিলাম , তখন অবশ্য জানতাম না পিয়াফের জীবনী নিয়ে কোনো সিনেমা আছে । পিয়াফের জীবনী যেভাবে পড়েছিলাম সিনেমায় কেন জানি সেভাবে পাই নি । সিনেমায় পিয়াফের জীবিনীর উপস্থাপন কৌশল একটু জটিল । সিনেমার শুরু-ই যেখানে পিয়াফের সঙ্গিত দিয়ে , সিনেমার সুর ধরতে না ধরতে-ই মঞ্চে গাইতে থাকা পিয়াফ হয়ে যায় ছোট্ট এডিথ, যে কি না মায়ের সাথে দাঁড়িয়ে মায়ের গাওয়া গানের সাথে নিজেও আনমনে গাওয়ার চেষ্টা করছে । এরপর আবার বৃদ্ধ পিয়াফ । ধীরে ধীরে এডিথ থেকে পিয়াফের দিকে কাহিনী গড়াতে শুরু করলো । এখন যেনো ভেসে উঠছিলো এডিথ পিয়াফের গল্প ।
রজার ইবার্ট এই সিনেমাকে বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বলেছেন এটি তার দেখা অন্যতম সেরা বায়োগ্রাফিক সিনেমা । সিনেমার নির্মান কৌশল সত্যি একে অন্যতম সেরা সিনেমার দলে অন্তর্ভুক্ত করেছে । এডিথ পিয়াফের শতভাগ বর্ণনা এই সিনেমা ফুটে উঠছে । পিয়াফের বিশৃঙ্খল জীবনে তিনটি টাইমলাইনে দেখিয়েছেন অলিভিয়ার দাহান । শৈশব-সঙ্গিত জীবন- হৃদয় সম্পৃক্ত ব্যাপারে ব্যর্থতার প্রতিবিম্ব । এই তিনে মিলে নির্মিত হয়েছে “লা ভিয়ে এন রোজ” । সিনেমাটি শুরুর পূর্বে ধারণা ছিলো এমন যে প্রথম থেকে শেষ যাকে লিনিয়ার প্যাটার্ণ বলে সেভাবে গল্পটি দেখানো হবে । কিন্তু গল্পের শুরু-ই হয় তার সঙ্গিত জীবনের অংশ দিয়ে । ধারাবাহিক বর্ননায় নির্মিত হলে হয়তো মূলগল্পকে ছাপিয়ে শুধু একটি অংশের গুরুত্ব বেশি মনে হতো এক্ষেত্রে লেখকদ্বয় সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ।
জীবনীসংক্রান্ত সিনেমার মূল ভিত্তি হচ্ছে যাকে কেন্দ্র করে সিনেমা সে তার চরিত্রের সাথে কতোটুকূ উপযুক্ত । সিনেমায় এডিথ পিয়াফের চরিত্রে ছিলেন ফরাসী অভিনেতা ম্যারিয়ন কটিলার্ড । এডিথ পিয়াফকে পুরোদস্তুর ক্যামেরা আনতে সক্ষম হয়েছনে ম্যারিয়ন কটিলার্ড । পিয়াফের কথা বলার ধরণ, হাটার ধরণ, গাইতে থাকা পিয়াফের আঙ্গুল নাড়ানো আর মঞ্চে উঠে দর্শকের দিকে তাকিয়ে এক প্রকারের ব্যাখাতীত চাহুনী পুরোটাই যেনো ম্যারিয়ন কটলার্ড না স্বয়ং পিয়াফ । বৃদ্ধ পিয়াফের চরিত্রে কটিলার্ড যেনো নিজেকে ছাড়িয়ে যাচ্ছিলেন প্রতিবার । নিজেকে এতো নিখুতভাবে উপস্থাপন করেছেন যে শুধুমাত্র এই এক “এডিথ পিয়াফের” চরিত্রে অভিনয় করে ২৭টি পুরস্কার অর্জন(অস্কার হয়) করেছেন । বিদেশী ভাষার সিনেমায় অভিনয় করে অস্কার জয় করে সবার নজর কেড়ে নেন কটিলার্ড যা তার পরবর্তী সিনেমাগুলো দেখলে বোঝা যায় । এই সিনেমা দিয়ে নোলানের দৃষ্টিতে পড়েন আর নোলানও তাকে কাজে লাগান তার পরবর্তী সিনেমাতে ।
সিনেমায় ব্যবহৃত কোনো গানের-ই অর্থ বোধগম্য হচ্ছিলো না , উপশিরোনামা থাকায় বুঝতে পেরেছিলাম, গানের কথাগুলো কি বলতে চাইছে । অরিজিনাল অনেকগুলো ট্র্যাক সহ কটিলার্ড নিজেও দুটো গান গেয়েছেন এই সিনেমা , আর শেষে গাওয়া “Non je ne regrette rien”( নো রিগরেট) এই গানটি পুরো সিনেমায় সঞ্চিত আবহকে দর্শকের রন্ধ্রে প্রবেশ করিয়ে দিয়েছে, ফরাসি ভাষায় লেখা গান , যার কোনো শব্দের অর্থ জানা নেই তবুও কেনো জানি মনে হচ্ছিলো এর মর্ম আমি জানি । নো রিগরেটের শুধু চার চরণ শুনে-ই সিদ্ধান্ত নেন এই গান তিনি গাইবেন, পিয়াফের জীবনের প্রতিচ্ছবি মনে করা হয় এই গানকে, গানের প্রতিটা শব্দ যেনো পিয়াফের জীবনের প্রতিধ্বনী । গানে গানে পিয়াফ বলছেন “আমি অনুতপ্ত নই” কিন্তু তিনি জীবনের কাছে কতোটুকু অনুতপ্ত ছিলেন তা ফুটে উঠেছে জীবনের শেষবেলায় যখন স্মরণ করছিলেন তার গাওয়া এই গানকে ।
এতো অসাধারণ জীবন-যাপনের পরেও কেনো পিয়াফের মৃত্যুর ইতিবৃত্ত এতো করুন ? প্রায় ৩০ বছরের সঙ্গির জীবনে অনেক সঙ্গী-সাথি পেয়ে ছিলেন কেউ বা এসেছিলো শুধুমাত্র নিজের স্বার্থে আবার কেউ অনিচ্ছা সত্ত্বে জড়িয়ে পড়েছিলো পিয়াফের জীবনের সাথে,যারা জড়িয়ে পড়েছিলো তাদের আকস্মিক প্রয়াত অথবা তাদের সাথে বিচ্ছেদের প্রতিক্রিয়া দেখা যায় পিয়াফের ক্যারিয়ারে । সবচে বেশি প্রভাব ছিলো মারসেল গার্ডেনের । ১৯৫১তে কার এক্সিডেন্টে গুরুতর আহত হন পিয়াফ । পুরো দেহ অসাড় হয়ে পড়ে, কথা কথা বলতে সমস্যা হতো , ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠেন পিয়াফ এই সময় জীবনের সেরা গান “লা ভিয়ে এন রোজ” দিয়ে-ই পরিচিত হয়ে ছিলেন মার্সেলের সাথে আর এই গানকে-ই পিয়াফের সেরা সৃষ্টি মনে করা হয়(এই গান পিয়াফ নিজে লেখেছেন), ভূয়সী প্রসংসা পেয়ে এরপর আরো আশির অধিক গান লিখছেন পিয়াফ নিজে । যদিও মার্সেল বিবাহিত ছিলেন তবুও পিয়াফকে ভালোবাসতেন আর এই ভালোবাসা ছিলো অকৃত্রিম , এই অকৃত্রিম ভালোবাসার মাসুলও গুনেছেন জীবনের বিনিময়ে , পিয়াফের ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে আমেরিকা থেকে ফ্রান্সের আসার পথে প্লেন ক্র্যাশে মারা যান মার্সেল । এরপর থেকে পিয়াফের উথান-পতনের গতি বেড়ে যায় । সঙ্গিতের সাথে মদ আর মরফিনকে জীবনের অন্যতম অংশ করে নেন । যদিও পিয়াফ সারারাত মদ গিলেও স্টেজে সাবলীল ভাবে গান গায়িতে পারতেন যা সবচে অবাক করা বিষয় ছিলো । উত্যাধিক মদ্য পানের ফলে বার কয়েক অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন, এই সময় তার এক সহকারী বলেছিলো , এতো বেশি মদ পান করে আপনি গাইতে পারবেন না, তখন পিয়াফ শুধু একটি কথা-ই বলেছিলেন “এই সামান্য মদের বিরুদ্ধে যদি গাইতে না পারি তাহলে এডিথ পিয়াফ হয়ে লাভ কি” ।
abilify zyprexa
wellbutrin period miss
buy semaglutide without a prescription – order semaglutide sale order DDAVP generic
zofran 8 mg fiyatД±
zetia side effects mayo clinic