পাগলাটে কিম এর অদ্ভুতুড়ে যত আইন
কিম জং উন। বর্তমানে সারা বিশ্বের এক আগ্রহের কারণ। ক’দিন আগেও বিশ্বের অনেকেই তাকে চিনতেন না কিন্তু অদ্ভুত সব নিয়ম, কথায় আর কাজে তিনি চলে এসেছেন বিশ্ব রাজনীতির ফ্রন্টলাইনে আর সেই সাথে মানুষের কাছেও পরিচিতি পেয়েছেন পাগলাটে হিসেবে।
উত্তরে গণচীন, উত্তর-পূর্বে রাশিয়া, পূর্বে জাপান সাগর, দক্ষিণে দক্ষিণ কোরিয়া এবং পশ্চিমে পীত সাগর এমন অবস্থান নিয়ে কোরীয় উপদ্বীপের উত্তর অর্ধাংশ নিয়ে গঠিত রাষ্ট্র উত্তর কোরিয়া। ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হেরে যাওয়ার সময় জাপানিরা সমাজতান্ত্রিক দেশ সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে আত্মসমর্পণ করে। তার ফলে অবিভক্ত কোরিয়া ২ ভাগে ভাগ হয়ে যায়। তখন উত্তর কোরিয়া ১৯৫০ সালে সমাজতান্ত্রিক দেশ সোভিয়েত ইউনিয়নের মতাদর্শে সমাজতান্ত্রিক ব্লকে চলে যায়, অন্যদিকে দক্ষিণ কোরিয়া পুঁজিবাদী আমেরিকার মতাদর্শে পুঁজিবাদী ব্লকে যোগদান করে। তখন থেকে কোরিয়ার দুটি ভিন্ন নাম উত্তর ও দক্ষিণ এবং সেই সাথে একে অপরের জাত শত্রু হিসেবেই পরবর্তীতে আবির্ভাব হয় যা বর্তমানেও চলমান।
১ লাখ ২০ হাজার ৫৩৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ দেশটি ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। প্রতিষ্ঠা লাভের পর থেকে এ পর্যন্ত দেশটি ছিল বিশ্ব রাজনীতির মাথা ব্যাথা হিসেবে। একের পর এক পারমানবিক অস্ত্রের মজুদ বৃদ্ধি এবং পারমানবিক ক্ষেপনাস্ত্র সমৃদ্ধিকরন প্রকল্প এবং সেই সাথে সর্বশেষ প্রথম হাইড্রোজেন বোমার সফল পরীক্ষা চালানোর মধ্য দিয়ে পুরো বিশ্বকে ব্যাতিব্যাস্ত করে রাখা সেই দেশের ই শাসক এই কিম জং উন।
‘স্বৈরতন্ত্রের আবাসভূমি’,‘এক্সিস অব ইভিল’ এমন মন্তব্য পাওয়া রহস্যময় রাষ্ট্র উত্তর কোরিয়ায় ২৩ বছর বয়সে রাষ্ট্রক্ষমতায় বসা উন সম্মন্ধে ধারনা করা হয় তিনিই বর্তমান বিশ্বের সর্বাপেক্ষা অসহিষ্ণু এবং পাগলাটে রাষ্ট্রপ্রধান। কিন্তু কে এই কিম? আর কিভাবেই বা তাঁর উত্থান।
কিম জং উন। উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট। ওয়ার্কার্স পার্টি অব কোরিয়ার ফার্স্ট সেক্রেটারি, উত্তর কোরিয়ার কেন্দ্রীয় সেনা কমিশন ও জাতীয় প্রতিরক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান এবং কোরিয়ান পিপলস আর্মির সুপ্রিম কমান্ডারও তিনি।
২০১১ সালের জানুয়ারির শুরুতেই অনেক উত্তর কোরিয়াবাসী জানতে পারেন, সে বছরের ৮ জানুয়ারি এক বিশেষ দিনের মর্যাদা পেতে চলেছে। সেই সময়কার নানা রিপোর্ট থেকে জানা যায়, সেদিন কিম জং-উনকে চার তারকা জেনারেল হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় এবং ক্ষমতাসীন ওয়ার্কার্স পার্টি তাকে সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত করে। এর আগপর্যন্ত কেউই জানতো না যে, তিনিই হতে যাচ্ছেন উত্তর কোরিয়ার পরবর্তী শাসক। এমনকি প্রাপ্তবয়স্ক হবার পর তিনি আসলে দেখতে কেমন হয়েছেন, সেই সম্পর্কে বিশ্বের অধিকাংশ মানুষেরই বিন্দুমাত্র ধারণা ছিলো না। সেই তরুণই আজকের বৈচিত্র্য আর রহস্যেঘেরা নেতা কিম জং উন। ইতিমধ্যে ২০১১-এর ডিসেম্বরে আকস্মিকভাবে মারা যান তার বাবা কিম জং-ইল যিনি কিনা ছিলেন উত্তর কোরিয়ার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট এবং কোরীয় যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদান রাখা কিম ইল-সুংয়ের পুত্র। তার অল্প কিছুদিন পরই দেশটির সুপ্রিম লিডার হিসেবে ঘোষণা করা হয় কিম জং-উনের নাম। কিম জং-ইলের মৃত্যুর পর কিম জং-উনের উত্থান যেন ছিলো অনেকটা গল্পের মতো। সেসময় সদ্য গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে আসা এ নেতা সম্মন্ধে অনেকে ভেবেছিলো কিম শুধু নামেই দেশটির সুপ্রিম লিডার থাকবেন, প্রকৃত ক্ষমতা থাকবে তার আঙ্কেল ও রাজপ্রতিভূ জ্যাং সং-থায়েকের হাতে। কিন্তু পরবর্তীতে কিম জং-উনের সবচেয়ে কাছের পরামর্শক এই জ্যাং সং-থায়েক কে বিদ্রোহের অভিযোগে মৃত্যুদন্ড এবং দেশটির অনেক ক্ষমতাধর জেনারেল ও আমলাকেও পদত্যাগে বাধ্য করে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করেন এই শাসক। বর্তমানে দেশটির পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন কিম। বিরোধী বা তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুললে ক্ষুধার্ত কুকুরের মুখে ঠেলে দিয়ে অথবা কখনো কামানের তোপ আবার কখনো সামনে থেকে গুলি করে এভাবেই প্রাণদণ্ড দেওয়ার একাধিক নজির রয়েছে ধারনা করা হয়, দীর্ঘদিনের সেনাপ্রধান জেনারেল রি ইয়ং গিলকে হয়তো কামানের গোলা কিংবা ক্ষুধার্ত কুকুরের পালের মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। ২০১৪ সালে সরকারবিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগে কিম জং উন ক্ষুধার্ত কুকুরের পালকে খাইয়ে দেন নিজের কাকাকে। এম্নিতে এতসব পাগলাটে কার্যকলাপ সেই সাথে চিরশত্রু পশ্চিমা বিশ্বকে একের পর এক পারমানবিক ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমনের হুমকি ধামকি এবং নিজের দেশে অদ্ভুত সব আইন রচনা করে পুরো বিশ্ব দরবারে ইতিমধ্যে লাইমলাইটে চলে এসেছেন তিনি।
তো চলুন দেখে নেয়া যাক কিম এর যতসব পাগলামি আইন কানুনঃ
- দেশটিতে চলবে মাত্র ২৮টি হেয়ারকাট, যার ১০টি পুরুষ এবং ১৮টি নারীদের জন্য নির্দিষ্ট। এর বাইরে কোনো নারী কিংবা পুরুষ কোনো হেয়ারকাট রাখলে তার জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি।আর কিম জং উন যেভাবে চুল কাটান সেভাবে দেশের আর কেউ কাটাতে পারবেন না। এই একটি কাটিং কেবল তাদের শাসক কিম জং এর জন্যই বরাদ্দ।
- আপনার যেখানে ইচ্ছে সেখানে থাকবেন কিন্তু এই নিয়ম আপনার জন্য নয় আপনি যদি উত্তর কোরিয়ার নাগরিক হন। একমাত্র প্রেসিডেন্ট কিম জং উন ও তার সরকার তাদের দেশের জনগণের বসবাস নির্ধারন করেন। যদি কেউ একই সাথে উত্তর কোরিয়া এবং আমেরিকায় থাকার চিন্তা করে, তাহলে কোনোভাবেই তা সম্ভব নয়।
- প্রায় সকলকেই বাধ্যতামুলক ভোট দিতে হবে। এই নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট কিম জং উন এর প্রতিদ্বন্দ্বী কেউই নন। আর কেউ থাকলেও সে ওই কিম জং উন সরকারেরই সাজানো প্রতিদ্বন্দ্বী। এজন্যই দীর্ঘদিন যাবৎ কিম জং উন -এর সরকারই নির্বাচিত হয়ে আসছেন।
- যারা উত্তর কোরিয়ার বাসিন্দা, গেম অফ থর্নস কিংবা ইউটিউব ফেসবুক তাদের জন্য নয়। সেখানে নেই কোনো ইন্টারনেট, নেই বাইরের কোনো টিভি চ্যানেল। শুধুমাত্র নিজস্ব তিনটি চ্যানেল রয়েছে, যেখানে দিনরাত চলতে থাকে সরকারী প্রোপাগান্ডা।
- উত্তর কোরিয়ায় নিষিদ্ধ ইন্টারন্যাশনাল কল। ২০০৭ সালে ইন্টারন্যাশনাল কল করার অপরাধে এক ব্যক্তিকে অন দ্যা স্পট গুলি করা হয়। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ৬ জন প্রতিবাদ জানালে তাদেরকেও একইসাথে গুলিবিদ্ধ করা হয়।
- অন্যায়ের শাস্তির নিয়ম কোনো দেশের জন্যই নতুন নয়। তবে যদি আপনি উত্তর কোরিয়ার হয়ে থাকেন, তাহলে নিয়ম আপনার জন্য ভিন্ন।‘থ্রি জেনারেশনস অফ পানিশমেন্ট’ নামক এই আইন এ আপনার অন্যায়ের শাস্তি আপনি একা পাবেন না। আপনার পুরো পরিবার সহ সে শাস্তি আপনাকে ভোগ করে যেতে হবে আমৃত্যু, আজীবন। একটি শিশুর অন্যায়ের শাস্তি তার বাবা, মা থেকে দাদা, দাদী পর্যন্ত পরিবারের সকলকে ভোগ করতে হবে।
- “Government is God” – মানে সরকারই একমাত্র প্রভু। সেদেশের প্রতিটা মানুষকেই কিম জং উন এবং তার বাবা কিম জং ইল -এর স্থাপত্যের সামনে মাথা নত করতে হবে। মাথা নত অবস্থায় প্রত্যেককেই কাঁদতে হবে। কেউ কাঁদছে না এমনটা দেখা গেলে তাকে পাঠানো হবে কারাগারে।
- কেউ দেশ ত্যাগ করতে চাইলে অথবা দেশ থেকে পালাতে চেষ্টা করলে তাকে ব্যভিচারে হত্যা করা হবে। কেউ যেনো সাগর দিয়ে সাঁতরে নিকটবর্তী চীন কিংবা দক্ষিণ কোরিয়ায় অবস্থান করতে না পারে, সেজন্য বিরামহীন পাহারায় থাকে বন্দুকধারী বিশেষ সেনাবাহিনীর দল।
- সপ্তাহের পুরো সাত দিনই কাজ করতে হবে। একদিন বিরতি হলেও বাড়তি জরিমানা দিয়ে কাজে ফিরতে হয় কর্মচারীদের। নেই কোনো শিশু শ্রম আইন। পরিবারের চাহিদা মেটাতে কাজ করছে হাজারো শিশু শ্রমিক।
- একমাত্র সরকার প্রধানরাই সেখানে গাড়ি ব্যবহার করতে পারে। কোনো সাধারণ মানুষের জন্য গাড়ি ব্যবহারের অনুমতি নেই। ব্যক্তিগত গাড়ি উত্তর কোরিয়ায় একেবারেই নিষিদ্ধ। তাই স্কুল-কলেজ, অফিস আদালতে যেতে সাধারণ মানুষদেরকে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে বাসেন জন্য অপেক্ষা করতে হয় ঘন্টার পর ঘন্টা।
- যদি আপনি ট্যুরিষ্ট হিসেবে উত্তর কোরিয়া ভ্রমণে যান। তাহলে অবশ্যই আপনাকে ছবি তুলতে দেয়া হবে না। একবার কোনোভাবে সেখানকার কিছু ছবি ফাঁস হয়েছিলো। যা পরবর্তীতে ব্যান করা হয়েছে। ব্যানকৃত ২৭টি ছবির মধ্যে একটিতে খাদ্যের অভাবে এক ব্যক্তিতে মাটি থেকে ঘাস কুড়িয়ে খেতে দেখে গেছে।
- সরকার বিরোধী যেকোনো মতামত কিংবা মতবাদের জন্য আপনাকে পাঠানো হবে এডুকেশনাল ক্যাম্পে, যেখানে অমানবিক শাস্তি ও পাশবিক নির্যাতনের মাধ্যমে ব্রেইনওয়াশ করানো হয়।
- পারমানবিক অস্ত্রখ্যাত উত্তর কোরিয়ার নারী সেনাবাহিনীর মার্চ পাস্ট সুন্দর দেখাতে প্রত্যেককে একই চুলের ধরণ ও একই রকমের মিনি স্কার্ট পরতে হয়। জানা গেছে মেলিটারি ক্যাম্পে তাদের ব্রেইনওয়াশ করানো হয় “উই আর কিলিং আমেরিকানস” ফ্রেজ দ্বারা।
- কিমের দেশে বাস্কেটবল খেলার নিয়ম ভিন্ন।নিজেদের মতো করে বাস্কেট বলের নিয়ম বদলেছে উত্তর কোরিয়া। যেমন, তিনবার থ্রো মিস করলেই কাটা যাবে পয়েন্ট। আবার শেষের তিন মিনিটে গোল করতে পারলে মিলবে আট পয়েন্ট।
- স্কুলে বাচ্চার ডেস্ক-চেয়ার মা-বাবাকেই দিতে হবে স্কুলে বাচ্চাকে পাঠানোর আগে তার বসার ব্যবস্থা অভিভাবকেই করে দিতে হবে। অর্থাত্ ডেস্ক, চেয়ার সবই কিনে দিতে হবে। এরপর স্কুল ফি-ও আলাদা করে দিতে হবে।
- বাইবেল কেনা চলবে না উত্তর কোরিয়ায় বাইবেল কেনা বা সঙ্গে রাখা সম্পূর্ণ বেআইনি। কারণ, কিমের রাজ্যে বাইবেলকে পশ্চিমি সংস্কৃতির প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হয়। বাইবেলে উদ্বুদ্ধ হয়ে, লোকজন যাতে খ্রিস্টান না হয়ে পড়েন, তার জন্যই এই নিষেধাজ্ঞা। রাস্তায় বাইবেল বিলোনের অভিযোগে একবার খ্রিস্টান এক মহিলাকে গ্রেফতারও করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
- উত্তর কোরিয়ায় অ্যাপল, সনি ও মাইক্রোসফটের পণ্য বিক্রিতে কড়া নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ফলে, উল্লিখিত ব্র্যান্ডের আইফোন থেকে ল্যাপটপ, টিভি কিছুই পাওয়া যায় না। উত্তর কোরিয়ায় খুব কম সংখ্যক মানুষই এই ব্র্যান্ডগুলোর খোঁজ রাখেন।
- উত্তর কোরিয়া সম্পর্কিত কোনও পাশ্চাত্য সাহিত্য চলবে না । পর্যটকরা পাশ্চাত্যের কিছু নিয়ে উত্তর কোরিয়ায় ঢুকতে পারবেন না। এমনকী সেটা যদি গাইডবুকও হয়। সিকিওরিটি চেকের সময় গানের অ্যালবাম থেকে ফিল্ম ভিডিও সঙ্গে থাকলে বাজেয়াপ্ত করা হবে।
- অনেক অদ্ভুত অদ্ভুত নিয়ম থাকলেও উত্তর কোরিয়ার একটা নিয়ম কিন্তু আপনাকে একদম চমকে দেবে। আর সেটি হচ্ছে এখানকার লোকজন আর কিছু করতে পারেন আর না পারেন নির্বিঘ্নে গাঁজা সেবন করতে পারবেন ঠিকই। কারণ উত্তর কোরিয়ায় গাঁজা সেবনে কোনো বাধা নেই। তাই গাঁজাপ্রিয় মানুষের কাছে উত্তর কোরিয়া একটা স্বর্গ বলে বিবেচিত হতেই পারে! এ দেশে যে যত খুশি গাঁজা খেতে পারেন। গাঁজা সেখানে কোনো নিষিদ্ধ মাদক নয়। অন্যান্য সব সাধারণ খাবার-দাবারের মতোই সেখানে গাঁজা টানা হয়।
- উত্তর কোরিয়ায় বছরের বিশেষ দুটি দিনে কেউ জন্ম নিলে সেই দিনে জন্মদিন উদযাপন করা যাবে না। উত্তর কোরিয়ার সাবেক দুই শাসক কিম ই সুং এবং কিম জং ইল মৃত্যুবরণ করেছিলেন বলে সেই দিনগুলোতে দেশের কোনো সাধারণ মানুষের জন্মদিন উদযাপন রাষ্ট্রীয়ভাবে নিষিদ্ধ। এ নিয়ম মানতে গিয়ে প্রায় ১ লাখ মানুষকে ৮ জুলাই বা ১৭ ডিসেম্বরের জন্মদিন উদযাপন করতে হয় একদিন পর, অর্থাৎ ৯ জুলাই এবং ১৮ ডিসেম্বরে।
glycomet usa – pill precose 50mg purchase acarbose pills
prandin 2mg cheap – prandin online purchase jardiance generic