যুদ্ধ করতে করতে হঠাৎ রথের চাকাটি দেবে গেল মাটিতে। রথ থেকে নেমে এলেন কর্ণ, টেনে তোলার চেষ্টা করলেন চাকা। কিন্ত একি! তার শক্তিতে যেন পৃথিবী নিচে নেমে যেতে চায় কিন্ত চাকা আর মুক্ত হয় না। ওদিকে তার প্রতিপক্ষ অর্জুন দ্বিধান্বিত অবস্থায় অস্ত্র নিয়ে অপেক্ষা করছেন, নিরস্ত্র যোদ্ধাকে আঘাত করা যে শাস্ত্রসম্মত নয়! আর অর্জুনের সারথি শ্রীকৃষ্ণ তাকে তাগাদা দিচ্ছেন শত্রু বধ করার জন্য, মনে করিয়ে দিচ্ছেন কর্ণের কুকীর্তি।
আগের পর্বে আমরা কর্ণকে নিয়ে জেনেছিলাম। দেখেছিলাম তিনি পালিত হয়েছেন তথাকথিত এক নিচুজাতের পরিবারে যার জন্য অপমানিত হয়েছেন সারাজীবন। আজ জানব তার আসল বংশ পরিচয় আর পরিণতি।
যুধিষ্ঠির, ভীম, অর্জুন, নকুল আর সহদেব মহাভারতে পঞ্চপাণ্ডব হিসেবে অভিহিত, মহারাজ পাণ্ডুর পুত্র ছিলেন তারা। রাজার দুই স্ত্রী- কুন্তী আর মাদ্রী। রাজার উপর অভিশাপ ছিল, তিনি যৌনমিলনের সময় মারা যাবেন। কিন্তু বংশরক্ষা তো করতে হবে। এক্ষেত্রে কুন্তীর একটা সুবিধে ছিল। বাল্যকালে মহর্ষি দুর্বাসারর সেবা করে একটা মন্ত্র পেয়েছিলেন তিনি। সেই মন্ত্রের গুণ হচ্ছে ঐ মন্ত্র উচ্চারণ করে যে কোন দেবতার কাছে পুত্র কামনা করলে সেই দেবতার অংশে পুত্র পাবেন তিনি। তো পাণ্ডুর আদেশে কুন্তী ধর্মরাজের অংশে যুধিষ্ঠির, ইন্দ্রের অংশে অর্জুন এবং পবনের অংশে ভীমকে লাভ করেন। তারপর তিনি মাদ্রীকে ঐ মন্ত্র শেখালে মাদ্রী অশ্বিনীকুমারদ্বয়ের অংশে নকুল ও সহদেবকে লাভ করেন। যাই হোক কর্ণকে কেন প্রথম কুন্তীপুত্র বলা হচ্ছে সে ব্যাপারে আসি। বিয়ের আগেই বালিকাবস্থায় মন্ত্র লাভের পর কুন্তী কৌতূহলী হয়ে সূর্যকে আহবান করে বসেন এবং এই অমোঘ মন্ত্র প্রভাবে সুর্য অংশে জন্ম লাভ হয় মহাবীর কবজ কুন্তল ধারী সুর্যপুত্র কর্ণের। লোকলজ্জার ভয়ে কর্ণকে গঙ্গায় ভাসিয়ে দেন কুন্তী।
সেই শিশুকেই পরে খুঁজে পায় রাধা-অধিরথ দম্পতি। আর তার পালক পিতার রথচালক পরিচয়ের জন্য তিনি সারাজীবন পদে পদে অপমানিত হয়েছেন তা তো আগের পর্বেই বলা হয়েছে। এমনকি তিনি কুরুরাজপ্রাসাদেও যেন ছিলেন কিছুটা অনাকাঙ্ক্ষিত। যেমন পিতামহ ভীষ্ম তাকে পদে পদে অপমান করতেন। তবে তা কি শুধুমাত্র কর্ণের নিচুজাতের কারণে নাকি দুর্ধর্ষ যোদ্ধা হয়েও দুর্যোধনের মত এক লোভী রাজার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করার জন্য তা নিয়ে প্রশ্ন রেখেছেন গজেন্দ্রকুমার মিত্র তার ‘পাঞ্চজন্য’ তে।

Source: 4.bp.blogspot.com
সর্বজন পূজনীয় পিতামহ ভীষ্মের সাথে বাকবিতণ্ডার কারণে যুদ্ধের প্রথম দশদিন কর্ণ অস্ত্র হাতে নেননি। দশদিন পর ভীষ্ম শরশয্যায় অচল হয়ে পড়লে সেনাপতি হিসেবে স্থলাভিষিক্ত হন দ্রোণাচার্য। তার মৃত্যুর পর কর্ণ সেনাপতির দায়িত্ব পান। তার সারাজীবনের স্বপ্ন, তিনিও যে অর্জুন থেকে কম যান না তা প্রমাণ করার সুযোগ যেন তিনি হাতে পেলেন ।
কুরুক্ষেত্রে সেই কর্ণই এখন দাঁড়িয়ে আছেন অর্জুনের সামনে, নিরস্ত্র অবস্থায়। অর্জুন জানেন না তিনি যাকে হত্যা করতে চলেছেন সেই কর্ণ জন্মসূত্রে তারই বড় ভাই। জানতেন না কর্ণ নিজেও, যুদ্ধ শুরু হবার কিছুদিন আগ পর্যন্তও। যে কৃষ্ণ অর্জুনকে উস্কানি দিচ্ছেন, সেই কৃষ্ণই কিছুদিন আগে কর্ণকে জানান তার আসল বংশ পরিচয়। আর আহ্বান করেন পাণ্ডব শিবিরে যোগ দেওয়ার জন্য। এর কিছুদিন পর পাণ্ডবজননী কুন্তিও আসেন তাকে দুর্যোধনের পক্ষ ত্যাগ করে পাণ্ডবদের সাথে যোগ দিতে। দুর্যোধন হচ্ছে অন্ধরাজা ধৃতরাষ্ট্রের জ্যেষ্ঠপুত্র। পূর্ববর্তী রাজা পাণ্ডুর বড় ভাই হচ্ছেন এই ধৃতরাষ্ট্র। যুদ্ধ লাগার মূল কারণ ছিল দুই পরিবারের ক্ষমতা দখলের লড়াই থেকে। এখানে অবশ্য অনেকের অনেক চাল ছিল আর কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ ঘটার পেছনে অনেকের ইচ্ছাকৃত কিছু কাজও ছিল, কিন্ত আপাতত এখানের আলোচ্য বিষয় তা নয়। প্রশ্ন হচ্ছে, কর্ণ কেন দুর্যোধনের সাথে ছিলেন? মনে আছে, আগের পর্বে বলা হয়েছিল সমরবিদ্যা প্রদর্শনের সময় কর্ণকে অঙ্গরাজ্যের অধিপতি নিযুক্ত করেন দুর্যোধন? তাকে যে মানুষ অধিপতি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে সেই দুর্যোধনকে ছেড়ে যাবেন নিজের স্বার্থে, এমন মানুষ কর্ণ নন। নিজের স্বার্থে বলা হচ্ছে কারণ, তিনি যদি পাণ্ডব শিবিরে যোগ দিতেন, তবে যুধিষ্ঠির তাকে সিংহাসন ছেড়ে দিতেন। তিনি শ্রীকৃষ্ণ আর কুন্তিদেবী দুজনকেই ফিরিয়ে দেন। এছাড়া, তিনি যদি এখন কুন্তির সন্তান হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন, তবে তাকে যে রাধা বড় করলেন তার অবমাননা করা হয় না কি? আর যাকে জন্মানোর পরেই ভাসিয়ে দেওয়া হল নদীতে, সে সন্তান তো কুন্তির জন্য মৃত। কর্ণ শেষ পর্যন্ত কৌরব শিবিরেই থেকে যান।

Source: i.pinimg.com
তো, যে মানুষ এতটা আত্মসম্মানবোধ আর দায়িত্ববোধ ধারণ করেন, যিনি স্বয়ম্বর সভায় সবার সামনে অপমানিত হয়েও দ্রৌপদীকে আশীর্বাদ করেন, তার কি এমন কুকীর্তি থাকতে পারে যা মনে করিয়ে দিয়ে কৃষ্ণ অর্জুনকে ক্রোধান্বিত করে দিতে পারেন? যে কর্ণ কুন্তিদেবীকে এই প্রতিজ্ঞা করেন যে, তিনি অর্জুন ছাড়া অন্য কোন পাণ্ডবকে হত্যা করবেন না, যেন যুদ্ধশেষে তিনি পাঁচ সন্তানের জননীই থাকেন। তবে তার ব্যক্তিত্বের সাথে দ্রৌপদীর সাথে ঘটা অন্যায়ে আস্কারা দেওয়া কর্ণ যেন ছিলেন পুরো অন্য মানুষ।
এই যুদ্ধের তের বছর আগে দুর্যোধন তার পথের কাঁটা সরানোর জন্য এক পাশাখেলার আয়োজন করেন, যার প্রভাব দুই পক্ষকে কুরুক্ষেত্রের ময়দানে মুখোমুখি করে। সে খেলায় ধর্মরাজ যুধিষ্ঠির কাণ্ডজ্ঞান হারিয়ে একের পর এক বাজি ধরতে থাকেন। এক পর্যায়ে তিনি দ্রৌপদীকে বাজি ধরে বসেন। বাজিতে হারলে কর্ণ দুর্যোধনের ছোটভাই দুঃশাসনকে বুদ্ধি দেয়, কৃষ্ণাকে (দ্রৌপদীর আরেক নাম) অন্তঃপুর থেকে ধরে এনে তার সাথে দাসের মত আচরণ করার জন্য। তার মন্ত্রণাতেই দুঃশাসন কৃষ্ণার বস্ত্রহরণ করার চেষ্টা করে। তবে কি স্বয়ম্বরের সেই অপমানের প্রতিশোধ নিলেন কর্ণ? নাকি স্ত্রীর অপমান সহ্য করতে না পেরে যদি অর্জুন কিছু করেন, যুধিষ্ঠিরের ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করতে একটা হুলস্থূল কাণ্ড ঘটান, সেটাই তিনি চাচ্ছিলেন? কেননা কোন বিবেচক মানুষই নিজের সামনে অন্যের লাঞ্ছনা সহ্য করতে পারবে না, কিন্ত সেই মানুষটির সাহায্যে যদি তার পরিবারই এগিয়ে না আসে তবে অন্য কারো জন্য কিছু করাটা একটু মুশকিলই বৈকি। এছাড়া কর্ণ ছিলেন দুর্যোধনের নিযুক্ত অধিপতি, তাই তার নিজের থেকে যুধিষ্ঠিরের মূর্খতার বিরোধিতা করা দেশদ্রোহিতার সামিল হত। তাই এমন কি হতে পারে যে তিনি চাচ্ছিলেন এই অন্যায় বন্ধ হোক, তাই তিনি নানা কটু কথা বলে চেষ্টা করছিলেন পাণ্ডবদের ক্রোধ জাগিয়ে তুলতে যেন তারা অস্ত্র হাতে তুলে নেয়? এগুলো পাঠক নিজ বিবেচনায় বিচার করুন, আসল তথ্য হল কর্ণ ছিলেন কৃষ্ণার লাঞ্ছনাকারীদের একজন।

Source: yogaformodernage.com
তো অস্ত্র হাতে একজন মানুষকে যদি মনে করিয়ে দেওয়া হয় তার প্রিয়জনের সাথে কি কি অন্যায় হয়েছিল, তার কি তখন কোন ন্যায়-অন্যায়বোধ কাজ করবে? স্বাভাবিকভাবে উত্তর আসবে, না। যুদ্ধে সাধারণত কিছু অলিখিত প্রথা সবাই মেনে চলত। যেমন একজনের সাথে যুদ্ধ চলাকালে অন্য কেউ পেছন থেকে আক্রমণ করবে না, শত্রুর হাত থেকে অস্ত্র পড়ে গেলে তাকে অস্ত্র তোলার জন্য সময় দেওয়া ইত্যাদি। বর্তমান যুগে আর আমাদের মত সাধারণ মানুষের কাছে এগুলো অর্থহীন মনে হতে পারে। কিন্ত যোদ্ধাদের মনোজগৎ বোঝা সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। আর আমাদের বর্তমান ঘুণে ধরা সমাজে এসব নীতিকথা আরো অর্থহীন মনে হতে পারে, যেখানে অন্যের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খাওয়াটা বীরত্ব কেবল নয় ন্যায্য বলেই বিবেচিত। কিন্ত অর্জুন-কর্ণ তো যোদ্ধা। তাই কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের শেষদিকে অর্জুন-কর্ণ দ্বৈরথের একপর্যায়ে অর্জুন কিছুক্ষণের জন্য নিরস্ত্র হয়ে পড়লে কর্ণ তাকে সুযোগ দেন আবার অস্ত্র হাতে নেওয়ার। এর কিছুক্ষণ পর কর্ণের রথের চাকা মাটিতে দেবে যায়। কর্ণ নেমে আসেন চাকা টেনে তুলতে। কিন্ত অভাগা যেদিকে চায়, সাগর সেদিকে শুকায়! নিয়তি যেন তার সাথে একটা শেষ রসিকতা করতে চাইল । যার দৈহিক বল ধরণীকেও যেন দাবিয়ে দেবার ক্ষমতা রাখে, সেই কর্ণ সামান্য রথের চাকা তুলতে পারলেন না! আর ব্রহ্মাস্ত্র নিক্ষেপের কৌশল হঠাৎ যেন ভুলে গেলেন। প্রচণ্ড মানসিক চাপে অনেক সময় মানুষ নিজের ক্ষমতা ঠিকমত ব্যবহার করতে পারে না, হয়ত তাই হয়েছিল কর্ণের সাথে। নাকি পরশুরামের অভিশাপের ফল এখন ভোগ করছেন? আর গোদের উপর বিষফোঁড়ার মত তার সারথি মদ্ররাজ শল্য তো ছিলেনই ।
শল্য মূলত পাণ্ডব শিবিরে যোগ দিতে চেয়েছিলেন। কিন্ত নিজের কথার ফাঁদে পড়ে কৌরব শিবিরে যোগ দিতে বাধ্য হন। কিন্ত তার আনুগত্য পড়ে ছিল পাণ্ডব শিবিরেই। তাই কৃষ্ণের অনুরোধে তিনি কর্ণের সারথি নিযুক্ত হন আর সর্বদা চেষ্টা করেন নানা কথায় কর্ণের মনোযোগ নষ্ট করতে। সেদিনও তার ব্যতিক্রম হয়নি। শল্য যেন ইচ্ছে করেই এবড়োখেবড়ো জমিতে রথ নিয়ে গিয়েছিলেন।
কর্ণ আশা করেছিলেন অর্জুন নিরস্ত্র যোদ্ধাকে আঘাত করবেন না, যেমনটা তিনি করেছিলেন। হয়তো তাইই হত। কিন্ত কৃষ্ণের কথায় যখন মনে পড়ল দ্রৌপদীর কথা, নিজেকে সামলানোর আর প্রয়োজনবোধ করলেন না অর্জুন। হত্যা করলেন কর্ণকে। এভাবেই হল মহাভারতের আরেক চরিত্রের করুণ সমাপ্তি।
কর্ণ, যিনি দায়িত্ববোধের কারণে পরাজয় নিশ্চিত জেনেও আনুগত্য পাল্টাননি, তাছাড়া দানবীর হিসেবে তাঁর খ্যাতি ছিল অনেক। সে গল্প আরেকদিন।
তথ্যসূত্রঃ
১. পাঞ্চ্যজন্য – গজেন্দ্রকুমার মিত্র
২. মহাভারত – আর কে নারায়ণ
৩.মহাভারত – রাজশেখর বসু
avodart medication flomax canada purchase zofran for sale
avodart online order celecoxib brand oral zofran 4mg
oral levofloxacin 500mg cost levofloxacin 500mg
levofloxacin 250mg us generic levaquin 500mg
Buy danabol ds methandienone 10mg 500tablets produced by body research at the best price, the most famous weight gain steroid best price cialis And my endo put me on hcg, but ye imo the doses are pretty huge
spindy kozacy 3