মিলিয়ন মিলিয়ন বছর আগেকার পৃথিবীতে একটা সময় ছিলো, যাকে বলা হতো মেসোজোয়িক যুগ। এই মেসোজোয়িক যুগকে আবার তিন ভাগে ভাগ করা হয়ঃ- ট্রায়াসিক, জুরাসিক এবং ক্রিটাসিয়াস যুগ। ট্রায়াসিক যুগের শেষভাগ থেকে শুরু করে ক্রিটাসিয়াস যুগের মাঝামাঝি পর্যন্ত এই ডায়নোসরেরা রাজত্ব করেছে। ডায়নোসরেরা শুধু মাটিতেই ঘুরে বেড়ায় নি, সমুদ্রেও দাপিয়ে বেড়িয়েছে। ডায়নোসর শব্দটির উৎপত্তি গ্রিক ভাষা থেকে। এর অর্থ হচ্ছে “ভয়ঙ্কর।“ শুরুতে বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিলো, ডায়নোসরেরা যে যার ইচ্ছেমতো আলাদা আলাদাভাবে বসবাস করতো। কিন্তু গবেষণায় এক সময় প্রমাণিত হয় যে, এরা আসলে দল বেঁধে চলাফেরা করতো। ডায়নোসরদের মধ্যে কেউ ছিলো শান্তশিষ্ট, আবার কেউ ছিলো হিংস্র প্রকৃতির। কেউ ছিলো তৃণভোজী, আবার কেউ মাংসাশী। তৃণভোজীরা চার পায়ে হাঁটতো আর মাংসাশীরা হাঁটতো দুই পায়ে। কেউ কেউ আবার আকাশেও উড়তে পারতো। ধারণা করা হয়, ক্রিটাসিয়াস যুগের শেষদিকে বিশাল এবং ভয়াবহ এক উল্কাপাতের ফলে ডায়নোসরেরা পৃথিবী থেকে চিরতরে বিলুপ্ত হয়ে যায়। আবার অনেকের ধারণা, স্ত্রী ডায়নোসরের সংখ্যা বাড়তে বাড়তে বাড়তে একসময় এমন অবস্থায় পৌঁছায় যে, প্রজননের জন্য পুরুষ ডায়নোসরের সংখ্যা একেবারে অপ্রতুল হয়ে দাঁড়ায়। ফলে বিলুপ্ত হওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় ছিলো না! তবে মিলিয়ন মিলিয়ন বছর আগে পুরো পৃথিবী দাপিয়ে বেড়ানো ডায়নোসরদের বিলুপ্তির সত্যিকারের কারণ আসলে কোনটা, তা এখন আর নিশ্চিতভাবে জানার তেমন উপায় নেই। তবে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে প্রাপ্ত ডায়নোসরের ফসিলের কার্বন ডেটিং করে এদের সময়কাল এবং বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে অনেক তথ্য জানা গেছে। বিভিন্ন সময়ে প্রাপ্ত বৈজ্ঞানিক তথ্যউপাত্ত এবং বিভিন্ন বই ও ম্যাগাজিনের আলোকে এদের বিভিন্ন প্রজাতি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলচনা করা হলো।
টাইরানোসোরাস রেক্স (টি. রেক্স):

Source: Wallpaper Studio 10
এরা ছিলো সবচেয়ে ভয়ানক ও হিংস্র প্রজাতির ডায়নোসর। “টাইরানোসোরাস রেক্স” নামের অর্থই হচ্ছে “ভয়ঙ্কর গিরগিটি।“ এরা অন্যান্য ডায়নোসরদের তাড়িয়ে বেড়াতো। ভয়ানক চেহারা আর সাংঘাতিক হিংস্রতার কারণে অন্য ডায়নোসরেরা এদের ভয় পেতো। এদের দেহের সামনের দিকে ছিলো দুটি ধারালো নখরওয়ালা পা, যা অনেকটা হাতের মতোই ব্যবহার করতে পারতো। এদের মাথাটি দেহের তুলনায় বড় ছিলো। এদের ধারালো দাঁতগুলো লম্বায় ছিলো ৬ ইঞ্চি আর চওড়ায় ১ ইঞ্চি। এরা এতোটাই শক্তিশালী ছিলো যে, অন্যান্য প্রজাতির বিশালদেহী ডায়নোসরদের সাথে অনায়াসে লড়াই করতে পারতো। এরা ছিলো মাংসাশী এবং অন্য প্রজাতির ডায়নোসরদেরকে খাবার হিসেবে গ্রহণ করতো। এমনকি কখনো কখনো এরা নিজের বাচ্চাদেরকেও খেয়ে ফেলতো!
এ্যালোসোরাসঃ

Source: Celitos – DeviantArt
আরো একটি ভয়ঙ্কর প্রজাতির ডায়নোসর হচ্ছে এ্যালোসোরাস। এরা লম্বায় ছিলো প্রায় ৩৪ ফুট। এরা দুই পায়ে হাঁটতো। সামনের পা দুটি দেখতে হাতের মতোই ছোট ছিলো। সেখানে ছিলো ধারালো নখরবিশিষ্ট তিনটি করে আঙুল। টি রেক্সের মতো এদের মাথাও আকারে দেহের তুলনায় বড় ছিলো। এদের লেজটি ছিলো ওজনে ভীষণ ভারি। সব মিলিয়ে এদের দেহের ওজন ছিলো প্রায় ২ টন। টি রেক্সের মতো এরাও ছিলো মাংসাশী। এরা দলবেঁধে শিকার করতো এবং অন্য ডায়নোসরদের ধরে ধরে খেতো।
টেনিসট্রোফিয়াসঃ

Source: Mark Witton
এরা ছিলো বিশালাকৃতির এবং অস্বাভাবিক লম্বা গলাবিশিষ্ট ডায়নোসর। যদিও এদের দেহ তেমন বড় ছিল না, কিন্তু গলা ও লেজের আকৃতি ছিলো বিশাল! এদের দাঁত ছিলো প্রচণ্ড ধারালো। টেনিসট্রোফিয়াস ছিলো মাংসাশী এবং এদের প্রধান খাবার ছিলো মাছ। এরা পানিতেও থাকতে পারতো, আবার ডাঙ্গাতেও চড়ে বেড়াতো। তবে পানিতে থাকতেই এরা বেশি পছন্দ করতো।
প্লেটিওসোরাসঃ

Source: deskridge – DeviantArt
এরা দেখতে ছিলো গিরগিটির মতো এবং আকারে সবচেয়ে বড়। এদের ওজন ছিলো প্রায় ১৬৫ টন । এরা ছিলো ভারী এবং বড় প্রজাতির ডায়নোসর। এদের গলা ও লেজ উভয়ই দীর্ঘ ছিলো। গলা থেকে লেজ পর্যন্ত গড় দৈর্ঘ্য ছিলো প্রায় ৮৭ ফুট। তবে কেউ কেউ দৈর্ঘ্যে ১০০ ফুট পর্যন্তও লম্বা ছিলো। এদের চারটি পা-ই ছিলো সুঠাম ও পেশিবহুল, তবে সামনের পা দুটি পেছনের পায়ের চাইতে সামান্য ছোট ছিলো। এরা সাধারণত দু’পায়ে হেঁটে বেড়াতো, কিন্তু প্রয়োজন পড়লে চার পায়েও হাঁটতে পারতো। চলাফেরার মতো খাবারের ক্ষেত্রেও এদের বৈচিত্র্য ছিলো। এরা একইসঙ্গে তৃণভোজী এবং মাংসাশী ছিলো।
এ্যাপাটোসোরাসঃ

Source: ThePinsta
বিশালাকৃতির ডায়নোসরদের মধ্যে আরো একটি প্রজাতি হচ্ছে এ্যাপাটোসোরাস। দেহের তুলনায় এদের মাথা ছিলো বেশ ছোট এবং সরু। গলা এবং লেজের আকার ছিলো দীর্ঘ। এরা লম্বায় ছিলো প্রায় ৭০ ফুট এবং দেহের সর্বমোট ওজন ছিলো প্রায় ৩০ টন। এরা ছিলো মূলতঃ স্থলজ, তবে সময়ে সময়ে পানিতেও চড়ে বেড়াতো। এদের দাঁত ছিলো খুবই ধারালো। তবে এদের দেহের সবচেয়ে শক্তিশালী অঙ্গ ছিলো লেজ। এরা যখন পানিতে চড়ে বেড়াতো, তখন কেউ এদের আক্রমণ করতে এলে লেজের সাহায্যে পানিতে ভীষণ আলোড়ন সৃষ্টি করতো। ফলে শত্রু আর সামনের দিকে এগুতে পারতো না। দেখতে বিশালাকৃতির হলেও এরা ছিলো নিরীহ এবং তৃণভোজী।
তথ্যসূত্রঃ
বই- ডায়নোসরের পৃথিবী,
ম্যাগাজিন- বিজ্ঞানপত্রিকা