এশিয়ার সবচেয়ে সফল ফুটবল দল হিসেবে যারা পরিচিত তারাই হল জাপান ফুটবল দল। এই জাপান দলকে এখন আমরা জানি “নীল সামুরাই” হিসেবে। অথচ এই সামুরাইদের উত্থান কিন্তু বেশিদিন আগের নয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুদ্ধবিধ্বস্ত জাপান সাথে সাথে ঘুরে দাঁড়াতে পারে নি। কিন্তু বর্তমানে তাদের অর্থনীতির সাথে এখন ফুটবলেও তারা অন্যতম শক্তি। ২০১৮ বিশ্বকাপেও জাপান দলে রয়েছে এমন শিনজি কাগাওয়ার মত তারকা ফুটবলার যারা বড় কোনোকিছু করে ফেলার ক্ষমতা রাখে বিশ্বকাপে। চলুন আজ জাপান ফুটবল দল সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
পরিচিতি:
জাপানে ফুটবল দল তাদের ফ্যানদের কাছে সাক্কা নিপ্পন দাইহিয়ো বলে পরিচিত। জাপানিজ ফ্যানরা অনেক শান্তিপ্রিয় এবং শান্ত প্রকৃতির যাদের কখনোই জাপান ফুটবল দলের প্রতি কোনো অভিযোগ দেখা যায় না। দলটির বর্তমান কোচ আকিরা নিশিনো যার কোচিংয়েই জাপান অনুর্ধ্ব-২৩ দল ১৯৯৬ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে ব্রাজিলকে ১-০ গোলে পরাজিত করেছিল যা “মিরাকল অফ মিয়ামি” নামে পরিচিত।

জাপানে ফুটবলের সূচনা :
১৮৭৩ সালে আর্কিবাড লুসিয়াস ডগলাস নামক এক ইংরেজ নেভাল অফিসার ইম্পেরিয়াল জাপানিজ নেভী একাডেমীতে ক্যাডেটদের ফুটবল বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেন যাকে জাপানে ফুটবলের সূচনা বলা যায়। তাই বলা যায়, জাপানে ফুটবলের সূচনা হয় ইংরেজদের হাত ধরেই।
১৯১৯ সালে জাপানে এফএ সিলভার কাপ অনুষ্ঠিত হয় যেখানে ইংলিশ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের প্রেজেন্টেশন দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে ১৯২১ সালে জাপান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন গঠিত হয়। যদিও ইংরেজদের হাত ধরে জাপানে এফএ সিলভার কাপ চালু হয়েছিল, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তা বিলুপ্ত হয়ে যায়। ১৯২০ এর দশকে আঞ্চলিক টুর্নামেন্টগুলি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে এবং উচ্চ বিদ্যালয়গুলিতে বিশেষত টোকিওতে শুরু হয়। ১৯৩৬ সালের বার্লিন অলিম্পিক গেমসে জাপান অংশগ্রহণ করে এবং শক্তিশালী সুইডেনকে ৩-২ গোলে পরাজিত করে অলিম্পিক গেমসে দলটি প্রথম জয় লাভ করে। ১৯২১ সালে জাপানে এম্পেররস কাপ শুরু হয়েছিল। দুর্ভাগ্যবশত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবকিছুই বাতিল হয়ে যায়। বিশ্বযুদ্ধের পর কিছুদিন জাপান ফুটবল থেকে নির্বাসিত ছিল। পরে ১৯৫০ সালে জাপানকে পুনরায় ফিফাতে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়।

জাপান ফুটবল দলের অর্জন:
আগেই বলা হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপান ফুটবল থেকে কিছুদিন নির্বাসনে ছিল। কিন্তু এরপর জাপান আবার ঘুরে দাঁড়ায় এবং তাদের আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয় নি। ১৯৮৮ সালে এশিয়ান কাপে জাপান প্রথম অংশগ্রহণ করে এবং এরপর ৪ বার জাপান এশিয়ান কাপের শিরোপা অর্জন করে। ১৯৯৮ সালে জাপান প্রথম অংশগ্রহণ করে এবং এরপর প্রতিটি বিশ্বকাপেই জাপান অংশ নেয়। ২০০২ সালে ঘরের মাঠে জাপান গ্রুপ পর্বে চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেকেন্ড রাউন্ডে যায় এবং সেকেন্ড রাউন্ডে তুরস্কের কাছে ১-০ গোলে পরাজিত হয়। ২০১০ সালেও জাপান সেকেন্ড রাউন্ডে গিয়ে প্যারাগুয়ের কাছে টাইব্রেকার নামক ভাগ্যদেবীর কাছে পরাজিত জয়। ২০০১ সালে ফিফা কনফেডারেশন্স কাপে জাপান রানার্সআপ হয়।

২০১৮ বিশ্বকাপে জাপানঃ
বিশ্বকাপে জাপানকে অনেকেই ভাবছেন তুলনামূলক দুর্বল প্রতিপক্ষ হিসেবে। যদিও দলে ইনজুরির সমস্যা আছে এবং রক্ষণভাগ তুলনামূলক দুর্বল তথাপি এই বিশ্বকাপে জাপান দলে আছে এমন তিনজন খেলোয়াড় যারা এবার যে কোনো ধরনের চমক উপহার দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। চলুন আজ এই তিনজন খেলোয়াড় সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
কেইসুকে হোন্ডাঃ
কেইসুকে হোন্ডার গোলেই ক্যামেরুন আর ডেনমার্ককে হারিয়ে ২০১০ বিশ্বকাপে সেকেন্ড রাউন্ডে উঠেছিল জাপান। সেবার সেকেন্ড রাউন্ডে প্যারাগুয়ের কাছে টাইব্রেকারে না হারলে হয়তোবা বিশ্বকাপে নতুন কোনো ইতিহাস রচনা করে ফেলত জাপান। জাপানের এই তারকা খেলোয়াড় মাতিয়েছেন রাশিয়ান ক্লাব সিএসকেএ মস্কো আর ইতালিয়ান ক্লাব এসি মিলান। মূলত মিডফিল্ডার হিসেবে খেললেও হোন্ডা দলের প্রয়োজনে আক্রমণভাগে কিংবা প্লেমেকার হিসেবেও আবির্ভূত হতে পারেন। রাশিয়ান ক্লাব সিএসকেএ মস্কোর হয়ে সবমিলিয়ে ১২৭ ম্যাচে তিনি গোল করেছেন ২৮ টি এবং তার এসিস্ট ছিল ৩০ টি। ২০১৩ সালে রাশিয়া থেকে ইতালিয়ান ক্লাব এসি মিলানে পাড়ি জমান কেইসুকে হোন্ডা। সেখানে ৯২ ম্যাচে তার গোলসংখ্যা ১১ এবং গোলে সহায়তা করেছেন ১৪ টিতে। বর্তমানে তিনি মেক্সিকান ক্লাব সিএফ পাচুকার হয়ে খেলছেন যেখানে মাত্র ২৯ ম্যাচ খেলেই ইতোমধ্যে ১৩ টি গোল করেছেন। কেইসুকে হোন্ডার হাতেই ২০১৮ বিশ্বকাপে জাপানের মধ্যভাগ সামলানোর গুরুদায়িত্ব।

শিনজি কাগাওয়াঃ
হোন্ডার মতই আরেকজন তারকা খেলোয়াড়ের উপর জাপানের মধ্যভাগ সামলিয়ে আক্রমণ করার গুরুদায়িত্ব রয়েছে তিনি হলেন শিনজি কাগাওয়া। ২৯ বছর বয়সী এই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার বর্তমানে খেলছেন জার্মান জায়ান্ট ক্লাব বুরুশিয়া ডর্টমুন্ডের হয়ে। ২০০৬ সালে সেরেজো ওসাকাতে নিজের ক্যারিয়ার শুরু করেন কাগাওয়া। সেখানে ১২৫ ম্যাচে ৫৫ গোল করেন। ২০১০ সালে সেরেজো ওসাকা থেকে বুরুশিয়া ডর্টমুন্ডে পাড়ি জমান এই জাপানিজ স্টার। সেখানে ৪৯ ম্যাচে ১১ গোল করেন। ২০১২ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে খেলে তিনি ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগ মাতিয়েছেন। এরপর ২০১৪ থেকে তিনি আবারও ডর্টমুন্ডের হয়েই খেলছেন। বলা হয়ে থাকে, কাগাওয়া যদি জ্বলে উঠেন তাহলে জ্বলে উঠবে জাপান দল।

শিনজি ওকাজাকি:
শিনজি কাগাওয়ার মতই বুন্দেসলীগা আর প্রিমিয়ার লীগ মাতানো আরেকজন জাপানীজ স্টার ফুটবলার হল শিনজি ওকাজাকি। ২০০৫ সালে জাপানিজ ক্লাব শিমিজু এস-পালসে ক্যারিয়ার শুরু করা ওকাজাকি খেলেছেন বুন্দেসলীগায় স্টুটগার্ড আর মেইঞ্জের হয়ে যেখানে সবমিলিয়ে তার গোলসংখ্যা ৩৭ টি। ২০১৫ সালে ওকাজাকি ইংলিশ ক্লাব লিচেস্টার সিটিতে পাড়ি জমান যেখানে এখন পর্যন্ত তিনি ৯৩ ম্যাচে খেলেছেন। শিনজি ওকাজাকি, শিনজি কাগাওয়া আর কেইসুকে হোন্ডা- এই তিনজনের উপর নির্ভর করছে জাপানের ২০১৮ বিশ্বকাপে জ্বলে উঠা- না উঠার ভাগ্য।

২০১৮ বিশ্বকাপেও আমরা জাপানের থেকে চমক আশা করতে পারি। পোল্যান্ড, সেনেগাল আর কলাম্বিয়ার গ্রুপে থাকা জাপান শিনজি কাগাওয়া-কেইসুকে হোন্ডার মত তারকা ফুটবলারদের হাত ধরে বিশ্বকাপে কোনো চমক উপহার দিবে এমন আশা আমরা এশিয়া মহাদেশের বাসিন্দারা করতেই পারি।
avodart online order purchase dutasteride online cheap purchase zofran generic
buy levaquin 250mg sale buy levofloxacin for sale
how long can i take pepcid how long can i take pepcid