ইবনে সিনা : আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রবাদ পুরুষ
ইসলামের গৌরবান্বিত সময়ের এক অমূল্য হীরা ইবনে সিনা যিনি লাতিন “আভিসেনা” নামে পরিচিত । গোটা দুনিয়ায় তার সুনাম ছড়িয়ে পরে ১২০০ খ্রিস্টাব্দে যখন প্রথম তার বই লাতিন ভাষায় অনূদিত হয়। মোট ৪৫০ বইয়ের রচয়িতা যার প্রায় ২৪০ বই এখনো টিকে আছে। যার ১৫০ টিই হল ফিলোসফি এবং ৪০ টিই মেডিসিন সম্পর্কিত, এছাড়াও তিনি মনোবিদ্যা, ভূবিদ্যা, গণিত, মহাকাশবিদ্যা এবং যুক্তিবিদ্যায় ছিলেন সময়ের চেয়ে অনেক এগিয়ে। আজ এ লেখার মাধ্যমে এই মহাপুরুষের জীবন বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোকপাত করার চেষ্টা করবো-
ইবনে সিনার জন্মস্থান এবং জন্ম নিয়ে কিছু কথা:
ইসলামিক শাসন শুরু হবার পরে সামানিদ রাজবংশই ছিল ইরান থেকে উঠে আসা অত্র অঞ্চলের (ট্রাস্নসোস্কসানিয়া এবং খোরাসান) প্রথম স্থানীয় শাসক গোষ্ঠী। ৯০০ খ্রিস্টাব্দ থেকেই বুখারা ছিল এ অঞ্চলের রাজধানী এবং সমরখন্দের সাথে যুক্ত হয়ে গড়ে তুলেছিল সবচেয়ে বড় সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। দশম শতাব্দীর মাঝামাঝি এসে এই রাজ্য দুর্বল হতে শুরু করে। ইবনে সিনার জন্মের সময়কালে নুর ইবনে মনসুর ছিলেন এ অঞ্চলের শাসনকর্তা এবং তিনি তাঁর শাসনভার নিয়ে রীতিমত হিমসিম খাচ্ছিলেন ।
“সায়েখুর রাইস আবু আলী বিন হুসেইন বিন আব্দুল্লাহ হাসান ইবনে আলী ইবনে সিনা” এর জন্ম ৯৮০ খ্রিস্টাব্দে বুখারা (বর্তমান উজবেকিস্তান) এর আখারা বা খরমেইসান গ্রামে মাতুলালয়ে।
যেভাবে শুরু হয় তাঁর শিক্ষা জীবন:
বালখ (বর্তমান আফগানিস্তান) নিবাসী পিতা, “আব্দুল্লাহ” ছিলেন নুর ইবনে মনসুর এর একজন উকিল এবং গ্রামের গভর্নর। আব্দুল্লাহর বাড়িতেই ছিল জ্ঞান পিপাসুদের আড্ডাস্থল। ফলে মাত্র দশ বছর বয়সেই দুইজন শিক্ষক এর সাহায্যে ইবনে সিনা একই সাথে কুরানে হাফেজ এবং আরবি সাহিত্যে দক্ষ হয়ে ওঠেন। এরপর তিনি সুফিজম এ আগ্রহী হয়ে ওঠেন। তিনবছর পর তখনকার প্রখ্যাত জ্ঞানী ওই অঞ্চলে এলে তাকে আবদুল্লাহ বাসায় নিমন্ত্রণ করেন। তিনিই ইবনে সিনাকে যুক্তিমূলক শাস্ত্রে মনোযোগী হবার দিকে ঠেলে দেন। ফলশ্রুতিতে মাত্র ১৩ বছর বয়সেই তিনি মেডিসিন বিষয়ে পড়া শুরু করেন এবং ১৬ বছর বয়সেই সমসাময়িক সকল চিকিৎসক কে ছাড়িয়ে যান।
এদিকে ইবনে-সিনার সুনাম ছড়িয়ে পড়লে তার ডাক পরে সুলতান মনসুর এর দরবারে। সুলতান তখন একটি অজানা ইনফেকশনে ভুগছিলেন যা ইবনে সিনার চিকিৎসায় সেরে ওঠেন আর পুরষ্কার হিসেবে সামানিদদের সমৃদ্ধ লাইব্রেরির দরজা ইবনে সিনার জন্য উন্মুক্ত হয়ে যায় ।এই লাইব্রেরীর ভাণ্ডার এতোই সমৃদ্ধ ছিল যে ১৮ বছর বয়সেই ইবনে-সিনা বিজ্ঞানের সকল শাখায় পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। এখানেই” আল-ফারাবি” এর লেখা পড়ে তিনি এরিস্টটলের মেটাফিজিক্স বুঝতে পারেন। ইবনে সিনার লেখা থেকেই অনুপ্রাণিত হয়েই পরবর্তীতে খ্রিস্টান সমাজ কে এরিস্টটলের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন আকবেট্রো ম্যাগনাস (১২০০-১২৮০) নামক জার্মান বিজ্ঞানী ।
পিতার মৃত্যু এবং ইবনে সিনার নতুন জীবনের শুরু:
এদিকে গজানার গভর্নর সেবুক্তিগিন এবং তার পুত্র খোরাসানের গভর্নর মাহমুদ তুর্কি দের সাথে মিলিত হয়ে মনসুর কে উৎখাত করেন এবং সেই একই সময়েই পিতা আব্দুল্লাহর মৃত্যু ঘটলে ইবনে সিনার জীবন এক নতুন মোড় নেয় ।
তিনি হয়ে ওঠেন এক বেদুঈনের মতো পিপাসু, খোরাসানের নানান শহরে ঘুরে যেই পিপাসা মেটান। দিনব্যাপী করেন চিকিৎসকের কাজ আর সন্ধ্যা হলেই বসে পরেন একদল জ্ঞানপিপাসুদের নিয়ে। তিনি যেখানেই যান একদল ছাত্র জুটে যেত তার । একসময় মধ্য-পশ্চিম ইরানের হামাদানে চলে যান তিনি যেখানে বাঈইদ রাজকুমার ” শামস আদ-দিন” এর উপদেষ্টা হিসেবে দুই দফা কাজ করেন।
চিকিৎসা শাস্ত্র এবং বিজ্ঞানে ইবনে সিনা র অবদান:
আল-কানুন:
“শামস আদ-দিন” এর উপদেষ্টা থাকাকালীন সময়েই রাজনীতির মারপ্যাঁচে কিছুসময় জেলে কাটান । এত কিছুর মাঝেই তিনি রচনা করেন “আল-কানুন” বা দ্যা ক্যানন যাকে বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত অনেকেই চিকিৎসা বিজ্ঞানের শেষ কথা মেনে এসেছেন এবং ইউরোপের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে পাঠ্য বই হিসেবে চর্চা হয়েছে।
তিনি আরেক বিখ্যাত ইসলামিক আইকন “আল-রাজি” এর দেখানো পথ অনুসরণ করেন কিন্তু আরও বিশদভাবে পাঁচ খণ্ডের এই বইতে ব্যাখ্যা করেন। এই বইতে তিনিই প্রথম কিডনি এবং মূত্রাশয়ের রোগ গুলোকে নানান ভাগে বিভক্ত করে দেখান। তাছাড়া তিনি বিভিন্ন মানসিক দিক নিয়েও আলোকপাত করেন, ক্যাথেটার এর ব্যথা কমানোর জন্য তিনি গোল মাথা বিশিষ্ট একটি ক্যাথেটা ডিজাইন করেন।
দি ক্যানন বইটি ১১৫০ সালে “জেরারড ক্রেমোনা” প্রথম লাতিন ভাষায় অনুবাদ করেন ।
কিতাব আল শিফা:
ইবনে সিনার আরেক অমর সৃষ্টি “কিতাব আল শিফা“ যা একটি চার খণ্ড বিশিষ্ট এন্সাইক্লোপেডীয়া। এখানে তিনি গণিত কে ‘পাটিগণিত, জ্যামিতি, মহাকাশবিদ্যা এবং সংগীত এই চার ভাগে ভাগ করেন। জ্যামিতির নানান সূত্র যেমন সরলরেখা, ত্রিভুজ, বহুভুজ ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করেন।
মহাকাশবিদ্যায় তিনি সফলভাবে উপস্থাপন করেন কেন ভেনাস পৃথিবী হতে সূর্যের তুলনায় কাছে। তিনি বাগদাদ এবং গুরজানের ভেতর দ্রাঘিমাংশের দূরত্ব সফলভাবে বের করে দেখান তার উদ্ভাবিত এক কম্পাসের মাধ্যমে । তিনি এই বইতে আরও লিখেন আলোর গতি কিভাবে অসীম । আল-ফারাবি এবং আল-কিন্দি দের মতন প্রখ্যাত চিন্তাবিদদের কাজ তিনি এই লেখায় ফুটিয়ে তোলেন ।
যেখানে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন তিনি:
১০২২ সালে শামস আদ-দিনের মৃত্যু হলে তিনি চলে যান ইস্পাহান নামক স্থানে, সেখানেও তিনি চিকিৎসক হিসেবে
কাজ করেন। বিভিন্ন যুদ্ধের সময় তিনিও সৈন্যদলের সাথে ভ্রমণ করতেন, ১০৩৭ খ্রিস্টাব্দে এমনি এক যুদ্ধের ময়দানে অসুস্থ হয়ে রমজান মাসে মাত্র ৫৮ বছর বয়সে তিনি ইন্তেকাল করেন। ইরানের হামাদান নামক স্থানে তিনি চির নিদ্রায় শায়িত আছেন ।
dosage of zofran odt
A person necessarily help to make significantly posts I would state. This is the first time I frequented your website page and to this point? I amazed with the research you made to make this actual post extraordinary. Excellent job!
zyprexa and anxiety
rybelsus 14mg ca – buy DDAVP sale buy generic desmopressin online
zetia coupon with insurance