গ্রীক পুরাণে উল্লেখিত দেব-দেবীদের মধ্যে অন্যতম একজন দেবতা এপোলো। কোঁকড়ানো সোনালী চুলের অধিকারী সুদর্শন দেবতা এপোলো একই সাথে আলো, সঙ্গীত, কবিতা, চিকিৎসা, দৈববাণী, ধনুর্বিদ্যা ইত্যাদির দেবতা। অ্যাপোলো ছাড়াও তাকে আরো কয়েকটি নামে উল্লেখ করা হয় যেমন- ফোবিয়াস, ডেলিয়ান, পাইথিয়ান, লাইসিয়ান ইত্যাদি। কোথাও কোথাও তাকে সূর্য দেবতা বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। একই সাথে অনেক ক্ষমতার অধিকারী হওয়ার কারণে তাকে অলিম্পাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দেবতা হিসেবে গণ্য করা হয় ।
এপোলোর জন্মকথা
এপোলোর জন্ম হয় গ্রীসের ডেলোস দ্বীপে। কথিত আছে যে, জিউস কর্তৃক লেটোর গর্ভ ধারণের কথা শুনে জিউসের স্ত্রী দেবরাণী হেরা খুব রেগে যায়। হেরা ছিলো বিয়ে, পরিবার ও সন্তান জন্মদানের দেবী। ফলে লেটোর উপর রেগে গিয়ে সে পৃথিবীর স্থলভাগের কোথাও যাতে সন্তান জন্ম দিতে না পারে সে ব্যবস্থা করে। ফলে লেটো অসহায়ের মত বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে থাকে। অবশেষে সমুদ্র দেবতা পোসেইডন লেটোর প্রতি দয়াপরবশ হয়ে তাকে ডেলোস এ আশ্রয় দেয়। ডেলোস ছিলো একটি ভাসমান দ্বীপ এবং এটি সমুদ্রের বুকে ভেসে বেড়াত। ফলে এটা পৃথিবীর ভূ-ভাগের অংশও ছিলো না। এই দ্বীপেই যমজ ভাই-বোন আর্টেমিস ও এপোলোর জন্ম হয়। পরবর্তীতে জিউস ভাসমান দ্বীপ ডেলোস কে সমুদ্রের তলদেশে নোঙর করে দেয় এবং এটি একটি স্থায়ী দ্বীপে পরিণত হয়।
এপোলোর জন্মের পর ন্যায় বিচার ও শৃঙ্খলার দেবী থেমিস তাকে কয়েক ফোঁটা অমৃত দেয় এবং তা খেয়ে এপোলো চোখের পলকেই শিশু থেকে সুদর্শন যুবক এ পরিণত হয়। তার জন্মের চতুর্থ দিনেই সে পাইথন নামক এক বিষাক্ত সাপকে হত্যা করে। লেটোকে হত্যা করার জন্য হেরা সাপটিকে পাঠিয়েছিলো এবং এটি এর বিষের প্রভাবে ঝর্ণার পানি ও ফসল বিষাক্ত করছিলো। মাকে বাঁচাতে এপোলো আগুন ও অস্ত্র নির্মাণের দেবতা হেফায়েস্টাস এর নিকট তীর ও ধনুক এর জন্য প্রার্থনা করে। তিনি এপোলোকে একটি সুন্দর ধনুক ও তূণীর ভর্তি ঝলমলে রূপার তীর দেন। এগুলো পেয়ে এপোলো ডেলফির একটি পবিত্র গুহায় পাইথন কে হত্যা করেন। কিন্তু পাইথন ছিলো গায়া (পৃথিবী) এর সন্তান। তাই তাকে হত্যার অপরাধে এপোলোকে শাস্তি পেতে হয়। শাস্তি স্বরূপ তাকে নয় বছর পর্যন্ত রাজা এডমেটাস এর মেষ পাল দেখাশোনা করতে হয়।
সঙ্গীত ও কাব্যের দেবতা এপোলোকে দেবতা হারমিস একটা লায়ার (এক ধরণের বাদ্য যন্ত্র) তৈরি করে দেন যা তার একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হয়ে উঠে। গ্রীক পুরাণে উল্লেখিত ৯ জন মিউস (যারা মানুষকে সাহিত্য রচনায় অনুপ্রাণিত করতো) এর দলনেতা ছিলো এপোলো। তারা মানুষকে সাহিত্য, সঙ্গীত ও শিল্পকলায় অনুপ্রাণিত করতো।

source: ladbrokes casino
অনেক স্থানে এপোলোকে সূর্য দেবতা হিসেবে উল্লেখ করা হয় এবং প্রায়ই তাকে চিত্রিত করা হয় চার ঘোড়ার টানা রথে। সূর্য দেবতা হিসেবে তার দৈনিক কাজ ছিলো ঘোড়ায় টানা রথে করে সূর্যকে পূর্ব থেকে পশ্চিমে নিয়া যাওয়া। তবে অনেকের মতে, এপোলো সূর্যের নয় বরং আলোর দেবতা এবং তাকে সূর্য দেবতা হেলিয়াস এর সাথে গুলিয়ে ফেলা হয়েছে। হেলিয়াস ছিলো টাইটান, অপরদিকে এপোলো ছিলো অলিম্পিয়ান।
এপোলো ছিলো দৈববাণী ও সত্যের দেবতা। এপোলোর সততা ও সরলতায় মুগ্ধ হয়ে তাকে দৈব জ্ঞান দান করা হয়। তিনি বিভিন্ন বিষয়ে দৈব জ্ঞান দান করতেন এবং ডেলফির ওরাকলে তিনি ছিলেন ভবিষ্যৎবক্তা। পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন তাদের ভবিষ্যৎ জানার জন্য ডেলফিতে আসতেন। এপোলো তার প্রিয় ধর্ম যাজিকা পিথিয়ার মাধ্যমে তার ভক্তদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে দৈববাণী দিতেন। ডেলফি ছাড়াও এপোলোর জন্মস্থান ডেলোস এ তার উপাসনা কারা হতো যা পূর্বে তার যমজ বোন আর্টেমিস কে উৎসর্গ করা হয়েছিলো। তবে ডেলফি ও ডেলোস এ এপোলোর জন্য উৎসর্গীকৃত আচার-অনুষ্ঠানের মধ্যে ভিন্নতা ছিলো।

Source: iizzard – DeviantArt
উপরোক্ত বিষয় গুলো ছাড়াও এপোলো ছিলো রোগ নিরাময় ও চিকিৎসার দেবতা। তিনি মানুষকে বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি দিত এবং একই সাথে তীরের আঘাতে প্লেগও ছড়াতে পারত। কেউ বা কোন গোষ্ঠী তার ক্রোধের শিকার হলে ধনুর্বিদ্যার দেবতা তার রূপালী তীরের আঘাতে প্লেগ ছড়িয়ে তাদের উপযুক্ত শাস্তি দিত।
হোমারের মতে, এপোলো ছিলো গ্রীক পুরাণের সবচেয়ে সম্মানীয় দেবতা এবং তার ক্রোধকে সবাই ভয় পেত। তিনি ধর্মীয় আইন প্রণেতা ছিলেন এবং মানুষকে তাদের পাপ সম্পর্কে অবগত রাখতেন। তিনি এতই কড়া ছিলেন যে অন্যান্য দেবতা এবং মনুষ্য জাতি থেকে সব সময় দূরত্ব বজায় রাখতেন। তার সাথে একমাত্র তার বাবা জিউস, ওরাকল বা তার যাজকদের মাধ্যমে যোগাযোগ করা যেত। একবার ক্রোধের বশবর্তী হয়ে সে জিউস এর জন্য বজ্র উৎপাদনকারী দৈত্যকে মেরে ফেলে। এপোলোর ছেলে অ্যাসক্লেপিয়াস মৃত হিপ্পোলিটাস কে জীবিত করে তোলায় জিউস তাকে বজ্রাঘাত করে। ফলে এপোলো রেগে গিয়ে জিউস এর জন্য বজ্র তৈরিকারী দৈত্য সাইক্লোপস কে মেরে ফেলে। ফলে জিউস এর বজ্র উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়।

Source: YouTube
এপোলোর প্রেম উপাখ্যান
চির তরুণ ও সুদর্শন এপোলো বহুবার প্রেমে পড়েছেন। নারী পুরুষ উভয়েই রয়েছে তার প্রেমাস্পদের তালিকায়। তবে তার প্রেমিক জীবন খুব সুখের ছিলো না। অনেক সময় তিনি প্রতারিত হয়েছেন, অনেক সময় উপেক্ষিত হয়েছেন আবার কখনো তার প্রেমের পরিণতি অত্যন্ত মারাত্মক হয়েছে।
এপোলোর প্রথম প্রেম ছিলো নদীর দেবতা পেনিয়াস এর কন্যা ড্যাফনি। প্রেমের দেবতা কিউপিড কে উপহাস করায় কিউপিড রাগান্বিত হয়ে এপোলোকে লক্ষ্য করে তীর ছুঁড়ে এবং তা এপোলোকে বিদ্ধ করে। কিউপিড একসাথে দুটি তীর নিক্ষেপ করে– একটি ছিলো সোনার তৈরি যা মনে প্রেম প্রত্যাশা জাগায় এবং আরেকটি সীসার যা প্রেমের প্রতি বিতৃষ্ণা জাগায়। এপোলো সোনার তীরে বিদ্ধ হয় এবং ড্যাফনি সীসার তীরে বিদ্ধ হয়। ফলে এপোলো ড্যাফনির প্রেমে পড়ে যায় কিন্তু ড্যাফনি তাকে উপেক্ষা করে। এপোলো ড্যাফনিকে তাড়া করতে থাকে এবং ড্যাফনি তার বাবার কাছে সাহায্য চায়। তার বাবা তাকে লরেল বৃক্ষে রূপান্তর করে দেয়। দুঃখ পেয়ে সে লরেল বৃক্ষের পাতা দিয়ে নিজের মুকুট তৈরি করে নেয় এবং ভালোবাসার স্মৃতি স্বরূপ লরেল গাছকে পবিত্র ও চির সবুজ গাছে রূপান্তর করে দেয়।

পরবর্তীতে এপোলো ইভেনাস এর কন্যা মারপেসা এর প্রেমে পড়ে। ইভেনাস এই সম্বন্ধে মত দিলেও মারপেসা রাজি হয়নি। সে ইডা নামক এক তরুণের সাথে পোসেইডনের দেয়া উড়ন্ত রথে করে পালিয়ে যায়। কিন্তু এপোলো তাদের ধরে ফেলে এবং জোর করে মারপেসা কে ছিনিয়ে নেয়। তখন জিউস এসে মধ্যস্থতা করে। সে মারপেসা কে সুযোগ দেয় নিজের বর ঠিক করতে। মারপেসা দেবতা নয় বরং নশ্বর ইডা কে পছন্দ করে নেয়। কারণ মানুষ হওয়ায় তারা দুজন একসাথে বৃদ্ধ হবে ও মারা যাবে কিন্তু দেবতাকে বেছে নিলে সে তাকে বৃদ্ধ বয়সে পরিত্যাগ করবে।
ট্রয়ের রাজা প্রায়াম এর স্ত্রী হেকুবা এর সাথে এপোলোর প্রণয়ের ফলে ত্রয়লাস নামক এক পুত্র সন্তান এর জন্ম হয়। একটি দৈববাণীতে উল্লেখ আছে যে ত্রয়লাস এর বয়স বিশ বছর হলে ট্রয় নগরীর পতন হবেনা। কিন্তু তা হওয়ার আগেই একিলিস ত্রয়লাস কে মেরে ফেলে।
ট্রয়ের রাজকন্যা ক্যাসান্দ্রাকে এপোলো খুব ভালোবাসতো। সে ভালোবেসে ক্যাসান্দ্রাকে দৈব শক্তিও দান করে। কিন্তু ক্যাসান্দ্রা তাকে বার বার ফিরিয়ে দিলে সে অভিশাপ দেয় যে ক্যাসান্দ্রার দৈববাণী কেউ বিশ্বাস করবেনা। তাই হেলেন এর ব্যাপারে প্যারিসকে বললেও সে বিশ্বাস করেনি। এমন কি ট্রয় যুদ্ধের সময় গ্রীকদের তৈরি কাঠের ঘোড়ার ব্যাপারেও সে সাবধান করে কিন্তু কেউ তার কথা বিশ্বাস করেনি।
এপোলো পরবর্তীতে করনিস নামক এক জলপরীকে বিয়ে করে এবং সুখে থাকার চেষ্টা করে। কিন্তু আরো একবার সে প্রতারিত হয়। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় সে ইস্কাইস নামক একজনের প্রেমে পড়ে। একদিন এপোলোর বিশ্বস্ত পাখি কাক খবর নিয়ে আসে যে করনিস অন্য কারো সাথে প্রণয়ে লিপ্ত হয়েছে। কিন্তু সে কাককে অবিশ্বাস করে এবং মিথ্যা বলার অপরাধে কাককে কালো করে দেয়। কিন্তু পরবর্তীতে সত্য জানতে পেরে সে তার বোন আর্টেমিস কে পাঠায় তার স্ত্রীকে হত্যা করতে। ফলে সে কাককে পবিত্র ঘোষণা করে এবং তাকে মৃত্যুর বার্তাবাহক হিসেবে নিযুক্ত করে। স্ত্রীর গর্ভে জন্ম নেয়া তার প্রিয় সন্তান এসক্লেপিয়াসকে উদ্ধার করে সে তাকে সেন্টর কাইরন এর নিকট লালন পালন করতে পাঠায়।
এছাড়াও এপোলোর পছন্দের তালিকায় আরো অনেকে ছিলো। তার পুরুষ সঙ্গীদের তালিকায় ছিলো হায়াসিন্থ, সাইপারিসাস, হিপ্পোলিটাস, ফোর্বাস ও আরো অনেকে।
ট্রয় যুদ্ধে এপোলো
ট্রয় যুদ্ধে এপোলো ট্রজানদের পক্ষ অবলম্বন করে। যুদ্ধে এপোলোর মন্দিরের যাজক ক্রিসেস এর কন্যা ক্রিসেইস কে অপহরণ করে নিয়ে যায় এগামেনন এবং ক্রিসেস তাকে ফেরত চাইলে এগামেনন তাকে অপমান করে। ফলে ক্রিসেস এপোলোর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে এবং এপোলো গ্রীক সৈন্য শিবিরে প্লেগ ছড়িয়ে দেয়। তার ক্রোধ থেকে বাঁচতে শেষ পর্যন্ত এগামেনন ক্রিসেইস কে ফিরিয়ে দেয়।
ইলিয়াডে উল্লেখ আছে যে, ইনিয়াস যখন ডায়োমিডের দ্বারা আঘাত প্রাপ্ত হয় এপোলো তাকে রক্ষা করে। অ্যাফ্রোদিতি তার সন্তান ইনিয়াস কে বাঁচাতে যায় কিন্তু সে নিজেও আহত হয়। তখন এপোলো এগিয়ে আসে এবং ইনিয়াসকে মেঘ দ্বারা আবৃত করে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেয়।

Source: Sofijon
এছাড়াও একিলিস কে হত্যা করতে এপোলো প্যারিসকে সাহায্য করে। বলা হয় যে, তার প্রিয় সন্তান ত্রয়লাস কে তার নিজের মন্দিরের বেদীতেই হত্যা করে একিলিস। আর এর প্রতিশোধ নিতেই সে একিলিস কে হত্যায় প্যারিসকে সাহায্য করে।
অলিম্পাস পর্বতে বসবাসকারী দেব-দেবীদের মধ্যে অন্যতম শক্তিধর ছিলো এপোলো। রোমান দের নিকটও তিনি একই নামে পরিচিত ছিলেন।
এছাড়া ও পড়তে পারেন – আফ্রোদিতি : সৌন্দর্য ও ভালবাসার দেবী
তথ্য সুত্রঃ
২. ancient.eu
৩. theoi.com
order dutasteride for sale order celecoxib online cheap order zofran 8mg pill
buy generic levofloxacin 250mg levaquin 250mg us