স্বাগতিকঃ
৭০ এর বিশ্বকাপ এর জন্য আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, কলোম্বিয়া, জাপান, মেক্সিকো, পেরুকে বিবেচনায় আনা হয়। ফিফা কংগ্রেসের এর ভোটের মাধ্যমে মেক্সিকোকে বিশ্বকাপ এর দায়িত্ব অর্পণ করা হয়।

ভেন্যুঃ
৫ ভিন্ন ভিন্ন শহরের পাঁচটি ভিন্ন স্টেডিয়ামকে বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য নির্বাচন করা হয়। উচ্চতার ব্যাপারে সব টিমেরই আপত্তি ছিল। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সর্বোচ্চ উচ্চতা ছিল ২৬৬০মিটার এবং সর্বনিম্ন ছিল ১৫০০মিটার।
অংশগ্রহণকারী দলঃ
৭৫টি দল ১৯৭০ বিশ্বকাপের জন্য মনোনীত হয়। যদিও শেষ পর্যন্ত ৬৮টি দল অংশগ্রহণ করে। মেক্সিকো এবং ইংল্যান্ড সরাসরি সুযোগ পায় মূলপর্বের জন্য। ইউরোপ থেকে ৮টি, কনমেবল অঞ্চল থেকে ৩টি, আফ্রিকা থেকে ১টি, এশিয়া/ওশেনিয়া অঞ্চল থেকে ১টি আর বাকি স্লটটি রাখা হয় কনক্যাকাফ অঞ্চল এর জন্য।
ফরম্যাটঃ
৪গ্রুপ থেকে মোট ৮টি দল পরের নক আউট রাউন্ড এর জন্য বিবেচিত হয়। কোয়াটার ফাইনাল, সেমি-ফাইনাল, ৩য় স্থান নির্ধারণী, ফাইনাল এভাবে পূর্বের ন্যায় ফরম্যাট দাড় করানো হয়। ইতিপূর্বে গোল অনুপাত দেখা হলেও সেবার থেকে নিয়ম হয় যে গোল ব্যবধান বিবেচনা করা হবে।
গ্রুপ পর্বঃ
সোভিয়েত ইউনিয়ন, মেক্সিকো, ইটালি, উরুগুয়ে, ব্রাজিল, ইংল্যান্ড, পশ্চিম জার্মানি, পেরু কোয়ার্টার ফাইনাল এ উত্তীর্ণ হয়।
কোয়াটার ফাইনালঃ
সোভিয়েত ইউনিয়ন-উরুগুয়ে এবং পশ্চিম জার্মানি-ইংল্যান্ড ম্যাচ দুটি অতিরিক্ত সময়ে গড়ায়। এছাড়া ব্রাজিল, ইটালি নিজ নিজ খেলায় ৪গোল করে অনায়াসেই জয় তুলে নেয়।

সেমি ফাইনালঃ
উরুগুয়েকে ৩-১গোলে হারিয়ে ফাইনাল এ চলে যায় ব্রাজিল। অপর সেমিফাইনালটিকে বলা হয়ে থাকে বিশ্বকাপ ইতিহাসেরই সেরা একটি ম্যাচ। এটিকেই ম্যাচ অফ দ্যা সেঞ্চুরির খেতাব ও দেয়া হয়েছিল। সবচেয়ে শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচের কথা বললে এই ম্যাচের কথা বলতেই হবে আপনাকে। ৪-৩গোলে মীমাংসিত হওয়া এই ম্যাচের ৬টি গোলই এসেছে ৯০~১১১মিনিটের মাঝে!!! ৮মিনিটেই ইটালি লিড নিয়ে নেয়, যা নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে শোধ করে দেয় জার্মানি। ৯৪মিনিটে জার্মানি ২-১এর লিড ও পায় যা টিকেছিল মাত্র ৪মিনিট। পরের ধাক্কাটা দেয় ইটালি। ২-২ থেকে ৩-২গোলের লিড নিয়ে নেয়। ১১০ মিনিটে গিয়ে জার্মানির গার্ড মুলারের গোলে আবারও সমতা।
হয়তবা টাই-ব্রেকারই নিয়তি ধরে রেখেছিল, কিন্তু পরের মিনিটেই রিভেরার গোলে ইটালি এগিয়ে যায় ৪-৩ এ। ম্যাচের জয়সূচক গোলও ছিল সেটি।
৩য় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে জার্মানি ১-০ গোলে হারায় উরুগুয়েকে।
ফাইনালঃ
২১শে জুন ১,০৭,৪১২জন দর্শকের সমাগম হয় ফাইনাল দেখতে। এক প্রকার একপেশে ফাইনালই বানিয়ে ছাড়ে ব্রাজিল। প্রথমেই পেলের গোলে এগিয়ে যায় তারা। ৩৭মিনিটে গোল শোধ করে ১-১ সমতা নিয়ে ১ম হাফ শেষ করলেও দ্বিতীয়ার্ধ ছিল শুধুই ব্রাজিলের।

৬৬, ৭১, ৮৬মিনিটে গোল দিয়ে ৪-১ এর সহজ জয় নিয়ে ৩য় বারের মত চ্যাম্পিয়ন হয় ব্রাজিল। সাথে চিরতরে নিজেদের করে নেয় জুলেরিমে ট্রফি।

বলা হয়ে থাকে যে ব্রাজিলের কার্লোস আলবার্ত, পেলে, ক্লোডাল্ডো, গার্সন, রিভেলিনো, টোস্টাওদের নিয়ে গড়া টিমটি বিশ্বকাপ ইতিহাসেরই সেরা দলগুলোর একটি। তারা তাদের ৬ম্যাচের ৬টিতেই জিতে, শুধু তাই নয় বাছাইপর্বেরও সবকয়টি ম্যাচ জিতে আসে তারা। তাদের কোচ জাগাল্লো কোচ এবং প্লেয়ার হিসেবে বিশ্বকাপ জেতা প্রথম ব্যাক্তি।



সর্বোচ্চ গোলদাতাঃ
পুরো টুর্নামেন্ট এ ৫৫ জন প্লেয়ার গোল করেন (মোট ৯৫টি গোল)।

১০টি গোল দিয়ে জার্মানির গার্ড মুলার সর্বোচ্চ গোলদাতা হন যেটি এক আসরের সর্বোচ্চোও বটে।