বাজারে যে বছর প্রথম এসেছিলো সেইবার মাত্র ২৫ বোতল বিক্রি হওয়া পানীয়টির আজ সারা বিশ্বে একদিনে বিক্রির পরিমাণ প্রায় ১.৮ বিলিয়ন ছাড়িয়ে গিয়েছে। তিনজন ব্যক্তি গোপনে পানীয়টির ফর্মুলা পেপসি নামের অন্য একটি পানীয় প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে বেঁচতে চেয়েছিলো তবে ভাগ্য সহায় ছিলো সেবার। খোদ পেপসি কর্তৃপক্ষ বিষয়টি সেই পানীয় কোম্পানী এবং এফ.বি.আই’কে অবহিত করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। বিশেষত ৮০ দশকের দিকে দেশীয় ঐতিহ্যবাহী খানাদানার পাশাপাশি বাঙ্গালীরা পাশ্চাত্য খানার প্রতি আগ্রহ বেড়ে ঝুঁকে পড়ে পানীয়টির দিকে। সে লক্ষ্যে ১৯৮২ সালে আব্দুল মোনেম বেভারেজের হাত ধরে প্রবেশ করে কোকা কোলা কোম্পানী বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশীরা পরিচিত হয় সেই ঝাঁঝালো স্বাদের কোমল পানীয়টির সাথে যার নাম কোকা কোলা যা অল্পসময়েই সারাবিশ্বে ব্যাপক সাড়া জাগায়।
দ্যা কোকা কোলা কোম্পানী:
৮৩.৮ বিলিয়ন ডলার নীট মূল্যের কোম্পানীটির ইতিহাস জানতে আমাদের ফিরে যেতে হবে প্রায় ১৩০ বছর আগে যখন ১৮৮৬ সালের দিকে আমেরিকান রসায়নবিদ জন পেম্বারটন আবিষ্কার করেন কোকা কোলার ফর্মূলাটি। প্রথমত পেম্বারটন আবিষ্কার করছিলো ঔষুধ হিসেবে তবে পরবর্তীতে এটি পানীয়তে রূপান্তর করে বাজারজাতকরণ করার উদ্যোগ নেন আসা গ্রিগস ক্যান্ডেলার। এক ধরণের ঘনীভূত ঘন চিনির ঝাঁঝালো পানীয় উপকরণ যা লোকজন পান করতো মূলত ক্লান্তি বা অবসাদ দূরীকরণের জন্য। পরবর্তীতে কোকা কোলার নামকরণ করেন পেম্বারটনের হিসাবরক্ষক ফ্রাঙ্ক রবিনসন। সংক্ষেপে এটিকে ‘কোক’ নামেই চেনা হয়।

Source: Press24.net
যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের আটলান্টা শহরে অবস্থিত ‘দ্যা কোকা কোলা কোম্পানী’ নিজস্ব কারখানায় উৎপাদিত হয় এই পানীয়। লোকজন মাত্র ৫ সেন্ট ব্যয়ে কিনে নিতো পানীয় যা নিমেষেই দূর করতো ক্লান্তি এবং অবসাদ। বাড়তি সংযোজন হিসেবে বলে রাখি, কোকা কোলার জনক পেম্বারটন মৃত্যুবরণ করেন ১৮৮৮ সালে পাকস্থলী ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে তবে তাঁর আবিষ্কৃত ফর্মুলা হতে উৎপাদিত পানীয় উত্তর কোরিয়া এবং কিউবা বাদে বর্তমান বিশ্বের প্রায় ২০০টিরও বেশি দেশে কোকা কোলা বাজারজাত করা হয় এবং বিশ্বের ৯৬ শতাংশ মানুষ কোকা কোলার লোগো দেখামাত্র শনাক্ত করতে সক্ষম। চিন্তা করা যায় কতোটা জনপ্রিয় কোকা কোলা সারা বিশ্বব্যাপী!!
কোকা কোলা তৈরীর উপাদান সম্পর্কে বলতে গেলে প্রথমত কোকা কোলায় ব্যবহৃত হতো পরিমিত পরিমাণের কোকেইন যার পরিমাণ ছিলো ৯ মিলিগ্রাম প্রতি গ্লাস যার কারণে প্রথমের দিকে কোকা কোলা ছিলো আংশিক মদ্যযুক্ত যা খেলে হতো আসক্তি। পরবর্তীতে ১৯০৩ সালের দিকে কোকা কোলার উৎপাদন সামগ্রী হতে কোকেইন সম্পূর্ণরুপে অপসারন করা হয় এবং এটিকে নন-এলকোহোলিক পানীয় হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
তবে বর্তমানের কোকা কোলায় পর্যাপ্ত পরিবর্তন আনা হয়েছে। প্রতিটি ১২ আউন্সের একটি কোকা কোলার ক্যানে থাকে ৩৯ গ্রামের মতো চিনি।

Source: YENİ.MOBİ
কোকা কোলা তৈরীতে প্রায় ৯০ শতাংশ থাকে পানি। সাধারণত কোকা কোলার ফিজ বা বাবল তৈরীতে ব্যবহৃত হয় পরিশোধিত কার্বন-ডাই-অক্সাইড। এই পানীয়টির সর্বোৎকৃষ্ট মিষ্টি স্বাদ আনতে ব্যবহৃত হয় পর্যাপ্ত পরিমাণে চিনি। এরপর কোকা কোলার রঙে ভিন্নতা আনতে ব্যবহৃত হয় ভিন্ন ধরণের ক্যারামেল কালার। এতে আরোও ব্যবহৃত হয় ফসফরিক এসিড যা পানীয়কে করে অম্ল বা কটু। তাছাড়া সামান্য পরিমাণে ক্যাফেইন এবং স্বাদে ভিন্নতা আনতে ব্যবহৃত হয় বিভিন্ন ধরণের প্রাকৃতিক ফ্লেভার। তবে ডায়েট কোক আর কোকা কোলা জিরো সুগার এই দুই ধরণের কোলা থাকে সম্পূর্ণ চিনিমুক্ত।
আমরা অনেকসময় হুজুগে বলতে থাকি কোকা কোলা খাওয়া ভাল না। এটি পান করা মানে নির্ঘাত মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়া। তবে জেনে অবাক হবেন সুষ্ঠু কার্যাদির সমন্বয়ে তৈরী কোকা কোলার উপকারিতা কিন্তু নেহায়েত কম নয়। জেনে নেয়া যাক এক গ্লাস কোকা কোলা আপনার শরীরে কী ধরণের সুবিধা প্রদান করে।
- বিজ্ঞানী এবং চিকিৎসকদের একটি সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, যখন একজন ব্যক্তি খাওয়ার পরে পেটে ব্যথা বা হজম ক্রিয়ায় ব্যাঘাত অনুভব করেন সেসময়ে এক গ্লাস কোক দিতে পারে সমস্যার সমাধান। তাদের মতে পরিমিত পরিমাণের কোক গ্যাস্ট্রিকের জন্য সবচেয়ে ভাল সমাধান।
- প্রত্যহ সকালে এক কাপ কফি বা চায়ের বদলে এক গ্লাস কোক আপনাকে করে তুলতে পারে চাঙ্গা কারণ কোকা কোলাও এক ধরণের ক্যাফেইন সমৃদ্ধ পানীয় যা আপনাকে করে তুলবে প্রাণবন্ত।
- কাজকর্ম শেষে যখন প্রচন্ড ক্লান্ত আর বিমর্ষ হয়ে পড়েন সেসময় এক গ্লাস কোকে থাকা দ্রবীভূত চিনি আপনার শরীরে জোগাবে শক্তি।
- খাবারের কারণে সৃষ্ট পেট প্রদাহের ফলে যখন বমির উদ্রেক হয় সে মুহূর্তে উদ্রেক কাটাতে এক গ্লাস কোক হয়ে উঠবে আপনার জন্য নিয়ামক।
- একটি ৩৩০ এমএল কোকের ক্যান আপনার সারাদিনের শর্করার যোগান দিতে যথেষ্ট।
- হিচকি, শূলবেদনা, পেট প্রদাহ, যৌনশক্তি বৃদ্ধিকরণে এক গ্লাস কোক বেশ উপকারী।

Source: All That Is Interesting
তবে সব ভালোরই একটি খারাপ দিক থাকে সে হিসেবে ভেবে দেখা দরকার আসলেই মাত্রাতিরিক্ত কোকা কোলা খেলে কি হয়? আগেই বলা আছে কোকা কোলায় অম্লের প্রাচুর্য্য অধিক সুতরাং অতিরিক্ত কোক পানে শরীরের অম্লের ভারসাম্য নষ্ট করে। এছাড়াও অতিরিক্ত কোক পানকারীদের জেনে রাখা ভালো অজান্তে তারা নিজেদের স্ট্রোক এবং হার্ট এট্যাকের ঝুঁকি ৪৮ শতাংশ বাড়িয়ে ফেলছে। কোকা কোলায় থাকা কার্বনের আধিক্য পাকস্থলীকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। তাছাড়া যখন হাইড্রোক্লোরিক এসিড আপনার শরীরে প্রবেশ করে সেসময় শরীর এটিকে প্রতিরোধ করতে বেশ কিছু প্রতিষেধক নিঃসৃত করে। শরীরের ব্যবহারযোগ্য প্রতিষেধক হলো ক্যালসিয়াম এবং হাইড্রোক্লোরিক এসিড নিঃসরণে শরীর পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম ব্যবহার করে। ২০০৪ সালে ইন্ডিয়ায় অবস্থিত কোকা কোলা প্লান্ট বাধ্যকতামূলকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয় সীমার অতিরিক্ত ভুমিস্থ পানি ব্যবহার এবং পরিবেশ দূষণকারী উপাদান নির্গত করার কারনে। তৃতীয় বিশ্বের কিছু দেশে এক বোতল কোকের চেয়ে পানির দাম অনেক বেশি কারণ কোকা কোলা তৈরিতে অতিরিক্ত পরিমাণে পানি ব্যবহারের কারণে সেখানে পানির স্বল্পতা দেখা দিয়েছে।
অতিরিক্ত কোলা পানের বিরুপ দিক সম্পর্কে একটি ঘটনা তুলে ধরা যাক। বছর ধরে ৩০ বছর বয়সী এক মহিলা নিয়মিত ২ গ্যালন কোকা কোলা পানের ফলে মারা যায়। মেডিকেল রিপোর্টে ধরা পড়ে মাত্রাতিরিক্ত কোলা পানের ফলে তার যকৃৎ আর হৃৎপিন্ড সম্পূর্ণরুপে অচল হয়ে পড়ে এবং সবকটি দাঁত ক্ষয় হয়ে যায়। তার একটি সন্তান জন্ম হয় দাঁতের উপরের সাদা আবরণ ছাড়াই।

Source: BlazeLover15 – DeviantArt
সবকিছুর পরে হয়তো অনেকেরই প্রশ্ন জাগতে পারে কোকা কোলা বাংলাদেশে কত সালে আসে? কার মাধ্যমে আসে? বাংলাদেশের কৃতি সন্তান আব্দুল মোনেম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল মোনেমের হাত ধরে ১৯৮২ সালে বাংলাদেশে প্রবেশ করে কোকা কোলা যা আজ অবধি বাংলার মানুষের তেষ্টা মিটিয়ে যাচ্ছে।
অবাক করা বিষয় হলো একজন সুস্থ মানুষ যদি কোকা কোলার উৎপাদিত প্রত্যেকটির স্বাদ প্রতিদিন একটি করে পরখ করতে চায় তবে তার জীবন হতে ব্যয় করতে হবে পুরো নয়টি বছর। সারাবিশ্বে কোক খোরদের মধ্যে অধিক পরিমাণে কোক খাওয়ার রেকর্ড মেক্সিকানদের। তথ্যমতে একজন মেক্সিকান বছরে ৭৪৫ টি কোক পান করে যেখানে একজন আমেরিকান করে ৪০১ টি। একসময় কোকা কোলা কোম্পানী প্রায় ২ লাখ ডলারের একটি প্রচার অভিযান বাতিল করেছিলো শুধুমাত্র পোষ্টার নির্মাতার একটি ভুলের কারণে। ভুলটি ছিলো পোষ্টারে কোলার গ্লাসে একটি আইস কিউবে ছোট্ট আপত্তিকর ছবি ধরা পড়ে। প্রায় সাথে সাথেই কোম্পানী সবগুলো পোষ্টার তুলে নেয় এবং পোষ্টার নির্মাতাকে বহিষ্কার করে।
এতকিছুর পরেও ১৩০ বছর ধরে সমানভাবে জনপ্রিয় কোকা কোলা পানীয় বর্তমান বিশ্বে ব্যাপকহারে সরবরাহ করা হচ্ছে। টেক জায়ান্ট এপল এবং সার্চ জায়ান্ট গুগলের পরেই স্থান করে নিয়েছে বেভারেজ জায়ান্ট কোকা কোলা।
ওয়ারেন বাফেট বলেন,
“ যদি আমাকে ১০০ বিলিয়ন ডলার দিয়ে বলা হয় পৃথিবী থেকে কোকা কোলার অস্তিত্ব মুছে ফেলতে তবে আমি সেই টাকা ফিরিয়ে দিয়ে বলবো, এটা কখনো সম্ভব নয়।’’
order dutasteride generic purchase zofran online cheap zofran cost
levofloxacin 500mg oral buy levofloxacin online cheap
cialis professional vs cialis https://candipharm.com/search?text=cialis-professional-vs-cialis