শিরোনামই অনেক ক্ষেত্রে মূল লেখার বিষয় অর্ধেকটা প্রকাশ করে দেয়। এই পোস্টের টপিক নিয়েও কমবেশি নিয়মিত দর্শকরা অনেক কিছু বুঝে গেছেন অলরেডি।
ব্রাজিল ফুটবলের এখন তাম্র-যুগ চলছে, যার গ্লেজটা নেইমার। বাছাইপর্ব খুব দারুণ ভাবে পেরিয়ে গেছে ব্রাজিল তিতের
ছোঁয়ায় কিন্তু নিয়মিত দর্শক মাত্রই জানেন সমস্যা ঠিকই রয়ে গেছে। সমস্যা আপাতদৃষ্টিতে স্ট্রাইকার এবং সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার পজিশনে, এটা সবাই জানে। ২০১৩ সালে স্পেন ব্রাজিলকে মাঠে হারাতে পারেনি, তবে মাঠের বাইরে বড়সড় ধাক্কা দিয়েছে ডিয়েগো কস্তা এবং থিয়াগো আলকান্তারাকে ছিনিয়ে নিয়ে। এখন ম্রিয়মাণ হলেও কস্তা সেই সময় ছিল বিশ্বসেরা স্ট্রাইকারদের একজন আর ২০১৪ সালে ব্রাজিলের স্ট্রাইকার ছিল ফ্রেড আর জো! আর থিয়াগো আলকান্তারা তো বিশ্বের সেরা পাঁচ মিডফিল্ডারের একজন। ইদানীং অনেক ইউরোপীয় দেশ ক্লাবের মতো আচরণ করছে, ক্লাবে প্লেয়ার সাইন হয় টাকা দিয়ে আর ওখানে নাগরিকত্ব ও খেলার নিশ্চয়তা দিয়ে। ঠিক যে দুটো পজিশনে ব্রাজিলের সংকট সেই দুটো সংকটের উত্তরকে স্পেন নিয়ে গেল। আশ্বস্ত হওয়ার বিষয় এইটা যে, প্লেয়ার হঠাত্-ই উঠে আসে। কস্তা গিয়েছে আবার গ্যাব্রিয়েল জেসুস উঠে এসেছে। এই যে কস্তা, কে চিনত পাঁচবছর আগে? হঠাৎ উত্থান ২৩ বছরের শেষসীমায়। কোন না কোন প্লেয়ার এসেই যাবে কিন্তু কোচ কি উঠে আসবে?
ইতিহাসটা ঘাঁটলে এই বিষয়টা পরিষ্কার হবে। ৯৪ এর বিশ্বকাপজয়ী পেরেইরাকে ০২ এর পর আবার কোচ করা হল, ০২
এর বিশ্বকাপজয়ী স্কলারিকে আবার আনা হল ‘১৩ তে সাথে পেরেইরাও ছিল টেকনিক্যাল ডিরেক্টর হিসেবে। ১০ বিশ্বকাপের পর স্যাকড হওয়া দুঙ্গাকে আনা হল ১৪ বিশ্বকাপের পর। প্রত্যেকে দুবার করে আসছে। একে কি ‘কোচের দুষ্টচক্র’ বলা চলে? ৯৪ এ ব্রাজিলের রিডেম্পশনের পর এই তিনজনই বলার মতো সফল কোচ। কিন্তু তিতে আসার আগের ২৫ বছরে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এই তিনজনেই ঘুরপাক খাওয়া হয়েছে। সমস্যাটা কোথায়? সমস্যা ফেডারেশনের চিন্তায়। ০৬-১০ এ দুঙ্গার সফল সময়টায় দুধে একফোঁটা গো-মূত্রের মতো ছিল হল্যান্ডের সাথে দ্বিতীয়ার্ধের ৪৫ মিনিট। সিবিএফ এবং মিডিয়া ব্র্যান্ডিং করলো সুন্দর ফুটবলের হন্তারক হিসেবে। আনা হল মানো মেনেজেসকে, ট্রানজিশন পিরিয়ডের দোহাই দিয়ে ধ্বংসযঞ্জ চালালেন। অথচ সেটা ট্রানজিশন পিরিয়ড ছিলনা, ছিল ২০০৬ এর পরের সময়টা
যখন রোনালদো, কাফু, কার্লোস, দিদারা অবসরে যান। চরম ব্যর্থ হলেন মানো। ততদিনে আবার স্কলারিকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সাফল্য ছিল ২০১৩ এর অপ্রত্যাশিত কনফেডারেশন কাপ আর ব্যর্থতা ছিল জার্মানির সাথে লজ্জাটা। স্কলারির দ্বিতীয় স্টিন্টের পর সিবিএফ আবার গেল দুঙ্গার দ্বারে। ব্যাপারটা কিরকম দেখা গেল না! ‘১০ এ যাকে জোগো বনিতোর হন্তারক বলে বাদ দেয়া হল ‘১৪ তে তো আর সে ক্রুয়েফ বা রাইনাস মিশেল হয়ে যায়নি। তবে আসলে কি ব্যাপারটা?
বাস্তবতা হল যোগ্য বিকল্প কোচের অভাব। দুঙ্গা অবশ্যই একজন ভালো কোচ এবং সেইমুহুর্তে ব্রাজিলের জন্য ছিলেন রাইট ম্যান। অথচ এই সিচুয়েশনটা এভোয়েড করা যেত যদি ২০১০ এ স্যাক না করে লো এর মতো রেখে দেয়া হতো। যখন সাবেয়া বা বাউজা স্যাকড হল তখন কত কত অপশন আর্জেন্টিনার হাতে! বিয়েলসা, পচেত্তিনো, সিমিওনে, সাম্পাওলি। যখন প্রান্দেলি স্যাকড হল তখন ইতালির লিস্টটা দেখুন- জুভেন্টাসের রিজুভেনেশনের নায়ক কন্তে, কার্লো আঞ্চেলত্তি (হয়ত অসম্ভব এখন তবে ফিউচারে হবেই), মানচিনি। স্পেনের নেক্সট লিস্টে আছে পেপ গার্দিওলা, রাফা বেনিতেজ, রবার্তো মার্তিনেজ, লুচো, ভালদেভরের মতো কোচ। ব্রাজিলের কে আছে তিতের পর? ওয়েল, ক্রুজেইরোকে টানা দুবার জেতানো অলিভেইরা, লিবার্তাদোরেস জয়ী রামালহো। এদের কারোরই ইউরোপিয়ান অভিজ্ঞতা নাই। কেন ইউরোপিয়
অভিজ্ঞতার কথা বলছি? কারণ সবদেশের খেলার ঘরানায় ইউরোপিয়ান স্টাইল এসে গেছে। কোপা দেখে এটা স্পষ্ট হওয়ার কথা। একটা বাদে প্রতিটা গ্রুপপর্ব এবং কোয়ার্টার ফাইনাল ডিসাইড হচ্ছে সিংগেল গোলে। লাতিন ফুটবলের সৌন্দর্য জাদুঘরে আছে। ঠিক এই কারণেই ইউরোপের প্রসঙ্গ টানা। হ্যাঁ, খেলোয়াড়ির চেয়ে কোচিং আলাদা, এটা ফিলোসফির ব্যাপার। সারা ক্যারিয়ারে ইউরোপিয়ান ডিফেন্ডারের ধাক্কা না খেয়ে এখন কোন ফরোয়ার্ডের স্কিল ডেভলাপমেন্ট পূর্ণতা পায়না, তবে কোচিং এরকম না যে মরিনহোর মাইন্ডগেম এর অভিজ্ঞতা না থাকলে আপনার বিশাল ক্ষতি। তবে যে ইন্টেন্স প্রেশারে প্রতি সপ্তাহে একজন ইউরোপিয়ান কোচ থাকে সেটা অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। ট্যাকটিক্যালি চ্যাম্পিয়ন্স লীগ যেকোন ইন্টারন্যাশনাল কম্পিটিশন থেকে আলাদা। অর্থাৎ যারা ইউরোপিয়ান কোচিং এ অভ্যস্ত তাদের জন্য এটা একটা এডভান্টেজ । V for Vandetta র সেই উক্তিটার মতো , “Only ideas are intact”। যদি আইডিয়াই সব হয় তবে সংকট কোথায় ব্রাজিলিয়ান কোচদের? আইডিয়া ইমপ্লিমেন্ট করতে হয়, তার জন্য সময় দরকার। একটা তথ্য দেই, ২০১৬ র জুলাই অবধি ১১ রাউন্ড খেলা হওয়ার সময়কালে ৯ জন কোচ বরখাস্ত! মেক্সিকান এক সার্ভেতে উঠে এসেছে পুরো চিত্রটা। ‘এল ইকোনোমিস্তা’ ২০০২ থেকে ২০১৬ অবধি ১০টি দেশের কোচদের নিয়ে কাজ করে জানায় যে, ব্রাজিলে একজন প্রফেশনাল কোচ মাত্র পড়ে ১৫ ম্যাচ স্থায়ী হন এক ক্লাবে, যে সংখ্যাটা জার্মানিতে প্রায় পাঁচগুণ, আর
ইংল্যান্ডে ছয়গুণ! ২০১৬ সালে যখন মূল ব্রাজিলিয়ান লীগ শুরু হয়, তখন ২০টি দলের ২০ জন কোচের মধ্যে কেবল ২ জন কোচ ছিলেন এমন যারা ২০১৫-তেও ওই ক্লাবেই ছিলেন। মানে হচ্ছে আগের বছরের ১৮ জনই বরখাস্ত হয়েছেন ক্লাব থেকে। এমন বাজে অবস্থা কোন জায়ান্ট ফুটবল খেলুড়ে দেশের ছিল না ঐ বছরে। যে মার্সেলো অলিভেইরা অনেক পেছন থেকে টেনে এনে ক্রুজেইরোকে টানা দুবার চ্যাম্পিয়ন করলেন, লুকাস সিলভা, রিবেইরো, গৌলার্টদের মতো তরুণদের বের করে এনে ক্লাবকে সেই-মাপের ফিনান্সিয়াল বেনিফিট দিছে সেও এবার কয়েকম্যাচ খারাপ করতেই স্যাকড! আইডিয়া ইমপ্লিমেন্টের টাইম কোথায় ব্রাজিলে একজন কোচের? একেকজন নামি কোচও বছরে দুবার করে বরখাস্ত হয় তো এখানে আইডিয়া ডেভলাপ কিভাবে হবে?
বার্সার কোচ এনরিকে ব্রাজিলের ক্লাবে কোচ থাকলে প্রথম বছরের মাঝামাঝিতেই বরখাস্ত হয়ে যেতেন, ট্রেবল স্বপ্নই থাকত। স্যাকিংটা এমন একটা কালচার যেটা অনেক ইয়ং কোচের প্রগ্রেসকে শেষ করে দিচ্ছে। আরেকটা ছোটখাটো সমস্যা আছে। ব্রাজিল ফুটবল মানেই একসময় খালি আক্রমণ আর আক্রমণ। সবার শিরায় আক্রমণ। এতে ইউরোপে বলাই হতো এদের টেকনিকাল এবিলিটি অসাধারণ তবে ট্যাকটিকাল এওয়ারনেস কম। এইজন্য আগের সাবেক ফুটবলারদের ইউরোপে কম চান্স দেয়া হয় কোচ হিসেবে। তবে এই সমস্যাটা ইদানীং কমে যাচ্ছে। ২০০০ এর পরের ও এখনকার ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার আর ডিফেন্ডাররা ট্যাকটিক্যালি মাঠে অনেক শার্প, এই ফ্যাক্টরটা সমস্যা নয়। সমস্যা স্ট্যাবিলিটিটা। টিটে দারুণ, তবে নেক্সট কোন উল্লেখযোগ্য কোচ পাইপলাইনে নাই।
প্লেয়ার উঠবেই আজ না হোক কাল, যেহেতু ইতিহাস, বর্তমান এবং ঐতিহ্য এটা সাক্ষ্য দেয়। তবে কোচ উঠে আসবে তো? এই সংস্কৃতি বন্ধ হবে কি?
zyprexa tablet
zofran iv onset
buy cheap terbinafine – order griseofulvin 250 mg without prescription buy grifulvin v cheap