তারেক মাসুদ: একজন সিনেমার ফেরিওয়ালা

0

সিনেমার পর্দায় মানব জীবনের বাস্তব ঘটনা, দ্বন্ধ, সংঘাতের গল্প বলবেন বলে সিনেমা তৈরির সংগ্রাম শুরু করেছিলেন তারেক মাসুদ৷ তথাকথিত বাণিজ্যিক ধারার বাইরে গিয়ে বলতে চেয়েছেন সাধারণ মানুষের গল্প, নিজের জীবনের গল্প। তার ব্যক্তিগত জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে সিনেমার পর্দায় তুলে এনেছেন সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় নানান অসঙ্গতি। হয়ে উঠেছিলেন বাংলার সত্যজিৎ। সিনেমার এই ফেরিওয়ালাকে নিয়ে আজকের ফিচার।

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে আন্তর্জাতিক কাতারে নিয়ে যাওয়া সহ আমাদের চলচ্চিত্রে বিকল্প ধারা প্রচলন করেন মাটির ময়নার ডিরেক্টরস ফোর্টনাইট খ্যাত চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ। স্বাধীনতা পরবর্তী বাঙালি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রকারদের অন্যতম একজন তারেক মাসুদ। চলচ্চিত্র পরিচালকের সাথে তিনি প্রযোজক, চিত্রনাট্যকার, লেখক ও একিসাথে গীতিকারও। চলচ্চিত্রের প্রতিটি বিভাগে তার যোগ্যতা তিনি তার সিনেমায় প্রমাণ করে গেছেন।

ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলায় ১৯৫৭ সালে জন্ম নেয়া তারেক মাসুদের বাল্যকাল কেটেছে গ্রামের মাদ্রাসায় পড়ালেখা করে। তার শৈশবে মাদ্রাসা পড়ার অভিজ্ঞতা নিয়েই ২০০২ সালে নির্মাণ করেছিলেন তার অন্যতম শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র ‘মাটির ময়না’। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর তিনি মাদ্রাসা শিক্ষার পরিবর্তে স্কুলে ভর্তি হন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেন।

তারেক মাসুদ
তারেক মাসুদ

বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন সময়েই তারেক মাসুদ বাংলাদেশের চলচ্চিত্র নিয়ে স্বপ্ন দেখেন। গল্প বলতে ভালোবাসা এই মানুষ তার গল্প বলার মাধ্যম হিসেবে চলচ্চিত্রকে বেছে নিয়েছেন ছাত্রজীবনেই। তখন থেকে তিনি চলচ্চিত্রের বিভিন্ন অঙ্গনে হাটতে শুরু করেন। হাতে কলমে শেখার জন্য বিভিন্ন কর্মশালা ও কোর্স করেন। ১৯৮২ সালের শেষের দিকে বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ থেকে ফিল্ম অ্যাপ্রিসিয়েশন কোর্স শেষ করেন।

বিভিন্ন কোর্স থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে তারেক মাসুদ সর্বপ্রথম তার স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘সোনার বেড়ি’ (১৯৮৫) তৈরি করেন। ‘সোনার বেড়ি’ খুব বেশি প্রচার ও প্রসার না হলেও মুগ্ধ হয়ে তৎকালীন বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রাবন্ধিক, সাহিত্যিক, সমালোচক আহমদ ছফা তারেক মাসুদকে ডেকে শিল্পী এমএম সুলতানের জীবনের উপর ডকুমেন্টারি তৈরি করতে উদ্বুদ্ধ করেন। তারেক মাসুদ আহমেদ ছফায় অনুপ্রাণিত হয়ে সুলতানের জীবনীর উপর ‘আদম সুরত’ নামে ডকুমেন্টারি তৈরি করেন। এ ডকুমেন্টারি তৈরি করতে তার ৭ বছর পরিশ্রম করতে হয়েছিলো। ১৯৮৯ সালে মুক্তি পাওয়া ‘আদম সুরত’ পুরো বাংলায় সাড়া ফেলেছিল, তারেক মাসুদের চলচ্চিত্র জীবনের সফলতা শুরু তখন থেকেই। এরপর তিনি একে একে অসংখ্য স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন।

বর্তমান বাংলায় মাটির ময়নার জন্য তারেক মাসুদ খ্যাতি লাভ করলেও তার জীবনের অন্যতম একটি কাজ ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ নিয়ে ‘মুক্তির গান’ প্রামাণ্যচিত্র তৈরি। যার জন্য তিনি ১৯ তম জাতীয় চলচ্চিত্র উৎসবে শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্যচিত্রের পুরষ্কার লাভ করেন। ‘মুক্তির গান’ প্রামাণ্য চিত্র তৈরি করতেও তাকে দীর্ঘ সময় ব্যয় করতে হয়েছে। তখনকার সময়ে মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন আর্কাইভ থেকে ফুটেজ সংগ্রহ করে সব ফুটেজ একত্র করা অন্যতম এক চ্যালেঞ্জের কাজ ছিলো। ১৯৭১ সালের মার্কিন নির্মাতা লেয়ার লেভিনের ফুটেজ তাকে সবচেয়ে বেশি সহায়তা করেছিল ‘মুক্তির গান’ তৈরি করতে।

'মুক্তির গান'
‘মুক্তির গান’

‘মুক্তির গানে’ তারেক মাসুদ দেখিয়েছেন, মুক্তিযুদ্ধের সময়ের এক ভবগুরে গানের দলকে। যারা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে গান করে বেড়াতো, মুক্তিযোদ্ধাদের বাঙালি জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ করতো গানের মাধ্যমে, আর যেভাবে সম্ভব হতো মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্য দিয়ে সহায়তা করতো। এ প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করতে মুক্তিযুদ্ধের অরিজিন্যাল ফুটেজ সংগ্রহ করার সাথে সাথে আরো কিছু ফুটেজ তৈরি করতে হয়ে ছিলো ওই ভবঘুরে গানের দলকে নিয়ে।

মাটির ময়না
মাটির ময়ন

এরপর তারেক মাসুদ নেমে পড়েন তার বাল্যকালের মাদ্রাসা পড়ার অভিজ্ঞতা নিয়ে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণে। ‘মাটির ময়না’কে তারেক মাসুদের আংশিক বায়োগ্রাফি বলা যায়। যে জীবনের গল্প বলার স্বপ্ন নিয়ে তিনি এই সিনেমা জগতে প্রবেশ করেন, সে গল্প তিনি নিয়ে আসেন সিনেমার পর্দায়। নিঃসন্দেহে বলা যায় ‘মাটির ময়না’ তারেক মাসুদের নির্মিত সবচেয়ে আলোচিত ও সফল সিনেমা। যে সিনেমা প্রথম কোন বাংলা সিনেমা হিসেবে বিদেশী ভাষার চলচ্চিত্রে অস্কারের জন্য প্রথম মনোনয়ন পায়।

তারেক মাসুদ তার বাল্যকালে কওমি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেছেন। মাদ্রাসায় পড়তে গিয়ে তার যে বিচিত্র রকমের অভিজ্ঞতা, তিনি তা আনু চরিত্রে গল্পাকারে সিনেমায় তুলে ধরেছেন। আনুর বাবার রক্ষণশীল ইসলাম এবং মাদ্রাসায় রক্ষণশীল ইসলামের চর্চা থেকে মুক্তিযুদ্ধের পূর্ববর্তী সময়ে গ্রাম বাংলার জনসাধারণের কাছে ইসলাম কিভাবে মুক্তিযুদ্ধকে প্রভাবিত করেছে এসব নিয়েই গল্পটি চিত্রায়ন করেছেন।

সিনেমার মুল চরিত্র আনুকে মাদ্রাসা শিক্ষার জন্য আনুর বাবা মাদ্রাসায় পাঠান৷ আনু মাদ্রাসার হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করতে গিয়ে দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সাথে সাথে মাদ্রাসায়, গ্রামে ,সমাজে যে চরম ও মধ্যমপন্থার উদ্ভব ঘটে, সেসব বিষয় তারেক মাসুদ নিজের জীবনে প্রত্যক্ষ করে সিনেমায় চিত্রায়ন করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের শুরুর দিকে সিনেমা শেষ হলেও মাটির ময়নাকে মুক্তিযুদ্ধের সিনেমাও বলা যায়। মুক্তিযুদ্ধের ধর্ম ভিত্তিক ব্যবহারে সমাজের সাধারণ মানুষের আকুতি, ধ্বংসজজ্ঞ চিত্রায়ন করেন। ধর্ম ও যুদ্ধ কিভাবে গ্রামীণ ধর্মীয় পরিবারকে ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়েছে তা আনুর রক্ষণশীল ধর্মীয় পরিবারকে দিয়ে বুঝাতে চেয়েছেন। আনুর বাবা মুক্তিযদ্ধের উত্তাল সময়েও তার স্ত্রী আয়েশা ও পুত্রের সাথে বাড়ি ছেড়ে যেতে রাজি হন নি। এখানে আনুর বাবাকে সাধারন রাজাকার চরিত্রে প্রকাশ না করলেও মুক্তিযুদ্ধের সময়ের যুদ্ধে ধর্মের দ্বান্দ্বিক ব্যবহারের রূপ সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।

মাটির ময়না আন্তর্জাতিক ভাবে সমালোচিত সিনেমা। মাটির ময়নার জন্য তারেক মাসুদ কে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এশিয়ার অন্যতম প্রতিভাবান চলচ্চিত্রকার হিসেবে ধরা হয়৷ ছবিটি কান চলচ্চিত্র উৎসবে এলিয়া সুলেমানের ডিভাইন ইন্টারভেনশন সিনেমার সাথে যৌথভাবে আন্তর্জাতিক সমালোচক পুরষ্কার লাভ করে। এছাড়াও চ্যানেল আই ফিল্ম এওয়ার্ড, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি সহ আরো কয়েকটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরষ্কার লাভ করে মাটির ময়না।

 

সিনেমা

ধীরে ধীরে বাংলার সত্যজিৎ হয়ে উঠছিলেন তারেক মাসুদ। মাটির ময়নার পর নির্মাণ করেন বাংলাদেশের প্রথম ডিজিটাল ছবি ‘অন্তর্যাত্রা’। বিশ্বায়নের এ যুগে পিতৃভূমিতে ফিরে এসে সোহেল তার শৈশব ও কৈশোরের লণ্ডনের মিশ্রিত সংস্কৃতির চেয়েও পিতার জন্মভূমির প্রতি তার একরকম টান অনুভূত হয়, অপরদিকে শিরিন তার স্বামীকে ছেড়ে দীর্ঘ সময় লণ্ডন থাকার পর ঢাকায় ফিরে তার এই মাতৃভূমির পুরোনো দিন গুলো খুঁজে বেড়ান। মা ও সন্তানের দেশের জন্য মায়া ও আকুতি তারেক মাসুদ ও ক্যাথরিন মাসুদ নিজেদের জীবনে দেখতে পেয়েছিলেন। বিশ্বায়নের এই সময়ে জাতীয়তাবোদের টানাপোড়েন নিয়ে অভিবাসী মানুষের সাময়িক যন্ত্রণার গল্প তুলে ধরেন।

অন্তর্যাত্রার পর তারেক মাসুদ তৈরি করেন তার পরবর্তী সিনেমা ‘রানওয়ে’। জাতীয় জীবনের সাধারণ এক দরিদ্র পরিবারের ঘটনাই যে সিনেমা। বিমানবন্দরের রানওয়ের পাশের এলাকায় বসবাস করা রুহুলের পরিবারের সাধারন জীবন যাপনের টানাপোড়েন। চাকরির উদ্দেশ্যে রুহুলের মধ্যপ্রাচ্য গিয়ে নিরুদ্দেশ হওয়া, আদর্শবাদী তরুনের এক হতাশার গল্প। চাকরি খোঁজা, ব্যার্থ হওয়া, তারপর দারিদ্রের এমন কষাঘাতে জীবনের অর্থ খুঁজে পায়না রুহুল। এমন সময় রুহুলকে উগ্র ধর্মীয় রাজনীতিতে উদ্বুদ্ধ করে আরিফ। আরিফের দেখানো পথে হাটতে গিয়ে জীবনের গভীরতম অভিজ্ঞতা উপলব্ধি করে রুহুল। এমন এক অসাধারন গল্প নিয়ে তৈরি রানওয়ে।

একের পর এক জীবনের গল্প সিনেমায় তুলে আনতে শুরু করেছেন তারেক মাসুদ। তিনি অন্যান্য সাধারণ চলচ্চিত্রকারের মত একের পর এক সিনেমা চিত্রায়নে ব্যস্ত হন নি। প্রতিটা সিনেমা তৈরির জন্য নিয়েছেন অনেক সময়। চিত্রনাট্য তৈরি থেকে সব কিছু করেছেন সময় নিয়ে । খুব বেশি সিনেমা তৈরি করেন নি তিনি। কিন্তু যে কয়েকটি কাজ তিনি রেখে গেছেন, তার জন্য তারেক মাসুদ গল্প প্রেমী, সিনেমা প্রেমীদের কাছে বেঁচে থাকবেন হাজার বছর৷ তার আরো কয়েকটি কাজের মধ্যে অন্যতম মুক্তির কথা (১৯৯৮), নারীর কথা (১৯৯৯), কনসাটের পথে (২০০৮)৷ এছাড়াও তার আরেকটি উল্লেখযোগ্য কাজ মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ‘নরসুন্দর’ (২০০৯) নামে এক স্বল্পদৈর্ঘ্য কাহিনী চিত্র৷

ব্যক্তিগত জীবনে তারেক মাসুদ অত্যন্ত সাধারণ জীবন যাপন করেছেন। দীর্ঘ তিন দশক শুধুমাত্র সিনেমার জন্য ছুটোছুটি করেছেন। গতানুগতিক বাণিজ্যিক ধারার সিনেমা তৈরি করতে আগ্রহী ছিলেন না বলে সিনেমা তৈরিতে যে বাজেটের প্রয়োজন হয়, তা সংগ্রহ করতে তাকে এক অসম লড়াই লড়তে হয়েছে।

তারেক মাসুদ ও তার স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ
তারেক মাসুদ ও তার স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ

তার কয়েকটি সিনেমার প্রযোজক ছিলেন তার স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ৷ সিনেমার কাজ করতে গিয়েই যে ক্যাথরিনের সাথে পরিচয়, সেই ক্যাথরিন কে নিয়েই তারেক মাসুদ ও ক্যাথরিন মাসুদ তাদের বাকি জীবন সিনেমার জন্য উৎসর্গ করে দিয়েছেন। এক পুত্র সন্তান নিষাদকে নিয়েই ছিলো তাদের সংসার।

পুত্র সন্তান নিষাদকে নিয়ে
পুত্র সন্তান নিষাদকে নিয়ে

তারেক মাসুদের জীবন হয়ে উঠেছিলো শুধুমাত্র সিনেমার। তার থাকার বাসস্থান নিয়মিত ব্যবহার হতো সিনেমা তৈরির কাজে। সিনেমা তৈরির ভাবনা ছাড়া তার আর কোন ভাবনা ছিলোনা। সিনেমাই হয়ে উঠেছিলো তার জীবন, মৃত্যু। তাই সিনেমা তৈরি করতে গিয়েই অকালে মৃত্যুবরণ করলেন সিনেমার এই ফেরিওয়ালা।

রানওয়ে তৈরির পর কাগজের ফুল নামে সিনেমা তৈরির জন্য চিত্রনাট্য তৈরি করেছেন তারেক ও ক্যাথরিন মাসুদ। সিনেমার শ্যুটিং স্পট খুঁজতে গিয়েছিলেন মানিকগঞ্জের ইছামতি নদীর তীরে। সেখান থেকে ফিরছিলেন। তার বন্ধু মিশুক মুনীর ও স্ত্রী ক্যাথরিনের সাথে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ঘিওর নামক এলাকা কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিলো তাদের জন্য। ঘিওরে মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় নিভে যায় সিনেমার ফেরিওয়ালার এই জীবন। যে জীবন তৈরি করতে পারতো আরো অনেক আন্তর্জাতিক মানের সিনেমা।

যে জীবন হয়ে উঠেছিলো আন্তর্জাতিক মানের চলচ্চিত্রকারের, সে জীবনের প্রদীপ অকালে নিভে গেলো। দুমড়ে মুছড়ে যাওয়া সেই মাইক্রোবাসটি এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির পাশে শামসুন্নাহার হলের সামনে স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে সংগ্রহ করে রাখা হয়েছে।

Source Feature Image
Leave A Reply

Your email address will not be published.

sativa was turned on.mrleaked.net www.omgbeeg.com

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More