মধ্যপ্রাচ্যের স্বৈরশাসকদের বিরুদ্ধে সাধারন জনতার আন্দোলনের খেজুরে নাম ছিল আরব বসন্ত। যে বসন্তের কবজায় পড়ে সমৃদ্ধ রাষ্ট্র লিবিয়া হয়েছিল দেউলিয়া, পশ্চিমাদের সাথে আঁতাতবদ্ধ হয়ে এখন অনেক আরব দেশ পরিণত হয়েছে স্রেফ হরিদাস। এই আরব বসন্তের ফলাফল কি দাঁড়িয়েছিল তা নিয়ে বিস্তর আলোচনার সুযোগ আছে, আছে বড় বিবাদেরও। আরব জনগণের স্বাধীনচেতা মনোভাবকে পুঁজি করে কিভাবে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীরা হাত করে রেখেছে একেকটি দেশকে, কিভাবে যুদ্ধ কায়েম করে রেখেছে তা পত্রিকার পাতায়ই বলুন আর ছোট্ট পর্দার যাদুর বাক্সতেই বলুন আমাদের চোখ এড়িয়ে যাচ্ছেনা। কিন্তু সে অন্য আলোচনা। আরব গণজাগরণের এই উত্থান যে অসাধারন ঘটনাটির মাধ্যমে হয়েছিল তা ঘটেছিল আরব রাষ্ট্র তিউনিসিয়ায়, একজন তরকারি বিক্রেতার আত্মহননের মাধ্যমে। আজ আপনাদের সেই গল্পটিই শুনাবো।

সিদি বৌযিদ শহরের মোহাম্মদ বুয়াজিজি নামের এই তরকারি ফেরিওয়ালার জীবন এভাবে শুরু হয়নি। আট দশটা মানুষের মত তিনিও চুকিয়েছিলেন পাঠশালার পাঠ ।স্কুল কলেজের পাঠ চুকিয়ে ভর্তি হোন স্নাতকে। স্নাতক পাস বুয়াজিজি একটা চাকরির জন্য হন্য হয়ে দৌড়িয়েছিলেন সিদি বৌযিদের অলিগলিতে। কোথাও কোন ভর না পেয়ে বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে নিতান্ত নিরুপায় হয়ে বেছে নেন তরকারি ফেরির কাজ। ভ্যানে করে নিত্যনতুন সবুজ শাকসবজি বিক্রি করেই দিন পার হচ্ছিল তার। কিন্তু তার এ রুটিরুজিতে বাধ সাজে শহরের পুলিশ। রাস্তায় ফেরি করার অপরাধ হিসেবে ঘুষ প্রদান করতে হতো তাদের।

আর যখন পুলিশ ঘুষ আদায় করতে না পারতো তখন ফাইন করেই ক্ষান্ত হত। এমন অবস্থায় হতদরিদ্র বুয়াজিজী দুই বছরে দুইবার ঘুষ প্রদান করার সাথে সাথে ফাইনও প্রদান করেন। ২০১০ সালের ১৭ ই ডিসেম্বর বুয়াজীজিকে আবার ধরে শহরের এক মহিলা পুলিশ। ফাইন দিতে বললে বুয়াজিজি অপারগতা প্রকাশ করে। এর প্রতুত্তরে উলটো আবার ফাইন করে বসে ঐ মহিলা পুলিশ এবং তার গালে এক চড় কষিয়ে দেয়৷ ঐ পুলিশের সাথে থাকা অন্য দুই সহকারী মহিলা পুলিশও তার উপর চড়াও হয় এবং বুয়াজিজির মালামাল জব্দ করে বসে।

বুয়াজিজির লড়াই অত:পর!
মহিলা পুলিশদের কাছ থেকে এমন ব্যবহার বুয়াজিজীর কাছে মানহানিকর ঠেকে। তাই এর প্রতিবিধানের জন্য প্রথমে পৌরসভা ও সিদি বৌযিদের গভর্ণর বরাবর সে আবেদন করে। কিন্তু সেখানে সে শুধু প্রত্যাখ্যাতই হয়নি উপরি পাওনা হিসেবে কিছু মারও খেয়ে আসে। চরম অপমানিত হয়ে হতাশ বুয়াজিজী এক নজিরবিহীন কাণ্ড করে বসে। দুখগ্রাসে জর্জরিত এই তরকারি ফেরিওয়ালা তার জীবনের শেষ অস্ত্র ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয়। গভর্ণর অফিসের সামনে গায়ের কাপড়ে দাহ্য রঙ মেখে নিজের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়, প্রতিবাদের কড়া জবাব হিসেবে বেছে নেয় স্বেচ্ছামৃত্যুর পথ। তাকে যখন উদ্ধার করা হয় তখন তার শরীরের ৯০ শতাংশ পুড়ে গেছে। ২০১১ সালের ৪ জানুয়ারি হাসপাতালের বেডে কাতরাতে কাতরাতে মারা যায় তরকারি বিক্রেতা বুয়াজিজি।

বুয়াজিজির মৃত্যুতে ক্ষোভে ফেটে পড়ে তিউনিসিয়ার সাধারণ জনগণ। উন্মত্ত ক্ষিপ্ত নগরবাসী গভর্ণর অফিসের সামনে মুদ্রা ছুঁড়ে ‘এই নাও ঘুষ’ বলে আন্দোলনের সূচনা ঘটায়। ধীরে ধীরে এ বিক্ষোভ পুরো দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। তিউনিসিয়ার শিক্ষিত যুবকরা অনলাইনে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট যাইন আল আবেদীন বেন আলী সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রচারণা চালায়। আল জাজিরা টেলিভিশন যথাযথ উৎসাহ দেখিয়ে এ আন্দোলন ত্বরান্বিত করতে ভূমিকা পালন করে।

ছোট বড় মিছিলের জোয়ার ছড়িয়ে পড়ে বৌযিদ থেকে রাজধানী তিউনিসে। পুলিশের সাথে ধারাবাহিক সংঘর্ষে যখন তিউনিসিয়ার সরকার দিশেহারা এমতাবস্থায় প্রেসিডেন্ট বেন আলী সেনাবাহিনীর কাছে ধর্ণা দেন। কিন্তু সেনাবাহিনী নিজ জনগণের উপর হামলা চালাতে অস্বীকৃতি জানালে প্রেসিডেন্ট বেন আলী ২৪ বছর পর ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়িয়ে সৌদি আরবে নির্বাসন নেন। সমসাময়িক সময়ে অপরাপর আরব দেশেও তাৎক্ষণিক সরকারবিরোধী গণবিক্ষোভ শুরু হয় যার নাম দেয়া হয় আরব বসন্ত বা Arabian spring! বুয়াজিজীর এ আত্মত্যাগের সুফল মধ্যপ্রাচ্য ঠিক কতটা ভোগ করছে সে প্রশ্নটা না হয় তোলাই থাক।
buy levofloxacin pill buy levaquin 500mg sale