ইংল্যান্ড, বেলজিয়াম, পানামা, তিউনেশিয়া। কয়েকবছর আগেও এই গ্রুপে পড়লে হয়তো ইংলিশ রা আগেভাগেই পরের রাউন্ডে যাওয়ার সেলিব্রেশন টা সেড়ে রাখতো। কিন্তু এই গ্রুপটিই হারাম করে দিয়েছে ইংলিশ প্লেয়ারদের ঘুম। কারণ একটাই, বেলজিয়াম।
যেই বেলজিয়ামকে আগে আট দশটি সাদামাটা দলের মধ্যেই গণনা করা হতো, কালের পরিক্রমায় তারাই এখন ইউরোপের অন্যতম পরাশক্তি। ফুটবলের এই অনুর্বর জমিতেই জন্ম নিয়েছে বর্তমান সময়ের সব নামিদামি ফুটবলার রা। ক্লাব ফুটবলের নামিদামি দল গুলোর মূল তারকা তো এই বেলজিয়ানরাই। তাই ২০১৮ বিশ্বকাপে অনেকের বাজিই এই ডার্ক হর্স দের উপর। আর হবেই না বা কেনো? দলের প্রতিটি পজিশনে আছেন ওয়ার্ল্ডক্লাস প্লেয়ার। বর্তমান ট্রান্সফার মার্কেটে যাদের সম্মিলিত মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ইউরোর উপরে, যা কিনা ব্রাজিলের পর কোন জাতীয় দলের জন্য সর্বোচ্চ।
কোচ রবার্তো মার্টিনেজ কে পড়তে হবে মধুর সমস্যায়। কাকে রেখে কাকে খেলাবেন। নিয়মিত পছন্দ রোমেলু লুকাকু আছেন পুরো ফর্মে। চলতি মৌসুমে ম্যানচেষ্টার ইউনাইটেডের হয়ে করেছেন ১৫ গোল, সাথে ৪ এসিস্ট। আলো ছড়িয়েছেন বিশ্বকাপ বাছাইপর্বেও। বাছাইপর্বে বেলজিয়ামের সর্বোচ্চ গোলদাতা (১১ গোল)। পিছিয়ে নেই আরেক ফরওয়ার্ড ড্রাইস মার্টেন্সও। নাপোলির হয়ে ইতিমধ্যে করে ফেলেছেন ১৪ গোল, সাথে আছে ৯ এসিস্ট। দলকে দেয়ার মতো এখনো অনেক কিছুই আছে তার, সেটার প্রমাণ ও রেখেছেন বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে ৫ গোল এবং ৬ এসিস্টের মাধ্যমে। আক্রমণভাগে এই দুইজনের ঠিক নিচেই খেলবেন দলের সবচেয়ে বড় দুই তারকা। বুঝতেই পারছেন কাদের কথা বলা হচ্ছে। একজন হচ্ছেন ইডেন হ্যাজার্ড, যাকে তুলনা দেয়া হয় মেসি রোনালদোর সাথে। ফুটবল পণ্ডিত দের মতে রোনালদো মেসি যুগের পর রাজত্য করবেন এই হ্যাজার্ড নেইমার রাই। ইতিমধ্যেই ঝুলিতে পাচার করেছেন পি এফ এ এওয়ার্ডের মতো আরো অনেক ব্যক্তিগত পুরষ্কার। গত সিজনে চেলসির হয়ে জিতেছেন লিগ শিরোপা যাতে তার অবদান ছিলো অনবদ্য। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বেও রেখেছেন সেই বিশেষত্বের ছাপ। এই ক্ষুদে জাদুকরের পা থেকে এসেছে ৬ গোল এবং ২ এসিস্ট। স্বাভাবিকভাবেই প্রতিপক্ষের নজর থাকবে এই সাইলেন্ট কিলারের উপর। দলের আক্রমণভাগের তুরুপের টেক্কা কেভিন ডি ব্রুইন। যার সম্পর্কে খোদ পেপ গার্দিওলা নিজে বলেছেন, “আমার দেখা অন্যতম সেরা খেলোয়াড় ডি ব্রুইন”। কথাটি যে এমনি এমনি বলেন নি, তা পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে। চলতি মৌসুমে ম্যানচেষ্টার সিটির হয়ে করেছেন ৭ গোল এবং সতীর্থ্যদের দিয়ে করিয়েছেন আরো ১২ টি গোল। তাই বেলজিয়াম কে বধ করতে চাইলে এই মিডফিল্ডার কে আটকানোর কোন বিকল্প নেই। উইটসেল, ক্যারাস্কো, ডেম্বেলেরাও নিজ ক্লাবে ছড়িয়ে যাচ্ছেন নিজেদের দ্যুতি। সবাই আছেন দুর্দান্ত ফর্মে। সাফল্যের জন্য তাদের জ্বলে উঠার কোন বিকল্প নেই। সবাই নিজেদের সেরা টা দিলে ঐ রাত টি হয়তো প্রতিপক্ষের জন্য দুঃস্বপ্ন হয়ে থাকবে সারাজীবনের জন্য।
রক্ষণভাগের কথা শুরু করার আগে স্যার এলেক্স ফার্গুসনের একটি উক্তি দিয়ে শুরু করতে চাই, “একটি ভালো আক্রমণভাগ তোমাকে ম্যাচ জিতাবে, কিন্তু ভালো রক্ষণ তোমাকে জিতাবে ট্রফি”। ভালো ডিফেন্সের গুরুত্ব বুঝার জন্য এই উক্তিটিই যথেষ্ট। খাতাকলমের হিসেবে তাই বেলজিয়াম কে শিরোপার দাবিদার বলতেই হয়। কেননা রক্ষণের দায়িত্বে থাকবেন টটেনহাম হটস্পারের সেন্টারব্যাক কাপল ভার্টোনগেন এবং এল্ডারউইরেল্ড। যারা ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ওয়ান অফ দ্যা ফাইনেষ্ট সেন্টার ব্যাক কাপল। চলতি মৌসুমে ১০ টি ক্লিন শিটই তার প্রমাণ। সাথে আছেন ম্যানচেষ্টার সিটির আরেক সেন্টার ব্যাক ভিনসেন্ট কম্পানী। দলের ছুপা রুস্তম লুকিয়ে আছে রাইট ব্যাক পজিশনে। থমাস ম্যুনিয়ের। যারা নিয়মিত লিগ ওয়ানের খবর রাখেন, তাদের নামটির সাথে পরিচিত থাকার কথা। রক্ষণ সামলানোর পাশাপাশি আক্রমণের গুরুদায়িত্ব ও নিয়ে নিয়েছেন নিজের কাধে। এ যেন বাড়ির “বড় ছেলে”। নয়তো হ্যাজার্ড, ডি ব্রুইনদের পিছনে ফেলে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে দলের সর্বোচ্চ এসিস্ট ম্যাকার (৭ টি) হওয়া চাট্টিখানি কথা না। ডান প্রান্ত দিয়ে ক্ষিপ্র গতির মাধ্যমে প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডার কে পরাস্ত করে একের পর এক ইঞ্চ পার্ফেক্ট ক্রস করা এই রাইট ব্যাকের বৈশিষ্ট্য। শুধু গোল করিয়েই ক্ষান্ত নন এই ২৬ বছর বয়সী ডিফেন্ডার। বাছাইপর্বে এক হ্যাট্রিক সহ করেছেন সর্বমোট ৫ গোল। তাই প্রতিপক্ষ রক্ষণের জন্য আরেক দুঃচিন্তা পিএসজির এই রাইট ব্যাক। লেফট ব্যাক পজিশনে আছেন জর্ডান লুকাকু। ইডেন হ্যাজার্ডের সাথে তার বোঝাপোড়া টা চোখে পড়ার মতো। হোল্ডিং মিডে থেকে ডিফেন্স কে সাপোর্ট দেয়ার জন্য ফেলাইনী, ন্যাইংগোলান রা তো আছেনই। বাছাইপর্বে ৬ টি ক্লিনশিট কোচকে স্বস্তিই এনে দেয়ার কথা। আর গোলবারের অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে আছেন চেলসীর গোলকিপার কর্তোয়া। প্রিমিয়ার লিগের সেরা গোলকিপারের কথা বললে ডেভিড ডে হায়ার সাথে তার নামটিও উঠে আসে। নিজের জাত চিনিয়েছিলেন সেই এটলেটিকো মাদ্রিদে থাকতেই। চেলসীতেও দিয়ে যাচ্ছেন সেই প্রমাণ। যদিও সামনে ইস্পাত কঠিন ডিফেন্স থাকার কারণে বাছাইপর্বে খুব একটা কাঠখড় পোহাতে হয়নি তাকে। কিন্তু সামনে ভয়াবহ চ্যালেঞ্জের কথা ভেবেই নিজেকে আরো শানিয়ে নিচ্ছেন এই কিপার।
টিমের শক্তি, রসায়ন এবং গভীরতার বিচারে নিঃসন্দেহে বেলজিয়াম এবার শিরোপার অন্যতম দাবিদার। কিন্তু নিজেদের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি বেলজিয়ান খেলোয়াড় রা। ২০১৪ বিশ্বকাপ এবং ২০১৬ ইউরো তে যথাক্রমে আর্জেন্টিনা ও ওয়েলসের কাছে হেরে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় তাই অবাক করেছে সবাইকে। ইতিহাস বলে, বড় কোন শিরোপা জিততে ভালো দলের সাথে প্রয়োজন অভিজ্ঞতার ও। সেই অভিজ্ঞিতার কাছেই মার খেয়ে যাচ্ছিলো বেলজিয়ান রা। এবার ঝুলিতে অভিজ্ঞতাও জমেছে অনেক। এই অভিজ্ঞতাকে কি কাজে লাগাতে পারবে হ্যাজার্ড, লুকাকু, ডি ব্রুইন রা? তারা কি পারবে নিজেদের নাম ইতিহাসের পাতায় অমর করে রাখতে? নাকি জন্ম দিবে আরেকটি হতাশার গল্পের?
zetia cost
saphris vs zyprexa
order rybelsus 14mg generic – order rybelsus 14 mg sale buy generic desmopressin
is zofran odt generic