বায়ার্ন মিউনিখ বনাম রিয়াল মাদ্রিদ: চ্যাম্পিয়ন্স লীগে দুই ফুটবল জায়ান্টের দ্বৈরথ

1

আগামী বুধবার এক চরম উত্তেজনাপূর্ণ  চ্যাম্পিয়ন্স লীগ সেমিফাইনাল ম্যাচে মুখোমুখি হতে চলেছে বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সেরা দুই ফুটবল ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখ এবং রিয়াল মাদ্রিদ। এই ম্যাচকে ঘিরে ইতিমধ্যেই নানা জল্পনা কল্পনা শুরু হয়ে গেছে। ফুটবল ভক্তদের অধিকাংশই অবশ্য স্প্যানিশ জায়ান্ট রিয়াল মাদ্রিদকেই ফেভারিট বলে বিবেচনা করছেন। গত দুই মৌসুম ধরে রিয়াল মাদ্রিদ চ্যাম্পিয়ন লীগে অনেকটা অপ্রতিরোধ্যই বলা চলে। পরপর দুই বারই তারা জিতে নিয়েছে চ্যাম্পিয়ন্স লীগ শিরোপা। ১৯৯১ সালে চ্যাম্পিয়ন্স লীগে নতুন ফরমেটের আবির্ভাব হওয়ার পর থেকে রিয়াল মাদ্রিদই একমাত্র ক্লাব যারা এই কৃতিত্ব দেখিয়েছে।

উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগ
উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগ সেমিফাইনাল Source: Premium Times Nigeria

রিয়াল মাদ্রিদের এই সাফল্যের পিছনে অনেকটাই হাত রয়েছে ফ্রেঞ্চ কোচ জিনেদিন জিদানের। কোচ হিসেবে যোগ দেওয়ার প্রথম মৌসুমেই তিনি রিয়ালকে অনন্য মাত্রায় নিয়ে গেছেন। অন্যদিকে ইয়ুপ হায়িঙ্কিসের অধীনেও এই মৌসুমে বায়ার্ন অনেকটাই শক্তিশালী।

কোচ অথবা খেলোয়াড় হিসেবে বলুন, জিনেদিন জিদান এবং ইয়ুপ হায়িঙ্কিস কেউ কারও চেয়ে কম নন। খেলোয়াড়ি জীবনে ইয়ুপ সর্বদাই জার্মান কিংবদন্তী গার্ড ম্যুলারের ছত্রছায়ায় ছিলেন। বরুশিয়া মুনশেনগ্লাডবাখের এই তারকা জাতীয় দলের হয়ে তেমন সুনাম না পেলেও বুন্দেসলিগায় তার রয়েছে নামকরা সব রেকর্ড। ১৯৭৯ সাল থেকে কোচিং ক্যারিয়ারের সূত্রপাত করা এই জার্মান বায়ার্ন মিউনিখের কোচ হয়েছেন চতুর্থ দফায়। কোচিং ক্যারিয়ারের ইতি টানার পরও বায়ার্ন বোর্ডের অনুরোধে গত বছর তিনি আবারও বায়ার্নের দায়িত্ব নেন। নিজের ৩৯ বছরের কোচিং ক্যারিয়ারে বর্তমানের বায়ার্ন দলের হয়েই তিনি সর্বোচ্চ শতকরা ৮৬ ভাগ জয়ের দেখা পেয়েছেন। রিয়াল মাদ্রিদের কোচ হিসেবেও ১৯৯৮ সালে চ্যাম্পিয়ন্স লীগের শিরোপা জিতেছিলেন এই কিংবদন্তী।

জিনেদিন জিদান
জিনেদিন জিদান
Source: Eagle News

অন্যদিকে খেলোয়াড় হিসেবে কেইবা না চিনে জিনেদিন জিদানকে। ফ্রান্স জাতীয় দলের হয়ে তিনি তার পুরো ক্যারিয়ার জুড়েই ছিলেন অনবদ্য। ১৯৯৮ সালে দলকে নিজ দেশে জিতিয়েছেন বিশ্বকাপ। ২০০৬ সালে মাত্তেরাজ্জিকে দুঃসাহসিকভাবে বুকে হেড দেওয়ার সেই মুহূর্ত সবারই মনে থাকার কথা! কোচ হিসেবেও জিনেদিন জিদান শুরু থেকেই ছিলেন দুর্দান্ত। ২০১৪ সালে রিয়াল মাদ্রিদের রিজার্ভ দলের কোচের দায়িত্ব নেন ফ্রেঞ্চ এই কিংবদন্তী। এরপর ২০১৬ সাল থেকে আছেন রিয়াল মাদ্রিদের কোচিং দায়িত্বে। রিয়াল মাদ্রিদকে কোচিংয়ের শুরু থেকেই নিয়ে গেছেন অনন্য মাত্রায়। তার অধীনেই রিয়াল মাদ্রিদ পরপর ৪০ ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ড গড়ে যেটি ছিল লা লিগায় সর্বকালের রেকর্ড। ২০১৭ সালে জিদানই রিয়াল মাদ্রিদকে ৫ বছরে প্রথম লা লিগা শিরোপার মুখ দেখান।

প্রবীণ এবং নবীন এই দুই বিশ্বনন্দিত কোচের কাছেই রয়েছে ৩য় বারের মত চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জয়ের হাতছানি। দুজনই আক্রমণাত্মক ফুটবলে বিশ্বাসী। তাই আক্রমণাত্মক ফুটবলকে কেন্দ্র করেই তারা নিজেদের দল সাজাবেন।

Source: AS English – Diario AS

দলীয় সংবাদ

 

বায়ার্ন মিউনিখ

২৭তম বুন্দেসলিগা শিরোপা জয় করে ইতিমধ্যেই ফুরফুরে মেজাজে রয়েছে বায়ার্ন মিউনিখ। এজন্যই তো হ্যানোভারের বিরুদ্ধে অ্যাওয়ে ম্যাচেও ইয়ুপ হায়িঙ্কিস দলের ৬ জন তারকাকে বিশ্রাম দিয়েছেন। তবুও সেই ম্যাচে ০-৩ গোলে জয় পায় ব্যাভারিয়ানরা। হ্যানোভারের বিরুদ্ধে শুরু থেকে না খেললেও এই ম্যাচে দলে ফিরবেন রবার্ট লেভানদস্কি, ফ্রাঙ্ক রিবেরি, থমাস ম্যুলার, মাতস্ হুমেলস্, জশুয়া কিমিখ, হাভি মার্টিনেজ ও ডেভিড আলাবার মত তারকারা।

বায়ার্ন মিউনিখ
বায়ার্ন মিউনিখ
Source: Steemit

বায়ার্ন মিউনিখের দুই স্প্যানিশ মিডফিল্ডার থিয়াগো আলকান্তারা ও হাভি মার্টিনেজ উভয়ই চ্যাম্পিয়ন্স লীগে ভাল ফর্মে আছেন। তাছাড়া ইয়ুপ হায়িঙ্কিসের অধীনে হাভি মার্টিনেজ প্রায় সর্বদাই দুর্দান্ত পারফর্ম করেছেন। ২০১৩ সালে ইয়ুপের অধীনেই মার্টিনেজ দারুণ নৈপুণ্য দেখিয়ে বায়ার্নকে চ্যাম্পিয়ন্স লীগ শিরোপা এনে দিয়েছিল।

তবে দুল দলের ভক্তদের কাছে আকর্ষণীয় খেলোয়াড় হয়ে থাকবেন কলম্বিয়ান তারকা হামেস রদ্রিগুয়েজ। গত বছরের জুলাইতে রিয়াল মাদ্রিদ থেকে বায়ার্ন মিউনিখে লোনে খেলতে আসেন এই ২৬ বছর বয়সী কলম্বিয়ান তারকা। তারপর থেকেই বায়ার্নে একাধারে মিডফিল্ড কাণ্ডারি হয়ে আছেন তিনি। বায়ার্নের বিভিন্ন সেট পিচ যথা ফ্রি কিক, কর্নার এসব প্রায় সময়ে তিনিই নিয়ে থাকেন।

রিয়াল মাদ্রিদ

অন্য সব মৌসুমের মত এই মৌসুমেও রিয়ালের হয়ে দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছেন পর্তুগীজ উইঙ্গার ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। চ্যাম্পিয়ন্স লীগে এই মৌসুমে রোনালদো ১০ ম্যাচে করেছেন ১৫ গোল। তার উপর ভর করেই প্রায় সর্বদা রিয়াল মাদ্রিদের তরী বয়ে চলে। তাই এই ম্যাচে ফুটবল বিশ্বের চোখ থাকবে এই প্রতিভাবান পর্তুগীজ তারকার দিকেই। অন্যদিকে ইয়ুভেন্টাসের বিপক্ষে নিষেধাজ্ঞার দরুণ দলে না থাকলেও এই ম্যাচে মূল দলে দেখা যেতে পারে স্প্যানিশ অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার স্যার্জিও রামোসকে। বায়ার্নের বিপক্ষে রামোসের রক্ষণাত্মক ও আক্রমণাত্মক দুই রেকর্ডই দুর্দান্ত। ২০১৪ সালে মিউনিখের এই মাঠেই রামোস করেন জোড়া গোল।

এই সপ্তাহে লীগে লস ব্লাঙ্কোসদের লা লিগায় কোন ম্যাচ না থাকায় খেলোয়াড়েরা প্রায় প্রত্যেকেই ক্লান্তি অথবা চাপ অনুভব করবেন না বায়ার্নের বিরুদ্ধে ম্যাচে। অন্যদিকে স্ট্রাইকার করিম বেঞ্জেমার ফর্ম নিয়ে কিছুটা শঙ্কিত হতেই পারেন কোচ জিনেদিন জিদান। গত ১০ প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে বেঞ্জেমা প্রতিপক্ষের জালে বল জড়িয়েছে মাত্র একবার। রিয়াল মাদ্রিদের মিডফিল্ডের নেতৃত্ব দিবেন ক্রোয়েশিয়ান তারকা লুকা মদ্রিচ এবং জার্মান বিশ্বকাপজয়ী টনি ক্রুস। দুরপাল্লার ফ্রি কিক অথবা কর্নারগুলো সাধারণত ক্রুসই নিয়ে থাকেন। এছাড়া পেনাল্টি বক্সের আশেপাশের ফ্রি গুলোতে দেখা যেতে পারে রোনালদোকে। দলের হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লীগে দুর্দান্ত ফর্মে আছেন স্প্যানিশ ডিফেন্ডার কারবাহাল। মূলত কারবাহাল ও মার্সেলোর দুই প্রান্ত থেকে আক্রমণই বায়ার্ন রক্ষনভাগকে অতিষ্ঠ করে রাখতে পারে।

রিয়াল মাদ্রিদ
রিয়াল মাদ্রিদ
Source: The Inquisitr

রোনালদোর এই ম্যাচে গোল করার সম্ভাবনা সবচেয়ে প্রবল। শেষবার আলিয়াঞ্জ আরিনায় খেলতে এসে এই বিশ্বসেরা ফরওয়ার্ড দুইটি গোল পেয়েছিলেন। ১-০ গোলে এগিয়ে থেকেও ৪৭ এবং ৭৭ মিনিটের করা গোলে হেরে যায় বায়ার্ন মিউনিখ। ফিরতি লেগেও ৯০ মিনিট পর্যন্ত ১-২ গোলের ফলাফল হওয়ায় খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। ৮৪ মিনিটে ভিদালের লাল কার্ডটিই বায়ার্নের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। অতিরিক্ত সময়ে মাত্র ৮ মিনিটের ব্যবধানে ৩ টি গোল খাওয়ার পর ম্যাচ থেকে ছিটকে পরে বায়ার্ন।

তবে কার্লো আঞ্চেলত্তির সে বায়ার্নের থেকে অনেকটাই আলাদা এবারের ইয়ুপের বায়ার্ন। ইয়ুপের অধীনে বায়ার্ন খেলোয়াড়েরা প্রাণপণে নৈপুণ্য দেখিয়ে থাকে। গত বছরের অক্টোবরে বায়ার্নে যোগদান করেই দলের চেহারা বদলে দিয়েছিলেন। তাই রিয়ালের বিরুদ্ধে এই ম্যাচে ২ বা ততোধিক গোল করলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। তবে হ্যাটট্রিক শিরোপা অর্জনে নিজেদের কতটা এগিয়ে রাখতে পারে এই ম্যাচে সেটিই প্রমাণ করতে হবে চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ ফুটবল ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদকে।

ইনজুরি

বায়ার্ন মিউনিখের জন্য এটি অনেক বড় ধাক্কা হলেও সত্যি যে কিংস্লে কোমান, আরতুরো ভিদাল এবং মানুয়েল নইয়ারদের কেউই দলের হয়ে প্রথম লেগে মাঠে নামতে পারবেন না।

অন্যদিকে রিয়াল শিবিরে ইনজুরি নেই বললেই চলে। সামান্য ইনজুরিতে পড়েছেন ডিফেন্ডার নাচো।

সম্ভাব্য একাদশ

বায়ার্ন মিউনিখঃ উলরাইখ; আলাবা, হুমেলস্, বোয়াটেং, কিমিখ; থিয়াগো আলকান্তারা, হাভি মার্টিনেজ, হামেস রদ্রিগুয়েজ; রিবেরি, লেভানদস্কি, ম্যুলার ।

রিয়াল মাদ্রিদঃ নাভাস; কারবাহাল, ভারান, রামোস, মারসেলো; মদ্রিচ, ক্যাসেমিরো, ক্রুস; ইস্কো; বেঞ্জেমা, রোনালদো ।

চ্যাম্পিয়ন্স লীগ সেমিফাইনাল
Source: AS English – Diario AS

পরিসংখ্যান

  • ১৯৭৫ সাল থেকে আজ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন্স লীগে বায়ার্ন মিউনিখ ও রিয়াল মাদ্রিদের সাক্ষাত হয়েছে মোট ২৪ বার। তার মধ্যে দুই দলই প্রত্যেকে ১১ বার করে জয় পেয়েছে। বাকি ২ ম্যাচের ফলাফল ছিল অমীমাংসিত ড্র।
  • শেষবার আলিয়াঞ্জ আরিনায় চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ম্যাচ খেলতে এসে ১-২ গোলের জয় পেয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো করেছিলেন জোড়া গোল।
  • রিয়ালের সঙ্গে শেষ দুই দেখায়ই একবার করে লাল কার্ডের মাশুল গুনতে হয়েছে বায়ার্ন মিউনিখকে।
  • দুই দলের শেষ ৫ বারের দেখায় প্রতিবারই জয় পেয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ।
  • চ্যাম্পিয়ন্স লীগে শেষ ১২ ম্যাচে রিয়াল মাদ্রিদ মাত্র ১০ টি গোল হজম করেছে।
  • গত সাত ম্যাচে চ্যাম্পিয়ন্স লীগে রিয়াল গড়ে ২.৫ টিরও বেশি গোল পেয়েছে।
  • চ্যাম্পিয়ন্স লীগে গত ৮ ম্যাচ ধরে অপরাজিত ব্যাভারিয়ান জায়ান্টরা।
  • প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ বিবেচনায় ঘরের মাঠ আলিয়াঞ্জ আরিনাতে এই মৌসুমে একবারও হারেনি বায়ার্ন মিউনিখ।
  • আলিয়াঞ্জ আরিনাতে শেষ ৬ টি প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচের ৫ টিতেই কোন গোল হজম করেনি বায়ার্ন। এই মাঠে তারা শেষ ৮ ম্যাচের ৫ টিতেই ৫ বা ততোধিক গোল করেছে।
  • অন্যদিকে শেষ ৫ প্রতিযোগিতাপূর্ণ ম্যাচের ৪ টিতেই গোল খেয়েছে লস ব্লাংকোসরা।
Source Featured Image
Leave A Reply

Your email address will not be published.

1 Comment
  1. Courelp says

    how to get viagra prescription Side effects were similar to those reported during standard CC treatment

sativa was turned on.mrleaked.net www.omgbeeg.com

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More