জ্ঞান বিজ্ঞানের উৎকর্ষতার সভ্যতার চরম শিখরে বসবাস করছি আমরা। আত্মতুষ্টির জন্য সব ঘটনার একটা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা ও যুক্তি দাঁড় করাই আমরা। কিন্তু বিশ্বের ইতিহাসে এমন কিছু কিছু ঘটনার স্বাক্ষর পাওয়া যায় যার কোন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আজ পর্যন্ত দাঁড় করানো সম্ভব হয়নি। গত শতাব্দীতে ঘটে যাওয়া তেমনই একটি ঘটনার কথা লিখছি আজ যা আজও অমীমাংসিত রহস্যই রয়ে গেছে।
কানাডার নুনাভুতের কিভালিক অঞ্চলের একটি লেকের নাম আনজিকুনি লেক। মিঠা পানির মাছের জন্য লেকটির বেশ সুনাম রয়েছে। পৃথিবীর আদিম পেশা গুলোর একটি হলো মৎস্য স্বীকার, তাই এমন লেকের পাশে জেলেদের গ্রাম গড়ে উঠবে এমটাই স্বাভাবিক আর হয়েছিল তেমনটাই।
মাছ ধরার জন্য এস্কিমোদের ইনুইট গোষ্ঠীর একদল লোক এসে প্রথমে আনজিকুনি লেকের পাশে বসবাস শুরু করে তারপর আস্তে আস্তে প্রকৃতির নিয়মে সেখানে আরও লোকের আনাগোনা ও বংশবিস্তার হতে হতে প্রায় ২০০০/২৫০০ লোকের একটি গ্রাম গড়ে ওঠে। লেকের নামে গ্রামটির নাম রাখা হয় আনজিকুনি গ্রাম।
আনজিকুনি গ্রাম মাছের সাথে সাথে কাঠ চোলাই (এক প্রকার মদ) এর জন্যও বিখ্যাত ছিল। সেখানের বাসিন্দারা নিজেদের উষ্ণ রাখতে নিজস্ব পদ্ধতিতে কাঠ চোলাই তৈরি করত যা সহজেই অ্যালকোহল প্রেমীদের আকর্ষণ করত। কাঠ চোলাইয়ের সহজলভ্যতা আর সেখানের মানুষজনের সাদামাটা ও খোলা মনের ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে অনেক অ্যালকোহল প্রেমীই অবসরে যেতেন সেখানে।
কানাডার একজন শিকারী জো লেবল ছিলেন তেমন একজন চোলাই প্রেমী। মূলত কাঠ চোলাইয়ের লোভেই ১৯৩০ সালের নভেম্বরের প্রচণ্ড শীতের এক জ্যোৎস্না ঝলমলে রাতে পা বাড়ান চিরচেনা জন-কোলাহলপূর্ণ আনজিকুনি গ্রামের পথে। অনেকদিন পর নির্ভেজাল গ্রামের মানুষগুলোর সাথে বসে নির্ভেজাল চোলাই আর নির্ভেজাল আড্ডার লোভে প্রফুল্ল মনে বেশ জোরে জোরেই পা চালাচ্ছিলেন লেবল। কিন্তু আনজিকুনি গ্রামে পা ফেলতেই যেন এক অদ্ভুত অপার্থিব নীরবতা ঘিরে ফেলে জো কে।
প্রথমে তিনি ভাবেন হয়ত তার মনের ভুল এই তো সেই পরিচিত পথ-ঘাট, ঘরবাড়ি সবই ঠিক আছে। যদিও তাদের একদল লোক প্রায় সারারাতই জেগে থাকে তবুও বেশ রাত হয়েছে এজন্যই বোধহয় এমন নীরবতা, হয়ত সবাই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন তাছাড়া তাদের ঘুম হবেই না বা কেন এরা তো বেশ পরিশ্রমী মানুষ। এসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে লেবল এক ঘর দু ঘর করে এগোতে এগোতে গ্রামের আরও ভেতরে যেতে থাকেন মনে আশা কারও না কারও তো দেখা অবশ্যই পাওয়া যাবে। গ্রামের প্রায় মাঝখানেও এসে যেন নীরবতা পিছু ছাড়ছেনা জো’র, কোথাও কোন টু শব্দটি নেই শব্দ যা তা শুধু তার বুটের আর কানের পাশে শো শো করে ঠাণ্ডা বাতাসের এক শব্দ অপার্থিব ভাষায় যেন কিছু সংকেত দিয়ে যাচ্ছে।
এতো মানুষের বাসস্থান এই গ্রামে এতদিন ধরে তার আসা যাওয়া কই কখনো তো এমনটা ঘটেনি। তাছাড়া আতিথেয়তার জন্য এ গ্রামের মানুষজনের যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। তারা অপরিচিত অতিথিদের এবং রাতে ঐ-গ্রামের পাশ দিয়ে যাওয়া দূরের পথিকদের রাতে থাকবার, খাবার ব্যবস্থা ও করে থাকেন জনশ্রুতি আছে। এসব কারনে লেবলের কয়েকজন বেশ-ভালো পরিচিত লোক ও রয়েছে এখানে। যাইহোক অনেকক্ষণ কারও কোন দেখা না পেয়ে লেবল তার পরিচিতদের ঘরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলেন এবং সেখানে পৌঁছে তাদের নাম ধরে ডাকতে থাকলেন জোর গলায়।
কিন্তু কোথায় কে! তার আওয়াজ ই যেন বরফে প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে আসছে নিজের কানে। এবার গ্রামের মানুষদের এমন মশকরায় বিরক্ত হয়ে লেবল একটি ঘরের দরজায় কড়া নাড়বেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে দরজার পাশে দাঁড়াতেই খেয়াল করলেন দরজা একেবারে খোলা। সাহস করে ভিতরে ঢুকে দেখলেন একটি পরিবারের সঞ্চিত খাবার, কাপড় চোপড়, বাচ্চাদের খেলনা, দৈনন্দিন তৈজসপত্র, লেপ-কাঁথা সবই রয়েছে সে ঘরে শুধু মানুষ নেই। কি আশ্চর্য! আচ্ছা এ ঘরের সবাই বোধহয় অন্যকোথাও গিয়েছে এ ভেবে তিনি অন্য আরেক ঘরে ঢুকলেন সেখানে দেখা গেল পাতিল ভর্তি কিছু অর্ধ-সিদ্ধ চাল চুলার উনুনের উপর পড়ে আছে। পরের ঘরেও দেখলেন একই প্রায় অবস্থা এভাবে প্রায় প্রতিটি ঘরেই তিনি দেখলেন এ গ্রামের মানুষের ব্যবহার্য সব কিছুই পড়ে রয়েছে শুধু মানুষগুলো উধাও।
এবার তিনি বুঝলেন নিশ্চয় কিছু একটা গণ্ডগোল হয়েছে নইলে কোথাও সবাই মিলে যদি বেড়াতে ও যায় তবে ঘরবাড়ি, জিনিসপত্র এভাবে অগোছালো করে ফেলে চলে যাওয়ার কথা নয়। আর যদি তারা কোথাও যায়ই তবে তো অন্তত পায়ের ছাপ রেখে যাবে কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় নিজের বুটের ছাড়া আর একটি পায়ের ছাপও পর্যন্ত তিনি কোথাও দেখতে পেলেন না। তৎক্ষণাৎ তিনি পার্শ্ববর্তী টেলিগ্রাফ অফিসে গিয়ে পার্বত্য পুলিশ বাহিনীকে ফোন দিয়ে বিষয়টি অবহিত করেন। পুলিশ দ্রুত গ্রামটিতে পৌঁছে তন্ন তন্ন করে সারাগ্রাম তল্লাশি করেও কোন জনমানবের চিহ্ন খুঁজে পায়নি বরং তারা যা পেলেন তা রীতিমতো রক্ত হিম করার মতো ব্যাপার।
তারা লক্ষ করলেন গ্রামের কবরস্থানের প্রায় সবগুলো কবরই ফাঁকা কেউ যেন লাশ ও তুলে নিয়ে গিয়েছে। গ্রামের অদূরে তারা ৭ টি স্লেজ কুকুরের আর্তনাদ শুনে পাশে গিয়ে দেখতে পান তাদের ক্ষুধার্ত নিস্তেজ হয়ে আসা প্রায় নিথর দেহগুলো, হালকা বরফের আস্তরণের নিচে তারা মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে যেন। দেখে বোঝা যায় যে তারা তাদের মনিবদের রক্ষা করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে এই অবস্থা।
এরপর অনেক তদন্ত করেও পুলিশ এবং গোয়েন্দা সংস্থা গুলো আনজিকুনি গ্রামবাসীর হারিয়ে যাওয়ার রহস্যের কোনোরকম কূলকিনারা করতে পারেননি। ইনুইটদের পার্শ্ববর্তী গ্রামবাসীরা পরবর্তীতে জানিয়েছেন যে তারা নাকি একরাতে ঐ গ্রামে নীলাভ আলো দেখতে পেয়েছিলেন যা পরবর্তীতে মলিন হতে হতে আঁধারে হারিয়ে গিয়েছিল।
পরবর্তীতে এক তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয় যে সম্ভবত জো লেবল ঐ গ্রামে পৌঁছার বেশ কিছুদিন আগেই এই অতিপ্রাকৃত দুর্ঘটনাটি ঘটে এবং নিয়মিত তুষারপাতের ফলে তাদের পদচিহ্ন গুলো নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। কিন্তু এই কয়দিনের মধ্যে বাহির থেকে কেউ সেখানে পৌঁছেনি বা সেখান থেকে কেউ বাহিরে আসেনি বলে খবর টা জানাজানি হতে দেরি হয়।
জো লেবল এই ঘটনার বিবৃতিঃ
“আমি দ্রুত বুঝতে পারি এখানে নিশ্চয় অস্বাভাবিক কিছু ঘটেছে কারন প্রায় প্রতিটি ঘরে অর্ধ-রান্না করা খাবারের পাতিল দেখতে পাচ্ছিলাম, রান্নার আয়োজনের জিনিসপত্র দেখে বোঝা যাচ্ছিল তারা রাতের খাবার তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছিল এমন সময় কোন কিছু তাদের কাজে ব্যাঘাত ঘটায়। আরও আশ্চর্য ব্যাপার হলো আমি তাদের নিত্য ব্যবহৃত রাইফেল গুলো বিচ্ছিন্নভাবে এখানে সেখানে পড়ে থাকতে দেখেছি। তারা কোথাও গেলে অবশ্যই অন্তত রাইফেল গুলো এভাবে ফেলে রেখে যাবেনা কারন আমি জানি যে কোন এস্কিমো কখনো রাইফেল ছাড়া বের হয় না।”
পরবর্তীতে আলাদা আরেকটি তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয় যে, জো লেবলের দাবি অসত্য। তিনি হয়ত আগে কখনো ঐ এলাকাতে যাননি এবং ওখানে কখনোই কোন মানুষের বাস ছিলনা কারন এমনিতেই ঐ এলাকায় মানব বসতি একেবারেই কম। কিন্তু পুলিশ এবং অন্যান্য সংবাদ মাধ্যম ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলি সেখানে গিয়ে যে খালি ঘর, ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা তৈজসপত্র এবং যে রাইফেল গুলো পেয়েছিলেন সেগুলো তাহলে কাদের? কে ই বা এমন ফাঁকা এলাকায় কষ্ট করে ঘরবাড়ি তৈরি করে জিনিসপত্র রেখে হুট করে অপ্রস্তুত অবস্থায় সব ফেলে রেখে চলে গেল!
আজ পর্যন্ত আনজিকুনি গ্রামের মানুষদের হারিয়ে যাওয়ার রহস্যের কোন সমাধান পাওয়া সম্ভব হয়নি। নানা রকম তদন্ত করেও কোন কূলকিনারা না পেয়ে তদন্ত প্রক্রিয়া একসময় মন্থর হয়ে আসে আর ফাইল গুলো চাপা পড়তে থাকে সভ্যতার দৈনন্দিন ফাইলগুলোর নিচ থেকে আরও নিচে।
order terbinafine online cheap – buy terbinafine 250mg pills order griseofulvin without prescription
generic glycomet – cozaar buy online buy precose 50mg online