রোমের কলোসিয়াম সম্পর্কে ১২টি অবাক করা তথ্য!
রোমান সাম্রাজ্যের নিষ্ঠুরতার চরম উদাহরণ হল কলোসিয়াম। হাজার হাজার মানুষের রক্ত, আর্তনাদ ও সংশয় নিয়ে এটি দাঁড়িয়ে আছে ইতালির রোম নগরীর কেন্দ্রবিন্দুতে। মূলত এর পরিচিতি ছিল ফ্ল্যাভিয়ান এম্পিথিয়েটার নামে। রোমান শাসনামলে নির্মিত এই এম্পিথিয়েটারই ছিল সবচেয়ে বড় থিয়েটার।
এই মঞ্চের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল ৭০-৭২ খিস্টাব্দের মাঝামাঝি সময়ে সম্রাট ভেসপাসিয়ানের রাজত্বকালে। ভেসপাসিয়ানের মৃত্যুর পর তার পুত্র টাইটাস ৮০ খ্রিষ্টাব্দে এর নির্মাণকাজ শেষ করেন। ধারণা করা হয় ৭০ খৃষ্টাব্দের দিকে ইহুদি বিদ্রোহের পর যুদ্ধবন্দি ইহুদি দাসদের দিয়ে এই কলোসিয়ামটি নির্মিত।
প্রাচীন স্থাপত্যশিল্পের অসাধারণ এই নিদর্শন সম্পর্কে ১২টি ফ্যাক্ট তুলে ধরা হল-
১. রোমানদের বিনোদনক্ষেত্র :
সম্রাট নেরোর গোল্ডেন হাউজের পাশেই স্থাপন করা হয় কলোসিয়াম যা তৈরি করতে ১০ বছরের মত সময় লেগেছিল। ৮০ খ্রিষ্টাব্দে ক্রীড়াক্ষেত্র হিসেবে এর যাত্রা শুরু হয়। বিশেষত, এটি ব্যবহৃত হত গ্ল্যাডিয়েটরদের যুদ্ধের জন্য। কখনও আবার কয়েকদিনের ক্ষুধার্ত পশুর সাথে নির্মম লড়াইয়ে লিপ্ত হতে হতো গ্ল্যাডিয়েটরদের। সে সময়ের রোম সম্রাটদের বিকৃত আনন্দের উৎস ছিল এই কলোসিয়াম।
২. গিনেস রেকর্ড :
বিশ্বের সবচেয়ে বড় এম্পিথিয়েটার হিসেবে এটি এখনও গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড ধরে রেখেছে। যখন অন্যান্য প্রাচীন এম্পিথিয়েটারগুলো কোন উপত্যকায় নির্মান করা হত সেখানে কলোসিয়ামই প্রথম মুক্ত স্থাপত্যকলা।
৩. মাটির টিকিট :
গিনেস রেকর্ড অনুযায়ী, এই এম্পিথিয়েটারে ৮৭০০০ টি আসন রয়েছে যা কিনা লন্ডনের বৃহত্তম ওয়েম্বলি স্ট্যাডিয়ামের আসনসংখ্যার কাছাকাছি। তখনকার আমলে এত বড় গ্যালারি নির্মান করা সত্যিই বিস্ময়কর ঘটনা। গ্যালারিতে প্রবেশের আগে দর্শকদেরকে মাটির তৈরি ঠিকরা দেওয়া হত যা টিকিট হিসেবে ব্যবহার করা হত। ঠিকরায় নির্দিষ্ট নাম্বার খোদাই করা থাকত। সেই নাম্বার অনুযায়ী তারা আসন বেছে নিত।
৪. দ্রুত বহির্গমন পথ :
গ্রাউন্ড লেভেলে ৮০টি প্রবেশদ্বার ছিল। এর মধ্যে ৭৬টি ছিল সাধারণ দর্শকদের ব্যবহারের জন্য। তারা ভোমিটোরিয়াম দিয়ে আসনে পৌঁছাত। ভোমিটোরিয়াম হচ্ছে লোকজন চলাচলের জন্য ব্যবহৃত পথ যেটা কিনা আসনসারির নীচে বা পিছনের দিকে থাকে। সাধারণ দর্শকরা যেন সহজেই বের হয়ে যেতে পারে তাই এই ভোমিটোরিয়ামের ব্যবস্থা করা হয়। কলোসিয়ামের দর্শকরা অনুষ্ঠান শেষে নিমিষের মধ্যেই এই ভোমিটোরিয়ামগুলোর মধ্য দিয়েই অদৃশ্য হয়ে যেত।
৫. হিংস্র বন্য পশু :
এই এম্পিথিয়েটারের মূল আকর্ষন ছিল গ্ল্যাডিয়েটরদের যুদ্ধ এবং হিংস্র পশুর লড়াই। কখনও কখনও গ্ল্যাডিয়েটরদের ছেড়ে দেওয়া হত হিংস্র ক্ষুধার্ত পশুর সামনে। লড়ায়ের জন্য উত্তর আফ্রিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আমদানি করা হতো হাজারে হাজারে হাতি, গন্ডার, সিংহ, নেকড়ে, ভাল্লুক, বাঘ এমনকি কুমিরও। এই বন্য পশুগুলোকে রাখা হত গ্যালারির নিচে খাঁচায়। মোটা দড়ির সাহায্যে এদেরকে উপরে তোলা হত। এইভাবে একসাথে ১০০টি পশু প্রদর্শন করা যেত।
৬. গ্ল্যাডিয়েটর :
এই গ্ল্যাডিয়েটররা ছিল মূলত দাস এবং যুদ্ধবন্দীরা। গ্ল্যাডিয়েটর স্কুলে সামরিক পদ্ধতিতে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হত। এই লড়াইয়ে টিকে থাকা একেবারে অসম্ভব ছিল না। একটা প্রদর্শনীতে ১৮ জনের মধ্যে ১৫ জনই বেঁচে থাকতে সক্ষম হত।.
৭. চূড়ান্ত রায় :
প্রতিপক্ষকে নিরস্ত্র করা বা হত্যা করার পর গ্ল্যাডিয়েটর চূড়ান্ত রায়ের জন্য ঘুরে দাঁড়াত সম্রাট বা দর্শকসারির দিকে। সম্রাট থাম্বস আপ করলে গ্ল্যাডিয়েটর রক্ষা পেয়ে যেত যেখানে থাম্বস ডাওন মানে নির্ঘাত মৃত্যু।
৮. হিংস্র পশুর দ্বারা মৃত্যুদন্ড :
অপরাধীদের মৃত্যুদন্ডও দেওয়া হত এই কলোসিয়ামে। কোন প্রকার অস্ত্র ছাড়াই তাদেরকে তুলে দেওয়া হতো হিংস্র পশুর মুখে।
৯. তিন মাসের প্রদর্শনী :
কিছু প্রদর্শনী ১০০ দিনেরও বেশি সময় ধরে চলত। তখন পাঁচ হাজারের মত পশু প্রাণ হারাত এই লড়াইয়ে। নয় হাজার গ্ল্যাডিয়েটর লড়াই করে যেত মৃত্যুর সাথে।
১০. বিধ্বংসী ভূমিকম্প :
৪৪৩ খৃষ্টাব্দে এবং ১৩৪৯ সালে দু’টি ভূমিকম্পে কলোসিয়ামের কাঠামোর দুই তৃতীয়াংশ ধ্বংস হয়ে যায়। তখন এখানকার ইট পাথর রোমের কিছু চার্চ ও হাসপাতাল তৈরির কাজে ব্যবহার করা হয়।
১১. স্বীকৃতি :
ইউনেস্কো কলোসিয়ামকে ১৯৯০ সালে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী অঞ্চলের স্বীকৃতি দেয়। এটি পৃথিবীতে মনুষ্যসৃষ্ট আধুনিক সপ্তাশ্চর্যের একটি বলে নির্বাচিত হয় ২০০৭ সালে।
১২. বছরে পাঁচ মিলিয়ন দর্শনার্থী :
প্রতি বছর পাঁচ মিলয়ন দর্শনার্থী আসেন এই কলোসিয়ামে। প্রতি মাসের প্রথম রবিবার কোন প্রবেশমূল্য নেওয়া হয় না। ট্রেভি ফাউনটেইনের মত কলোসিয়ামের চারপাশও মনোমুগ্ধকর।