নতুন পিরামিডের সন্ধানে

0

 

পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের একটি হলো মিশরের পিরামিড। যা সভ্যতার সূচনা লগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে সগৌরবে। ফারাওদের যুগে নির্মিত পিরামিডের কথা আমরা কে না জানি কিন্তু একবার ভাবুন তো মাটির নিচে যদি এমন পিরামিড থাকত তবে কেমন হতো! ভাবছেন এ ও কি সম্ভব! হুম খুব সম্ভব; সাম্প্রতিক সময়ে  ইতালিতে তার অকাট্য প্রমাণ মিলেছে।

২০১১ সালে ইতালির ওরভিয়েতো শহর থেকে ৮ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিম এবং উইব্রিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমে ক্যাসেলভিসকার্দোর পাশে করিজিলা নামক স্থানে যুক্তরাষ্ট্র  ও ইতালির সম্মিলিত একটি আন্তর্জাতিক প্রত্নতাত্বিক গবেষক দল একটি ওয়াইনের দোকানের নিচে মাটি খনন করে এট্রুরিয়ান যুগের নির্মান স্থাপত্যশৈলীর ছাপ সম্বলিত একটি সিঁড়ি খুঁজে পান তারপর তারা ঐ সিঁড়ি ধরে খুঁড়তে খুঁড়তে নিচে নামতে থাকেন এবং এক পর্যায়ে একটি দেয়াল ও মেঝের অস্তিত্ব আবিষ্কার করেন।

খননের এক পর্যায়ে অবাক করার মতো কিছু স্থাপত্যশৈলী তাদের নজরে আসতে থাকে যেমন সেখানে গুহার মতো বিশাল বিশাল চতুষ্কোনাকার কামরা দেখা যেতে থাকে আর কামরা গুলোর দেয়ালগুলো চারপাশ থেকে বেঁকে উপরে উঠে যেন পিরামিডের মত এক বিন্দুতে মিলিত হয়েছে।

নতুন পিরামিডের সন্ধানে
নিচ থেকে ভূগর্ভস্থ পিরামিড

এই ভূগর্ভস্থ পিরামিডটি আবিষ্কারের প্রায় তিন বছর পর অর্থাৎ ২০১৪ সালে প্রথম বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের সামনে মুখ খোলেন সেন্ট আন্সেলম কলেজের প্রত্নতত্ব বিভাগের অধ্যাপক ডেভিড বি. জর্জ,PAAO ( Parco ArcheologicoAmbientaledell’Orvietano) এর সহপরিচালক ক্লডিওবিজারি এবং তাদের সহযোগীরা। তারা জানান “আমরা গত তিন বছর হলো এটি আবিষ্কার করেছি কিন্তু এখনো আমরা জানিনা আসলে এটি কী অথবা কী নয়। অনেকে হয়ত ভেবে থাকবেন যে ভূগর্ভস্থ বলে এটি কোন কুয়া বা চৌবাচ্চা হতে পারে তবে আমরা নিশ্চিত যে, এটি কোন ভূগর্ভস্থ কুয়া বা চৌবাচ্চা নয় কারন এটির দেয়াল গুলো খুব যত্ন করে সাজানো এবং তাতে কখনো পানির সংস্পর্শের কোন চিহ্ন পাওয়া যায়না।”

নতুন পিরামিডের সন্ধানে
বিশেষ নকশায় সাজানো দেয়াল

হাজার বছর পূর্বে রোমানদের হাতে ধ্বংস বিনষ্ট হয়ে যাওয়া এট্রুরিয়ান সভ্যতা পর্যালোচনা করলে এমন ভূগর্ভস্থ অনেক রাস্তা এবং গুহা নির্মানের নজির পাওয়া যায় কিন্তু এই আবিষ্কারটি এট্রুরিয়ান সভ্যতার নির্মানশৈলীর সাথেও সম্পূর্ণ সংগতিপূর্ণ বলে শতভাগ নিশ্চিত হওয়া যায়না কারন এসবে চতুষ্কোনাকার কামরা সমূহে সরু তীক্ষ্ণ ফলার মতো পিরামিড আকৃতির চূড়া দেখা  যায় যা এ পর্যন্ত প্রাপ্ত এট্রুরিয়ান সভ্যতার নিদর্শন সমূহে দেখা যায়নি।

যে এট্রুরিয়ান সভ্যতার এতো কথা বলছি তার একটি সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরা দরকার। এট্রুরিয়ান সভ্যতা হলো মূলত খৃষ্টপূর্ব ৯০০ শতাব্দীতে মধ্য ইতালিতে বিরাজমান তৎকালীন সময়ের জ্ঞান বিজ্ঞানে যথেষ্ট উন্নত একটি রহস্যময় সভ্যতার নাম যারা প্রায় ৩০০০ বছর আগে পশ্চিম তুরস্কের লিডিয়া থেকে মধ্য ইউরোপে সম্ভবত উন্নত জীবন যাপনের উদ্দেশ্যে স্থানান্তরিত হয়। তৎকালীন সময়ে তারা জ্ঞান বিজ্ঞান ও কলার বিভিন্ন শাখা প্রশাখায় বিচরণ করতে থাকে যা তাদের চিত্র অংকন, ধাতবের ব্যবহার, বানিজ্য এবং তাদের নিজস্ব লিখন পদ্ধতি দেখে খুব সহযেই অনুমান করা যায়। এতকিছুর পরেও এই সভ্যতা শেষপর্যন্ত তার নিজস্ব স্বকীয়তা ধরে রাখতে ব্যর্থ হয় এবং রোমান সাম্রাজ্যের বিধ্বংসী আক্রমনের মুখে তাদের সাথে একাকার হয়ে শুধুমাত্র তাদের সভ্যতার কিছু স্মৃতিচিহ্ন ছাড়া প্রায় সব কিছুই রহস্যজনক ভাবে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।

ভূগর্ভস্থএই পিরামিড সমূহ খনন করে প্রত্নতাত্বিকগন প্রায় ১৫ মিটার ( ৪৯ ফুট ) গভীর পর্যন্ত যেতে পেরেছেন তবে ভূগর্ভ পূরণের উপাদান সমূহ বিশ্লেষণ করলে এবং গর্ভগুলোর পূরণ প্রক্রিয়া দেখে মনে হয় যেন কোন অজানা কারনে তা অনেক আগেই ইচ্ছেকৃত ভাবে লোকচক্ষুর অন্তরাল করার জন্য মাটি চাপা দিয়ে রাখা হয়েছে ।

বিশিষ্ট প্রত্নতত্ববিদ ডেভিড বি. জর্জ এবং তার সহকর্মীরা এই বিষয়ে জানান “এটি যে খৃষ্টপূর্ব ৫ অব্দে ইচ্ছাকৃত ভাবে মাটিচাপা দেওয়া হয় তার প্রমাণ আমাদের কাছে আছে। এটি কোন বিশেষ ঘটনার সামান্য নিদর্শন মাত্র। এখানে আমরা প্রায় ১৫০ টি লৈখিক বিচ্ছিন্ন এবং দূর্বোদ্ধ্য অক্ষর উদ্ধার করতে পেরেছি। আমরা কিছু মৃৎশিল্পের ও সন্ধান পেয়েছি এখানে”

নতুন পিরামিডের সন্ধানে
খনন কার্যরত গবেষক দল
Source: Archaeological Institute of America

উল্লেখ্য যে এসকল অক্ষর সমূহ ইন্দোইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্ভূক্ত নয় যা খুব অবাক করার মতো একটি বিষয়। তাদের এই ভূগর্ভস্থ পিরামিড সমূহের কোথাও কোন লিখিত নিদর্শন বা বর্ণনা ও পাওয়া যায়নি যা দ্বারা তাদের কোন ইতিহাস জানা সম্ভব বরং যতটুকু নিদর্শন পাওয়া গেছে তা তাদের সমাধি স্তম্ভের গায়ে। খুবই উন্নত পদ্ধতিতে পরিপাটি করে সাজানো তাদের সমাধিস্তম্ভেই কেবল সামান্য পরিমান লিখিত কিছু নিদর্শন পাওয়া যায় যা সহস্রাব্দ পরে তাদের ইতিহাস নতুন করে তুলে ধরার জন্য অপ্রতুল।

সিরামিকের উপকরণ, থালা-বাসন, বড় চৌবাচ্চা, লাল রঙে নকশা অঙ্কিত মৃৎপাত্রের মতো তৎকালীন সময়ের মানুষদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার্য অনেক উপাদান খুঁজে পাওয়া যায় এখানে। ক্লডিওবিজারি বিশ্বাস করেন শহরটির নিচে এরকম কমপক্ষে আরও পাঁচটি পিরামিড রয়েছে।

নতুন পিরামিডের সন্ধানে
প্রাপ্ত তৈজসপত্র
Source: Popular Archaeology

এট্রুরিয়ানরাই কি আসলে এসকল পিরামিডসমূহ তৈরি করেছিল যদি করেই থাকে তবে পিরামিডগুলো কি  উদ্দেশ্যেই বা তৈরি করেছিল তা আজও অজানা এক রহস্যই রয়ে গেছে । ধারনা করা হচ্ছে এসব হয়ত কোন ধর্মীয় উদ্দেশ্যে অথবা সমাধি হিসেবে ব্যবহারের উদ্দেশ্য তৈরি করা হয়েছিল। এই প্রসঙ্গে বিজারি বলেন, “খুব সম্ভব এই প্রশ্নের উত্তরটি একেবারে তলায় রয়েছে যা আমাদের খুঁড়ে বের করতে হবে। কিন্তু সমস্যাটা হলো আমরা এখনো জানিনা এই প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের আরও কত নিচে জেতে হবে। তবে এর নিচেই হয়ত খুঁজে পাওয়া যাবে এট্রিরিয়াদের (ইউরোপের সবচে প্রাচীন রহস্যময় মানব সভ্যতা) জীবন রহস্য।”

বর্তমানে তারা ১৫ মিটার গভীরের ধূসর স্তরটি ভেদ করে আরও ৫ মিটার গভীরে একটি বাদামী ধাতু স্তরের দেখা পেয়েছেন যার খনন কার্য এখন পর্যন্ত চলছে। দিনদিন খনন কার্যে নিত্য নতুন এমন সব নিদর্শন পাওয়া যাচ্ছে যা হয়ত অদূর ভবিষ্যতে গভীর কোন রহস্যের মর্ম উদ্ধার করে ফেলবে একদিন।

 

Leave A Reply
sativa was turned on.mrleaked.net www.omgbeeg.com

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More