বিগ ব্যাঙ সম্পর্কিত ৫টি তথ্য
জ্যোতির্বিজ্ঞানী এডউইন হাবল এবং মিল্টন হিউমাসন বিংশ শতকের গোড়ার দিকে আবিষ্কার করলেন গ্যালাক্সিগুলো আমাদের মিল্কিওয়ে থেকে ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছে। তারা তাদের এই পর্যবেক্ষণকে বর্ণনা করে জানালেন: প্রতিটি গ্যালাক্সিই গড়পড়তায় একটি অপরটি থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, যার অর্থ দাঁড়ায় মহাবিশ্ব প্রসারিত হচ্ছে। তাহলে, অতীতে পুরো মহাবিশ্বটা একসময় ক্ষুদ্রতর, উষ্ণতর এবং ঘন ছিল।
এই বর্ণনা বিগ ব্যাঙ মডেল হিসেবে পরিচিত যা শতাব্দীর নতুন নতুন আবিষ্কার ও প্রতিদ্বন্দ্বী তত্ত্বগুলোর বিরুদ্ধে অবস্থান করছিল। আজ জানব বিগ ব্যাঙ তত্ত্বের কিছু ঘটনা।
বিগ ব্যাঙ একই সময়ে সকল স্থানে সংঘটিত হয়েছিল
মহাবিশ্বের কোনো কেন্দ্র বা কিনারা নেই এবং মহাবিশ্বের প্রতিটি অংশ প্রসারিত হচ্ছে। তার মানে আমরা যদি সময়ের হাত ধরে পেছনে যেতে থাকি, আমরা ঠিক ঠিক বের করে ফেলতে পারব কখন সবকিছু একসাথে জড়িয়ে ছিল— ১৩.৮ বিলিয়ন বছর আগে। কারণ, আমাদের স্থানাঙ্কায়িত করতে পারা প্রতিটি বিন্দু ১৩.৮ বিলিয়ন বছর আগে একই বিন্দুতে ছিল। আঘাত করার মত তথ্য: বিগ ব্যাঙের জন্য কোনো নির্দিষ্ট স্থান নেই, বরং এটি সংঘটিত হয়েছিল সর্বত্র। যে কেউ তার বুকে হাত দিয়ে বলতে পারে— এইখানে বিগ ব্যাঙ হয়েছিল!
সম্ভবত বিগ ব্যাঙ মহাবিশ্বের শুরুর প্রকৃত ঘটনা ব্যাখ্যা করতে পারে না
“বিগ ব্যাঙ” বিশদভাবে মহাজাগতিক সম্প্রসারণ তত্ত্ব ও আদিম উষ্ণ মহাবিশ্বের কথা বলে। যাই হোক, কখনো কখনো বিজ্ঞানীদের বর্ণনার প্রয়োজনে— “যখন সবকিছু একই বিন্দুতে ছিল” বলে বাক্য তৈরি করতে হয়। এই বিবৃতির সমস্যা হচ্ছে সে মুহূর্তকে বর্ণনা করার জন্য কোনো পর্যবেক্ষণ বা তত্ত্ব নেই যাকে আমরা আদি সিঙ্গুলারিটি বলছি।
প্রাথমিকভাবে সিঙ্গুলারিটি হচ্ছে আমাদের দেখা মহাবিশ্বের পর্যবেক্ষণের শুরু, কিন্তু আমাদের নিত্যচিন্তা ক্ষমতার কলেবরের হিসেবে সে শুরুর আগে কিছু একটা থাকা চাই যা শুরুর কারণ।
জটিলতাটা হল খুবই উষ্ণ আদি মহাবিশ্ব এবং এর দ্রুত প্রসারণের ঘটনা যাকে বলা হয় “মহাজাগতিক স্ফীতি” সেটা সিঙ্গুলারিটি ভেঙে যাওয়ার ঠিক পরপরই ঘটে। মহাজাগতিক স্ফীতি বা Inflation ঘটে বিগ ব্যাঙের পূর্বের যে কোনো ইতিহাস মুছে দিয়ে যেটাকে আদতে বলা হচ্ছে বিগ ব্যাঙের পূর্বে সময় বলেও কিছু নেই। পদার্থবিজ্ঞানীরা আদি মহাবিশ্বের নিদর্শন বা চিহ্ন খুঁজে বের করার জন্য ক্রমাগত নতুন উপায় সন্ধান করে চলেছেন। যেহেতু আমরা এখনো বিকল্প কিছু পাই নি, তাই বিগ ব্যাঙের মাধ্যমে সময় শুরুর ধারণাকে আমরা এখনো উড়িয়ে দিতে পারি না।
বিগ ব্যাঙ তত্ত্ব ব্যাখ্যা করে মহাবিশ্বের এত হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম কিভাবে এসেছে
১৯৪০এ, রালফ আলফার এবং জর্জ গ্যামো হিসেব করে দেখান আদি মহাবিশ্ব ছিল বর্তমান মহাবিশ্বে উপস্থিত হিলিয়াম, লিথিয়াম এবং ডিউটেরিয়াম (যে হাইড্রোজেন পরমাণুতে প্রোটনের সাথে ১টি নিউট্রন রয়েছে) প্রস্তুতের জন্য যথেষ্ঠ উষ্ণ ছিল। পরবর্তী গবেষণায় তারা দেখিয়েছেন কিভাবে আদিম মৌলিক হাইড্রোজেনেরা এল। এই প্রক্রিয়াটি “বিগ ব্যাঙ নিউক্লিয়সিন্থেসিস” নামে পরিচিত অর্থাৎ বিগ ব্যাঙের পর প্রথম নিউক্লিয়াস গঠনপর্যায়। এই নিউক্লিয়সিন্থেসিস আবার চারটি পর্যায়ে ভাগ করা হয় যার প্রথমটি বিগ ব্যাঙের পর ১০ সেকেন্ড থেকে ২০ মিনিট সময়ের মধ্যে সংঘটিত হয়েছিল বলে বিজ্ঞানীরা অনুমান করেন। এই তত্ত্বটি বিগ ব্যাঙ তত্ত্বের সফলতম অনুমান হিসেবে ধরা হয়। প্রাথমিক নিউক্লিয়সিন্থেসিস ছিল হালকা পরমাণু গঠনের পর্যায়। ভারী পরমাণু যেমন, অক্সিজেন, লোহা, ইউরেনিয়াম ইত্যাদি তৈরি হয়েছে নক্ষত্রে এবং সুপারনোভা বিস্ফোরণের মাধ্যমে।
বিগ ব্যাঙের পক্ষে এখন পর্যন্ত সেরা সাক্ষ্যপ্রমাণ হল ক্ষুদ্রতরঙ্গ। প্রাথমিক সময়ে যখন পুরো মহাবিশ্ব যথেষ্ঠ ঘন হওয়ায় অস্বচ্ছ ছিল। কিন্তু বিগ ব্যাঙ পরবর্তী ৩ লক্ষ ৮০ হাজার বছরে সম্প্রসারণ মহাব্রহ্মাণ্ডকে স্বচ্ছ করে তোলে।
৩,৮০,০০০ বছর সময় হিসেবে দীর্ঘ মনে হতে পারে কিন্তু মহাবিশ্বের বয়সের তুলনায় তা সামান্য। এই যে একটা দ্রুত রূপান্তর ঘটে গেল তাকে সময়ে অসময়ে বর্ণনা করতে নাম হল মহাজাগতিক ক্ষুদ্রতরঙ্গ পটভূমি বিকিরণ, যা এখনো বিদ্যমান। এটি প্রথম পর্যবেক্ষণ করেন আর্নো পেঞ্জিয়াস এবং রবার্ট উইলসন ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে। এ আবিষ্কার বিগ ব্যাঙ তত্ত্বকে মহাবিশ্বের সেরা ব্যাখ্যার তকমা এনে দেয়। সেই থেকে এই বিকিরণ পর্যবেক্ষণ করতে কিছু অবজারভেটরি ব্যবহার করা হচ্ছে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সার্বিক গঠন এবং উপাদান অনুসন্ধানে। যেমন- উইলকিনসন মাইক্রোওয়েভ এনাইসোট্রপি প্রোব (সংক্ষেপে WMAP) যেটি বিগ ব্যাঙের পর বিকিরিত অবশিষ্ট তাপমাত্রার পার্থক্য পরিমাপ করে বিভিন্ন কোণ থেকে পাওয়া মহাজাগতিক ক্ষুদ্রতরঙ্গ পটভূমি বিকিরণ থেকে। আরেকটি হল প্ল্যাংক প্রোব।
মহাবিশ্বের জন্ম সম্পর্কিত বৈজ্ঞানিক চিন্তায় অগ্রগণ্যদের একজন ছিলেন একজন ক্যাথলিক ধর্মযাজক –
ধর্মীয় দীক্ষা ও রুটিনমাফিক কাজের পাশাপাশি জর্জ লেমিটার ছিলেন একজন বেলজিয়ান পদার্থবিদ যিনি সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্বের উপর পড়াশোনা করেন। তিনি ১৯২০ ও ‘৩০ এর মধ্যবর্তী দশকে আদি মহাবিশ্বের দশা নিয়ে বেশ কিছু গবেষণা কাজ করেছেন। মহাবিশ্বের উৎপত্তির ব্যাপারে তিনি একটি রূপকের অবতারণা করেছিলেন। সেটি ছিল “মহাজাগতিক ডিম্ব” বা “আদি পরমাণু”। কিন্তু দুঃখের বিষয় এর কিছুই প্রমাণিত হয় নি।
“বিগ ব্যাঙ” নামটির জনক বিগ ব্যাঙ এর সময় পরম করে দিয়েছিলেন!
১৯৬০ পর্যন্ত, মহাবিশ্বের শুরু থাকার ধারণা পদার্থবিদদের কাছে বিতর্কিত ছিল। “বিগ ব্যাঙ” নামটি দিয়েছিলেন জ্যোতির্বিদ ফ্রেড হয়েল, যিনি কিনা মহাবিশ্ব সম্পর্কে একটি বিকল্প তত্ত্বের প্রবক্তা ছিলেন। তার তত্ত্বে মহাবিশ্বের কোনো আদি বা শুরু ছিল না।
তার বিকল্প তত্ত্বের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা সহজেই বোঝা গিয়েছিল। এখন আমরা একপ্রকার আটকেই আছি এই ধারণায়। কেলভিন (Calvin) এবং হবসের (Hobbes) “হরেন্ডাস স্পেস কাবলুই” কমিকের মাধ্যমে বিগ ব্যাঙ তত্ত্ব খাওয়ানোর প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।
বিগ ব্যাঙ বা মহাবিস্ফোরণ মহাকাশবিজ্ঞানের ভিত্তি বটে কিন্তু এটিই সর্বস্ব নয়। বিজ্ঞানীরা ক্রমাগত মহাবিশ্বের তত্ত্বসমূহ মহাকাশের রহস্যময় বস্তু, ঘটনা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে নিরীক্ষা করছেন। ডার্ক ম্যাটার এবং ডার্ক এনার্জি হচ্ছে সবচেয়ে বড় দুই রহস্য যা বিগ ব্যাঙ তত্ত্বের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা যায় না। ডার্ক ম্যাটার গ্যালাক্সিগুলোকে ধরে রেখেছে একত্রে আর ডার্ক এনার্জির কারণে মহাবিশ্বের সম্প্রসারণের হার বাড়ছে।
মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমাদের দৃষ্টিকোণ, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের নিজের মতই ক্রমশ বিবর্তিত হচ্ছে যতই আমরা নতুন নতুন বিষয় আবিষ্কার করছি। তবুও বিলীন হয়ে যাওয়ার চেয়ে মহাবিশ্ব আচরণ ও সৃষ্টি সম্পর্কে আমাদের সেরা ব্যাখ্যা রয়ে গেছে এখনো অমীমাংসিত। আমাদের জিজ্ঞাসু দৃষ্টি অনুসন্ধান করে চলে মহাবিশ্বের প্রারম্ভের প্রশ্নে। হয়ত কোনো এক নবাগত বা অনাগত বিজ্ঞানীর প্রচেষ্টাপূরণের সফলতার জন্য আমরা অপেক্ষা করছি।
brand lamisil 250mg – brand lamisil purchase griseofulvin pills
buy semaglutide online – buy glucovance generic DDAVP medication