বৈচিত্র্যময় পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ১০ টি দ্বীপ

3

সারা পৃথিবী জুড়ে সাগর, মহাসাগরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য দ্বীপ। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের আধার এই সকল দ্বীপের সঠিক সংখ্যা নির্ণয় করা কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তবে অনুমান করা হয় যে মহাসাগরে প্রায় ২০০০ দ্বীপ রয়েছে। এদের আকার আকৃতি, ভূ-প্রাকৃতিক পরিবেশ, আবহাওয়া ও জলবায়ু, উদ্ভিদ ও প্রাণীকুল ইত্যাদি কারণে দ্বীপ গুলোর মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্যও রয়েছে। এত কিছুর মাঝে আজকে আমরা জানব আয়তনের দিক থেকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ১০ টি দ্বীপ সম্পর্কে-

১০. ইলসমেয়ার দ্বীপ, কানাডা

ইলসমেয়ার দ্বীপ
ইলসমেয়ার দ্বীপ
Source: CruiseMapper

সর্বমোট ১, ৯৬, ২৩৬ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই দ্বীপটি কানাডার তৃতীয় বৃহত্তম এবং বিশ্বের দশম বৃহত্তম দ্বীপ। এই দ্বীপটি কানাডার নুনাভাট প্রদেশে অবস্থিত। সম্পূর্ণ দ্বীপটি জুড়ে রয়েছে সুউচ্চ পর্বতের সারি আর বরফক্ষেত্র। এটি কানাডীয় সীমার মাঝে আর্কটিক দ্বীপপুঞ্জের সবচেয়ে পাহাড়ি অঞ্চল।

ইলসমেয়ার দ্বীপ সম্পর্কে মজার তথ্য:

  • ইলসমেয়ার দ্বীপের উত্তরাংশে থাকা পাললিক শিলা স্তরের বয়স ১, ০০০০০ বছরের ও অধিক।
  • এই দ্বীপ এখন শেষ বরফ যুগের অবশিষ্টাংশ ধারণ করে আছে।
  • ২০১৬ মিটার উচ্চতা নিয়ে বারব্যো চূড়াটি নুনাভাট প্রদেশের সর্বোচ্চ স্থানের জায়গা দখল করে আছে।
  • আর্কটিক উইলো হলো বিশেষ এক ধরনের বৃক্ষ যা শুধুমাত্র ইলসমেয়ার দ্বীপেই পাওয়া।

৯. গ্রেট ব্রিটেন, যুক্তরাজ্য

গ্রেট ব্রিটেন, যুক্তরাজ্য
গ্রেট ব্রিটেন, যুক্তরাজ্য
Source: Forgsm.info

গ্রেট ব্রিটেন দ্বীপটি ইউরোপ মহাদেশের উত্তর-পশ্চিমাংশে অবস্থিত। ২, ০৯, ৩৩১ বর্গ কিলোমিটার আয়তন নিয়ে এই দ্বীপটি ইউরোপের সবচেয়ে বৃহত্তম দ্বীপের স্থান দখল করে আছে। গ্রেট ব্রিটেন যুক্তরাজ্যের অংশ। এটি ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড ও ওয়েলস নিয়ে গঠিত।

গ্রেট ব্রিটেন সম্পর্কে অজানা তথ্য:

  • এই দ্বীপটি ছোট বড় প্রায় ১০০০ দ্বীপ দ্বারা পরিবেষ্টিত।
  • ইউরোপের সবচেয়ে জনবহুল অঞ্চল হচ্ছে এই দ্বীপ।
  • এই দ্বীপে জনবসতি শুরু হয় ৫, ০০, ০০০ বছর পূর্বে।
  • প্রায় সারা বছরই এই দ্বীপে আরামদায়ক মৃদু তাপমাত্রা থাকে।
  • লন্ডন গ্রেট ব্রিটেনের সবচেয়ে বড় শহর।

৮. ভিক্টোরিয়া দ্বীপ, কানাডা

ভিক্টোরিয়া দ্বীপ, কানাডা
ভিক্টোরিয়া দ্বীপ, কানাডা source: Cruisemapper

ভিক্টোরিয়া দ্বীপটি কানাডিয়ান আর্কটিক দ্বীপপুঞ্জের দ্বিতীয় বৃহত্তম দ্বীপ। এই দ্বীপটি ৩২০ মাইল দীর্ঘ ও ৩৫০-৩৮৭ মাইল প্রশস্ত যার মোট আয়তন ২, ১৭, ২৯১ বর্গ কিলোমিটার। বিশাল আয়তনের এই দ্বীপটি পৃথিবীর অষ্টম বৃহত্তম দ্বীপ। ১৮৩৮ সালে উত্তর মেরু অনুসন্ধানকারী টমাস সিম্পসন এই দ্বীপ আবিষ্কার করেন।

ভিক্টোরিয়া দ্বীপ সম্পর্কে মজার তথ্য:

  • ভিক্টোরিয়া দ্বীপের নামকরণ করা হয়েছে রাণী ভিক্টোরিয়ার নামানুসারে।
  • ২০০৬ সালের হিসাব অনুযায়ী, বিশাল এই দ্বীপে মাত্র ১,৮৭৫ জন লোক বাস করে।
  • ভিক্টোরিয়া দ্বীপের উত্তর-পশ্চিমাংশে উল্কা পতনের ফলে সৃষ্ট একটি ১৫ মাইল চওড়া গর্ত রয়েছে। ধারণা করা হয় যে, এটি ১৩০ থেকে ৩৫০ মিলিয়ন বছরের মধ্যে কোনো এক সময়ে উল্কাপিণ্ডের আঘাতে এটি সৃষ্টি হয়।

৭. হনশু, জাপান

 হনশু, জাপান
হনশু, জাপান
source: DreamPlanGo

জাপান সাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরের মাঝে অবস্থিত হনশু দ্বীপটি জাপানের বৃহত্তম দ্বীপ। এই দ্বীপটি ঐতিহাসিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ এবং এটা জাপানের মূল ভূখণ্ড। ২, ২৫, ৮০০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই দ্বীপটির দৈর্ঘ্য ৮০০ মাইল আর প্রস্থ ১৫০ মাইল। এটা জাপানের মোট আয়তনের ৬০ ভাগ জুড়ে আছে।

হনশু দ্বীপ সম্পর্কে মজার তথ্য:

  • হনশু দ্বীপেই জাপানের কিছু গুরুত্বপূর্ণ শহর, যেমন টোকিও, কিয়োটো, হিরোশিমা, ইয়্যোকোহামা এবং ওসাকা অবস্থিত।
  • জাভা দ্বীপের পর হনশু পৃথিবীর দ্বিতীয় জনবসতিপূর্ণ দ্বীপ।
  • জাপানের বৃহত্তম পর্বত ফুজি এই দ্বীপে অবস্থিত।
  • জাপানের সর্ববৃহৎ হ্রদ বিওয়া হনশু দ্বীপে অবস্থিত।

৬. সুমাত্রা, ইন্দোনেশিয়া

সুমাত্রা, ইন্দোনেশিয়া
সুমাত্রা, ইন্দোনেশিয়া source: indonesiannatarulcharm.blogspot.com

৪,৮০,৪৮৪ বর্গ কিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট সুমাত্রা দ্বীপটি ইন্দোনেশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম দ্বীপ। এছাড়াও এটি ইন্দোনেশিয়ান দ্বীপপুঞ্জের সর্বপশ্চিমের দ্বীপ। এই দ্বীপটি অত্যধিক মাত্রার ভূমিকম্প ও সুনামি প্রবণ। এর কারণ এই দ্বীপটি ইন্দো-অস্ট্রেলিয়ান ও ইউরেশিয়ান টেকটনিক প্লেটস এর সাবডাকশন জোন এ অবস্থিত। যাই হোক, সুমাত্রা দ্বীপের বনভূমি ও প্রাণী জগত অত্যন্ত বৈচিত্র্যময়।

সুমাত্রা দ্বীপ সম্পর্কে মজার তথ্য:

  • সুমাত্রা দ্বীপের বেশির ভাগ অংশই গ্রীষ্মমন্ডলীয় রেইনফরেস্ট দ্বারা আবৃত। দুর্ভাগ্য বশত, মাইগ্রেশন ও তেল উৎপাদনের কারণে ১৯৮৫ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত দ্বীপের প্রায় ৫০ শতাংশ বনভূমি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।
  • সুমাত্রা দ্বীপে কিছু বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী বাস করে। যেমন: সুমাত্রার বাঘ, ওরাংওটাং, গণ্ডার ও কোকিল ইত্যাদি।
  • সুমাত্রা ও বোর্নিও এর রেইনফরেস্টে রাফলেশিয়া আর্নোডি নামক পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ানক গন্ধযুক্ত ফুল ফোটে।
  • সুমাত্রা দ্বীপে প্রচুর পরিমাণে স্বর্ণ ও রুপা মজুদ রয়েছে।
  • কিছু সর্বোত্তম তৈল আর কয়লাক্ষেত্র এই দ্বীপেই অবস্থিত।

৫. ব্যাফিন দ্বীপ, কানাডা

ব্যাফিন দ্বীপ
ব্যাফিন দ্বীপ
Source: Imgur

নুনাভাট অঞ্চলে অবস্থিত ব্যাফিন দ্বীপটি কানাডার সর্ববৃহৎ দ্বীপ। আয়তনে এই দ্বীপটি প্রায় ৫,০৭,৪১৫ বর্গ কিলোমিটার। আর্কটিক দ্বীপপুঞ্জের অন্তর্গত এই দ্বীপটি অত্যন্ত ঠাণ্ডা এবং এর বার্ষিক গড় তাপমাত্রা (-৮) ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়াও এখানে অনেক স্বাদু পানির হ্রদ ও ফিয়র্ড (সমুদ্র খাঁড়ি) রয়েছে।

ব্যাফিন দ্বীপ সম্পর্কে মজার তথ্য:

  • এই দ্বীপটির নামকরণ হয়েছে ব্রিটিশ অনুসন্ধানকারী উইলিয়াম ব্যাফিন এর নামানুসারে।
  • এই দ্বীপের বেশির ভাগ অংশ সুমেরু বৃত্তের উত্তরে অবস্থিত হওয়ায় এখানে চমৎকার মেরুজ্যোতি বা অরোরা বোরিয়ালিস দেখা যায়।
  • এই দ্বীপে মেরু ভালুক, সুমেরু নেকড়ে সহ বিভিন্ন ধরনের স্তন্যপায়ী প্রাণী বাস করে।
  • এই দ্বীপে স্যারমিলিক ও আয়্যুটাক নামে দুটো ন্যাশনাল পার্ক রয়েছে যেখানে দৃষ্টিনন্দন হিমবাহ, নয়নাভিরাম ফিয়র্ড, ঝলমলে তুষারক্ষেত্র সহ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।

৪. মাদাগাস্কার, রিপাবলিক অব মাদাগাস্কার

মাদাগাস্কার দ্বীপ
মাদাগাস্কার দ্বীপ source: Symrise

ভারত মহাসাগরে আফ্রিকার পূর্ব উপকূলে মাদাগাস্কার দ্বীপ দেশটি অবস্থিত। পৃথিবীর চতুর্থ বৃহত্তম এই দ্বীপের আয়তন ৫,৮৭,৭১৩ বর্গ কিলোমিটার। ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে আলাদা হয়ে প্রায় ৮৮ মিলিয়ন বছর আগে এই দ্বীপটি গঠিত হয়। এই দ্বীপে রয়েছে কিছু অনন্য প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণী। মাদাগাস্কার দ্বীপটিকে বলা হয় অষ্টম মহাদেশ বা বিকল্প পৃথিবী।

মাদাগাস্কার দ্বীপ সম্পর্কে মজার তথ্য:

  • মাদাগাস্কার দ্বীপে ২, ৫০, ০০০ প্রজাতির প্রাণীর বসবাস যা পৃথিবীর আর কোথাও পাওয়া যায়না।
  • এখানে ১৪,০০০ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে যার ৯০ ভাগই এখানকার স্থানীয় প্রজাতির।
  • বিড়াল মুখো ল্যামুর শুধুমাত্র মাদাগাস্কার দ্বীপেই দেখা যায়।
  • মাদাগাস্কার দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে অবস্থিত টোলিয়ারা প্রবাল প্রাচীরটি পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম প্রবাল প্রাচীর।

৩. বোর্নিও, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও ব্রুনাই

বোর্নিও দ্বীপ
বোর্নিও দ্বীপ source: Braymanagement

পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত বোর্নিও দ্বীপটি পৃথিবীর একমাত্র দ্বীপ যা তিনটি দেশের দ্বারা পরিচালিত হয়। ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও ব্রুনাই এই দ্বীপটি শাসন করলেও এর বেশিরভাগ অঞ্চল ইন্দোনেশিয়ার অন্তর্ভুক্ত। ৭,৪৮,১৬৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের দ্বীপটি পৃথিবীর চতুর্থ বৃহত্তম দ্বীপ। এই দ্বীপটি আয়তনে জার্মানির প্রায় দ্বিগুণ।

বোর্নিও দ্বীপ সম্পর্কে মজার তথ্য:

  • বোর্নিও দ্বীপের রেইনফরেস্ট এর বয়স ১৩০ মিলিওন বছরের ও বেশি। এটা পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো রেইনফরেস্ট। এই বনে ১৫,০০০ প্রজাতির উদ্ভিদ, ২২১ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী ও ৪২০ প্রজাতির পাখি রয়েছে।
  • দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গ মাউন্ট কিমাবালু বোর্নিও দ্বীপে অবস্থিত।
  • বিলুপ্তপ্রায় বোর্নিয়ান ওরাংওটাং ও দায়াক ফল বাদুর শুধুমাত্র এই দ্বীপেই পাওয়া যায়।

২. নিউ গিনি, ইন্দোনেশিয়া পাপুয়া নিউ গিনি 

নিউ গিনি দ্বীপ
নিউ গিনি দ্বীপ source: flickr

পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় নিউ গিনি দ্বীপটি পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম দ্বীপ। এই দ্বীপটি ১,৫০০ মাইল দীর্ঘ ও ৪০০ মাইল প্রশস্ত এবং এর আয়তন ৭,৮৫,৭৫৩ বর্গ কিলোমিটার। এই দ্বীপটি পরিচালিত হয় দুটি দেশের অধীনে- পশ্চিমাংশ ইন্দোনেশিয়ার অধীনে এবং পূর্বাংশ পাপুয়া নিউ গিনির অধীনে।

নিউ গিনি দ্বীপ সম্পর্কে মজার তথ্য:

  • এই দ্বীপের প্রায় পুরোটা জুড়ে রয়েছে সুউচ্চ পর্বত শ্রেণি। ১৬,৫০৩ ফুট উচ্চতা সম্পন্ন জয়া শৃঙ্গ নিউ গিনির সর্বোচ্চ চূড়া।
  • এই অঞ্চলে জনবসতি স্থাপন হয় ৪০,০০০ বছর আগে।
  • দ্বীপটিতে বিপুল পরিমাণ কপার ও সোনা মজুদ রয়েছে।
  • এই দ্বীপে চমৎকার সব প্রজাতির পাখি রয়েছে।

১. গ্রিনল্যান্ড

গ্রিনল্যান্ড
গ্রিনল্যান্ড source: ForbesMagazine

সর্বমোট ২১,৩০,৮০০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের গ্রিনল্যান্ড দ্বীপটি পৃথিবীর সর্ববৃহৎ দ্বীপ। আটলান্টিক মহাসাগর ও উত্তর মহাসাগরের মাঝে অবস্থিত এই দ্বীপটি ডেনমার্কের একটি স্বায়ত্ত শাসিত অঞ্চল। গ্রিনল্যান্ডের ৮০ ভাগ অঞ্চল বরফ এবং হিমবাহ দ্বারা আবৃত। বিশাল এই দ্বীপটি জনসংখ্যা মাত্র ৫৭,৬০০ জন

গ্রিনল্যান্ড দ্বীপ সম্পর্কে মজার তথ্য:

  • বিশাল আয়তনের এই দ্বীপটিতে শুধুমাত্র জনসংখ্যা কম থাকার কারণে এটিকে মহাদেশ হিসেবে গণ্য করা হয়না।
  • অ্যান্টার্কটিকার পরই গ্রিনল্যান্ড এ পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম বরফ স্তর রয়েছে।
  • মেরু অঞ্চলের বাইরে সর্ববৃহৎ হিমবাহ এই দ্বীপে অবস্থিত।
  • উত্তর-পূর্ব গ্রিনল্যান্ড ন্যাশনাল পার্ক পৃথিবীর সর্ববৃহৎ এবং সরর উত্তরের ন্যাশনাল পার্ক।
  • গ্রিনল্যান্ডের শহর গুলোকে যুক্ত করার মত কোনো নিরবচ্ছিন্ন সড়ক পথ নেই।
  • গ্রিনল্যান্ডের মানুষের জীবিকার প্রধান উৎস মৎস্য শিকার, তিমি শিকার ও মুদ্রাঙ্কন ইত্যাদি।

 

Leave A Reply
3 Comments
  1. Rctpjs says

    repaglinide 1mg cheap – order jardiance 25mg empagliflozin medication

  2. Iaubvr says

    glucophage ca – buy metformin 1000mg generic buy precose 25mg pills

sativa was turned on.mrleaked.net www.omgbeeg.com

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More