মঙ্গোল সাম্রাজ্যের মহান শাসক চেঙ্গিস খানের নাম কে বা শোনেনি? পৃথিবীর সর্ববৃহৎ সাম্রাজ্যের হর্তাকর্তা ছিলেন চেঙ্গিস খান। পৃথিবী বিখ্যাত যোদ্ধা হিসেবেও পরিচিত তিনি। যোদ্ধা এবং শাসক হিসেবে অনেক কিছু জানা থাকলেও বাস্তব জীবনে কেমন মানুষ ছিলেন তিনি? কিভাবে তিনি হয়ে উঠলেন পৃথিবী বিখ্যাত শাসক? তাই আমরা আজকের আয়োজন সাজিয়েছি চেঙ্গিস খানের জানা-অজানা সকল তথ্য নিয়ে।
চেঙ্গিস খানের বংশাবলী
জন্মদাতার দিক দিয়ে হিসাব করলে চেঙ্গিস খানের সম্পর্ক ছিল বদনচার মুখাগ এর বংশধর খাবুল খান, আম্বাঘাই এবং হোতুলা খান এর সাথে, যারা খামাগ মঙ্গোল কনফেডারেশন এর নেতৃত্বে ছিলেন। ১১৬১ সালে যখন জুরকেন জিন রাজবংশ মঙ্গোলদের উপর থেকে সমর্থন তুলে নিয়ে তাতারদের সমর্থন করা শুরু করে, তখন তারা একজোট হয়ে খাবুল খানকে পরাস্ত করে।
তেমুজিনের বাবা, অর্থাৎ চেঙ্গিস খানের বাবা (বোরজিগিন গোষ্ঠীর নেতা এবং আম্বাঘাই ও হোতুলা খানের ভাতিজা ) ইয়েসুগেই, মঙ্গোলিয়ানদের দলনেতা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহন করেন। এই পদের জন্য তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল তায়িচি’উদ গোষ্ঠী, যারা সরাসরি আম্বাঘাই এর বংশধর ছিল। তাতার যখন অনেক শক্তিশালী হয়ে উঠে, তখন জিন রাজবংশ তাদের সমর্থন কেরাইটস দের দিকে নিয়ে যায়।
চেঙ্গিস খানের জীবনী
তেমুজিন, পরবর্তীতে যার নাম হয় চেঙ্গিস খান, এর জন্ম ১১৬২ সালে, আধুনিক মঙ্গোলিয়া এবং সাইবেরিয়ার বর্ডারের কাছের এলাকায়। চেঙ্গিস খানের নাম ‘তেমুজিন’ রাখা হয় এক তাতার প্রধানের নামানুসারে, যাকে ইয়েসুগেই বন্দি করেছিলেন। ‘তেমুজিন’ নামটি এসেছে মোঙ্গল শব্দ ‘তেমুর’ থেকে যার অর্থ ‘লোহার তৈরি’ এবং ‘জিন’ অর্থ ‘কর্তৃত্ব’। অর্থাৎ তেমুজিন অর্থ “লৌহকার”। লিজেন্ড বলে, জন্মের সময় তেমুজিনের ডান হাতে রক্ত জমাট বাধা ছিল। তার মা হোয়েলুনকে অপহরন করা হয়েছিল এবং তেমুজিনের বাবা জোড় করে তার মাকে বিয়ে করেছিলেন। তেমুজিন যখন জন্মগ্রহন করেন, তখন মধ্য এশিয়ার প্রায় ডজনখানেক যাযাবর জনগোষ্ঠীর মধ্যে হানাহানি, যুদ্ধ-বিগ্রহ লেগেই থাকতো। সে কারণে তেমুজিনের প্রথম জীবন অতিবাহিত হয় যুদ্ধ এবং অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে। তেমুজিনের মোট ছয়জন ভাইবোন ছিল- তিনজন ভাই- হাসার, হাচিউন এবং তেমুগে; বোন তেমুলেন এবং দুইজন সৎভাই- বেগতের এবং বেল্গুতেই।
তেমুজিনের বয়স দশ বছর হওয়ার আগেই শত্রুদলের বিষ প্রয়োগের ফলে তার পিতার মৃত্যু ঘটে। পিতার মৃত্যুর পর তাদের নিজেদের জাতি তেমুজিন, তার মা ও তার ছয়জন ভাইবোনকে দল থেকে বের করে দেয়। পিতার মৃত্যুর পর সৎভাই বেগতের পরিবারের সবচেয়ে বড় পুরুষ সদস্য হওয়ার দরুন ক্ষমতার চর্চা শুরু করে। তার কিছুদিন পরই তেমুজিন ও তার ভাই হাসার তাদের অগ্রজ সৎ ভাইকে খুন করে এবং দারিদ্র্য-জর্জরিত পরিবারের দায়িত্ব গ্রহন করেন তেমুজিন।
১১৭৮ সালে, যখন তার বয়স ১৬ বছর, তখন তেমুজিন অংগিরাত জাতির বোরতে নামের এক নারীকে বিয়ে করেন। সেই নারীর সাথে তিনি চার পুত্র এবং অজানা সংখ্যক কন্যার পিতা হন। বোরতে কে যখন অপহরন করা হয়, তখন বেশ সাহসিকতার সাথে তেমুজিন তার স্ত্রীকে উদ্ধার করেন। পরবর্তীতে খুব শীঘ্রই তিনি মিত্র দল তৈরি করেন এবং যোদ্ধা হিসেবে খ্যাতি অর্জন করতে থাকেন। এর ফলে তার অনুসারীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে। চেঙ্গিস খানের শৈশব সম্পর্কে যে সকল তথ্য পাওয়া গেছে তার বেশিরভাগ জানা গেছে “সিক্রেট হিস্ট্রি অব দ্য মঙ্গোলস” শীর্ষক বই থেকে যেটা রচিত হয়েছিল চেঙ্গিস খানের মৃত্যুর ঠিক পরে পরেই।
চেঙ্গিস খান মঙ্গোলদের একত্রিত করেন মঙ্গোল রীতির বিরুদ্ধে গিয়ে চেঙ্গিস খান পরিবারের বাইরের অন্যান্য মঙ্গোল গোষ্ঠীদের সাথে মৈত্রী স্থাপন করেন। শত্রু জাতির প্রধানদের হত্যা করে জীবিত সদস্যদেরকে নিজের গোষ্ঠীর সাথে একীভূত করেন। তিনি আদেশ করেন যে, সম্পূর্ণ জয় আসার আগ পর্যন্ত যাতে সমস্ত লুটপাট সংরক্ষিত থাকে। তিনি তার যোদ্ধা দলকে মোট ১০ টি ইউনিটে ভাগ করেন। ১২০৫ সালের মধ্যেই তিনি তার সকল প্রতিদ্বন্দ্বীদের হটিয়ে একক ভাবে সমগ্র মঙ্গোলিয়ার অধিপতি হিসেবে অধিষ্ঠিত হন। একই বছরে তিনি তার সমগ্র রাজ্যের প্রতিনিধিদের নিয়ে এক সভায় বসেন এবং আধুনিক মঙ্গোলিয়ার আদলে নতুন এক রাষ্ট্র গঠন করেন। সে সময়ই তেমুজিন কে চেঙ্গিস খান উপাধি দেয়া হয়, যার অর্থ করলে দাঁড়ায় “সার্বজনীন শাসক”।
চেঙ্গিস খানের ধর্ম কি ছিল?
চেঙ্গিস খান ছিলেন একজন টেংগ্রিস্ট, কিন্তু তিনি অন্য ধর্মের প্রতি সহনশীল ছিলেন এবং অন্যান্য ধর্মের দর্শন ও নৈতিক শিক্ষার প্রতি তার আকর্ষণ ছিল। তিনি একই সাথে বৌদ্ধ ভিক্ষু, মুসলমান, খ্রিস্টান মিশনারি এবং টাওইস্ট ভিক্ষু কি চুজি এবং কাছ থেকে পরামর্শ নিতেন।
চেঙ্গিস খান এবং তার পরবর্তী ইউয়ান সম্রাটগণ কুরবানির মত ইসলামিক প্রথার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন, কারণ কুরবানি ছিল মঙ্গোল প্রথার বিরুদ্ধাচরণ। চেঙ্গিস খানের সময় মুসলমানেরা লুকিয়ে পশু কুরবানি দিত। স্পষ্টতই, চেঙ্গিস খানের কাছে মুসলমান এবং ইহুদিরা ছিল ‘দাসের’ মত এবং আদেশ দিয়েছিলেন খাদ্যাভ্যাসে মঙ্গোল পদ্ধতি অনুসরণ করার। ‘সুন্নৎ’ করার উপরেও নিশেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল। চেঙ্গিস খানের সময়ে মঙ্গোলে ‘কোশের’ খাওয়ার উপরেও নিষেধাজ্ঞা জারি হয় যার ফলে ইহুদিদের উপরেও বিরূপ প্রভাব পরে।
চেঙ্গিস খানের আইন
চেঙ্গিস খান প্রায় ১ মিলিয়ন মানুষের শাসক ছিলেন। তার জনগণের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন জাতি গোষ্ঠীর সদস্যরা একত্রিত হয়েছিল। অতীতে যুদ্ধের কারণগুলো দমন করার উদ্দেশ্যে তিনি উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া উপাধির চল দমন করেন। একই সাথে তিনি নারীদের অপহরন এবং বিক্রয় প্রথা বন্ধ করেন, মঙ্গোলদের মধ্যে দাসপ্রথা বন্ধ করেন এবং গৃহপালিত প্রাণী চুরি করার অপরাধে শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার আইন পেশ করেন। এছাড়া চেঙ্গিস খান একটি লিখিত ব্যবস্থা গ্রহনের আদেশ দেন, নিয়মিত আদমশুমারি করার পদ্ধতি চালু করেন, বিদেশী রাষ্ট্রদূতদের কূটনৈতিক নিরাপত্তা প্রদান করেন এবং অন্য যেকোনো রাষ্ট্রে প্রচলিত হওয়ার অনেক আগেই ধর্ম স্বাধীনতার অনুমোদন দেন।
চেঙ্গিস খানের মৃত্যু
১২২৫ সালে জাপান সাগর থেকে কাস্পিয়ান সাগর পর্যন্ত বিশাল সাম্রাজ্যের অধিকারি হিসেবে মঙ্গোলিয়ায় ফেরত আসেন চেঙ্গিস খান। ১২২৭ সালে ঘোড়া থেকে পরে গিয়ে আহত হন চেঙ্গিস খান, যার ফলে দেহের অভ্যন্তরে গুরুতর ভাবে আঘাত প্রাপ্ত হন তিনি। শি শিয়া রাজ্য দখলে তিনি অংশ নেন ঠিকই কিন্তু তিনি সম্পূর্ণ রূপে সুস্থতা লাভ করতে পারেননা। শি শিয়া রাজ্য পতনের ঠিক আগেই ১২২৭ সালের ১৮ই আগস্টে চেঙ্গিস খান পরলোকগমন করেন।
ইতিহাসের যেকোনো ব্যক্তির তুলনায় দ্বিগুণ পরিমাণে রাজ্য জয় করেছিলেন চেঙ্গিস খান। তিনি পূর্ব এবং পশ্চিম সভ্যতাকে একত্রিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তার বংশধরেরাও পরবর্তীতে সফল শাসক হিসেবে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম হয়েছিল। অবশেষে ১৯২০ সালে চেঙ্গিস খানের শেষ বংশধর মৃত্যুবরণ করে এবং চেঙ্গিস খানের শাসনামলের সমাপ্তি ঘটে ।
চেঙ্গিস খানের বাণী
চেঙ্গিস খানের কিছু বাণী বেশ বিখ্যাত। তাদের কয়েকটি নিচে দেয়া হল-
- একজন শক্তিশালী যোদ্ধাও একটি দুর্বল তীরের কাছে হাড় মানতে বাধ্য যখন তার সংখ্যাবৃদ্ধি ঘটে এবং তার অনুসারীদের দ্বারা সমর্থিত হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের ভাইয়েরা তোমাদের সাথে আছে, তোমাদের শত্রুরা কখনই বিজয়ী হতে পারবেনা। কিন্তু যদি তোমরা একে অপরের থেকে মুখ সরিয়ে নাও, তাহলে দুর্বল তীরের মতই তোমাদের ভেঙ্গে ফেলা যাবে।
- পৃথিবীর সবচেয়ে সুখের বিষয় হল শত্রুকে ভেঙ্গে ফেলা এবং আগে যেতে দেয়া, তার শহর ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে যেতে দেখা, তাকে যারা ভালবাসে, তাদের কাঁদতে দেখা, আর তার স্ত্রী কন্যার জন্য নিজের দুই বাহু খুলে দেয়া।
- আমি বিলাসিতা ঘৃণা করি। আমি সংযমের চর্চা করি…………যখন তুমি ভাল কাপড় পড়বে, তোমার কাছে ক্ষিপ্রগতির ঘোড়া থাকবে আর থাকবে সুন্দরী রমণী, তখন তুমি নিজের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য থেকে সহজেই দূরে সরে যাবে। তখন তুমি ক্রীতদাসের চেয়ে ভাল কিছু থাকবেনা, আর নিশ্চিতভাবে সব কিছু হারাবে।
- হে মানুষ, জেনে রাখ যে তোমরা মারাত্মক পাপ করেছ। যদি এর প্রমাণ চাও, তাহলে বলব আমিই প্রমাণ কারণ আমিই ঈশ্বরের শাস্তি। তুমি যদি মারাত্মক কোন পাপ না করতে, তাহলে ঈশ্বর তোমার কাছে আমার মত শাস্তি পাঠাতেন না।
- তুমি যদি ভয় পাও- করোনা, কিন্তু তুমি যদি করতে থাক- ভয় পেয়োনা!
- একটি প্রাচীরের শক্তি আর প্রাচীরকে রক্ষাকারী ব্যক্তিদের সাহস কোনটাই কোন অংশে কম নয়।
- মনে রাখবে, নিজের ছায়া ব্যতীত তোমার কোন সঙ্গী নেই।
- একজন দলপতি ততক্ষণ সুখী হতে পারেনা যতক্ষণ না তার জনগণ সুখী হতে পারে।
- একটি তীর সহজেই ভেঙ্গে ফেলা যায় কিন্তু অনেকগুলো তীর অবিনশ্বর।
zofran sleep
zetia 10mg
aplenzin versus wellbutrin xl
cost terbinafine – order griseofulvin without prescription buy griseofulvin online