উত্থান, বিকাশ ও পতন সভ্যতার ইতিহাসের একটি অবধারিত নিয়ম ৷ একসময় দোর্দন্ডপ্রতাপে রাজ করা সাম্রাজ্য কালের পরিক্রমায় হারিয়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক ৷ এই ভাগ্য অনিবার্যভাবে মুঘল সাম্রাজ্যকেও বরণ করে নিতে হয়েছিল৷ ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দে পানিপথের প্রথম যুদ্ধে ইবরাহীম লোদীকে পরাজিত করে সম্রাট বাবরের হাত ধরে যে ইতিহাসপ্রসিদ্ধ মুঘল সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তন হয়, ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দে পানিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধে যে সাম্রাজ্যের স্হিতিশীলতা আসে অদৃষ্টের নির্মম পরিহাসে সে সাম্রাজ্যই সর্বশেষ শাসক দ্বিতীয় বাহাদুর শাহকে ইংরেজগণ কর্তৃক ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে তথাকথিত সিপাহী বিপ্লবে নেতৃত্ব দানের জন্য রেঙ্গুনে (ইয়াঙ্গুনে) নির্বাসিত করার সাথে সাথে সুদীর্ঘ তিন শতাব্দীর অধিককাল স্হায়ী মুঘল সাম্রাজ্যের পতন ঘটে ৷ কিন্তু উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হচ্ছে এই পতন প্রক্রিয়া অনেকটা হঠাৎ করেই যেন মুঘল সাম্রাজ্যের সর্বশেষ সফল সম্রাট আওরঙ্গজেব-উত্তরকালে দৃশ্যমান হয় ৷ যোগ্য শাসকের ক্রমাগত অনুপস্হিতিতে এবং বিরুদ্ধ পারিপার্শ্বিকতায় আওরঙ্গজেব পরবর্তী দেড়শো বছরের মধ্যে ভারতবর্ষ থেকে মুঘল শক্তি নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় ৷ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের পেছনে জড়িয়ে আছে নানাবিধ কারণ:-

আওরঙ্গজেবের দুর্বল উত্তরাধিকারীগণ
মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের কারণসমূহের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে আওরঙ্গজেব পরবর্তী মুঘল সম্রাটদের অধঃপতন ৷ আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর আরো প্রায় ১৫০ বছর এগার জন সম্রাট সিংহাসনে অধিষ্ঠিত ছিলেন ৷ কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে মুঘল সম্রাটদের উত্তরসূরী হিসেবে একজনও তাঁদের যোগ্যতা প্রদর্শন করতে পারেননি ৷ অধিকাংশ সম্রাটই সামরিক ও প্রশাসনিক যোগ্যতা প্রদর্শনের বদলে মদ্যপান ও নারী সংসর্গেই অধিকাংশ সময় অতিবাহিত করতেন ৷ যদি দ্বিতীয় কোন আওরঙ্গজেবের জন্ম হতো তাহলে হয়তো মুঘল ইতিহাস ভিন্নভাবে লেখার সুযোগ হতো ৷ বাবর, হুমায়ূন, আকবর, জাহাঙ্গীর, শাহজাহান ও আওরঙ্গজেব ছাড়া মুঘল সাম্রাজ্যের হাল ধরবার মতো যোগ্য কোন সম্রাট পরবর্তীতে আর পাওয়া যায়নি ৷

রাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা
রাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার উপর দাঁড়িয়ে থাকা মুঘল সাম্রাজ্যের প্রশাসন ও কর্মকান্ডের পুরোটাই আবর্তিত হতো সম্রাটকে ঘিরে ৷ সম্রাটের দক্ষতার উপরই নির্ভর করতো সাম্রাজ্যের উন্নতি বা অবনতি ৷ আকবর যেখানে সাম্রাজ্যকে সমৃদ্ধির সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছিয়েছিলেন সেখানে উত্তরসূরী হিসেবে জাহাঙ্গীর ও শাহজাহান শুধু তা রক্ষা করার কৃতিত্বই দেখিয়েছেন ৷ অন্যদিকে রাজসিক দক্ষতা থাকার পরও আওরঙ্গজেব কিছু ভ্রান্ত নীতি গ্রহণ করে সাম্রাজ্যজুড়ে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করেছিলেন ৷ জনগণের কাঁধে চাপিয়ে দিয়েছিলেন অনাকাঙ্খিত যুদ্ধের বোঝা ৷ এভাবে সাম্রাজ্যের সার্বভৌমত্ব ও ঐক্যের ফাটল থেকে আওরঙ্গজেবের দুর্বল উত্তরাধিকারীদের পক্ষে উত্তরণ ঘটানো সম্ভব হয়নি ৷ কারণ রাজতান্ত্রিক ব্যবস্হা কার্যকর থাকায় সম্রাটের ব্যক্তিগত দুর্বলতার বিরূপ প্রতিফলন সাম্রাজ্যজুড়েই স্পষ্ট হতে থাকে ৷ এ জন্যই মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের নানাবিধ কারণের মধ্যে রাজতান্ত্রিক ব্যবস্হাকেও দায়ী করা হয় ৷
আওরঙ্গজেবের নীতি
মুঘল সাম্রাজ্যের ঐক্য বিনষ্ট করে একে পতনের দিকে নিয়ে যেতে সম্রাট আওরঙ্গজেবের ভূমিকাকে খাটো করে দেখা যায় না ৷ আওরঙ্গজেব সম্রাট আকবরের মতো ধর্ম নিরপেক্ষ থাকতে পারেন নি ৷ কোন কোন ক্ষেত্রে তিনি গোঁড়া মুসলমানের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন ৷ তাই হিন্দু সম্প্রদায়ের পূর্ণ আনুগত্য অর্জন করা তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়নি ৷ এই নীতির কারণে আওরঙ্গজেব মুঘলদের দীর্ঘদিনের মিত্র রাজপুতদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তাঁদের শত্রুতে পরিণত করেছিলেন ৷ দাক্ষিণাত্যে সম্রাটের ভ্রান্ত নীতির কারণেই মারাঠাদের উত্থান ঘটেছিল ৷ মারাঠাদের দমন করার চেষ্টা তাঁর ভুল সিদ্ধান্ত গুলোর মধ্যে একটি ৷ “দাক্ষিণাত্যের ক্ষত” প্রত্যক্ষভাবে সাম্রাজ্যের পতনে ভূমিকা রাখে ৷ অভিন্ন কারণে পাঞ্জাবে শিখরা বিদ্রোহ করে মুঘল শক্তিকে আরো দুর্বল করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে ৷
উত্তরাধিকার আইন না থাকা
মুঘল বংশে উত্তরাধিকারী মনোনয়নের ব্যাপারে কোন সুনির্দিষ্ট আইন বা নিয়ম না থাকায় “জোর যার মুল্লুক তার”- এ নীতির উপর সিংহাসনলাভ নির্ভর করত ৷ প্রত্যেকটি সম্রাটের মৃত্যুর পরে একেকটি বিরাট ও ভয়াবহ ভ্রাতৃযুদ্ধের সৃষ্টি হতো ৷ জাহাঙ্গীর তাঁর পিতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন এবং তাঁর পুত্রও একইভাবে জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন ৷ এরকম প্রতিটি উত্তরাধিকার সংগ্রাম সাম্রাজ্যের অর্থনৈতিক ও সামরিক ক্ষেত্রে বড় রকমের ক্ষতি সাধন করেছিল ৷

সাম্রাজ্যের বিশালতা
একটি সাম্রাজ্যের বিশালতা একদিকে যেমন তাঁর অহংকার তেমনি অন্যদিকে ডেকে আনতে পারে এর বিপর্যয় ৷ সম্রাট আওরঙ্গজেবের রাজত্বকালে মুঘল সাম্রাজ্যের সীমানা এত ব্যাপক আকার ধারণ করে যে দ্রুত যানবাহন ও যোগাযোগ ব্যবস্হার অভাবের ফলে মাত্র একটি কেন্দ্র হতে সমস্ত প্রশাসন পরিচালনা করা একজন সম্রাটের পক্ষে প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে ৷ সাম্রাজ্যের পরিধি আফগানিস্তান হতে আসাম এবং কাশ্মীর হতে মহীশূর পর্যন্ত বিস্তৃত হওয়ায় অযোগ্য সম্রাটদের শাসনামলে এর নিয়ন্ত্রণ করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে ৷
প্রাসাদ ষড়যন্ত্র
সাম্রাজ্য বিস্তৃতির সঙ্গে সঙ্গে প্রাসাদ ষড়যন্ত্রেরও বিস্তার ঘটে ৷ প্রত্যেক যুবরাজ ও তাঁর পরিবারের দৃষ্টি থাকত সিংহাসনের দিকে ৷ জাতীয় স্বার্থের বদলে এ সময় ব্যক্তিগত স্বার্থই প্রাধান্য পেত ৷ উদাহরণস্বরূপ- নূরজাহানের ষড়যন্ত্রের কারণে শাহজাদা খুররমের কাবুল যাওয়ার আদেশ প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় অঞ্চলটি চিরতরে মুঘলদের হাতছাড়া হয়ে যায় ৷ আবার ষড়যন্ত্রের ফলেই যুবরাজগণ পরস্পর উত্তরাধিকার সংগ্রামে লিপ্ত হতেন ৷ মুঘল সাম্রাজ্যে প্রাসাদ ষড়যন্ত্র এতটাই সাধারণ হয়ে পড়ে যে, যুদ্ধকালে ভাই-বোন থেকে শুরু করে পরিবারের নিকটাত্মীয়রাও সুবিধামতো বিভিন্ন পক্ষে যুক্ত হয়ে যেতেন ৷
প্রাদেশিক শাসনকর্তাদের বিদ্রোহী মনোভাব
অবক্ষয়ের যুগে প্রাদেশিক শাসকদের অনেকেই ছিলেন সম্রাটের আত্মীয় বা ঘনিষ্ঠ বন্ধু-স্বজন ৷ অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য মনে করেই তাদের নিয়োগ দেয়া হতো ৷ কিন্তু নিজেদের অবস্হান শক্ত হওয়ার পরপরই সম্রাটের বিরুদ্ধে এদের বিদ্রোহী মনোভাব প্রকাশ পেত ৷ দুর্বল সম্রাটগণের শাসনামলে প্রাদেশিক শাসনকর্তাগণ স্ব স্ব প্রদেশে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন ৷ যেমন, দাক্ষিণাত্যের নিজামুল মুলক, অযোদ্ধায় সাদত খান, বাংলা, বিহার এবং উড়িষ্যায় আলীবর্দী খান প্রমুখ প্রাদেশিক শাসনকর্তা কেন্দ্রের সাথে হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান না থাকায় কেন্দ্রীয় সরকারের দুর্বলতার সুযোগে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন৷ প্রাদেশিক শাসনকর্তাদের অবাধ্যতা রাজ্যের সংহতির ওপর মারাত্মক আঘাত হানে ৷
অভিজাত সম্প্রদায়ের চরিত্রে অবনতি
মুঘল অভিজাত শ্রেণীর চরিত্রে অবনতি মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের আরেকটি প্রধান কারণ ৷ মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতার সঙ্গে আগত অভিজাতবর্গ ছিলেন কতকগুলি শক্তিশালী ব্যক্তির সমষ্টি ৷ কিন্তু সীমাহীন সম্পদ, ভোগ-বিলাস, আরামপ্রিয়তা, মাদকদ্রব্য সেবন, ঘরভর্তি উপপত্নী ইত্যাদি বদঅভ্যাসের কারণে অভিজাতশ্রেণীর দ্রুত অবনতি ঘটতে থাকে ৷ আর এর প্রভাব পুরো সাম্রাজ্যের উপর পড়ে ৷
অর্থনৈতিক বিপর্যয়
মুঘল সাম্রাজ্যের অর্থনৈতিক কাঠামো বিপর্যস্ত হয় অপূরণীয়ভাবে ৷ প্রজাদের উপর সরকারি দাবি-দাওয়া এত বেশি ছিল যে সাধারণ উৎপাদনকারীদের পক্ষে তা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছিল না ৷ ফলশ্রুতিতে তাদের জীবন ধারণ করাটাই হয়ে পড়েছিল অসনীয় পর্যায়ে ৷ সম্রাট শাহজাহানের রাজত্বকাল ঐশ্বর্যশালী ইমারতের জন্য প্রসিদ্ধ ৷ কিন্তু এইরকম মাত্রাতিরিক্ত ব্যয় দেশের সম্পদরাজির উপর ছিল একটি বিরাট বোঝা ৷ শাহজাহানের রাজত্বের শেষে অর্থনৈতিক অবস্হা চরম পর্যায়ে উপনীত হয় এবং সম্রাট আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর জাতীয় অর্থনৈতিক বিপর্যস্ততা পুরোপুরোভাবে অনুভূত হয় ৷
ক্রমাগত যুদ্ধ
মুঘল সাম্রাজ্যে যুদ্ধ-বিগ্রহ লেগেই থাকত ৷ কখনো সাম্রাজ্য বিস্তারের জন্য আবার কখনো লুঠতরাজ করো অর্থ-সম্পদ সংগ্রহের জন্য ৷ এসব অবশম্ভাবী যুদ্ধের জন্য সকল সম্রাটকেই শক্তিশালী সৈন্যবাহিনী পোষণ করতে হতো ৷ ক্রমাগত যুদ্ধ-বিগ্রহে ক্লান্ত হয়ে জনসাধারণের অনেকেই সম্রাটের প্রতি শেষপর্যন্ত সন্তুষ্ট থাকতে পারেনি ৷ অসন্তুষ্ট হয়ে পড়েছিল সৈন্যবাহিনীর সদস্যরাও ৷ তাছাড়া সামরিক ব্যয় বহন করাও আর সম্ভব হচ্ছিল না এক পর্যায়ে ৷

নৌশক্তির প্রতি উপেক্ষা
একটি নৌবাহিনীর গুরুত্ব মুঘল সরকার কখনো উপলব্ধি করেনি ৷ মধ্য এশিয়া থেকে আসা মুঘলরা স্হলযুদ্ধের অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ ছিল, তাই ভারতীয় বাস্তবতা তেমনভাবে তারা অনুধাবন করতে পারেনি ৷ মুঘলদের নৌশক্তির অভাবেই বিদেশি বণিকগণ ভারতের রাজনীতিতে প্রবেশের সুযোগ লাভ করে ৷
সামরিক শক্তির অবনতি
মুঘলদের সামরিক শক্তির এতই অবনতি ঘটে যে তারা বৈদেশিক আক্রমণ এবং অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা হতে দেশকে রক্ষা করতে সক্ষম হননি ৷ বিভিন্ন যুদ্ধে দক্ষ ও সাহসী সৈন্য মৃত্যুবরণ করছিল একের পর এক কিন্তু অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণে নতুন সৈন্য নিয়োগ দেয়া সম্ভব হচ্ছিল না সম্রাটের পক্ষে আর এর ফলে দিনে দিনে সামরিক শক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে ৷
বৈদেশিক আক্রমণ
আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর সাম্রাজ্যজুড়ে অনৈক্য ও অরাজকতার সুযোগে অনেক স্হানীয় প্রভাবশালী শক্তির উত্থান ঘটে ৷ শিখ, জাঠ,রোহিলা, মারাঠা শক্তির বিরুদ্ধে কুলিয়ে উঠতে পারেনি মুঘলরা ৷ অভ্যন্তরীণ অন্তর্দ্বন্দের ফলে বিদেশী শক্তি সহজেই মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার সুযোগ পায় ৷ পারস্য সম্রাট নাদির শাহ যখন দিল্লিতে উপস্হিত হন তখন মুঘল সাম্রাজ্য মৃতপ্রায় ৷ প্রায় বিধ্বস্ত রাজ্যকে দুর্বলতার সুযোগে নাদির শাহ ও আফগানিস্তানের শাসনকর্তা আহমদ শাহ আবদালী পর্যায়ক্রমে আক্রমণ করে ছিন্ন ভিন্ন করে ফেলে ৷ তার উপর বণিক হিসেবে ভারতে প্রবেশ করলেও ক্রমে ইউরোপীয় গোষ্ঠীগুলো ভারতের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট হয়ে মুঘল সাম্রাজ্যের অভ্যন্তরীণ অস্হিতিশীলতাকে আরো উস্কে দিয়েছিল ৷ ইউরোপীয়দের ভারতীয় উপমহাদেশে প্রভুত্ব কায়েমের তৎপরতার ফলে ইতিহাসপ্রসিদ্ধ মুঘল সাম্রাজ্যের অস্তিত্ব চিরতরে বিলুপ্ত হয়ে যায় ৷
sildenafil 100mg price walmart sildenafil 50mg sildenafil citrate tablets
order levofloxacin generic levaquin 250mg cost
modafinil how to get
clopidogrel coupon
buy clindamycin without prescription
fildena 100 mg price
clindamycin gel generic
buy lexapro 10 mg
zofran pharmacy
ventolin online canada
generic plaquenil price
dexamethasone price in usa
accutane for sale canada
amoxicillin 875 mg tablets
atarax anxiety
order generic propecia online
sildenafil 50 mg cost
finasteride purchase
atarax 10 mg cost
buy gabapentin 50 mg
cipro 500 coupon
bellevue mortgage companies https://dataput.ru email fax free
amoxicillin 500mg where to buy
budecort
zoloft 15 mg
doxycycline 50 mg cost
roofers oklahoma https://news-sport-ua.blogspot.com visa data center
prozac 10 mg tablet
12.5 mg furosemide
phenergan buy online
buy lasix online cheap
вебмани займ онлайн wm-lend.ru