“আর্জেন্টিনা” শব্দটি শোনার সাথে সাথেই আপনার চোখে ভেসে উঠবে মেসি-ম্যারাডোনার ছবি। কিন্তু বাঙ্গালি মেয়েরা যেমন লম্বা চুল বাতাসে দুলিয়ে ফেসবুকে পোজ দেয়, তেমনি ঝাঁকড়া চুল বাতাসে উড়িয়ে ডিবক্সে তথাকথিত “সেক্সি” পোজ দেওয়া দশ নাম্বার জার্সির “মারিও আলবার্তো কেম্পেস ” নামক আর্জেন্টাইন কিংবদন্তিকে ক’জনইবা চেনেন! “Legends are born in july” কথাটা যদি সত্যি হয়, তাহলে মারিও কেম্পেস তার অন্যতম উদাহরন। ১৯৫৪ সালের ১৫ই জুলাই ‘আর্জেন্টিনার কর্দোরবার বেলভিলেতে’ জন্মগ্রহন করেন এই আর্জেন্টাইন কিংবদন্তী। স্ট্রাইকাররা সাধারনত ৯ নম্বর জার্সি পড়ে খেললেও ইতিহাসের ‘One of the most prolific strikers’ “মারিও আলবার্তো ক্যাম্পেস ” খেলতেন ১০ নাম্বার জার্সি পড়ে। পরবর্তিতে সেই লিজেন্ডারি জার্সি ম্যারাডোনা-মেসিরা গায়ে চাপিয়েছেন!
ফুটবলটা তাঁর রক্তেই ছিলো। ফুটবলার বাবা (মারিও) তাঁকে অনেক ছোট বয়সেই ফুটবলার বানানোর জন্য উঠে-পড়ে লেগে যান। কেম্পেসের ও ছিলো ফুটবলের প্রতি প্রবল ঝোঁক। দুইয়ে দুইয়ে মিলে যখন চার হয়, তখন খারাপ কিছু হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম থাকে। হয়তো সেকারনেই পরিনত বয়সে আর্জেন্টিনাকে প্রথম বিশ্বকাপ জেতানো এবং ‘একই বিশ্বকাপে গোল্ডেন বুট এবং গোল্ডেন বল জয়ী ইতিহাসের একমাত্র ফুটবলার’ এই মারিও কেম্পেস ! খুব অল্প বয়সেই তাঁর ফুটবলের হাতেখড়ি। মাত্র সাত বছর বয়সে তিনি স্থানীয় একটি জুনিয়র দলে খেলার সুযোগ পান। ১৪ বছর বয়সে তিনি স্থানীয় ক্লাব ‘Tallers’ এর রিজার্ভ বেঞ্চে জায়গা করে নেন।
১৯৭০ সালে তিনি স্থানীয় ‘Instituto Atlético Central Córdoba’ ক্লাবে যোগ দান করেন। সেখানে তিন বছরে মাত্র ১৩ টি ম্যাচে মাঠে ছিলেন। সব ম্যাচে পুরো সময় খেলার সুযোগ না পেলেও গোল করেন ১১ টি!! এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। একে একে তিনি Rosario Central, Valencia, River plate, Hércules, First Vienna, St. Pölten, Kremser SC, Fernández Vial, Pelita Jaya’ ক্লাবের হয়ে মাঠ কাঁপিয়েছেন। তাঁর ক্লাব ক্যারিয়ারের সবচেয়ে ভালো সময় কাটে স্প্যানিশ ক্লাব ভ্যালেন্সিয়ায়। ১৯৭৬ সালে তিনি ভ্যালেন্সিয়ার মূল দলে যোগ দান করেন। মাঝে কিছুদিন আর্জেন্টাইন ক্লাব রিভার প্লেটের হয়ে খেলেন। আবার ফিরে আসেন ভ্যালেন্সিয়ায়। সেখানে তিনি সর্বমোট ১৮৪ ম্যাচ খেলে করেছেন ১১৬ গোল!! ১৯৭৪ ও ১৯৭৬ সালে ভিন্ন দুইটি আর্জেন্টাইন ক্লাবের হয়ে (National,Metropolitan) আর্জেন্টাইন লীগের (Argentine Primera División) হয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা হন। তিনি ১৯৭৭ ও ১৯৭৮ সালে স্প্যানিশ লালীগায় দুইবার সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরষ্কার পিচিচি ট্রফি জেতেন। এছাড়াও তিনি ভ্যালেন্সিয়ার হয়ে ‘কোপা দেল রে, ইউএফা উইনার্স কাপ, ইউএফা সুপার কাপ’ জেতেন।
মারিও কেম্পেস এর ক্যারিয়ারের সবচাইতে উজ্জ্বল সময়টা কাটে জাতীয় দলের হয়ে ১৯৭৮ বিশ্বকাপে। নিজ দেশে বিশ্বকাপ। স্থানীয় দর্শক, মিডিয়ার আকাশচুম্বী প্রত্যাশা আর পাহাড়সম চাপকে পেছনে ফেলে আর্জেন্টিনার হয়ে প্রথম বিশ্বকাপ জেতেন। নেদারল্যান্ডের বিপক্ষে ফাইনালে একাই দুই গোল করে বুঝিয়ে দেন কেনো তিনি মারিও কেম্পেস !! সেই সাথে একই বিশ্বকাপে গোল্ডেন বুট এবং গোল্ডেন বল জিতে বিশ্বরেকর্ড গড়েন। ২০০৪ সালে ফিফা সর্বকালের সেরা ১০০ জন লিজেন্ডের নাম প্রকাশ করে। স্বাভাবিক ভাবেই সেখানে তাঁর নাম উপরের দিকেই ছিলো। ২০০৭ সালে তাঁকে একটি সোনার পা (goolden foot) উপহার দেওয়া হয়। আর্জেন্টিনার হয়ে ৪৩ ম্যাচে ২০ গোল সহ সবমিলিয়ে ৫৫৫ ম্যাচ খেলে ৩০০ গোল করেছেন এই প্রোলিফিক সেন্টার ফরোয়ার্ড!
ক্যাম্পেসকে শুধু গোলস্কোরার কিংবা পোচার বললে ভুল হবে। তাঁর ড্রিবলিং করার ক্ষমতাও ছিলো অসাধারন। হেডিংয়েও ছিলেন অনন্য। ডিবক্সটা ছিলো তাঁর পছন্দের জায়গা। জনাব মারিও কেম্পেস কে বুঝতে হলে আপনাকে বেশিকিছু করতে হবেনা। আপনার ফোন কিংবা ল্যাপটপে ইউটিউব ওপেন করুন। ১৯৭৮ সালের বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার সব খেলার হাইলাইটস দেখুন। আপনার মনে হবে “ডিবক্সটা যেনো সত্তুরের দশকের সিনেমার পর্দা। আর ক্যাম্পেস সাহেব যেনো সেই সিনেমার কেন্দ্রীয় চরিত্র” ।
তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া, ফিফা ডট কম, বিগসকার।
zyprexa overdose
lamisil order online – diflucan 200mg canada order griseofulvin online
patient information on zofran