অনেকদিন পর আবার আসলাম সেই রূপকথার গল্প নিয়ে। নানা কাজে সময়ই হচ্ছিল না গল্প শুনানোর। গল্প শোনা ব্যাপারটি যতটা মজার, গল্প শোনানোর ব্যাপারটিও কম মজার না। ভালই লাগে আমার। সে কারনেই চলে আসলাম আবার দু’টি চমৎকার গল্প নিয়ে।
হারকিউলিস এর পঞ্চম অভিযানঃ
বেচারা হারকিউলিসের ভাগ্যে শান্তি শব্দটি কোন কালেই ছিল না। জন্ম থেকেই হেরার ক্রোধ তার জীবনপথকে করে তুলেছিল দুর্গম। চতুর্থ অভিযান শেষ হতে না হতেই তাকে ধরিয়ে দেয়া হল আর এক অসম্ভব কাজ। এবারে কাজটি একটু ভিন্ন ধর্মী কাজ। এবার আর কাউকে তাড়া করা বা কোন দানবকে সংহার করা না। ইলিস এর রাজা আগুয়েস এর ছিল এক বিশাল গোশালা, খাঁটি বাংলায় যাকে গোয়াল ঘর বলা হয়। প্রায় তিন হাজার গরু ছিল সেই গোয়ালঘরে। বহু বছর ধরে পরিষ্কার করা হয়নি সে গোয়াল ঘর। আপনারা একটু চিন্তা করলেই বুঝতে পারবেন সেই গোয়াল ঘরের অবস্থা। হারকিউলিসের উপর ভার পড়ল এই গোয়াল ঘর পরিষ্কার করার, তাও আবার একদিনের মাঝে। ব্যাপারটা মোটেই সহজ ছিল না।
যাই হোক হারকিউলিস রাজা আগুয়েসের কাছে গেলেন কিন্তু জানালেন না যে তিনি রাজা ইউরেন্থিয়াস এর আদেশে এসেছেন। আগুয়েসের কাছে গিয়ে তিনি একটি অফার দিলেন, যে হারকিউলিস একদিনের ভিতর এই গোয়াল ঘর পরিষ্কার করে দিবে বিনিময়ে তাকে দশভাগের একভাগ গরু দিতে হবে। রাজা আগুয়েস তো সাথে সাথেই রাজি হয়ে গেলেন। হারকিউলিস তখন আগুয়েস এর ছেলেকে সাক্ষী করে আগুয়েস কে দিয়ে প্রতিজ্ঞা করিয়ে নিলেন।
তারপর সেই গোয়াল ঘরের দুই বিপরীত দিকের দুই দেয়াল হাত দিয়ে সরিয়ে ফেললেন। তারপর বাঁধ দিয়ে আল্ফেয়াস এবং পিনিয়াস নামের দুইটা নদীকে সেই গোয়াল ঘরের ভিতর দিয়ে প্রবেশ করান। সেই দুই নদীর মিলিত স্রোতে ধুয়ে মুছে যায় এত দিনের সব আবর্জনা। কিন্তু ইতোমধ্যে আগুয়েস জেনে যায় যে রাজা ইউরেন্থিয়াসের আদেশে হারকিউলিস এই কাজটা করেছে। তখন হারকিলিস আগুয়েসকে তার করা প্রতিজ্ঞার কথা স্মরণ করতে বলে এবং প্রমাণ হিসেবে আগুয়েস এর ছেলেকে ডেকে আনে। কিন্তু ছেলে কিছু কথা বলার আগেই আগুয়েস ছেলেকে এবং হারকিউলিসকে রাজ্য থেকে বের হয়ে যেতে বললেন। অগত্যা হারকিউলিস চলে গেলেন এবং আগুয়েস এর ছেলে পাশের রাজ্যে তার খালার কাছে থাকার জন্য চলে গেল।
হারকিউলিস এর ষষ্ঠ অভিযানঃ
ইউরেন্থিয়াস মহাশয় তাঁর এই কাজটাকে কাজ হিসাবেই ধরে নাই, কারন হল হারকিউলিস কাজটার জন্য পারিশ্রমিক চেয়েছিল। আরে বাবা ইউরেন্থিয়াস তোমার কাছে তো চায় নাই হে, তোমার সমস্যা কি! যাই হোক আসল কাহিনীতে ফিরে আসি। বলা বাহুল্য যে হারকিউলিসকে আর একটা অসম্ভব কাজ ধরিয়ে দেয়া হল, স্ট্যিম্ফ্যালোস নামে এক শহর ছিল, সেই শহরের পাশে ছিল এক বৃহৎ জলাশয়। সেই জলাশয়ে বাস করত এক ধরনের পাখির ঝাঁক, যাদেরকে স্ট্যিম্ফ্যালোসের পাখি বলা হত। সেই পাখির ঝাঁককে মেরে ফেলাই ছিল তাঁর এবারের কাজ।
এই পাখিদের গুণের কথা আর কি বলব, সারসের মত দেখতে এই পাখির ঠোঁট ছিল পেতলের, যা কিনা যে কোন শিকারির বর্ম ভেদ করে দিতে পারত, ধাতুর তৈরি পালক ছিল যা ছুঁড়ে দিয়ে যে কাউকে ধরাশায়ী করে ফেলতে পারত, তার উপর সে পাখির বিষ্ঠাও ছিল খুব বিষাক্ত। গোদের উপর বিষফোঁড়া হিসেবে এই পাখি গুলো আবার যুদ্ধদেবতা এরিসের অত্যন্ত প্রিয় ছিল। মোটের উপর বলতে গেলে এই পাখি শিকারে গেলে জীবন নিয়ে ফিরে আসার আশা করাই কঠিন, ওদের মারা তো বেশ পরের কথা।
তাতে কি আর হারকিউলিস হার মানে, সে সোজা চলে গেল সে জলাশয়ের পাশে। গিয়ে বেশ চিন্তায় পড়ে গেল। জলাশয়ে নামলে সে সাঁতরাবে না পাখি মারবে, এর চেয়ে কোন উপায়ে যদি পাখি গুলোকে উপরে উঠানো যেত তাহলে বেশ সহজেই কাজটা সাবার করা যেত। কিন্তু কিভাবে তুলবে এই পাখির ঝাঁককে উপরে।
হারকিউলিসের এই দুশ্চিন্তা দেখে এগিয়ে এলেন দেবী এথেনা, শিল্পের দেবতা হেফাস্তোসের তৈরি এক খঞ্জনি দিলেন তিনি হারকিউলিসকে। বলা হয়ে থাকে যে সূর্যের শক্তির কিছু অংশ দিয়ে এই খঞ্জনি বানানো হয়েছিল। তো সেই খঞ্জনি নিয়ে হারকিউলিস উঠলেন এক পাহাড়ের উপর, তারপর প্রাণপণে বাজাতে লাগলেন সেটাকে। সেই বিকট শব্দে সব পাখি উড়তে লাগল আকাশে। সেই অবসরে হারকিউলিস সেই হাইড্রার রক্ত মাখা তীর দিয়ে ঝটপট মারতে লাগলেন সেগুলোকে। বেশিরভাগ পাখিই মারা গেল, কিছু পাখি গেল পালিয়ে। সেই পালিয়ে যাওয়া পাখির গল্প আরেকদিন বলব। তো হারকিউলিস সেই মৃত পাখি গুলো থেকে কিছু পাখি প্রমাণ স্বরূপ নিয়ে ফিরে গেলেন রাজা ইউরেন্থিয়াসের কাছে। রাজা পাখিগুলো দেখে বেশ মুষড়েই পড়লেন। যাই সে গল্প পরের পর্বে হবে।
বাঙালি গল্প করতে ভালবাসে, গল্প শুনতে ভালবাসে। সেই ছোট বেলায় দাদীর কাছে শোনা রূপকথার গল্প থেকে শুরু হয়ে সে ভাললাগা নিরন্তর পুরো জীবন জুড়েই ছড়িয়ে থাকে। বাস্তব জীবনযুদ্ধের হতাশার মাঝে একটু কল্পনারাজ্যের সুখ ছড়িয়ে দেয়ার উদ্দ্যশ্যেই এই গল্পবলা।
প্রথম পর্বে পারসিয়াস এর কাহিনী পড়তে এখানে ক্লিক করুন – গ্রীক মিথলজি – দেবতাদের মানব সন্তানঃ প্রথম পর্ব (পারসিয়াস)
দ্বিতীয় পর্বটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন – গ্রীক মিথলজি – দেবতাদের মানব সন্তানঃ দ্বিতীয় পর্ব (হারকিউলিস)
তৃতীয় পর্বটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন – গ্রীক মিথলজিঃ দেবতাদের মানব সন্তান, তৃতীয় পর্ব (হারকিউলিসের দ্বিতীয় অভিযান)
চতুর্থ পর্বটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন – গ্রীক মিথলজি – দেবতাদের মানব সন্তানঃ তৃতীয় পর্ব (হারকিউলিসের তৃতীয় এবং চতুর্থ অভিযান)
terbinafine 250mg cost – grifulvin v canada griseofulvin brand