বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড, অমরত্ব নাকি পুনরাবৃত্তি

3

 

শুরু হচ্ছে ২০১৮ সাল। নতুন বছরে অনেক কিছু আসবে যাবে, ঘটে যাবে অনেক ঘটনাই। গেথে থাকবে কি সবগুলোই? নাহ শুধু গ্রেটেস্ট শো অন আর্থগুলোই গেথে থাকে দিনশেষে। ২০১৮ আসছে ফিফা বিশ্বকাপ নিয়ে। পৃথিবী হয়ত ১মাসের জন্য থেমে যাবে, বুদ হয়ে থাকবে ভিনদেশি কিছু পতাকার প্রেমে। কাজের মাঝেও হয়ত মন পড়ে থাকবে রাশিয়ার কোন এক ১২০ গজের সবুজ মাঠে। ১৮ জুন পতাকা উঠবে বিশ্বকাপের। ৩২ দলের আসরসেরা হওয়ার এই দৌড়ে এগিয়ে কারা, কারাই বা থাকছে না এবার শুরু হয়ে গেছে জ্যোতিষীদের ভাগ্যগণনা।

ফুটবলের জন্ম হয় চীনে, কিন্ত এর বিকাশ ইংল্যান্ড এই। বলা হয়ে থাকে ব্রিটিশরা সারা বিশ্ব শাসন করার ফলেই বিস্তৃতি ছড়িয়েছে এই মন্ত্রমুগ্ধকর খেলার। ৯০ মিনিট জীবনের কোন ফাঁকে বেরিয়ে যায় তা বোঝার অবকাশ থাকেনা। ব্রিটিশরা সরাসরি না হলেও অনেকাংশেই এই খেলার জনক পর্যায়ের কেউই হবে। তাদের বিশ্বকাপ সাফল্য রয়েছেও। ১৯৬৬ সালে বিতর্কিত সেই জার্মানিকে হারিয়ে জিতেছিল জিওফ হার্স্টের গোলে জিতেছিল তারা। এরপর থেকে আর ফাইনালে ওঠা হয়নি তাদের। তারা কি এই ব্যর্থতা ঘোচাতে পারবে এবার? কেমনই বা তাদের সম্ভাবনা? আলোচনা করা যাক এবারের আসরের অন্যতম এক “ডার্ক হর্স” নিয়ে।

কোচঃ গ্যারেথ সাউথগেট

গ্রুপঃ ইংল্যান্ড, পানামা, তিউনিশিয়া, বেলজিয়াম

সম্ভাব্য দল
সম্ভাব্য দল
Source: The Sun

ইংল্যান্ড এর দলে যারা থাকবে বলে দেওয়াই যায় তারা সবাই এই মুহূর্তে ইংলিশ লিগেই খেলছেন। যদিও ২৩ জনের দলে প্রতিবারই চমক থাকে। এবারও যে থাকবে না তা বলা যাচ্ছেনা। বার্নলির হয়ে ভালো একটি সিজন কাটানোর পরেও হয়তবা পোপ এর দলে জায়গা নাও হতে পারে। বড় দলের কোন তারকা খেলোয়াড় বাদ পড়লেও পড়তে পারে বরাবরের ন্যায়। কোচের সাথে হয়তবা স্মলিং এর ঝামেলা চলছে। আর হয়ত ফেরা হচ্ছে না তার জাতীয় দলে। তারপরেও এই সিজনের ফর্ম, অভিজ্ঞতা, কোচের পছন্দের তালিকা বিবেচনা করে নিম্নোক্ত ২৩ জনের নাম আশা করা যায়।

ফরওয়ার্ডঃ কেন, ভার্ডি, র‍্যাশফোর্ড(৩)

মিডঃ স্টার্লিং, আলি, হেন্ডারসন, লিনগার্ড, উইঙ্কস, ইয়ং, ডায়ার, চেম্বারলিন, লোফটাস চিক, মিলনার(১০)

ডিফেন্সঃ ওয়াকার, ট্রিপিয়ার, জোন্স, স্টোন্স, ম্যাগুয়ার, বারট্রান্ড, রোজ(৭)

গোলকিপারঃ হার্ট, পোপ, পিকফোর্ড(৩)

কেন জেতা সম্ভবপর

গত ৩/৪ সিজনের ইপিএল এর সেরা পারফর্মারদের একজন হ্যারি কেন। গোলের ফুলঝুরি এবারও ছুটছে তার। মুহূর্তেই শুন্য থেকে কোন কিছু করে ফেলার ক্ষমতা রয়েছে তার। গত ২/৩ বছর হিসাবে আনলে অবধারিত ভাবেই বিশ্বের অন্যতম সেরা ফরওয়ার্ড তিনি। তার সাথে রয়েছে তারই ক্লাব সতীর্থ ডেলে আলির বোঝাপড়া। একসাথে খেলার দরুন একে অপরের খেলাটা বোঝেন বেশ ভালোই। কেন গেল বছর ভেঙ্গেছেন মেসি রোনালদোর একচ্ছত্র আধিপত্যর এক রেকর্ড, এক বছরে সর্বাধিক ৫৭ গোল করে পেছনে ফেলেছেন মেসি-রন-কাভানি-লেওয়ার মত ফরওয়ার্ডদের। এছাড়াও শিয়েরার এর এক বছরে ইপিএল এর সর্বাধিক(৩৬) গোল এর রেকর্ড ভেঙ্গে করেছেন ৩৯ গোল। সময়টা তো তার পক্ষেই কথা বলছে।

শিয়েরার এর রেকর্ড ভাঙ্গা ৩৯গোল
শিয়েরার এর রেকর্ড ভাঙ্গা ৩৯গোল

এবার সম্ভবত স্পার্স থেকেই ডায়ার-আলি-কেন এই ৩ জন খেলবে। একই ক্লাবে খেলার জন্য হয়ত টিম কম্বিনেশন এ অনেকটাই এগিয়ে থাকবে এই জায়গাতে।

মেসি-রোনালদোকে ছাড়িয়ে কেন
মেসি-রোনালদোকে ছাড়িয়ে কেন

কেন এর পাশাপাশি টিমে থাকছে র‍্যাশফোর্ড-স্টার্লিং-আলি এর মত গোল স্কোরার প্লেয়ার। শুধু কেনকেই গোল করতে হবে তাই নয়। গোল করার ক্ষমতার প্রমাণ দিয়ে আসছেন র‍্যাশফোর্ড, স্টার্লিং এই সিজনে এখন পর্যন্ত সিটিকে বাঁচিয়েছে কত ম্যাচ তা বলার দরকার নেই। ফিনিশিং এ অনেক উন্নতি করেছেন তার চেয়েও বড় কথা দলের দুঃসময়ে জ্বলে উঠছেন এবার কয়েকদফা।

ইংল্যান্ড এর ডিফেন্ডাররা সম্ভবত এবারই এই দশকের মাঝে সেরা ফর্মে আছেন। ওয়াকার, স্টোন্স তো সিটির রক্ষণভাগ আগলে রেখেছেন এবার সফলতার সাথেই। ৫০ মিলিওন দামের স্টোন্স নিজের ফর্মের ঝলক দেখিয়ে দামের প্রতি সুবিচার করেও যাচ্ছেন। ওয়াকার সবচেয়ে দামি ডিফেন্ডার হলেও ঠিকঠাক মতই সামলেছেন ডিফেন্স, সাথে উপরে উঠে এসে করেছেন সাহায্য করছেন আক্রমণেও। এদের বাহিরে বেঞ্চে যারা থাকছে তারাও নিজেদের প্রমাণ করে চলেছেন এই সিজনে। ট্রিপিয়ার, ম্যাগুয়ার, কাহিল এরাও টিম এর হয়ে নামলে নিজেদের খেলা খেললে যথেষ্ট ফলাফল আনতে সক্ষম। ডিফেন্স ইউনিট যদি নিজেদের সেরাটা এক হয়ে খেলতে পারে তবে এই ৪ জন হয়ত আটকে দেবে যে কোন দলের অ্যাটাক।

কেনের পিছনে আলিই থাকবেন প্লেমেকার এর দ্বায়িত্বে। তার বায়ে র‍্যাশফোর্ড, ডানে স্টার্লিং। তাদের পিছনে ডায়ার-হেন্ডো জুটির সম্ভাবনাই বেশি। ডায়ারের পাসিং এর সাথে সামনের ৪ জনের কাউন্টার অ্যাটাকের সময়ের গতি হয়ত পুরনো দিনের ইংল্যান্ডকে নিয়ে সেই “হিট অ্যান্ড রান” উক্তিটিই মনে করিয়ে দেবে। সিএম/সিডিএম এর বিকল্প হিসেবে বেঞ্চ থেকে উঠে আসবে অক্স/উইঙ্কস, উইংঙ্গার এর বিকল্প হিসেবে থাকবে লিঙ্গা/চিরযুবা অ্যাশলে ইয়ং। বেঞ্চ তাদের খুব নামকরা খেলোয়াড়ে ভর্তি না হলেও কাজের মত খেলোয়াড় থাকছেই।

দুর্বলতা

১.কোচঃ

ইংল্যান্ড এর আজীবন সমস্যা কোচ নিয়ে। হজসন এর মত নরম মানুষ কিংবা ক্যাপেলোর মত রগচটা মানুষ দিয়েও এই টিমের উন্নতি হয়নি। সাউথগেট আহামরি কোন ট্যাক্টিশিয়ান না। বাছাইপর্বের ১০ ম্যাচের ৮টিতে জয় নিয়ে গ্রুপের শীর্ষে ছিল তার দল, কিন্ত ফ্রেন্ডলি ম্যাচগুলোতেও পাওয়া যায়নি কোন বিশেষ ট্যাক্টিকস এর ছোঁয়া। মোটামুটি প্রায় একই একাদশ, কিছু প্লেয়ারকে প্রাধান্য দেয়া, গতানুগতিক ট্যাক্টিকস। বিশ্বকাপের মঞ্চে চাপের মাঝে পড়ে গেলে গতানুগতিক এই খেলা দিয়ে হয়ত উনি পার পাবেন তো?

২.মিডিয়াঃ

ইংল্যান্ড এর ঘরের শত্রু বিভীষণ এই ইংলিশ মিডিয়া। প্রতিবার বড় কোন আসর আসলেই তাদের কাগজে কলমে চ্যাম্পিয়ন হয়েই যায় ইংল্যান্ড(বাকি থাকে হয়তবা আনুষ্ঠানিকতা) যা টিম এর উপর প্রভাব ফেলেই। আকাশচুম্বী প্রত্যাশার পারদের চাপের প্রতিফলনের হিসাবে হারিয়ে যায় বরাবরই। কেন হয়ত লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা হবেন এবার, উঠে যাবে তাকে নিয়ে প্রত্যাশার পারদ। স্টার্লিং এর ফর্ম অব্যাহত থাকলে তাকে নিয়ে দ্বিমুখী সাপের মত প্রশংসনীয় লেখালিখি চলবেই। যদিও শেষবার ইউরোর আগে পরে তাদের মিডিয়ার হইচই পাওয়া যায়নি। এবারও যদি না ওঠে তাহলে হয়তবা কিছুটা চাপমুক্ত হয়ে খেলতে পারবে তারা।

৩.সিএম পজিশনঃ

ইংরেজিতে একটা প্রবাদ আছে “mid field is the heart of football.” সিএম পজিশনে ইংল্যান্ডের অবস্থা খুব সুবিধার নয়। ডায়ার/হেন্ডো হয়ত প্রতিপক্ষের অ্যাটাক নষ্ট করতে পারবেন, কিন্ত বল ট্যাকল করে সামনে ঠেলে দেওয়ার মত কি-প্লেয়ার নন তারা যেমনটা রিয়াল মাদ্রিদে ক্রুস/মড্রিচ করে থাকেন। হেন্ডোড় খেলা নিয়ে তো পার লিভারপুল সমর্থকরাও বিরক্তবোধ করে। এছাড়াও অক্স/লিভারমোর যাকেই নেওয়া হোক এই কাজটা করার মত সিএম ইংল্যান্ড এ এই মুহূর্তে নেই। আলির কাছে ফাইনাল থার্ডে বল নিখুঁতভাবে পৌঁছে দেয়ার জন্য যথেষ্ট শ্রম দিতে হবে মিডফিল্ডের জুটিকে। ইউরোপের অন্য শিরোপাপ্রত্যাশী দলগুলোর এই পজিশনের তুলনায় ইংল্যান্ড যথেষ্ট পিছিয়ে।

৪.মাত্র একজন no 10:

পুরো দলে আলি ছাড়া প্রতিষ্ঠিত নং১০ নেই আর। অর্থাৎ আলি আটকাও তো ইংল্যান্ড আটকাও টোটকাটা হয়তবা একপ্রকার নিশ্চিত করেই মাঠে নামবে প্রতিপক্ষরা। কোনভাবে যদি আলির দিন খারাপ যায় তাহলে হয়ত ভুগতে হবে পুরো ইংল্যান্ড দলকেই। আলির কাছে বল যাওয়া আটকে দিলেও তিনি নিজে থেকে বের করে নিতে পারবেন কিনা সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। তার বদলিও নেই দলে এই মুহূর্তে।

৫.রোড টু ফাইনাল ট্র্যাক

ইংল্যান্ড যদি গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে ওঠে
ইংল্যান্ড যদি গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে ওঠে

ইংল্যান্ড গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন বা রানার্সআপ যাই হোক না কেন তাদের সেমিফাইনাল/ফাইনাল পর্যন্ত যাওয়ার রাস্তাটা খুব একটা সহজ হবে না। গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হলে কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিল, সেমিতে ফ্রান্স/পর্তুগাল এর মুখোমুখি হয়ে ফাইনালে পৌঁছাতে গেলে তাদের অবশ্যই নিজেদের ছাড়িয়ে যেতে হবেই হবে। অপরদিকে গ্রুপ রানার্সআপ হলে কোয়ার্টার ফাইনালেই পড়তে হবে জার্মানির সামনে। তাদের ঠেলে সরিয়ে দিতে পারলেও সেমিতে পড়তে হবে আর্জেন্টিনা/স্পেনের সামনে। বাঘা বাঘা প্রতিপক্ষরা তাদের সামনে পরবেই।

ইংল্যান্ড যদি গ্রুপ রানার্সআপ হয়ে ওঠে
ইংল্যান্ড যদি গ্রুপ রানার্সআপ হয়ে ওঠে

একাদশ

 

সম্ভাব্য একাদশ সম্ভাব্য সেরা একাদশঃ
হার্ট

ওয়াকার–জোন্স–কাহিল–ইয়ং

হেন্ডারসন©–ডায়ার

স্টার্লিং–আলি–র‍্যাশফোর্ড

কেন

পোপ

ওয়াকার–জোন্স–স্টোন্স–বারট্রান্ড

উইঙ্কস–ডায়ার©

স্টার্লিং–আলি–র‍্যাশফোর্ড

কেন

 

আপাতত মোটামুটিভাবে বলা যায় যে ইংল্যান্ড এর শিরোপা জেতার সম্ভাবনা অনেকটাই কম। বাজির দরটাও ১/১৬। বোঝাই যাচ্ছে পার সমর্থক ছাড়া কেউই হয়ত আশা করছে না, কিন্ত বিশ্বকাপ তো অমরত্তেরই সমান। এবার হয়ত তারা সমীকরণে নেই, কারও ধারনায় আসছে না ইংল্যান্ডের কথা, নেই প্রত্যাশার চাপ কে জানে হয়তবা ডার্ক হর্সের সুত্র মেনে অঘটন ঘটিয়ে থ্রি লায়ন্সরা ‘৬৬ সালের মত জিতে এই তরুনতুর্কীরা চলেও যেতে পারে অমরত্বের পথে। নাহয় হয়তবা ঘটবে আরেকটি ব্যর্থতার পুনরাবৃত্তি।

Leave A Reply
3 Comments
  1. Gvwqel says

    terbinafine 250mg ca – griseofulvin price buy grifulvin v no prescription

sativa was turned on.mrleaked.net www.omgbeeg.com

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More