দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ (১৯৩৯–১৯৪৫)
বিশ্বের ইতিহাসে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা নারকীয় হলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ছিলো বিভীষিকাময়, এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই । ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের নির্বাচনে হিটলারকে প্রধানমন্ত্রী করেন বয়োবৃদ্ধ প্রেসিডেন্ট হিন্ডেনবার্গ এবং ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দের ২ আগস্ট হিন্ডেনবার্গের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে হিটলার জার্মানির সর্বাত্মক ক্ষমতার অধিকারী হন । ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে স্পেনের গৃহযুদ্ধ শুরু হলে জার্মানি ও ইতালি স্পেনকে সহায়তা করে । স্পেনের গৃহযুদ্ধ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকে উস্কে দিলেও মূলত ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের ১ সেপ্টেম্বর জার্মানির পোল্যান্ড দখলের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয় । তবে এটি এ যুদ্ধের প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচিত হয় না ।
ভার্সাই সন্ধি ও জার্মানির উগ্র জাতীয়তাবাদ:
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মূল কারণ ভার্সাই সন্ধির মধ্যেই নিহিত ছিলো বলে অনুমান করা হয় । কেননা ভার্সাই সন্ধির অপমানজনক শর্ত জার্মানির জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় মর্যাদার উপর চরম আঘাত হেনেছিলো । মিত্রপক্ষ জার্মানির সকল উপনিবেশ কেড়ে নেয় এবং বিশাল ক্ষতিপূরণের বোঝা চাপিয়ে দেয় । এই চুক্তির মধ্য দিয়ে জার্মানি ইউরোপ মহাদেশে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু হয়ে পড়ে । প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরাজয়ের গ্লানি জার্মান জাতিকে অভূতপূর্ব আত্মচেতনা ও জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটায় ।
সাম্রাজ্যবাদ ও তোষণ নীতি: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অপর গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো সাম্রাজ্যবাদ নীতি। জার্মানি যুদ্ধের সুযোগ নিয়ে সাম্রাজ্য বিস্তার করতে চেয়েছিলো । বিশেষ করে স্পেনের গৃহযুদ্ধে জার্মানি ও ইতালির প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপের ফলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয় ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঘটনা প্রবাহ
প্রথম পর্যায় (১৯৩৯–১৯৪১): ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের ১ সেপ্টেম্বর জার্মানি কতৃক পোল্যান্ড দখলের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয় । পোল্যান্ড আক্রমণ করার জন্য ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স ৩ সেপ্টেম্বর জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে । ১৭ সেপ্টেম্বর রাশিয়া পোল্যান্ড আক্রমণ করে । রাশিয়া ও জার্মানির আক্রমণে পোল্যান্ড সহজেই বিধ্বস্ত হয় । অতঃপর রুশ–জার্মান অনাক্রমণ চুক্তির মধ্য দিয়ে জার্মানি ও রাশিয়া পোল্যান্ড নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেয় । পোল্যান্ড আক্রমণের পর রাশিয়া ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে তিনটি বাল্টিক রাষ্ট্র এস্তোনিয়া, লাটভিয়া ও লিথুয়ানিয়া দখল করে নেয় । পোল্যান্ড আক্রমণের পর জার্মানি স্ক্যান্ডিনেভিয়ার দুটি দেশ নরওয়ে ও ডেনমার্কে আধিপত্য বিস্তার করে এবং রাশিয়া ফিনল্যান্ড অধিকার করে । ফলে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের নিষ্ক্রিয়তা সমালোচিত হলে ফ্রান্সে দালাদেইর মন্ত্রিসভা এবং ইংল্যান্ডে চেম্বারলেইন মন্ত্রিসভার পতন ঘটে । জার্মানি ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে লুক্সেমবার্গ, বেলজিয়াম ও নেদারল্যান্ড দখল করে এবং বেলজিয়াম সীমান্ত দিয়ে ফ্রান্স আক্রমণ করে, ইঙ্গ–ফরাসি বাহিনীকে পরাজিত করে এবং ডানকার্ক অধিকার করে । ফ্রান্সের বৃহত্তর অংশ জার্মানি দখল করে । ফলে জার্মানির সমর্থনপুষ্ট সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় ফ্রান্সের বৃহত্তর অংশে । ফ্রান্সের অন্য অংশে Da Gaule এর সরকার গঠন করা হয় । ফ্রান্সের এই পতনের ফলে গোটা বিশ্ব চমকিত হয় । এমতাবস্থায় সকলে মনে করতে থাকে ইউরোপ জার্মানির পদানত হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র । ইতঃপূর্বে ফ্রান্সের পতন অত্যাসন্ন দেখে জার্মানির মিত্র ইতালিও মিত্রপক্ষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে । এর ফলে জার্মান নাৎসি আরো শক্তিশালী হয় । ফ্রান্স দখল করার পর জার্মানি ইংল্যান্ড অভিযানের পরিকল্পনা করে । হিটলার আশা করেছিলেন মিত্রশক্তির পরাজয়ের ফলে ইংল্যান্ড জার্মানির সঙ্গে শক্তি স্থাপনের প্রস্তাব দেবে । কিন্তু ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী চার্চিল দ্ব্যার্থহীন ভাষায় ঘোষণা করেন, শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও ইংল্যান্ড জার্মানির প্রতিরোধ করবে । হিটলারের পক্ষে ফ্রান্সের ন্যায় ইংল্যান্ড অধিকার করা সম্ভব ছিলো না ইংলিশ চ্যানেলের কারণে । ইংলিশ চ্যানেল ইউরোপের মূল ভুখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন করে ইংল্যান্ডের প্রতিরক্ষা ব্যাবস্থাকে প্রাকৃতিকভাবে সুদৃঢ় করেছে । অপরদিকে, ইংল্যান্ড ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জে নৌ–বাহিনী মোতায়েন করে । এর ফলে হিটলার আকাশ পথে বিমান হামলা করে ইংল্যান্ডকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার রণপরিকল্পনা গ্রহণ করে । পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের ৮ আগস্ট থেকে ইংল্যান্ডে বিমান হামলা শুরু হয় । ১৫ আগস্ট প্রায় ১০০০ বোমারু বিমান ইংল্যান্ড আক্রমণ করে । এর মধ্য দিয়ে জার্মানি ইংল্যান্ডের সাথে সাবমেরিন যুদ্ধ শুরু করে । এর প্রতিক্রিয়ায় ইংল্যান্ড বিমান জার্মানির শিল্পসমৃদ্ধ অঞ্চল রুঢ়, কোলন নগর ও রেলজংশনসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আক্রমণ করে । ফলে জার্মানি অসম প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু করে এবং জয়লাভে অসমর্থ হয় ।
বলকান অঞ্চলে জার্মানি উল্লেখযোগ্য সাফল্য লাভ করে । ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের ২৮ অক্টোবর জার্মানি গ্রিস দখল করে । অতঃপর পতন হয় রুমানিয়ার । ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের ১ মার্চ বুলগেরিয়া জার্মানির কাছে আত্মসমর্পন করে । যুগোশ্লোভাকিয়া জার্মানির বশ্যতা অস্বীকার করলে জার্মান সেনাবাহিনী আকাশ ও স্থল পথে আক্রমণ করলে আত্মসমর্পনে বাধ্য হয় যুগোশ্লোভাকিয়া । এসময় বলকান অঞ্চলে জার্মানির প্রাধান্য দেখে নীতি পরিবর্তন করে তুরস্ক জার্মানির সাথে অনাক্রমণ চুক্তি করে । এভাবে সমগ্র বলকান অঞ্চল জার্মানির পদানত হয় ।
দ্বিতীয় পর্যায় (১৯৪১–১৯৪২): ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে জার্মানি কতৃক রাশিয়া আক্রমণ উল্লেখযোগ্য ঘটনা। ২২ জুন হিটলার অনাক্রমণ চুক্তি ভঙ্গ করে রাশিয়ায় অতর্কিত আক্রমণ করে । হঠাৎ করে হিটলার কেন চুক্তি ভঙ্গ করে রাশিয়া আক্রমণ করলেন এর উত্তরে বলা যায় হিটলার এই চুক্তির ব্যাপারে আন্তরিক ছিলেন না । তাঁর কাছে এই চুক্তি ছিলো কৌশলমাত্র । এসময় ইংল্যান্ডের যুদ্ধকালীন প্রধানমন্ত্রী চার্চিল রাশিয়াকে সাহায্য করার আশ্বাস দেন ইভং দেশের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় । ১৭ জুলাই জার্মান সেনাবাহিনী কার্জন লাই ভেঙে স্লোলেনস্ক শহরে চলে আসে । লেনিনগ্রাডকে কামানের আওতাধীন করা ও দক্ষিণে কিয়েভ ও ওডেসা বন্দর অধিকার করে । কিন্তু আগস্ট মাস থেকে রাশিয়া জার্মানির বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুললে জার্মানির অগ্রগতি ব্যহত হয় ।
এদিকে ইতালি ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডের দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে ইঙ্গ–ফরাসি উপনিবেশগুলো দখল করার চেষ্টা চালায় । কিন্তু আফ্রিকায় ইংরেজ সেনাপতি লর্ড ওয়াভেলের হাতে ইতালি পরাজিত হয় । এই অবস্থায় হিটলার আফ্রিকায় ইতালিকে পরাজয়ের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য তাঁর সেনাপতি রোমেলকে আফ্রিকায় প্রেরণ করেন । রোমেল ইতালির রণপরিকল্পনার স্থলে নিজস্ব রণপরিকল্পনা তৈরি করেন এবং দশদিনের মধ্যে ইংরেজদের মিশর ত্যাগ করতে বাধ্য করেন । কিন্তু শীঘ্রই ইংরেজ সেনাপতি ফিল্ড মার্শাল মান্টোগোমারি এল–আলমিনের যুদ্ধে রোমেলকে পরাজিত করেন এবং মিশর পুনর্দখল করেন । ইতঃপূর্বে মার্কিন সেনাবাহিনী আফ্রিকায় ব্রিটিশদের সাথে যোগ দেয় । ইঙ্গ–মার্কিন যৌথ আক্রমণে উত্তর আফ্রিকা অক্ষশক্তির হাতছাড়া হয় । ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে জার্মানি, ইতালি ও জাপানের মধ্যে ত্রিশক্তি চুক্তি সম্পাদিত হয় । জার্মানি ও ইতালির সঙ্গে জাপানের মৈত্রী চুক্তি সম্পাদনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ক্ষুব্ধ হয় । মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিরপেক্ষ নীতি গ্রহণ করেছিলো । ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাধ্যতামূলক সামরিক শিক্ষা প্রবর্তনের জন্য আইন প্রণয়ন করা হয়।
১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল আটলান্টিক মহাসাগরে এক ব্রিটিশ যুদ্ধজাহাজে গোপন বৈঠকে মিলিত হন এবং দীর্ঘ আলোচনার পর জার্মানির বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে যুদ্ধ পরিচালনার বিষয়ে একমত হন । আলোচনার পর তাঁরা আটলান্টিক সনদ সম্পাদন করেন । ১৯৩৯–১৯৪১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়ে জাপান ইউরোপে যুদ্ধের তীক্ষ্নতা লক্ষ্য করে এবং সেই সাথে পূর্ব ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জে সামরিক প্রস্তুতি দ্রুত বাড়াতে থাকে । জাপানের এই শক্তিবৃদ্ধির ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিচলিত হয় । আলোচনা চলাকালীন জাপান ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের ৭ ডিসেম্বর ভোর ৭ টা ৫৫ মিনিটে প্রশান্ত মহাসাগরের হাওয়ায় দ্বীপে মার্কিন নৌঘাঁটি পার্লহারবারে অকস্মাৎ প্রচণ্ড বিমান হামলা করে । এরপরই জাপানের প্রধানমন্ত্রী তেজো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্রশক্তিগুলোর বিরুদ্ধে ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের ৮ ডিসেম্বর যুদ্ধ ঘোষণা করে । এই দিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও যুদ্ধ ঘোষণা করে ।
তৃতীয় পর্যায় (১৯৪২–১৯৪৩): ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে জাপান নতুনভাবে আক্রমণ শুরু করে এবং মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর দখল করে । সিঙ্গাপুর দখলের পর জাপান ডাচ উপনিবেশ সুমাত্রা, জাভা, বালি প্রভৃতি দ্বীপপুঞ্জ অধিকার করে । জাপানি সেনাদলের অপর শাখা মালয়েশিয়া থেকে ব্রহ্মদেশে প্রবেশ করে । ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ৮ মার্চ ব্রহ্মদেশের রাজধানী রেঙ্গুন অধিকার করে । অপরদিকে ব্রিটিশ বিমান জার্মানির শিল্প–শহরগুলোর উপর হামলা করতে থাকে । ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের আগস্টে জার্মানি রাশিয়ার অভ্যন্তরে পূর্ব সীমান্তে প্রবেশ করে । চেষ্টা করে মস্কো অবরোধের । জার্মানিতে অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঘটে । রাশিয়ার লাল ফৌজ প্রচুর ক্ষতি স্বীকার করেও জার্মান সেনাবাহিনীকে বাধা দেয় । রাশিয়ান সেনাবাহিনী এ সময় জার্মানির বিরুদ্ধে প্রচণ্ড আক্রমণ শুরু করলে জার্মান সেনাবাহিনী পশ্চাদপসারণ করতে থাকে ।
চতুর্থ পর্যায় (১৯৪৩–১৯৪৫): ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে মার্কিন ও ব্রিটিশ সেনাবাহিনী সিসিলি দ্বীপ অধিকার করে । সিসিলি থেকে মিত্রশক্তি সম্মিলিতভাবে ইতালির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে । মিত্রশক্তির আগমনে নিপীড়িত ইতালিয় জনগণ ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করে । হিটলার ইতালি রক্ষার জন্য জার্মান সেনাবাহিনী পাঠালে উভয়ের মধ্যে প্রচণ্ড সংঘর্ষ হয় । জার্মান সেনাবাহিনীর বাধা অতিক্রম করে ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে ১১ মে মিত্রপক্ষ রোম অধিকার করে । মুসোলিনীকে গ্রেফতার করা হয় । জার্মান সেনাবাহিনী ঝঁটিকা আক্রমণ করে মুসোলিনীকে মুক্ত করে । ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে মুসোলিনী ও তাঁর উপপত্নী ক্লারা পেত্রাচ্চিকে জনসমক্ষে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয় ।
পূর্ব রণাঙ্গনে তথা রাশিয়ান ফ্রন্টে জার্মানিকে অনুরূপ পরাজয় বরণ করতে হয় । ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে স্টালিনগ্রাডে রাশিয়া ও জার্মান সেনাবাহিনীর মধ্যে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয় । এ সময় রুশ সেনাপতি মার্শাল জুকভ ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করেও রুশ ব্যুহ ভেদ অসমর্থ হয় । স্টালিনগ্রাডে জার্মানদের পতন ঘটে । এরপর রাশিয়ার লাল ফৌজ জার্মানির কবল থেকে এস্তোনিয়া, লাটভিয়া ও লিথুয়ানিয়া প্রভৃতি উদ্ধার করে । ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসের মধ্যে রুশ সেনাবাহিনী যুদ্ধের পূর্ববর্তী অবস্থায় ফিরে আসে ।
ইতালি পতনের পর মিত্রবাহিনী ফ্রান্সের ভিতর দিয়ে জার্মানি আক্রমণ করার পরিকল্পনা করে । মিত্রবাহিনী জার্মানির বিরুদ্ধে তাঁদের সর্বশেষ অভিযান সাফল্যের সঙ্গে পরিচালনার জন্য জেনারেল মন্টেগোমারিকে সর্বাধিনায়ক হিসেবে নিযুক্ত করে । ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে আগস্ট মাসে মিত্রবাহিনী প্যারিস দখল করে এবং ফরাসি মাটি থেকে জার্মানদের বিতাড়িত করে । ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ২ মে রুশ সেনাবাহিনী বার্লিন অবরোধ করে । সব রণাঙ্গনে জার্মানি পরাজিত হতে থাকে । জার্মানির সকল করদ রাজ্য মিত্রবাহিনী দখল করে নেয় । এসময় মিত্রবাহিনীর আক্রমণ প্রতিহত করা অসম্ভব দেখে জার্মানি আত্মসমর্পণ করে । জার্মানির একনায়ক হিটলারের অন্তর্ধান বা মৃত্যু সম্পর্কে গুঞ্জন রয়েছে যে তিনি মিত্রবাহিনীর নিকট আত্মসমর্পন না করে আত্মহত্যা করেন ।
জার্মানির পতনের পর এবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইংল্যান্ড জাপান আক্রমণের প্রস্তুতি গ্রহণ করে । ইতঃপূর্বে জাপান শক্তি সুদৃঢ় করে নিয়েছে । ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ২ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড ও রাশিয়া জাপানকে আত্মসমর্পনের আহবান করলে জাপান তা অগ্রাহ্য করে । ফলে যুক্তরাষ্ট্র ৬ আগস্ট জাপানি শহর হিরোশিমা শহরে উপর আণবিক বোমা হামলা করে । এই হামলায় এক লক্ষ লোক নিহত হয় । আবারও জাপানকে আত্মসমর্পনের আহবান করা হয় । এবারও জাপান অগ্রাহ্য করলে ৯ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্র নাগাসাকি শহরে আণবিকত বোমা হামলা করে । এই হামলাতেও লক্ষ লক্ষ নরনারী ও শিশু মৃত্যুমুখে পতিত হন । স্বদেশের মাটিতে এত মৃত্যুর ফলে ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ১৪ আগস্ট জাপান মিত্রশক্তির কাছে নিঃশর্ত আত্মসমর্পন করতে বাধ্য হয় ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলাফল
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রতিক্রিয়া ইউরোপ মহাদেশে দীর্ঘদিন ধরে ছিলো প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ন্যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেও বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয় । এই যুদ্ধের ফলে ইউরোপ, এশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের বহু লোক নিহত হয় । ক্ষতিগ্রস্ত হয় সহায়–সম্পত্তি । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পোর্টসড্যাম চুক্তি অনুযায়ী জার্মানিকে চারটি অঞ্চল বা জোনে ভাগ করা হয় এবং অঞ্চলগুলোর শাসনভার ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে বণ্টন করে দেওয়া হয় । জার্মানি একটি অংশের শাসনভার ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্র এবং অপর অংশের শাসনভার রাশিয়া নেয় । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলে সমগ্র বিশ্ব পুঁজিবাদ ও সমাজতন্ত্র এই দুইটি শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়ে । এই যুদ্ধের ফলে আলেবেনিয়ো স্বাধীনতা লাভ করে এবং ইথিওপিয়া ইতালির অধীনতা থেকে মুক্ত হয়ে স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অনেক বেসামরিক মানুষ নিহত ও বহু লোক আহত হয় । সহায়–সম্পত্তি হারায় অনেক মানুষ । এই যুদ্ধে ধ্বংসলীলা এত ভয়াবহ ছিলো যে এই যুদ্ধের প্রতিক্রিয়া দীর্ঘদিন ধরে ইউরোপ মহাদেশে ছিলো । যুদ্ধের ফলে অগণিত সৈনিক বেকার হয়ে পড়ে । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিভীষিকা থেকে মুক্ত হয়ে সমগ্র বিশ্বে স্থায়ী শান্তি স্থাপনের লক্ষ্যে লীগ অব নেশনসের সমাধির উপর প্রতিষ্ঠিত হয় জাতিসংঘ ।
purchase terbinafine generic – order fluconazole 100mg online order griseofulvin online cheap