বিভীষিকাময় এক যুদ্ধের করুণ পরিণতি : যে যুদ্ধ আমাদের দেয় নি স্বস্তি (শেষ পর্ব)

1

প্রথম পর্বের পর – 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ (১৯৩৯১৯৪৫)

বিশ্বের ইতিহাসে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা নারকীয় হলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ছিলো বিভীষিকাময়, এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের নির্বাচনে হিটলারকে প্রধানমন্ত্রী করেন বয়োবৃদ্ধ প্রেসিডেন্ট হিন্ডেনবার্গ এবং ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট হিন্ডেনবার্গের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে হিটলার জার্মানির সর্বাত্মক ক্ষমতার অধিকারী হন ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে স্পেনের গৃহযুদ্ধ শুরু হলে জার্মানি ইতালি স্পেনকে সহায়তা করে স্পেনের গৃহযুদ্ধ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকে উস্কে দিলেও মূলত ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর জার্মানির পোল্যান্ড দখলের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয় তবে এটি যুদ্ধের প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচিত হয় না

ভার্সাই সন্ধি জার্মানির উগ্র জাতীয়তাবাদ:

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মূল কারণ ভার্সাই সন্ধির মধ্যেই নিহিত ছিলো বলে অনুমান করা হয় কেননা ভার্সাই সন্ধির অপমানজনক শর্ত জার্মানির জাতীয় রাষ্ট্রীয় মর্যাদার উপর চরম আঘাত হেনেছিলো মিত্রপক্ষ জার্মানির সকল উপনিবেশ কেড়ে নেয় এবং বিশাল ক্ষতিপূরণের বোঝা চাপিয়ে দেয় এই চুক্তির মধ্য দিয়ে জার্মানি ইউরোপ মহাদেশে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু হয়ে পড়ে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরাজয়ের গ্লানি জার্মান জাতিকে অভূতপূর্ব আত্মচেতনা জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটায়

সাম্রাজ্যবাদ তোষণ নীতি: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অপর গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো সাম্রাজ্যবাদ নীতি। জার্মানি যুদ্ধের সুযোগ নিয়ে সাম্রাজ্য বিস্তার করতে চেয়েছিলো বিশেষ করে স্পেনের গৃহযুদ্ধে জার্মানি ইতালির প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপের ফলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঘটনা প্রবাহ

প্রথম পর্যায় (১৯৩৯১৯৪১): ১৯৩৯খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর জার্মানি কতৃক পোল্যান্ড দখলের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয় পোল্যান্ড আক্রমণ করার জন্য ইংল্যান্ড ফ্রান্স সেপ্টেম্বর জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে ১৭ সেপ্টেম্বর রাশিয়া পোল্যান্ড আক্রমণ করে রাশিয়া জার্মানির আক্রমণে পোল্যান্ড সহজেই বিধ্বস্ত হয় অতঃপর রুশজার্মান অনাক্রমণ চুক্তির মধ্য দিয়ে জার্মানি রাশিয়া পোল্যান্ড নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেয় পোল্যান্ড আক্রমণের পর রাশিয়া ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে তিনটি বাল্টিক রাষ্ট্র এস্তোনিয়া, লাটভিয়া লিথুয়ানিয়া দখল করে নেয় পোল্যান্ড আক্রমণের পর জার্মানি স্ক্যান্ডিনেভিয়ার দুটি দেশ নরওয়ে ডেনমার্কে আধিপত্য বিস্তার করে এবং রাশিয়া ফিনল্যান্ড অধিকার করে ফলে ইংল্যান্ড ফ্রান্সের নিষ্ক্রিয়তা সমালোচিত হলে ফ্রান্সে দালাদেইর মন্ত্রিসভা এবং ইংল্যান্ডে চেম্বারলেইন মন্ত্রিসভার পতন ঘটে জার্মানি ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে লুক্সেমবার্গ, বেলজিয়াম নেদারল্যান্ড দখল করে এবং বেলজিয়াম সীমান্ত দিয়ে ফ্রান্স আক্রমণ করে, ইঙ্গফরাসি বাহিনীকে পরাজিত করে এবং ডানকার্ক অধিকার করে ফ্রান্সের বৃহত্তর অংশ জার্মানি দখল করে ফলে জার্মানির সমর্থনপুষ্ট সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় ফ্রান্সের বৃহত্তর অংশে ফ্রান্সের অন্য অংশে Da Gaule এর সরকার গঠন করা হয় ফ্রান্সের এই পতনের ফলে গোটা বিশ্ব চমকিত হয় এমতাবস্থায় সকলে মনে করতে থাকে ইউরোপ জার্মানির পদানত হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র ইতঃপূর্বে ফ্রান্সের পতন অত্যাসন্ন দেখে জার্মানির মিত্র ইতালিও মিত্রপক্ষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে এর ফলে জার্মান নাৎসি আরো শক্তিশালী হয় ফ্রান্স দখল করার পর জার্মানি ইংল্যান্ড অভিযানের পরিকল্পনা করে হিটলার আশা করেছিলেন মিত্রশক্তির পরাজয়ের ফলে ইংল্যান্ড জার্মানির সঙ্গে শক্তি স্থাপনের প্রস্তাব দেবে কিন্তু ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী চার্চিল দ্ব্যার্থহীন ভাষায় ঘোষণা করেন, শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও ইংল্যান্ড জার্মানির প্রতিরোধ করবে হিটলারের পক্ষে ফ্রান্সের ন্যায় ইংল্যান্ড অধিকার করা সম্ভব ছিলো না ইংলিশ চ্যানেলের কারণে ইংলিশ চ্যানেল ইউরোপের মূল ভুখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন করে ইংল্যান্ডের প্রতিরক্ষা ব্যাবস্থাকে প্রাকৃতিকভাবে সুদৃঢ় করেছে অপরদিকে, ইংল্যান্ড ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জে নৌবাহিনী মোতায়েন করে এর ফলে হিটলার আকাশ পথে বিমান হামলা করে ইংল্যান্ডকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার রণপরিকল্পনা গ্রহণ করে পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট থেকে ইংল্যান্ডে বিমান হামলা শুরু হয় ১৫ আগস্ট প্রায় ১০০০ বোমারু বিমান ইংল্যান্ড আক্রমণ করে এর মধ্য দিয়ে জার্মানি ইংল্যান্ডের সাথে সাবমেরিন যুদ্ধ শুরু করে এর প্রতিক্রিয়ায় ইংল্যান্ড বিমান জার্মানির শিল্পসমৃদ্ধ অঞ্চল রুঢ়, কোলন নগর রেলজংশনসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আক্রমণ করে ফলে জার্মানি অসম প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু করে এবং জয়লাভে অসমর্থ হয়

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ
Source: iWebStreet

বলকান অঞ্চলে জার্মানি উল্লেখযোগ্য সাফল্য লাভ করে ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের ২৮ অক্টোবর জার্মানি গ্রিস দখল করে অতঃপর পতন হয় রুমানিয়ার ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের মার্চ বুলগেরিয়া জার্মানির কাছে আত্মসমর্পন করে যুগোশ্লোভাকিয়া জার্মানির বশ্যতা অস্বীকার করলে জার্মান সেনাবাহিনী আকাশ স্থল পথে আক্রমণ করলে আত্মসমর্পনে বাধ্য হয় যুগোশ্লোভাকিয়া এসময় বলকান অঞ্চলে জার্মানির প্রাধান্য দেখে নীতি পরিবর্তন করে তুরস্ক জার্মানির সাথে অনাক্রমণ চুক্তি করে এভাবে সমগ্র বলকান অঞ্চল জার্মানির পদানত হয়

দ্বিতীয় পর্যায় (১৯৪১১৯৪২): ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে জার্মানি কতৃক রাশিয়া আক্রমণ উল্লেখযোগ্য ঘটনা। ২২ জুন হিটলার অনাক্রমণ চুক্তি ভঙ্গ করে রাশিয়ায় অতর্কিত আক্রমণ করে হঠাৎ করে হিটলার কেন চুক্তি ভঙ্গ করে রাশিয়া আক্রমণ করলেন এর উত্তরে বলা যায় হিটলার এই চুক্তির ব্যাপারে আন্তরিক ছিলেন না তাঁর কাছে এই চুক্তি ছিলো কৌশলমাত্র এসময় ইংল্যান্ডের যুদ্ধকালীন প্রধানমন্ত্রী চার্চিল রাশিয়াকে সাহায্য করার আশ্বাস দেন ইভং দেশের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ১৭ জুলাই জার্মান সেনাবাহিনী কার্জন লাই ভেঙে স্লোলেনস্ক শহরে চলে আসে লেনিনগ্রাডকে কামানের আওতাধীন করা দক্ষিণে কিয়েভ ওডেসা বন্দর অধিকার করে কিন্তু আগস্ট মাস থেকে রাশিয়া জার্মানির বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুললে জার্মানির অগ্রগতি ব্যহত হয়

এদিকে ইতালি ফ্রান্স ইংল্যান্ডের দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে ইঙ্গফরাসি উপনিবেশগুলো দখল করার চেষ্টা চালায় কিন্তু আফ্রিকায় ইংরেজ সেনাপতি লর্ড ওয়াভেলের হাতে ইতালি পরাজিত হয় এই অবস্থায় হিটলার আফ্রিকায় ইতালিকে পরাজয়ের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য তাঁর সেনাপতি রোমেলকে আফ্রিকায় প্রেরণ করেন রোমেল ইতালির রণপরিকল্পনার স্থলে নিজস্ব রণপরিকল্পনা তৈরি করেন এবং দশদিনের মধ্যে ইংরেজদের মিশর ত্যাগ করতে বাধ্য করেন কিন্তু শীঘ্রই ইংরেজ সেনাপতি ফিল্ড মার্শাল মান্টোগোমারি এলআলমিনের যুদ্ধে রোমেলকে পরাজিত করেন এবং মিশর পুনর্দখল করেন ইতঃপূর্বে মার্কিন সেনাবাহিনী আফ্রিকায় ব্রিটিশদের সাথে যোগ দেয় ইঙ্গমার্কিন যৌথ আক্রমণে উত্তর আফ্রিকা অক্ষশক্তির হাতছাড়া হয় ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে জার্মানি, ইতালি জাপানের মধ্যে ত্রিশক্তি চুক্তি সম্পাদিত হয় জার্মানি ইতালির সঙ্গে জাপানের মৈত্রী চুক্তি সম্পাদনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ক্ষুব্ধ হয় মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিরপেক্ষ নীতি গ্রহণ করেছিলো ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাধ্যতামূলক সামরিক শিক্ষা প্রবর্তনের জন্য আইন প্রণয়ন করা হয়

আটলান্টিক সনদ স্বাক্ষরিত হওয়ার সময়ে মার্কিন নৌঘাঁটি পার্লহারবারে জাপানি বিমান হামলা Source: LA Times Framework

১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল আটলান্টিক মহাসাগরে এক ব্রিটিশ যুদ্ধজাহাজে গোপন বৈঠকে মিলিত হন এবং দীর্ঘ আলোচনার পর জার্মানির বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে যুদ্ধ পরিচালনার বিষয়ে একমত হন আলোচনার পর তাঁরা আটলান্টিক সনদ সম্পাদন করেন ১৯৩৯১৯৪১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়ে জাপান ইউরোপে যুদ্ধের তীক্ষ্নতা লক্ষ্য করে এবং সেই সাথে পূর্ব ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জে সামরিক প্রস্তুতি দ্রুত বাড়াতে থাকে জাপানের এই শক্তিবৃদ্ধির ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিচলিত হয় আলোচনা চলাকালীন জাপান ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর ভোর টা ৫৫ মিনিটে প্রশান্ত মহাসাগরের হাওয়ায় দ্বীপে মার্কিন নৌঘাঁটি পার্লহারবারে অকস্মাৎ প্রচণ্ড বিমান হামলা করে এরপরই জাপানের প্রধানমন্ত্রী তেজো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মিত্রশক্তিগুলোর বিরুদ্ধে ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর যুদ্ধ ঘোষণা করে এই দিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও যুদ্ধ ঘোষণা করে

তৃতীয় পর্যায় (১৯৪২১৯৪৩): ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে জাপান নতুনভাবে আক্রমণ শুরু করে এবং মালয়েশিয়া সিঙ্গাপুর দখল করে সিঙ্গাপুর দখলের পর জাপান ডাচ উপনিবেশ সুমাত্রা, জাভা, বালি প্রভৃতি দ্বীপপুঞ্জ অধিকার করে জাপানি সেনাদলের অপর শাখা মালয়েশিয়া থেকে ব্রহ্মদেশে প্রবেশ করে ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের মার্চ ব্রহ্মদেশের রাজধানী রেঙ্গুন অধিকার করে অপরদিকে ব্রিটিশ বিমান জার্মানির শিল্পশহরগুলোর উপর হামলা করতে থাকে ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের আগস্টে জার্মানি রাশিয়ার অভ্যন্তরে পূর্ব সীমান্তে প্রবেশ করে চেষ্টা করে মস্কো অবরোধের জার্মানিতে অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঘটে রাশিয়ার লাল ফৌজ প্রচুর ক্ষতি স্বীকার করেও জার্মান সেনাবাহিনীকে বাধা দেয় রাশিয়ান সেনাবাহিনী সময় জার্মানির বিরুদ্ধে প্রচণ্ড আক্রমণ শুরু করলে জার্মান সেনাবাহিনী পশ্চাদপসারণ করতে থাকে

চতুর্থ পর্যায় (১৯৪৩১৯৪৫): ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে মার্কিন ব্রিটিশ সেনাবাহিনী সিসিলি দ্বীপ অধিকার করে সিসিলি থেকে মিত্রশক্তি সম্মিলিতভাবে ইতালির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে মিত্রশক্তির আগমনে নিপীড়িত ইতালিয় জনগণ ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করে হিটলার ইতালি রক্ষার জন্য জার্মান সেনাবাহিনী পাঠালে উভয়ের মধ্যে প্রচণ্ড সংঘর্ষ হয় জার্মান সেনাবাহিনীর বাধা অতিক্রম করে ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে ১১ মে মিত্রপক্ষ রোম অধিকার করে মুসোলিনীকে গ্রেফতার করা হয় জার্মান সেনাবাহিনী ঝঁটিকা আক্রমণ করে মুসোলিনীকে মুক্ত করে ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে মুসোলিনী তাঁর উপপত্নী ক্লারা পেত্রাচ্চিকে জনসমক্ষে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়

মুসোলিনী
মুসোলিনী ও তার দোসরদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হচ্ছে, েএসময় মিত্রবাহিনীর সৈন্যদের চোখেমুখে ছিলো উল্লাস  Source: CNN.com

পূর্ব রণাঙ্গনে তথা রাশিয়ান ফ্রন্টে জার্মানিকে অনুরূপ পরাজয় বরণ করতে হয় ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে স্টালিনগ্রাডে রাশিয়া জার্মান সেনাবাহিনীর মধ্যে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয় সময় রুশ সেনাপতি মার্শাল জুকভ ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করেও রুশ ব্যুহ ভেদ অসমর্থ হয় স্টালিনগ্রাডে জার্মানদের পতন ঘটে এরপর রাশিয়ার লাল ফৌজ জার্মানির কবল থেকে এস্তোনিয়া, লাটভিয়া লিথুয়ানিয়া প্রভৃতি উদ্ধার করে ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসের মধ্যে রুশ সেনাবাহিনী যুদ্ধের পূর্ববর্তী অবস্থায় ফিরে আসে

ইতালি পতনের পর মিত্রবাহিনী ফ্রান্সের ভিতর দিয়ে জার্মানি আক্রমণ করার পরিকল্পনা করে মিত্রবাহিনী জার্মানির বিরুদ্ধে তাঁদের সর্বশেষ অভিযান সাফল্যের সঙ্গে পরিচালনার জন্য জেনারেল মন্টেগোমারিকে সর্বাধিনায়ক হিসেবে নিযুক্ত করে ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে আগস্ট মাসে মিত্রবাহিনী প্যারিস দখল করে এবং ফরাসি মাটি থেকে জার্মানদের বিতাড়িত করে ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের মে রুশ সেনাবাহিনী বার্লিন অবরোধ করে সব রণাঙ্গনে জার্মানি পরাজিত হতে থাকে জার্মানির সকল করদ রাজ্য মিত্রবাহিনী দখল করে নেয় এসময় মিত্রবাহিনীর আক্রমণ প্রতিহত করা অসম্ভব দেখে জার্মানি আত্মসমর্পণ করে জার্মানির একনায়ক হিটলারের অন্তর্ধান বা মৃত্যু সম্পর্কে গুঞ্জন রয়েছে যে তিনি মিত্রবাহিনীর নিকট আত্মসমর্পন না করে আত্মহত্যা করেন ।

জার্মানির পতনের পর এবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইংল্যান্ড জাপান আক্রমণের প্রস্তুতি গ্রহণ করে ইতঃপূর্বে জাপান শক্তি সুদৃঢ় করে নিয়েছে ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড রাশিয়া জাপানকে আত্মসমর্পনের আহবান করলে জাপান তা অগ্রাহ্য করে ফলে যুক্তরাষ্ট্র আগস্ট জাপানি শহর হিরোশিমা শহরে উপর আণবিক বোমা হামলা করে এই হামলায় এক লক্ষ লোক নিহত হয় আবারও জাপানকে আত্মসমর্পনের আহবান করা হয় এবারও জাপান অগ্রাহ্য করলে আগস্ট যুক্তরাষ্ট্র নাগাসাকি শহরে আণবিকত বোমা হামলা করে এই হামলাতেও লক্ষ লক্ষ নরনারী শিশু মৃত্যুমুখে পতিত হন । স্বদেশের মাটিতে এত মৃত্যুর ফলে ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ১৪ আগস্ট জাপান মিত্রশক্তির কাছে নিঃশর্ত আত্মসমর্পন করতে বাধ্য হয়

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলাফল

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রতিক্রিয়া ইউরোপ মহাদেশে দীর্ঘদিন ধরে ছিলো প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ন্যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেও বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয় এই যুদ্ধের ফলে ইউরোপ, এশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের বহু লোক নিহত হয় ক্ষতিগ্রস্ত হয় সহায়সম্পত্তি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পোর্টসড্যাম চুক্তি অনুযায়ী জার্মানিকে চারটি অঞ্চল বা জোনে ভাগ করা হয় এবং অঞ্চলগুলোর শাসনভার ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার মধ্যে বণ্টন করে দেওয়া হয় জার্মানি একটি অংশের শাসনভার ইংল্যান্ড, ফ্রান্স যুক্তরাষ্ট্র এবং অপর অংশের শাসনভার রাশিয়া নেয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলে সমগ্র বিশ্ব পুঁজিবাদ সমাজতন্ত্র এই দুইটি শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়ে এই যুদ্ধের ফলে আলেবেনিয়ো স্বাধীনতা লাভ করে এবং ইথিওপিয়া ইতালির অধীনতা থেকে মুক্ত হয়ে স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অনেক বেসামরিক মানুষ নিহত বহু লোক আহত হয় সহায়সম্পত্তি হারায় অনেক মানুষ এই যুদ্ধে ধ্বংসলীলা এত ভয়াবহ ছিলো যে এই যুদ্ধের প্রতিক্রিয়া দীর্ঘদিন ধরে ইউরোপ মহাদেশে ছিলো যুদ্ধের ফলে অগণিত সৈনিক বেকার হয়ে পড়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিভীষিকা থেকে মুক্ত হয়ে সমগ্র বিশ্বে স্থায়ী শান্তি স্থাপনের লক্ষ্যে লীগ অব নেশনসের সমাধির উপর প্রতিষ্ঠিত হয় জাতিসংঘ

Leave A Reply
1 Comment
  1. Mcyrcc says

    purchase terbinafine generic – order fluconazole 100mg online order griseofulvin online cheap

sativa was turned on.mrleaked.net www.omgbeeg.com

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More