সাবমেরিন নিয়ে মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই! কীভাবে চলে, কী দিয়ে তৈরি, গতিবেগ কত আরও অনেক কিছু। আজকের লেখাটি সাজানো হয়েছে বিশ্বের ১০টি বৃহত্তম সাবমেরিন নিয়ে।
অ্যাস্টার ক্লাস, যুক্তরাজ্য
অ্যাস্টার ক্লাস বিশ্বের দশম বৃহত্তম সাবমেরিন। এর ৭,৪০০ টনের একটি ডুবো স্থানচ্যুতি রয়েছে। পারমানবিক শক্তি চালিত এই সাবমেরিন গোত্রটি ব্রিটিশ রাজকীয় নৌবাহিনীর কাজে যুক্ত রয়েছে। এই গোত্রের মোট তিনটি সাবমেরিন রয়েছে যার সবগুলোই বর্তমানে কার্যকর রয়েছে। প্রথম সাবমেরিন অ্যাস্টাট অনুমোদিত হয় ২০১০ সালের অগাস্ট মাসে, দ্বিতীয়টি সাবমেরিন অ্যাম্বুশ ২০১৩ সালের মার্চ মাসে এবং তৃতীয়টি সাবমেরিন আর্টফুল ২০১৬ সালের মার্চ মাসে অনুমোদিত হয়। আরও চারটি নির্মাণাধীন অবস্থায় রয়েছে। এই সাবমেরিনটি দৈর্ঘ্যে ৯৭ মিটার, কিরণ বা আলোকছটা ১১.৩ মিটার। এটি পানির নিচে ঘণ্টায় ৫৫ বর্গকিলোমিটার গতিতে চলার ক্ষমতা রাখে।
সী উলফ ক্লাস, যুক্তরাষ্ট্র
মার্কিন নৌবাহিনী দ্বারা পরিচালিত পারমাণবিক শক্তিচালিত দ্রুতগতির সী উলফ্ বিশ্বের নবম বৃহত্তম সাবমেরিন গোত্র। নেতৃত্বাধীন সীউলফ্ (এসএসএন২১) ১৯৯৭ সালের জুলাই মাসে সেবায় অভিষিক্ত করা হয়। এই গোত্রের সাবমেরিন তৈরি করা হয়েছে সোভিয়েতের উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র সাবমেরিনের হুমকির মোকাবেলা করার জন্য।

Source: NextBigFuture.com
এই গোত্রের তিনটি সাবমেরিন আপাতত কার্যকর রয়েছে। এই সাবমেরিন জাহাজগুলোর কাঠামো তৈরি করা হয়েছে এইচওআই-১০০ স্টিল দিয়ে। এর দৈর্ঘ্য ১০৭ মিটার এবং আলোকছটা ১২ মিটার।
সিয়েরা ক্লাস, রাশিয়া
১০,৪০০ টনের ডুবো স্থানচ্যুতি সম্পন্ন এই গোত্রের সাবমেরিনটি বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম সাবমেরিনের স্থান দখল করেছে। রাশিয়ার নৌবাহিনীতে সিয়েরার চারটি সাবমেরিন কার্যকর অবস্থায় রয়েছে। এই গোত্রের একটি উন্নত সংস্করণ সিয়েরা ২, ১৯৯০ সালে সেবায় নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সিয়েরা গোত্রের সাবমেরিনগুলো হালকা এবং ভারী টাইটানিয়ামের চাপে তৈরি যার কারণে সাবমেরিন পানির বেশ গভীর পর্যন্ত যেতে পারে এবং বিকিরণের শব্দের মাত্রাও কমিয়ে দেয়। এছাড়াও এটি টর্পেডো (জাহাজ ধ্বংস করার সমুদ্রতলের বিস্ফোরক বিশেষ) হামলার প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এটি দৈর্ঘ্যে ১১১ মিটার এবং এর আলোকছটা ১৪.২ মিটার। এর প্রধান সরঞ্জামের মধ্যে রয়েছে একটি চাপ যুক্ত জল পারমানবিক চুল্লী, দুটি জরুরী ভিত্তিক মোটর, একটি ক্ষেপণাস্ত্র এবং দুটি চরকা। পানিতে নিমজ্জিত অবস্থায় এর গতিবেগ ৩২০ কি.মি.।
আকুলা ক্লাস, রাশিয়া
১৩,৮০০ টনের ডুবো স্থানচ্যুতি সম্পন্ন এই গোত্রের সাবমেরিনটি পারমাণবিক শক্তিসম্পন্ন। এই গোত্রের মোট দশটি সাবমেরিনের নয়টি রাশিয়ার এবং একটি ভারতীয় নৌবাহিনীতে কার্যরত আছে। আকুলা গোত্রের সর্বপ্রথম সাবমেরিনটি ১৯৮৪ সালে সোভিয়েত নৌবাহিনীতে অনুমোদিত হয়। এই সাবমেরিনটির বৈশিষ্ট্য হলো দ্বিগুণ কাঠামো অনুমোদিত যার ভিতরেরটি চাপযুক্ত কাঠামো এবং বাইরেরটি হালকা ধরনের কাঠামো। এর দৈর্ঘ্য ১১০ মিটার, আলোকছটা ১৩.৬ মিটার এবং খসড়া ৯.৭ মিটার।

Source: Funnyjunk
ভূপৃষ্ঠে এই গোত্রের সাবমেরিনের গতি ঘণ্টায় ১৮.৫৫ কিলোমিটার এবং পানিতে ডুবন্ত অবস্থায় ৬৪.৮২ কিলোমিটার। পানিতে নিমজ্জিত অবস্থায় এর সহনশীলতা একশত দিন। সাবমেরিনটিকে 1২ হাজার সাবমেরিন-চালিত ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র দ্বারা সাসপেন্ড করা যেতে পারে যা পারমাণবিক অস্ত্রধারীদের 3,000 কিলোমিটার পর্যন্ত বহন করতে সক্ষম। সাবমেরিনটি ১২টি সাবমেরিন চালিত ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র দ্বারা সশস্ত্র হতে পারে যা ৩,০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত ক্ষেপণাস্ত্রের বিস্ফোরক মুখ বহন করতে পারে।
ট্রায়োম্ফ্যান্ট ক্লাস, ফ্রান্স
১৪,৩৩৫ টন (ডুবো স্থানচ্যুতি সম্পন্ন) ট্রায়োম্ফ্যান্ট গোত্রের এই সাবমেরিনটি বর্তমানে বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম সাবমেরিন হিসেবে আখ্যায়িত। এই পারমানবিক ক্ষেপণাস্ত্র সম্বলিত সাবমেরিনটি ফ্রান্সের নৌবাহিনীতে সেবা পরিবেশন করে এবং তা ফ্রান্সের নৌবাহিনীতে পরমাণু প্রতিরোধকারী সামরিক শক্তিরও একটি অংশ। এই গোত্রের চারটি সাবমেরিন রয়েছে যেগুলোর নাম হলো ট্রায়োম্ফ্যান্ট, তেমেরাইর, ভিজিলিয়েন্ট এবং টেরিবেল। নেতৃত্ব দানকারী সাবমেরিনটি অনুমোদন পেয়েছিলো ১৯৯৭ সালে। এই গোত্রের প্রতিটি সাবমেরিনের দৈর্ঘ্য ১৩৮ মিটার এবং খসড়া ১০.৬০ মিটার। ভূপৃষ্ঠে এর গতি ঘণ্টায় ৪৬.৩০ কিলোমিটার।
ভ্যাঙ্গুয়ার্ড ক্লাস, যুক্তরাজ্য
১৫,৯০০ টন ডুবো স্থানচ্যুতি সম্পন্ন এই গোত্রের সাবমেরিনটি আপাতত বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম সাবমেরিন হিসেবে পরিচিত। পারমানবিক ক্ষেপণাস্ত্রের শক্তি সম্বলিত এই সাবমেরিনটি যুক্তরাজ্যের রাজকীয় নৌবাহিনীর সেবায় নিয়োজিত। এই গোত্রের চারটি সাবমেরিনের নাম হলো- ভ্যানগার্ড, ভিক্টোরিয়াস্, ভিজিল্যান্ট এবং ভেঙ্গিয়ান্স।

Source: The Telegraph
সাবমেরিনগুলো তৈরি করেছিলো ভাইকারস্ শিপ বিল্ডিং এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং। এই গোত্রের প্রথম সাবমেরিন, এইচএমএস ভ্যাঙ্গার্ড অনুমোদিত হয়েছিলো ১৯৯৩ সালে। এটি দৈর্ঘ্যে ১৪৯.৯ মিটার, এর আলোকছটা ১২.৮ মিটার এবং খসড়া ১২ মিটার। পানিতে নিমজ্জিত অবস্থায় এর গতিবেগ ঘণ্টায় ৪৬.৩০ কিলোমিটার।
ডেল্টা ক্লাস, রাশিয়া
বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম এই সাবমেরিনটি বিশাল পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র সম্পন্ন যা রাশিয়ার উত্তর দিকের একটি শহর সেভেরোদভিন্সকে নির্মাণ করা হয়েছে। ডেল্টা গোত্রের মোট চারটি সাবমেরিন রয়েছে। ১৮,২০০ টন ডুবো স্থানচ্যুতি সম্পন্ন সাবমেরিনটির নাম ডেল্টা ফোর। ১৯৭৬ সালে ডেল্টা গোত্রের প্রথম সাবমেরিনটি অনুমোদন পায়। এই গোত্রের তৃতীয় এবং চতুর্থ সাবমেরিন বর্তমানে রাশিয়ার নৌবাহিনীতে কার্যকর রয়েছে। এই সাবমেরিনটির দৈর্ঘ্য ১৬৬ মিটার, আলোকছটা ১২.৩ মিটার, খসড়া ৮.৮ মিটার। পানির নিচে নিমজ্জিত অবস্থায় এটি ঘণ্টায় ৪৪.৪৫ কিলোমিটার গতিবেগে চলে।
ওহিও ক্লাস, যুক্তরাষ্ট্র
এই গোত্রের সাবমেরিন পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম অবস্থানে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী ১৮টি পারমাণবিক শক্তি সম্পন্ন ওহিও গোত্রের সাবমেরিন রয়েছে যেগুলো যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তুতকৃত সর্বকালের বৃহত্তম সাবমেরিনগুলোর মধ্যে একটি। প্রতিটি সাবমেরিনের ১৮,৭৫০ টন ডুবো স্থানচ্যুতি সম্পন্ন ক্ষমতা রয়েছে। এই গোত্রের প্রথম সাবমেরিন, ইউএসএস ওহিও প্রস্তুত করেছিলো যুক্তরাষ্ট্রের শহর গ্রটনের ইলেকট্রিক বোট ডিভিশন অব জেনারেল ডাইনামিকস কর্পোরেশন।

Source: Yahoo
আর এটি অনুমোদন পেয়েছিলো ১৯৮১ সালের নভেম্বর মাসে। এই গোত্রের অন্য সব সাবমেরিনের নামকরণ করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রদেশগুলোর নামানুসারে। তবে ব্যতিক্রম রয়েছে শুধু ইউএসএস হেনরি এম জ্যাকসনটি যা নামকরণ করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটরের নামানুসারে।
বোরেই ক্লাস, রাশিয়া
২৪,০০০ টন ডুবো স্থানচ্যুতি সম্পন্ন এই গোত্রের সাবমেরিনটি আপাতত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সাবমেরিন হিসেবে পরিচিত। এই পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র সম্বলিত সাবমেরিনটি রাশিয়ার কৌশলগত নৌবাহিনীর সেবায় নিযুক্ত আছে। এই গোত্রের প্রথম সাবমেরিন, ইউরি ডলগোরুকি প্রথম অনুমোদন পায় ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে রাশিয়ার নৌবাহিনীর প্রশান্ত মহাসাগরে। এই সাবমেরিনটি প্রস্তুত করতে ৭৭০ মিলিয়ন দলার খরচ হয়। এটি দৈর্ঘ্যে ১৭০ মিটার, আলোকছটায় ১৩.৫ মিটার এবং খসড়ায় ১০ মিটার হয়ে থাকে। পানিতে নিমজ্জিত অবস্থায় এর সহনশীলতা খাবারের ভাণ্ডারের উপযোগিতার ওপর নির্ভর করে।
টাইফুন ক্লাস, রাশিয়া
৪৮,০০০ টনেরও বেশি ডুবো স্থানচ্যুতি সম্পন্ন এই গোত্রের সাবমেরিনটি বিশ্বের বৃহত্তম সাবমেরিন বলে গণ্য করা হয়। পারমাণবিক শক্তি দ্বারা চালিত এই সাবমেরিনটি ক্ষেপণাস্ত্র দ্বারা সজ্জিত। এই গোত্রের ছয়টি সাবমেরিনের প্রথমটি, ডিমট্রি ডন্সকই ১৯৮১ সালে অনুমোদিত হয় এবং এখনও পর্যন্ত এটি রাশিয়ার নৌবাহিনীর সেবায় নিযুক্ত রয়েছে।

Source: Wikipedia
এর দৈর্ঘ্য ১৭৫ মিটার, আলোকছটা ২৩ মিটার এবং খসড়া ১২ মিটার। ভূপৃষ্ঠে এটি ঘণ্টায় ৪১.১১ কিলোমিটার এবং পানিতে নিমজ্জিত অবস্থায় ৫০.০০৪ কিলোমিটার গতিবেগে চলতে পারে। এটির ক্রু এর সদস্যবৃন্দ এতে কাজের উদ্দেশ্যে বিদেশ ভ্রমণে ১২০ দিন দিব্যি কাটিয়ে দিতে পারে।