ক্যারিবিয়ানে যেমন জলদস্যু আছে, তেমন সেখানে ক্রিকেট খেলাও হয়, উসাইন বোল্টও দৌড়াও, ফুটবলও খেলা হয়। সেই ১৯৮৯ সাল থেকে ক্যারিবিয়ান ফুটবল ইউনিয়নের দলগুলোকে নিয়ে ক্যারিবিয়ান কাপ আয়োজিত হয়ে আসছে প্রতি বছর। ত্রিনিদাদ এবং টোবাগোকে বলা যায় ক্যারিবিয়ান কাপের ব্রাজিল, সতের বারের মধ্যে আটবারই কাপ নিয়েছে ওরা। বারবাডোসে আয়োজিত প্রথম টুর্নামেন্ট জিতেছিল তারাই। ২০১৪ সালের জ্যামাইকান টুর্নামেন্টেও ত্রিনিদাদ ও টোবাগো ফাইনাল পর্যন্ত পৌছে গিয়েছিল। কিন্তু এবার কাপ তারা পাই নি, সেটা নিয়ে গেছে স্বাগতিকরা।
তবে আজকে আমাদের গল্প ত্রিনিদাদ ও টোবাগোকে নিয়ে নয়। আমাদের গল্প ১৯৯৪ সালের ক্যারিবিয়ান কাপের ছোট্ট একটি ম্যাচ নিয়ে।
টুর্নামেন্টের নিয়ম নিয়ে একটু কথা বলতে হয়। ১৯৯৪ সালে অংশগ্রহন করেছিল ২১ টি দেশ। প্রতিটি গ্রুপে তিনটি করে দল। টুর্নামেন্টের নিয়ম ছিল সে সময় যে কোন ম্যাচই ড্র হতে পারবে না, এমনকি কোয়ালিফাইং রাউন্ডের ম্যাচগুলোও। ম্যাচ ড্র হলে ফলাফল নির্ধারিত হবে অতিরিক্ত সময়ে, গোল্ডেন গোল নিয়মে। গোল্ডেন গোল নিয়মটি হচ্ছে যে দল আগে গোল দিতে পারবে তারাই জয়ী। আর তা যদি না হয়, তবে ম্যাচ গড়াবে পেনাল্টিতে। সেই টুর্নামেন্টেই একটি গ্রুপে ছিল বারবাডোস, গ্র্যানাডা এবং পুয়ের্তো রিকো।
প্রথম ম্যাচটিতে গ্র্যানাডা জিতেছিল পুয়ের্তো রিকোর বিরুদ্ধে, ২-০ তে। পরের ম্যাচটি জিতেছিল পুয়ের্তো রিকো বারবাডোসের বিরুদ্ধে ১-০ তে। এক গ্রুপে দু দলের সমান পয়েন্ট যদি থাকে তবে জয়ী দল নির্ধারিত করা হতো হেড টু হেড গোল ডিফারেন্সে। অর্থাৎ যদি বারবাডোস অন্তত দুই গোল ব্যবধানে ম্যাচ জিততে পারে, তাহলেই তারা যেতে পারবে পরের রাউন্ডে।
খেলা শুরু হলো। বারবাডোসের জন্য শুরুটা হলো বেশ ভালোই। বেশ তাড়াতাড়ি তারা দুটি গোল দিয়ে ২-০ তে এগিয়ে গেল। খেলা প্রায় শেষের পথে, বাকি আর সাত মিনিট। আর তখনোই ঘটলো বিপর্যয়, বারবাডোসের জালে জড়ালো গ্র্যানাডার বল! ফলাফল ২-১। গোল পার্থক্য এক। বারবাডোসের স্ট্রাইকার দেখতে পেলো, বাকি সময়ে আরেকটি গোল দেওয়া মুটামুটি অসম্ভব, গ্র্যানাডা তাদের জাল রক্ষা করছে দূর্গের মত। আর তখনই তার মনে পরে গেল টুর্নামেন্টের নতুন নিয়মটি।
অতিরিক্ত সময়ে গোল দেওয়া হলে সেটি এক নয়, দুটি গোল হিসেবে ধরা হবে!
কোন খেয়ালে কমিটি এই নিয়ম ঠিক করেছিল কে জানে, কিন্তু বারবাডোস পেয়ে গেল এক বুদ্ধি। বারবাডোসের ডিফেন্ডার স্যিলি আর গোলকিপার স্টাইট কিছুক্ষন বল নাড়াচাড়া করে হঠাৎ সেটা পাঠিয়ে দিল নিজেদের জালে! ম্যাচের ফলাফল ২-২। খেলা চলে যাবে অতিরিক্ত সময়ে, আর অতিরিক্ত সময়ে বারবাডোস একটা গোল দিতে পারলে সেটাকে দুটো গোল ধরা হবে, তখন গোল পার্থক্য হবে আবার দুই। জিতে যাবে বারবাডোস।
গ্র্যানাডা দেখতে পেল, অবস্থা ভালো নয়। সমাধান কী? হিসেব করে তারা দেখতে পেল, যদি তারা বারবাডোসকে একটি গোল দিয়ে দিতে পারে তাহলে জয় হবে তাদের। আবার, তারা যদি নিজেদের জালে বল জড়ায় তবে হেরে যাবা ৩-২ গোলে কিন্তু পরের রাউন্ডে উঠবে তারাই, যদিও ম্যাচটি জিতেছে বারবাডোস। খেলোয়াড়রা অবশ্য নিশ্চিত হতে পারলো না কোনটা করা ভালো। একদল ছুটলো বিপক্ষের দিকে গোল দেওয়ার জন্য, আরেকদল ছুটলো নিজেদেরই দিকে!
বারবাডোসের তখন আর কিছুই করার নেই। তারা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিল। বারবাডোসের একদল খেলোয়াড় বাঁচাতে লাগলো নিজেদের গোলপোস্ট, আরেকদল বাঁচাতে লাগলো প্রতিপক্ষের গোলপোস্ট। শেষপর্যন্ত গ্র্যানাডা আর পারলোই না। সময় শেষ হয়ে গেল, ম্যাচ গড়ালো অতিরিক্ত সময়ে।
অতিরিক্ত সময়ে বারবাডোস তাদের অসাধারন(কিন্তু অদ্ভুত) বুদ্ধির পুরস্কার পেয়ে গেল ঠিকই। বারবাডোসের থর্ন গোলটি করে তাদের পৌছে দিল পরের রাউন্ডে। গ্র্যানাডার কোচ জেমস ক্লার্কসন রেগে গিয়ে ম্যাচের পর বলেছিলেন, “আমার মনে হচ্ছে আমাদের সাথে ঠগবাজি করা হয়েছে। এসব ফালতু নিয়মকানুন যার মাথা থেকে বের হয়েছে তাকে আমার ধারনা পাগলা গারদে ঢুকিয়ে দেওয়া দরকার। কী করবে সেটাই বুঝতে পারছে না, এমন সব খেলোয়াড় নিয়ে একটা ম্যাচ খেলাই উচিৎ নয়। আমাদের দলের খেলোয়াড়দের দিকেই দেখুন, তারা এমনকি এটাই জানতো না বিপক্ষের দিকে গোল দিবে না নিজেদের? ফুটবল ম্যাচ জেতার জন্য আপনার গোল দেওয়া উচিৎ বিপক্ষের বারে, নিজের বারে না।“
ক্লার্কসন কথাগুলো খারাপ বলেননি। কিন্তু আর যাই হোক, ফুটবলের ইতিহাসে সবচেয়ে আজব ম্যাচের কথা বলতে গেলে সম্ভবত বারবাডোস আর গ্র্যানাডার এই হাস্যকর খেলাটির কথাই বলতে হয়।
শেষ করার আগে পাঠকদের কাছে একটি প্রশ্ন। সে বছরের কাপ বারবাডোস নিতে পারেনি, তারা ছিল তৃতীয় স্থানে। তাহলে কোন দল নিয়েছিল কাপ?
আপনি সম্ভবত ঠিকই ধরেছেন। ত্রিনিদাদ এবং টোবাগো!
buy avodart 0.5mg for sale flomax 0.2mg cheap zofran 4mg price
cost levofloxacin 250mg buy levaquin online cheap