১৯৪৯ সালের জুলাইতে সিরিয়ার সাথে আর্মিস্টিস (যুদ্ধবিরতি) চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে ইসরাইল-আরব যুদ্ধের অবসান ঘটে। তবে ইসরাইল তার সার্বভৌমত্বকে ধরে রাখতে সমর্থ হয় এবং ইতিমধ্যে ফিলিস্তিনের ভূমি দখল করে নিজেদের রাষ্ট্র সীমানা ১৯৪৭-এর জাতিসংঘের অনুমোদিত বিভাজন ম্যাপের চেয়ে ন্যূনতম আরও ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি করতে সমর্থ হয়। আরব-ইসরাইল যুদ্ধকালীন ইসরাইল নিজস্ব ভূভাগ (জাতিসংঘের ম্যাপ অনুযায়ী) ও দখলকৃত এলাকা থেকে মুসলিম অধিবাসীদের ঢালাওভাবে বিতাড়ন করে এবং নিপীড়ন ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে মুসলমানদের মাঝে ত্রাসের সৃষ্টি করে। নিজেদের আবাসভূমি থেকে উৎখাত হওয়া ও প্রাণভয়ে পালিয়ে আসা ফিলিস্তিনি আরবরা ইসরায়েলি সীমানার বাইরে ও আশপাশের আরবদেশগুলোতে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় গ্রহণ করে। অবশ্য এর বিপরীত চিত্রটাও এখানে উল্লেখ করা দরকার। আরবদেশগুলো থেকে অন্তত আড়াই থেকে তিন লক্ষ ইহুদি ইসরায়েলে মাইগ্রেট করে ১৯৪৮ সালের ইসরাইল আরব যুদ্ধের পর। এছাড়া ১৯৬৭ সালের অন্যতম বৃহৎ ইসরাইল-আরব যুদ্ধের পর আশপাশের প্রায় ১০ টা আরবদেশ থেকে অন্তত সাড়ে আট লক্ষ ইহুদি ইসরায়েলে মাইগ্রেট করে। এর ভেতর ধর্মীয় ও আদর্শগত কারণে স্বেচ্ছায় যত সংখ্যক ইহুদি ইসরায়েলে মাইগ্রেট করেছে, নিজেদের বাসস্থান থেকে বিতাড়িত কিংবা অত্যাচারিত হয়ে বাধ্য হয়ে ইসরায়েলে মাইগ্রেট করেছে এমন ইহুদির সংখ্যা সম্ভবত তার চেয়ে অনেক বেশি। ১৯৬৭ সালে ইসরাইল-আরব যুদ্ধের সূত্রপাত হয় মূলত ইসরায়েলের সাথে পার্শ্ববর্তী আরবদেশগুলোর রাষ্ট্র সীমানায় সংঘটিত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ও বিচ্ছিন্ন অনেকগুলো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটার মাধ্যমে যা ইসরায়েলের সাথে প্রতিবেশী আরবদেশগুলোর এতদপূর্বে সৃষ্ট উত্তেজনাকে আরও বৃদ্ধি করে। ১৯৬৭ সালের মে মাসে সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে থেকে সিরিয়ান বর্ডারের অনতিদূরে ইসরায়েলি সীমানায় ইসরায়েলের সৈন্য সমাবেশের মিথ্যে সংবাদ পেয়ে ঈজিপ্ট ইসলায়েলি সীমানার কাছাকাছি সিনাই ভূখন্ডে সৈন্য সমাবেশ করে এবং জর্ডানের সাথে এক সামরিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। জর্ডান ইসরায়েলি সীমানার কাছাকাছি নিজস্ব সৈন্য মোতায়েন করে এবং জর্ডানের আহ্বানে আগত একদল ইরাকি সৈন্য জর্ডানি সৈন্যদের সাথে যোগ দেয়। ইতিমধ্যে ঈজিপ্ট ১৯৫৭ সালের জাতিসংঘের নৌচুক্তি ভঙ্গ করে ইসরাইল কর্তৃক ব্রবহৃত সুয়েজ খালের নৌ চলাচলের পথ বন্ধ করে দিলে ইসরাইল ঈজিপ্টের নৌচুক্তি ভঙ্গকে যুদ্ধের বৈধতা দানের আজুহাতে ১৯৬৭ সালের ৫ জুন আকস্মিকভাবে পার্শ্ববর্তী আরবদেশেগুলোতে সামরিক স্থাপনা ও সন্নিবেশিত সৈন্যদের ওপর বিমান হামলা চালায়। ব্রিটিশ এবং বিশেষ করে মার্কিন আর্থিক ও সামরিক সাহায্যপুষ্ট, শক্তিশালী ইসরাইল মাত্র ছয়দিনব্যাপী এই যুদ্ধে সহজেই বিজয় লাভ করে। ইসরাইল এই যুদ্ধে ঈজিপ্ট নিয়ন্ত্রিত সিনাই ভূখ, জর্ডান নিয়ন্ত্রিত ওয়েস্ট ব্যাংক ও ইস্ট জেরুজালেম এবং সিরিয়া নিয়ন্ত্রিত গোলান হাইট্স দখল করে নেয়। অবশ্য ১৯৭৯ সালে এক শান্তি চুক্তির মাধ্যমে ঈজিপ্টকে সিনাই ভূখন্ড- ফিরিয়ে দেয় ইসরাইল। ইহুদি রাষ্ট্রপন্থি ও ইসরায়েলিদের অনেকে এই যুদ্ধকে প্রতিরক্ষামূলক যুদ্ধ বলে দাবি করলেও বিশ্বের অধিকাংশ ইতিহাসবিদ, দার্শনিক ও রাজনৈতিক বুদ্ধিজীবীদের অভিমতে প্রতিবেশী আরবদেশগুলোর ওপর ইসরায়েলের এই সামরি হামলা ছিল সুস্পষ্ট আগ্রাসন।
ইসরায়েলিদের দখলকৃত অংশে তথা স্বভূমিতে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের মানবেতর জীবনযাপন, আন্তর্জাতিক নির্দেশ উপেক্ষা করে ফিলিস্তিনি ভূমিতে ইসরায়েলিদের প্রক্রিয়াগতভাবে ও পর্যায়ক্রমে ইহুদি বাসস্থান স্থাপন এবং স্বল্পসংখ্যক ফিলিস্তিনি যোদ্ধার বিচ্ছিন্ন সন্ত্রাসী হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ফিলিস্তিনি শরণার্থী শিবিরগুলোতে ইসরায়েলিদের পরিকল্পিত সামরিক অভিযান চালিয়ে অসংখ্য নিরীহ ফিলিস্তিনি নারী পুরুষ ও শিশুদের হত্যার ঘটনায় ধীরে ধীরে ইসরাইল বিরোধী মনোভাবের জন্ম হয়েছে বিশ্বব্যাপী। এবং তারই ধারাবাহিকতায় জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে রাজনৈতিক সচেতন ও মানবতাবাদী অসংখ্য মানুষ ফিলিস্তিনিদের নিজস্ব ভূখন্ড ফিরে পাওয়ার ন্যায়সঙ্গত দাবির সমর্থনে এবং ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশের জন্য দেশে দেশে ইসরায়েলি সামগ্রী বর্জন করেছেন। ইসরাইল-ফিলিস্তিন সমস্যার স্থায়ী সমাধান বর্তমান বিশ্ব রাজনীতিতে ক্রমে সর্বাধিক কাক্সক্ষত রাজনৈতিক সমাধান হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। মজার ব্যাপার হলো ১৯৬৭ সালে প্রতিবেশী আরবদেশগুলোর ওপর অতর্কিত সামরিক হামলা চালিয়ে ইসরায়েলের আরব ভূখন্ড দখল করে নেওয়া আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে যেখানে সুস্পষ্ট আগ্রাসন হিসেবে বিবেচিত এবং যে কারণে ইউরোপসহ বিশ্বের অধিকাংশ দেশ ১৯৬৭ সালের ইসরাইল-আরব যুদ্ধপূর্ব মানচিত্র অনুযায়ী ইসরালেয়ের সীমানা প্রত্যাহারের পক্ষে, সেখানে জাতিসংঘের অসংখ্য সম্মেলনে আরব লীগ কর্তৃক উত্থাপিত এবং এশিয়া ও ইউরোপের অধিকাংশ দেশ কর্তৃক সমর্থিত ইসরায়েলের সীমানা প্রত্যাহারের প্রস্তাবিত বিল প্রতিবার পরাজিত হয়েছে নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য ও ভোট প্রদানের ক্ষমতাধারী আমেরিকার একমাত্র ভেটো প্রদানের কারণে। বিভিন্ন সূত্রমতে এ যাবৎকালে দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূমিতে ইসরাইল কর্তৃক অসংখ্য বেসামরিক ফিলিস্তিনিকে হত্যার প্রতিবাদে নিন্দা জানিয়ে নিরাপত্তা পরিষদে উত্থাপিত চল্লিশটিরও বেশি বিল আমেরিকার ভেটোর কারণে পরাজিত হয়েছে।
বিশ্বনেতাদের প্রতিক্রিয়াঃ
এখনো পর্যন্ত জেরুজালেমে কোনো দেশের দূতাবাস নেই এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে এবং তাদের একচ্ছত্র সার্বভৌম শহর হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। তবে ১৯৬৭ সালে সিরিয়া, জর্ডান ও মিশর- এই তিন দেশের সঙ্গে যুদ্ধ জয়ের পর পূর্ব জেরুজালেম অধিগ্রহণ করে ইসরায়েল এবং তারা মনে করে, জেরুজালেম হবে একটি ‘অখণ্ড’ শহর। কিন্তু ফিলিস্তিনিরা বিশ্বাস করে, তাদের ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী হবে পূর্ব জেরুজালেম। এই পরিস্থিতিতে জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যে ঘোষণা দিতে যাচ্ছেন, তার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বের প্রতিক্রিয়া কেমন- তা একনজরে দেখে নেওয়া যাক। ট্রাম্প টেলিফোন করে কথা বলার পর মাহমুদ আব্বাসের মুখপাত্র ‘নাবিল আবু রুদেইনা’ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট আব্বাস সতর্ক করে দিয়েছেন, এ ধরনের পদক্ষেপে শান্তি প্রক্রিয়া এবং এ অঞ্চল ও বিশ্বের শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে।’ জর্ডানের বাদশা দ্বিতীয় আবদুল্লাহ ট্রাম্পকে যেভাবে সতর্ক করেছেন, তাতে মাহমুদ আব্বাসের উদ্বেগেরই প্রতিফলন দেখা গেছে। বাদশার প্রাসাদ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘তিনি ট্রাম্পকে বলেছেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তায় ভয়াবহ প্রভাব ফেলবে।’ ট্রাম্পকে হুঁশিয়ার করে বাদশা আরো বলেছেন, এ ধরনের পদক্ষেপে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র সৃষ্টির পথ বন্ধ হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে, যে রাষ্ট্রের রাজধানী হওয়ার কথা পূর্ব জেরুজালেম। বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, ‘এই অঞ্চলে ও বিশ্বে শান্তি এবং স্থিতিশীলতা অর্জনের ক্ষেত্রে জেরুজালেমই কেন্দ্রবিন্দু।’ মাহমুদ আব্বাসকে ফোন করে বাদশা আবদুল্লাহ বলেন, এ ধরনের সিদ্ধান্তের ফলে পরিস্থিতি যা-ই হোক, তারা একত্রে তা মোকাবিলা করবে। এক বিবৃতিতে ট্রাম্পকে সতর্ক করে দিয়ে মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি বলেছেন, ‘এ ধরনের পদক্ষেপ নিলে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার সুযোগ ভূলুণ্ঠিত হবে।’ বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, ‘আন্তর্জাতিক ফ্রেমওয়ার্কের মতামতের ভিত্তিতে ও জাতিসংঘের প্রাসঙ্গিক প্রস্তাবের মধ্যে থেকে জেরুজালেমের বৈধ মর্যাদা সংরক্ষণের বিষয়ে মিশরের অবস্থান জানিয়ে দিয়েছেন মিশরীয় প্রেসিডেন্ট।’ পৃথক টেলিফোন আলাপে সৌদি বাদশা সালমান যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে বলেছেন, ‘জেরুজালেম পরিস্থিতি নিয়ে স্থায়ী সিদ্ধান্তকে গুরুত্ব দিয়ে আমেরিকার যেকোনো ঘোষণা শান্তি আলোচনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে এবং এই অঞ্চলে অশান্তি বাড়াবে।’ সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা এসপিএ বাদশাকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, তিনি ফিলিস্তিনের জনগণ ও তাদের ঐতিহাসিক অধিকারকে সমর্থন করেছেন এবং দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন, জেরুজালেম ও আল-আকসা মসজিদের পবিত্র মর্যাদার কারণে এ ধরনের ভয়ংকর পদক্ষেপ বিশ্বজুড়ে মুসলিমদের ভাবাবেগে আগুন ছড়িয়ে দেবে।
ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেছেন, ‘অযোগ্যতা ও ব্যর্থতার জন্য যুক্তরাষ্ট্র এ ধরনের কাজ করছে।’ এদিকে, সিরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘ফিলিস্তিন দখল ও ফিলিস্তিনিদের উদ্বাস্তু করার ক্ষেত্রে এই পদক্ষেপ চূড়ান্ত রকমের অপরাধ।’ রোমান ক্যাথলিক ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস তার সাপ্তাহিক ভাষণে বলেছেন, যেভাবে আল-আকসায় মসজিদ পরিচালিত হয়, তার প্রতি সম্মান দেখানো উচিত। ১৯৯৪ সাল থেকে জেরুজালেমে মুসলিম ও খ্রিষ্টানদের সব স্থাপনা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব জর্ডানের ওপর।
মঙ্গলবার তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ান কড়া ভাষায় হুশিয়ার করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিলে এবং দূতাবাস স্থানান্তর করলে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করবে তুরস্ক। তিনি আরো বলেন, জেরুজালেম মুসলিমদের জন্য ‘রেড লাইন’। রেড লাইন অতিক্রম না করতে ট্রাম্পর্কে সতর্ক করেছেন তিনি। এ ছাড়া তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আবারো সনির্বন্ধ অনুরোধ করছি : আপনারা এই পদক্ষেপ নিতে পারেন না।’ জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিগমার গ্যাব্রিয়েল মঙ্গলবারের শেষভাগে যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করে বলেন, জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার এই পদক্ষেপ সংঘর্ষ থামাবে না, বরং তাতে আরো জ্বালানি জোগাবে। তিনি আরো বলেন, এ ধরনের পদক্ষেপের পরিণতি খুবই ভয়াবহ হবে এবং এমন কিছু না ঘটুক- সবাই তাই চায়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ কূটনীতিক ফেডেরিকা মোগেরিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলিদের জন্য দুটি পৃথক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়া নস্যাৎ করে, এমন যেকোনো পদক্ষেপ অবশ্যই এড়িয়ে যাওয়া উচিত। নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র স্টেফান ডুজারিক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘সম্ভাব্য দুই ‘রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান’ ভণ্ডুল করে, এমন যেকোনো একতরফা পদক্ষেপের বিরুদ্ধে কঠোর সতর্কতা উচ্চারণ করেছেন মহাসচিব।’ হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া বলেছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তের ফলে উপনিবেশের বিরুদ্ধে ক্ষোভের আগুন জ্বলে উঠবে এবং জেরুজালেমে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস স্থানান্তরিত হলে, তা হবে ‘রেড লাইন’ অতিক্রম করার শামিল। আরব বিশ্বের শীর্ষ সংগঠন আরব লিগের প্রধান আহমেদ আবুল গেইত মঙ্গলবার বলেন, জেরুজালেমের বর্তমান বৈধ ও রাজনৈতিক মর্যাদায় পরিবর্তন আসে, এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া ঠিক হবে না। তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন, ট্রাম্প প্রশাসনের এমন ঘোষণায় পুরো মধ্যপ্রাচ্যে অশান্তি ছড়িয়ে পড়বে।
তৃতীয় ইন্তিফাদা
ইন্তিফাদা একটি আরবি শব্দ। এর শাব্দিক অর্থ প্রকম্পিত করা, জেগে ওঠা বা উত্থান। তবে পারিভাষিক প্রচলিত অর্থে ইসরাইলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলনের দুইটি বড় ইসলামী আন্দোলন যা শুরু হয়েছিল মসজিদ গুলো থেকে তা বোঝানো হয়।
[১] ১৯৮০ এর দশকের শেষ দিকে এবং ১৯৯০ এর দশকের শুরুর দিকে পশ্চিম তীর এবং গাজা এলাকায় ইসরাইলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে এই আন্দোলন শুরু হয়। দুইটি বড় গণজাগরণের পর এখন ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন তৃতীয় ইন্তিফাদায় প্রবেশ করেছে।
[২] প্রথম ইন্তিফাদা শুরু হয়েছিল ১৯৮৭ সালে এবং চলে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত। এই আন্দোলন ছিল একটা অসহযোগ ধরনের আন্দোলন এবং গেরিলা পদ্ধতির প্রতিরোধ। ইজরাইল ইন্তিফাদা কে যেভাবে জবাব দিয়েছিল সেটাকে প্রধানমন্ত্রী ‘ঈটঝাক র্যাবিন’ বর্ণনা করেন জবরদস্তি, শক্তি এবং আঘাত এই তিন শব্দে। ইন্তিফাদাহর প্রথম বছরেই ইজরাইল ৩১১ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছিল যাদের ৫৩ জনই ছিল ১৭ বছরের কম বয়সী।
[৩] ইন্তিফাদার প্রথম দুই বছরেই ২৩ থেকে ২৯ হাজার ফিলিস্তিনি শিশু হাসপাতালের দ্বারস্ত হয়। বহু ফিলিস্তিনির শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ উদ্দেশ্যমূলক ভাবে ভেঙ্গে ফেলা হয়। এরপর দ্বিতীয় ইন্তিফাদা সংঘটিত হয়েছিল সেপ্টেম্বর ২০০০ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত। দ্বিতীয় ইন্তিফাদা বা মসজিদ আল আকসা ইন্তিফাদা শুরু হয় ২০০০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। এ্যারিয়েল শ্যারন হাজার খানেক সৈন্যবাহিনী নিয়ে জেরুজালেম এর পুরাতন শহর এবং মসজিদ আল আকসা ভ্রমণ করতে আসলে এই ইন্তিফাদা শুরু হয়। তার এই ভ্রমণ ফিলিস্তিনিদের চোখে ইসলামের তৃতীয় গুরুত্বপূর্ন মসজিদের উপর ইজরাইলি দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ হিসাবে প্রতীয়মান হয়। ঐ সময় ফিলিস্তিনিরা নিজেদের গড়া ঐ অস্ত্রগুলো পশ্চিম তীরের অধিকৃত অঞ্চলগুলোর প্রধান সড়কগুলোতে ছড়িয়ে দিয়েছিল ২০০৫ সালে দ্বিতীয় ইন্তিফাদার সমাপ্তি ঘটে।
ট্রাম্পের ঘোষণার সাথে সাথেই অধিকৃত ভূখণ্ডে ফিলিস্তিন ও ইসরাইলিদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সারা বিশ্বের বিরোধিতা ও প্রতিবাদ উপেক্ষা করে এবং আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে ফিলিস্তিনের জেরুজালেম শহরকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এ সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় তৃতীয় ইন্তিফাদার ঘোষণা করা হয়।
অন্যদিকে আমেরিকার অস্ত্র ব্যবসা জমজমাট রাখার জন্য মধ্যপ্রাচ্যে অশান্তি যে জিইয়ে রাখা প্রয়োজন সেটা আমেরিকা ভালভাবেই বুঝেছে। বৈশ্বিক রাজনীতিতে যদি আমেরিকা শীর্ষ অস্ত্র রপ্তানিকারক দেশ হয়ে থাকে তবে আমেরিকার শীর্ষ অস্ত্র আমদানিকারক দেশ যে ইসরাইল সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। তাই তাদের মধ্যে অস্ত্র বাণিজ্যের এই গোপণ আতাত একে অপরকে যেকোন বিষয়ে সন্তুষ্ট রাখতে তারা বদ্ধপরিকর মধ্যপ্রাচ্যেকে নিয়ন্ত্রের চাবিকাঠি জেরুজালেম ১৯৬২ সাল থেকে অদ্যাবধি আমেরিকা ১০০ বিলিয়ন ডলারের অধিক অর্থ সাহয্য প্রেরণ করেছে ইসরায়েলে অনুদান হিসেবে। আজ আমেরিকার জাতীয় আর্থিক ঘাটতি যেখানে প্রায় ১৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার, অধিকাংশ স্থানীয় ও প্রাদেশিক সরকার যেখানে নিজস্ব বাজেট ঘাটতি পূরণে অপারগ, জাতীয় বেকারত্ব যেখানে প্রায় ১০ শতাংশ সেখানে আগামী ২০১৩ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ইসরায়েলের সামরিক খাতে প্রতি বছর ৩.১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থ সাহায্য পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে আমেরিকা। তো আমেরিকার এহেন নগ্ন, চরম পক্ষপাতপুষ্ট ও অন্ধভাবে ইসরাইলকে সমর্থন করার এবং ইসরায়েলের সামরিক খাতে প্রতিবছর বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার অর্থ সাহায্য পাঠানোর ও সর্বতোভাবে ইসরায়েলের স্বার্থ রক্ষার কারণটা কী? এতসবের কারণ হিসেবে এটাই জানান দেয় আমেরিকা ইসরাইলকে নিয়ন্ত্রণ করতেছে এবং আমেরিকার সাহায্যপুষ্ট হয়ে ইসরাইল একের পর এক ভূখন্ড দখল করে মধ্যপ্রাচ্যে অশান্তি সৃষ্টির মাধ্যমে মুসলিম বিশ্বকে নিয়ন্ত্রের চেষ্টা করছে। আর তারই ধারাবাহিকতার ফল হিসেবে আমেরিকার ইসরাইলকে জেরুজালেমের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়।
পরিশেষে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ জিইয়ে রাখতে তার এ ঘোষণার পেছনে রয়েছে মার্কিন অস্ত্র ব্যবসা রমরমা করার গোপন উদ্দেশ্য। অস্ত্র ব্যবসার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে এক ধরনের যুদ্ধাবস্থা সৃষ্টি করে মধ্যপ্রাচ্য তথা মুসলিম বিশ্বকে নিজের নিয়ন্ত্রণে নেওয়াই তার কেবলমাত্র,শুধুমাত্র এবং একমাত্র উদ্দেশ্য।
তথ্যসূত্র:
http://www.dailysangram.com
http://m.risingbd.com
https://bn.m.wikipedia.org
PBN sites
We shall establish a web of privately-owned blog network sites!
Benefits of our privately-owned blog network:
We execute everything so GOOGLE DOES NOT grasp THAT this A privately-owned blog network!!!
1- We buy domains from different registrars
2- The main site is hosted on a VPS server (VPS is rapid hosting)
3- Additional sites are on distinct hostings
4- We designate a individual Google account to each site with verification in Google Search Console.
5- We make websites on WP, we do not use plugins with assisted by which Trojans penetrate and through which pages on your websites are produced.
6- We refrain from repeat templates and utilize only distinct text and pictures
We don’t work with website design; the client, if wanted, can then edit the websites to suit his wishes