মধ্যপ্রাচ্যে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, দীর্ঘমেয়াদি শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং ইসরাইল ও আমেরিকার সাথে আরববিশ্বের বিরোধ ও দ্বন্দ্বের অবসানের ক্ষেত্রে ইসরাইল-ফিলিস্তিন সমস্যার চিরস্থায়ী সমাধান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পবিত্র শহর জেরুজালেমের গুরুত্ব বিশ্বজনীন। এটা বিশ্ব রাজনীতির পীঠস্থান, বিশ্বশান্তি ও অশান্তির সূতিকাগার। জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি ও তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণার বিষয়ে সতর্ক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে বিশ্ব সম্প্রদায়।
মুসলিম বিশ্বের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সতর্ক বার্তা উপেক্ষা করেই এ-সংক্রান্ত ঘোষণা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। হোয়াইট হাউসে দেওয়া এক ভাষণে এ স্বীকৃতির ঘোষণা দেন তিনি। এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত কয়েক দশকের আমেরিকান নীতিকে বদলে দিয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। হোয়াইট হাউসে দেয়া এক ভাষণে তিনি আরো ঘোষণা করেছেন যে, আমেরিকান দূতাবাস তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। এ ঘোষণায় ক্ষোভে ফেটে পড়ছে মুসলিম বিশ্ব। জেরুজালেমের অবস্থার যেকোনো পরিবর্তনের প্রভাব নানাবিধ এবং তা যেকোনো সময় আয়ত্তেরবাইরে চলে যেতে পারে। ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্তের ফলে মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি প্রক্রিয়া বিঘ্ন ও বিশৃঙ্খলা তো দেখা দেবেই, পাশাপাশি সারা বিশ্ব এ উদ্বিগ্ন পরিস্থিতির মধ্যে পড়বে।
জেরুজালেম প্রতিষ্ঠা ও ফিলিস্তিন-জেরুজালেম দ্বন্দের ইতিহাস
তৌরাত অনুসারে বর্তমান ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের অংশবিশেষ নিয়ে গঠিত ‘ইসরায়েলি ভূমি’ (যাকে ইংরেজিতে ‘The land of Israel’ ও হিব্রু ভাষায় ‘Eretzyisrael’ বলা হয়)। আব্রাহামিক ধর্মের আবির্ভাবের প্রায় শুরু থেকেই ইহুদিদের কাছে পুণ্যভূমি হিসেবে বিবেচিত। তৌরাত অনুযায়ী ‘ইসরায়েলি ভূমি’ ইহুদিদের প্রতি ঈশ্বরের প্রতিশ্রুত ভূমি এবং ইহুদি ধর্মের ইতিহাস অনুযায়ী মুসা নবীর (আ.) আগমনের আগে ও পরে ইহুদিরা বংশানুক্রমে উক্ত এলাকায় বসবাস করে আসছিল। এমনকি, খন্ডকালের জন্য কখনও কখনও উক্ত এলাকা তাদের শাসনাধীনও ছিল। সপ্তম শতাব্দিতে আরব মুসলিম বাহিনী উক্ত এলাকা বিজয় করার পূর্বে এসেরিয়ান, ব্যাবিলনিয়ান,পারসিয়ান, গ্রিক,রোমান, স্যাসানিয়ান ও বাইজেন্টিন শাসককুল কর্তৃক উক্ত এলাকা শাসিত হয়। এর মধ্যে ব্যাবিলনিয়ান শাসনকালীন উক্ত এলাকায় ইহুদিদের উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পায়। এছাড়া রোমান সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে ইহুদিদের সংঘটিত বিদ্রোহ (ইতিহাসে যা ‘বার কোখবা বিদ্রোহ’ তথা Bar kokhba revolt নামে পরিচিত) বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। যে বিদ্রোহের পরিণতিতে অসংখ্য ইহুদিকে অত্যাচার ও হত্যা করা হয় যা উক্ত এলাকায় ইহুদিদের উপস্থিতিকে পুনরায় উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস করে। অসংখ্য ইহুদি সে সময় ইউরোপে মাইগ্রেট (পরিযায়ন) করে।

Source: BBC.com
অতঃপর সপ্তম শতাব্দি থেকে ষোড়শ শতাব্দি পর্যন্ত উমাইয়া,আব্বাসিয়া, মামলুক সালতানাতসহ বিভিন্ন মুসলিম শাসকদের হাত ঘুরে অবশেষে উক্ত এলাকা ‘অটোম্যান এম্পায়ার’ তথা তার্কিশ সাম্রাজ্যের শাসনাধীনে আসে যারা অধুনা বিংশ শতাব্দি পর্যন্ত উক্ত এলাকা শাসন করে। বলাবাহুল্য, আরব বংশোদ্ভূত শাসককুল কর্তৃক উক্ত এলাকা সুদীর্ঘ সময় ধরে শাসিত হওয়ার কারণে আরবি ভাষা ও আরব সংস্কৃতি সেখানে বসবাসরত ইহুদিদের মাঝেও বিস্তৃতি লাভ করে। যে কারণে বর্তমান ইসরায়েলে ও ইসরায়েল কর্তৃক দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূমিতে আজও সম্ভবত উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আরবিভাষী ইহুদি খুঁজে পাওয়া যাবে। যা হোক, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ‘অটোম্যান এম্পায়ার’ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের কাছে পরাজিত হলে আরব অধ্যুষিত ফিলিস্তিন ব্রিটিশ প্রশাসনের আওতায় চলে আসে। এ সময় (অর্থাৎ প্রথম বিশ্বযুদ্ধ নাগাদ ও তার পরবর্তী সময়) পূর্ব ইউরোপসহ বলতে গেলে পুরো ইউরোপ জুড়েই বিভিন্ন স্থানে বংশানুক্রমে ইহুদি অভিবাসীদের বসবাস ছিল।অত্যন্ত মেধাশক্তিসম্পন্ন, বুদ্ধিমান ও কর্মঠ জাতি হিসেবে পরিচিত ইহুদিরা ইউরোপে সংখ্যালঘু হওয়া সত্ত্বেও অর্থনীতিকে অনেকাংশ নিয়ন্ত্রণ করত এবং অবধারিতভাবে অর্থের জোরে রাজনীতিকেও তারা কমবেশি প্রভাবিত করতে সক্ষম ছিল। এতে করে কোনো কোনো দেশ সংখ্যাগুরু খ্রিস্টানদের মাঝে অসন্তোষ ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং সেসব দেশের ক্ষমতাসীন শাসকদের কারও কারও পক্ষে দেশের অর্থনীতি ও রাজনীতিতে ইহুদিদের ভূমিকা নিয়ন্ত্রণ বা সীমিত করা ক্রমে কঠিন হয়ে পড়ে। একদিন অর্থনৈতিকভাবে তুলনামূলক পশ্চাদপদ কিংবা সুবিধাবঞ্চিত সংখ্যাগুরু দেশবাসীর ক্ষোভ এবং অন্যদিকে অর্থনৈতিক সুবিধাভোগী সংখ্যালঘুদের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক শক্তি ও প্রভাব প্রতিপত্তি-ইহুদিদের নিয়ে দেশে দেশে সৃষ্ট রাজনীতির এই টানাপোড়ন ইউরোপ তৎকালীন সময়ে ‘দ্য জুয়িশ কোয়েশ্চিন’ (ইহুদি প্রশ্ন) নামে বহুল পরিচিত। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের তথাকথিত ইহুদি প্রশ্নের সমাধানকল্পে ব্রিটিশ সরকার স্বদেশের ইহুদিদের সাথে সমঝোতায় আসে এবং ১৯১৭ সালে বেলাফোর ডিক্লারেশন’ (বেলাফোর ঘোষণা) নামে ইতিহাসখ্যাত এক চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। যে চুক্তি অনুসারে আরব অধ্যুষিত তৎকালীন ফিলিস্তিনে ইহুদিদের স্থানীয়ভাবে বসবাসের জন্য সুনির্দিষ্ট একটা ভূমি (রাষ্ট্র নয় অবশ্য) প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। ইহুদিদের সাথে ব্রিটিশ সরকারের ‘বেলফোর’ চুক্তি করার আরেকটা উদ্দেশ্য ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ‘অটোম্যান এম্পায়ার’কে পরাজিত করে ফিলিস্তিন দখল করা যা কৌশলগত কারণে ইহুদিদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমর্থন ছাড়া ব্রিটিশ সরকারের পক্ষে রাজনৈতিকভাবে অর্জন করা সম্ভব ছিল না।

Source: Mulpix
প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর নবগঠিত ‘লীগ অব নেশন্স’ (বহুজাতি সংগঠন) ব্রিটিশ সরকারকে দখলকৃত ফিলিস্তিনের ওপর ‘ম্যান্ডেট (প্রশাসনিক ক্ষমতা) প্রদান করে মূলত ব্রিটিশ সরকারের ‘বেলফোর’ চুক্তিকে বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যে। ব্রিটিশ সরকার যে সময় ফিলিস্তিনের ম্যান্ডেট পায়, সে সময় ফিলিস্তিনে বসবাসকারী ইহুদিদের আনুমানিক সংখ্যা ছিল মোট জনসংখ্যার মাত্র ১১ শতাংশ। অবশ্য নিজেদের নির্ধারিত পুণ্যভূমিতে ফিরে যাওয়ার এবং সেখানে ইহুদিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন ও পরিকল্পনাকে সামনে রেখে অটোম্যান সুলতান ও তার এজেন্টদের কাছ থেকে ফিলিস্তিনের পতিত জলাশয় ও অনুর্বর ভূমি ইউরোপিয়ান ইহুদিরা গণহারে কিনতে শুরু করেছিল বিংশ শতাব্দীর প্রায় পুরো শেষ ভাগ জুড়েই। পরবর্তী বছরগুলোতে ব্রিটিশ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে ইহুদিদের অনেকে ফিলিস্তিনে মাইগ্রেট করতে শুরু করে এবং ১৯৩০-১৯৩১ সাল নাগাদ ফিলিস্তিনে ইহুদি জনসংখ্যা বেড়ে প্রায় ১৭ শতাংশে গিয়ে দাঁড়ায় । ইতোমধ্যে জার্মানে নাৎসিরা ক্ষমতায় এল ইহুদি বিদ্বেষ চরমে পৌছে এবং প্রক্রিয়াগতভাবে ইহুদিদেরকে হত্যা করার পরিকল্পনা করা হয়। ইহুদি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করায় জার্মানে নাৎসিরা ক্ষমতায় এলে ইহুদি বিদ্বেষ চরমে পৌঁছে এবং প্রক্রিয়াগতভাবে ইহুদিদেরকে হত্যা করার পরিকল্পনা করা হয়। ইহুদি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করার জার্মানদের এই কুখ্যাত পরিকল্পনা ইতিহাসে ‘দ্য ফাইনাল সল্যুশন’ (চূড়ান্ত সমাধান) নামে পরিচিত। নিরাপত্তাহীনতার কারণে ও প্রাণভয়ে প্রচুর ইহুদি সে সময় জার্মান থেকে পালিয়ে ফিলিস্তিনে এসে আশ্রয় নিলে ফিলিস্তিনে ইহুদি অধিবাসীর সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়। স্বভূমিতে ইহুদি জনসংখ্যার ক্রমবর্ধমান ও দ্রুততম বৃদ্ধি ফিলিস্তিনি আরবদেরকে শঙ্কিত করে তোলে অদূর ভবিষ্যতে অত্র এলাকায় নিজেদের জাতীয়তা ও আরব পরিচয় বজায় রাখার প্রশ্নে। এছাড়া ভূমি বেচাকেনা এবং ইহুদি মালিকানাধীন কল-কারখানা ও খামারে আরব মুসলিমদেরকে কাজ করতে না দেয়ার ইহুদিদের একপেশে ও বক্র নীতিমালা ভীষণ ক্ষিপ্ত করে তোলে ফিলিস্তিনি আরবদের। যার ফলশ্রুতিতে ফিলিস্তিনি আরবরা স্থানীয় ইহুদিদের সাথে পর্যায়ক্রমে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। পরবর্তীকালে দুই দালেই সন্ত্রাসী গ্রুপের জন্ম হয় এবং উভয় পক্ষে অসংখ্য সন্ত্রাসী হামলা ও গুপ্ত হত্যার ঘটনা ঘটে।

Source: Getty Images
১৯৩৬ সাল নাগাদ ফিলিস্তিনে ইহুদি অভিবাসীদের বিপুল উপস্থিতি ও ইহুদিদের প্রতি ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সরকারের পক্ষপাতিত্বের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত বিক্ষোভ প্রদর্শন করা থেকে শুরু করে পরবর্তীতে ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর সাথে সশস্ত্র সংঘর্ষে লিপ্ত হয় ফিলিস্তিনি আরবরা যা ইতিহাসে ব্যর্থ ‘১৯৩৬-১৯৩৯ আরব বিদ্রোহ’ নামে পরিচিত। অবশ্য ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনি আরবদের পরিকল্পিত বিদ্রোহ সফল না হলেও শেষ পর্যন্ত ‘হোয়াইট পেপার ১৯৩৯’ প্রণয়ন করে ব্রিটিশ সরকার ফিলিস্তিনে ইহুদিদের উপস্থিতি ও অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ করার প্রচেষ্টা করে। এরপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন হিটলারের নেতৃত্বে জার্মানিতে ইহুদিদেরকে নিশ্চিহ্ন করার ‘নাযি হলোকস্ট’ সংঘটিত হলে অসংখ্য ইহুদি পালিয়ে ফিলিস্তিনে এসে আশ্রয় নিলে বেআইনি ইহুদি অভিবাসীর সংখ্যা বহুগুণে বৃদ্ধি পায় যা উক্ত এলাকায় বসবাসকারী ইহুদি-মুসলিম সম্পর্কে চরম অবনতি ঘটায় এবং দুই জাতির ভেতর ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার জন্ম দেয়। এ সময় দুই জাতির মধ্যে দফায় দফায় ‘রায়ট (জাতিগত দাঙ্গা) সংঘটিত হয়। ব্রিটিশ সরকার আরবদের পক্ষে হোয়াইট পেপার ১৯৩৯ প্রণয়ন করার ক্ষুব্ধ ইহুদিরা এ পর্যায়ে ব্রিটিশ প্রশাসনের সাথে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়। ফলে পরিস্থিতি ক্রমশ জটিলতার দিকে ধাবিত হলে ব্রিটিশ সরকার ফিলিস্তিনে ইহুদি ও মুসলমানদের মাঝে কোনো প্রকার কূটনৈতিক শান্তিপূর্ণ সমাধান প্রতিষ্ঠায় সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়। তখন নবগঠিত জাতিসংঘের হাতে ব্রিটিশ সরকার দায়িত্ব অর্পণ করে ফিলিস্তিনের ইহুদি-মুসলিম সমস্যার একটা শন্তিপূর্ণ সামাধান করে দেওয়ার জন্য। জাতিসংঘ ১১ সদস্যের একটা নিরপেক্ষ কমিটি গঠন করে এবং তাদের মাসাধিক কাল গবেষণালব্ধ পরামর্শ অনুযায়ী ১৯৪৭ সালে ইহুদি অধ্যুষিত ‘ইসরাইল’ ও মুসলিম অধ্যুষিত ‘ফিলিস্তিন’ নামের দুটো পৃথক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব করা হয়। তবে মুসলিম ও ইহুদি উভয় ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র ও পুণ্যভূমি হিসেবে বিবেচিত জেরুজালেমকে জাতিসংঘের নিজস্ব ক্ষমতার আওতায় রাখার প্রস্তাব করা হয়। তবে মুসলিম ও ইহুদি উভয় ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র ও পুণ্যভূমি হিসেবে বিবেচিত জেরুজালেমকে জাতিসংঘের নিজস্ব ক্ষমতার আওতায় রাখার প্রস্তাব করা হয় উত্থাপিত ওই বিলে। ১৯৪৭ সালের নভেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ সম্মেলনে ৩৩ বনাম ১৩ ভোট (১০টা দেশের মুখপাত্রের অনুপস্থিতে) ‘রেজ্যুলেশন ১৮১-এর মাধ্যমে বিলটি পাস হয়। নবগঠিত আরবলীগ তথা আরব দেশগুলো বিলের বিপক্ষে ভোট দেয়। এমনকি, দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে জাতিসংঘের ফিলিস্তিন বিভাজনকে বেআইনি বলে দাবি করে আরবলীগ এবং গোটা ফিলিস্তিনকে আরব মুসলিমদের একক শাসনাধীনে ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানায় তারা।
উল্লেখ্য, পূর্ব আরব সাগর থেকে পশ্চিমে আটলান্টিক মহাসাগর এবং উত্তরে ভূমধ্যসাগর থেকে দক্ষিণে হর্ন অব আফ্রিকা’ ও ভারত মহাসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত, সুবিশাল আরব ভূখন্ডের একক ঐতিহ্য ভাষা ও কৃষ্টি বিনষ্টের আশঙ্কায় আরবলীগ কর্তৃক ইসরাইল প্রতিষ্ঠার বিরোধিতার পেছনে প্রধান কারণ বা চালিকাশক্তি ছিল মূলত আরব জাতীয়তাবাদ ধর্ম নয়। কেননা ব্রিটিশ বা ফরাসী ঔপনিবেশিক শাষক থেকে সম্প্রতি মুক্ত হওয়া ও প্রস্তাবিত ইসরায়েলের সম্ভাব্য প্রতিবেশী প্রতিবেশী এসব আরব রাষ্ট্রগুলোর অনেকের শাসন ক্ষমতায় সে সময় আসীন ছিল সেক্যুলারপন্থিরা (ধর্ম নিরপেক্ষরা) ইহুদিরা জাতিসংঘ প্রদত্ত প্রস্তাব ও ম্যাপ মেনে নিলেও ফিলিস্তিনি মুসলিমরা স্বভাবতই তা প্রত্যাখ্যান করে। কেননা ৩২ শতাংশ ইহুদি জনগণকে (যাদের অধিকাংশই অভিবাসী) যেখানে ফিলিস্তিনি ভূমির ৫৬ শতাংশ প্রদান করা হয়, সেখানে ৬৮ শতাংশ মূল আদিবাসী মুসলিম আরবদেরকে প্রদান করা হয় মাত্র ৪৪ শতাংশ ভূমি। অবশ্য প্রস্তাবিত ম্যাপ অনুযায়ী ইসরায়েলের রাষ্ট্র সীমানার ভেতর বসবাসকারী প্রায় দশ লক্ষ অধিবাসীর ভেতর ইহুদি ও মুসলিমদরে সংখ্যা ছিল প্রায় সমান সমান।

Source: Western Jurisdiction
পক্ষান্তরে, ফিলিস্তিনের রাষ্ট্র সীমানার ভেতর বসবাসকারী প্রায় আট লক্ষ অধিবাসীর ভেতর ইহুদিদের সংখ্যা ছিল মাত্র দশ হাজার। আর জাতিসংঘ নিয়ন্ত্রিত জেরুজালেমে ইহুদি ও মুসলিমদের প্রস্তাবিত সংখ্যা ছিল সমান সমান চার লক্ষ করে। জাতিসংঘ কমিটির দাবি অনুযায়ী ইসরাইলকে অধিক পরিমাণে ভূমি দেয়ার পেছনে যুক্তি ছিল উক্ত এলাকায় ভবিষ্যত ইহুদি অভিবাসীদের সঙ্কুলানের ব্যবস্থা রাখা। এছাড়া মানুষ বসবাসের জন্য প্রতিকূল, দক্ষিণের নেগেভ মরুভূমি ইসরাইলকে দেয়া হয় এই উদ্দেশ্য যেন ভবিষ্যতে আগত ইহুদি অভিবাসীরা সেখানে নিজেদের প্রয়োজনে বসতি গড়ে নিতে পারে। জাতিসংঘের দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ফিলিস্তিন বিভাজনের প্রস্তাব অনুমোদন ইহুদি শিবির যতখানি আনন্দ বয়ে আনে, ঠিক ততখানিই অসন্তুষ্টি ও ক্ষোভ বয়ে আনে আরব শিবিরে। যার পরিপ্রেক্ষিতে আবারও দফায় সংঘর্ষ বাধে ফিলিস্তিনের ইহুদি ও মুসলিমদের ভেতর এবং প্রচুর হতাহতের ঘটনা ঘটে। ১৯৪৮ সালের মে মাসে ব্রিটিশ সরকারের ফিলিস্তিন ম্যান্ডেট-এর মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার আগের দিন ইসরাইল স্বাধীনতা ঘোষণা করে। ইসরায়েলের স্বাধীনতা ঘোষণার পরপরই আমেনিকা ও রেজা শাহ পাহলভির ইরান ইসরাইলকে স্বাধীনতা ঘোষণার পরপরই আমেরিকা ও রেজা শাহ পাহলাভির ইরান ইসরাইলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দান করে। যা অনুসরণ করে পরবর্তী দিনগুলোতে অন্যান্য অনেক অমুসলিম দেশ ইসরাইলকে রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি দান করে। তবে ইসরাইল স্বাধীনতা ঘোষণা করার পরদিনই ঈজিপ্ট লেবানন সিরিয়া জর্ডান ও ইরাক ইসরায়েলে সামরিক হামলা চালায়। ইউরোপীয় উপনিবেশ থেকে সম্প্রতি মুক্ত হওয়া এসব আরবদেশ সামরিকভাবে সে সময় তেমন একটা শক্তিশালী না হওয়ায় ইসরাইলকে পরাজিত করতে ব্যর্থ হয়।
You actually make it seem so easy with your presentation but I find this topic to be actually something which I think I would never understand. It seems too complex and extremely broad for me. I’m looking forward for your next post, I’ll try to get the hang of it!
Im now not certain the place you’re getting your information, but great topic. I needs to spend a while learning much more or working out more. Thank you for wonderful information I used to be looking for this info for my mission.
I like this post, enjoyed this one thankyou for posting.
Real clean website , regards for this post.
Just what I was looking for, regards for putting up.