পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রচলিত কিছু ভ্রান্ত বিশ্বাস বা কুসংস্কার

0

যুক্তির বিচারে যা অন্যায্য, সংস্কারের বিচারে যা ভ্রান্ত, প্রগতিশীলতার চোখে যা বিষাক্ত এবং বিশ্বাসের বিচারে আমজনতার কাছে যা দ্বিধাবিভক্ত তা ‘কুসংস্কার ‘ নাম ধারণ করে আপনাকে আপনে কটাক্ষ করে অথবা সগৌরবে যুগের পর যুগ বহাল থেকে পৃথিবীতে তার অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে হালের আধুনিক যুগেও সেই প্রাগৈতিহাসিক সময় থেকে।

কুসংস্কার বা ভ্রান্ত বিশ্বাসের প্রচলন হয়েছিল প্রাকৃতিক ভয় থেকে। যখন প্রকৃতির অস্বাভাবিকতা মানুষের কাছে ব্যাখ্যাতীত পরিগণিত হত তখন নিজ থেকে সে এর একটা অদ্ভুত ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়ে নিত। এছাড়া ধর্মীয় অজ্ঞতাজনিত কারণেও কুসংস্কারের বিস্তার ঘটতে দেখা যায়। তারপর থেকে কখনো কখনো লৌকিক বিশ্বাসের মোড়কে কুসংস্কার বা ভ্রান্ত বিশ্বাস সমাজে চেপে বসে।
বিশ্বের আধুনিক সব রাষ্ট্র থেকে দরিদ্রতম রাষ্ট্র পর্যন্ত সব জায়গায় এর ব্যাপক আধিপত্য পরিলক্ষিত হয়।
পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের সেসব ভ্রান্ত বিশ্বাস দিয়ে সাজানো হয়েছে ইতিবৃত্তের আজকের ফিচার।

গরুরা রাতে গল্প করে

আয়ারল্যান্ডের কিছু অধিবাসী বিশ্বাস করে, রাত হলে গরুরা পরস্পর সুখদুঃখের গল্পে মেতে উঠে। আর গরুদের এসব গল্প যদি কেউ ভুলেও শুনতে যায় তবে ভোর হওয়ার আগেই সে মারা যাবে।
আইরিশ কুসংস্কার।

সুখদুঃখের গল্প ছাড়াও গরুদের আচার আচরণ সংক্রান্ত কিছু কুসংস্কারও আইরিশদের মধ্যে প্রচলিত আছে। তারা বিশ্বাস করে, কোন কারণ ছাড়াই যদি গরু খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে দেয় তবে গরুর মালিকের বিপদ অত্যাসন্ন। গরুর এমন আচরণের অর্থ হচ্ছে মালিক খুব শীঘ্রই ভয়ানক রোগে আক্রান্ত হয়ে পৃথিবী থেকে পটল তুলবে।

পেঁয়াজ সমাচার

যুক্তরাষ্ট্রের মায়ামি অঞ্চলের বাসিন্দাদের বদ্ধমূল বিশ্বাস ঠাণ্ডা সারাতে পেঁয়াজের বিকল্প নেই। তারা মনে করে দেহে খারাপ আত্মার প্রবেশের কারণেই ঠাণ্ডা লেগে থাকে। এজন্য পেঁয়াজ কেটে যদি বুকের উপর রেখে দেয়া হয় তবে খারাপ আত্মা কাঁদতে কাঁদতে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়।
রহস্যময় পেঁয়াজ।

কম্বোডিয়ার একটি অঞ্চলে পেঁয়াজ নিয়ে প্রচলিত আছে মজার একটি কুসংস্কার। তারা বিশ্বাস করে, আকাশের মেঘ পেঁয়াজের ঝাঁজ সহ্য করতে না পেরে অঝোর ধারায় কান্না করে। যার ফলাফল হিসেবে বৃষ্টির উৎপত্তি হয়। তারা বিশ্বাস করে, বৃষ্টি হওয়ার আগে মেঘ আর হাতির মধ্যে তুমুল ঝগড়া লেগে যায় এই বলে যে, কে কত বেশি জোরে চিৎকার দিতে পারে। হাতি বলে আমার জোর বেশি। মেঘ বলে আমার জোর বেশি। মেঘকে পরাজিত করতে তাই হাতি এক ফন্দি এঁটে বসে। সে হাজার হাজার পেঁয়াজ আকাশের দিকে ছুড়তে থাকে। পেঁয়াজের ঝাঁঝ সহ্য করতে না পেরে মেঘ কাঁদতে থাকে। আর এভাবেই সৃষ্টি হয় বৃষ্টির।

হুক্কা দিবে ফসলের বাম্পার ফলন!

ফসল রোপণের মৌসুমে নাইজেরিয়ার পাইবেরিয়া নামক গ্রামে হুক্কা উৎসবের ধুম পড়ে। নারীপুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ কোন বাছবিচার ছাড়াই সবাই হুক্কা সেবন করতে থাকে। এতে নাকি শস্যের দেবতা খুশি হন। যার কারণে ফলন হয় বাম্পার!

হাত থেকে চিরুনি পড়লে ঘরে আসবে মেহমান

চুল আঁচড়াবার সময় যদি হাত থেকে চিরুনি পড়ে যায় তবে ঘরে নিশ্চিত মেহমান আসবে। বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলে বিশেষ করে মেয়েদের মধ্যে এ কুসংস্কার প্রচলিত আছে।

ডিম সমাচার

বাজার থেকে ধবধবে সাদা এক হালি ডিম নিয়ে বাসায় যাচ্ছেন। পথিমধ্যে হাত থেকে ডিমগুলো রাস্তায় পড়ে গেল। জলজ্যান্ত ডিমগুলো একটু অসাবধানতা-বশত নষ্ট হয়ে গেল। আরেকটু সাবধান থাকলেই হয়তো ডিমগুলো রক্ষা করা যেত। মনটা হয়ে গেল খারাপ।
কিন্তু ঐ ডিম যদি পড়েও গিয়ে না ভাঙে তাহলে কেমন লাগবে আপনার? নিশ্চয়ই খুশিতে গদগদ হয়ে যাবেন। কিন্তু না, আইরিশরা খুশিতে গদগদ না হয়ে দু:খে কাঁচুমাচু হয়ে যায়। তারা বিশ্বাস করে, ডিম হাত থেকে পড়ে গিয়েও যদি না ভাঙে তবে কপালে খারাবি আছে।

ডিম নিয়ে আইরিশদের মধ্যে আরও একটি ভ্রান্ত বিশ্বাস প্রচলিত আছে। তারা মনে করে, সিদ্ধ ডিম খাওয়ার সময় যদি খোসা কোনভাবে মুখে ঢুকে তবে মন্দভাগ্য তার পিছু ছাড়বে না। একের পর এক তাকে দুর্ভাগ্য কোলে করে বেড়াতে হবে।

চুলকানির যত আচার

একটা পার্টিতে অংশ নিতে যাবেন। তার জন্য আপনাকে হতে হবে স্যুটেশ ব্যুটেড। শার্ট প্যান্ট পরলেন। জুতা পরতে যাবেন ওমনি ডান পায়ের গোড়ালিতে শুরু হল চুলকানি। ব্যস, আজকের গন্তব্যস্থলে আপনি আর আরামসে যেতে পারছেন না। আপনাকে ঘুরিয়ে প্যাঁচিয়ে যেতে হবে নির্দিষ্ট জায়গায়। আয়ারল্যান্ডে এই কুসংস্কারটি ভালই জনপ্রিয়।

ব্রাজিলে চুলকানি নিয়ে মজার একটি বিশ্বাস প্রচলিত আছে। সদ্য হামাগুড়ি শেখা কোন ছেলে বাচ্চা যদি ডান পায়ের পাতা চুলকায় তবে বুঝতে হবে বড় হয়ে সে ফুটবলার হবে। আর কোন মেয়ে শিশু যদি যদি দুই পায়ের পাতা চুলকায় তবে বুঝতে হবে বড় হয়ে সে নৃত্যশিল্পী হবে।

ভূতের ভয়ে নাম পাল্টানো!

অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসী গোষ্ঠী বেকেলপুরা’রা বিশ্বাস করে, কোন মানুষ মারা গেলে ভূত হয়ে যায় এবং ঐ মৃত মানুষকে যদি তার নাম ধরে সম্বোধন করা হয় তবে সম্বোধনকারীর ঘাড় মটকে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। তাই তারা মৃত মানুষকে তার নিজ নামে না ডেকে ডাকে ‘বুরপোনাম’ নামে। বেকেলপুরা ভাষায় যার অর্থ সেই মরা মানুষ।

সংখ্যার কুসংস্কার

বর্তমান সময়ে এশিয়ার প্রগতিশীল দেশ হিসেবে জাপান ভালই সুনাম কুড়চ্ছে। প্রযুক্তির স্বর্গরাজ্য এই দেশে সংখ্যা নিয়ে অদ্ভুত বিশ্বাস প্রচলিত আছে। গাণিতিক সংখ্যা চার নিয়ে তাদের যত ভয়। তারা মনে করে এর প্রকৃত উচ্চারণ আসলে সাই (shy)। জাপানি ভাষায় যার অর্থ মৃত্যু। যার কারণে তারা এই সংখ্যাটিকে এড়িয়ে চলে।
রহস্যসংখ্যা ৪!

হাসপাতাল, হোটেল ইত্যাদিতে তারা সাধারণত চার সংখ্যাটিকে উলটো করে ঝুলিয়ে রাখে।

শিশুকে অপনামে ডাকা

চীনের বিশেষ কিছু অঞ্চলে সদ্য জন্ম নেয়া বাচ্চাকে সকল ধরণের বিপদআপদ থেকে রক্ষার্থে অপনামে ডাকার সংস্কৃতি চালু আছে। যেমন, কুকুরের বিষ্ঠা, ভিক্ষুকের পুত্র ইত্যাদি। তাদের মতে, অপনামে ডাকলে শিশুর রোগবালাই কম হয়।

চলার পথে পানি ছিটানো

সার্বিয়ার কোন নাগরিক যদি কোথাও চাকরির ইন্টার্ভিউ দিতে যায় তবে তার পরিবারের সদস্যরা তার বের হওয়ার রাস্তায় পানি ছিটিয়ে দেয়। তাদের নিপাট বিশ্বাস এতে ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয়।

রাতে চুইংগাম চিবানো

রাতে চুইংগাম চিবানো মানে হল মরা মানুষের মাংস চিবানো। তুরস্কে এই কুসংস্কার খুব জনপ্রিয়।

কোরআন শরীফ হাত থেকে পড়ে গেলে!

পবিত্র কোরআন শরীফ যদি কারো হাত থেকে পড়ে যায় তবে যেটুকু উচ্চতা থেকে কোরআন পড়েছে সেটুকু উচ্চতার আখ কেটে সবাইকে বিলিয়ে দিতে হবে। নয়তো এ পাপ খণ্ডানো যাবে না!
আমাদের দেশেই এই ভ্রান্ত বিশ্বাসটি প্রচলিত আছে।

 

তথ্যসূত্র : কুসংস্কার দেশে দেশে, আরিফ হাসান
ইন্টারনেট, লেখকের নিজস্ব অভিজ্ঞতা

Leave A Reply

Your email address will not be published.

sativa was turned on.mrleaked.net www.omgbeeg.com

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More