নামটি শুনে যারা স্ক্রল করে গেলেন তারা হয়তো ফুটবলের সর্বজয়ী একজন কোচের জীবনকে কেবল ট্রলের দূরবীনেই দেখে যাবেন, আর বাকিদের জন্য আজ এমন একজনকে নিয়ে লিখাটি যা উনার ক্যারিয়ারের শেষ সময়ের উপর্যুপরি ট্রলিং বাদেও যে তাঁর বিশাল একটি ক্যারিয়ার রয়েছে তা তুলে ধরবে।
আসলে উপস্থাপনা এমন একটা জিনিস যেটা ভিলেনকেও হিরো বানাতে পারে, যেমন নারকোস এ পাবলো এস্কোবার বা হাউজ অব কার্ডস এ ফ্রাংক আন্ডারউড । আমার হাতে অত জোর নেই তবে এই প্রজন্মের অনেকের চোখে এক ভিলেনের বীরত্বগুলো নিয়েই আজকে তর্জমা করব । নাম লুই ভ্যান গাল । খুব নগন্য এক প্লেয়িং ক্যারিয়ার তাঁর, আয়াক্স একাডেমির প্লেয়ার হলেও মাঠ কাপানো কেউ ছিলেন না, তবে মাঠের কিনারা কাপানোতেই তার যশ (বা অপযশ)! নিম্ন-মাঝারি একটা প্লেয়িং ক্যারিয়ার শেষে এজেড আলকমার নামক ডাচ এক ক্লাবে এসিস্ট্যান্ট কোচ হয়ে তাঁর শুরু। মূলত যুবদল আর মূলদলের সেতুবন্ধনের কাজটা করতেন। প্রাথমিক ভাবে যে কাজটা খুব ভাল পারতেন তা হলো ইয়ুথ টিমের সাথে একাট্টা হয়ে যাওয়া। ওদিকে ডাচ জায়ান্ট ক্লাব আয়াক্স তাদের যুব একাডেমি থেকে খেলোয়াড় তুলে আনার দিকে সবসময় সচেষ্ট। আয়াক্স একাডেমিকে ভাবা হতো সে আমলের সেরা। ভ্যান গালের আলকমার একাডেমিতে কাজের সুনাম শুনে খুব সহজেই আয়াক্স তাদের সাবেক একাডেমি গ্রাজুয়েটকে এসিস্ট্যান্ট কোচ করে নিয়ে নেয় ।
তখন আয়াক্সের বেহাল দশা চলে। ১৯৮৪-১৯৯৩ অবধি কেবল একটা লীগ ট্রফি তাদের। ভ্যান গাল এসেছিলেন প্রথমে ইয়ুথ কো অর্ডিনেটর হয়ে। এখানে এমন কিছু প্লেয়ার বেড়ে উঠছিল যারা তাঁর পরবর্তী আয়াক্স এবং বার্সা সাফল্যের ভিত্তি হয়ে দাড়াবে, আমরা তা দেখব ক্রমেই। দুই ডি বোর ভাই, এডজার ডেভিডস, ওভারমার, রিজগার, ক্লুইভার্টদের সাথে একাডেমিতেই পরিচয়। আস্তে আস্তে সেকেন্ড ম্যান হয়ে দাড়ালেন মূল দলের কোচের। ১৯৯২ তে মূল কোচ সরে যান আর আয়াক্স যেহেতু প্লেয়ার ডেভলাপকে সবচেয়ে প্রায়োরিটি দেয় তাই ইয়ুথ টিম এর সাথে সম্পর্কিত থাকায় নতুন কোচের স্থলাভিষিক্ত হলেন ভ্যান গাল। ক্রুয়েফের টোটাল ফুটবলের পর আয়াক্স তখন আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে ভুগছে। একগাদা নতুন মুখকে নিয়ে একটা মারদাঙ্গা এটাকিং ইউনিট দাড় করালেন ভ্যান গাল। প্রথম বছর শুরু করলেন উয়েফা কাপ জয় দিয়ে। সেবার লীগে রানার আপ হলেন, পরের বছর সম্ভাব্য ঘরোয়া সকল কাপ জিতলেও লীগে অল্পের জন্য হেরে যান। ততদিনে তাঁরই হাত ধরে আসা যুব একাডেমির সিডর্ফ, ডেভিডসরা আর নবাগত না। ৪-৩-৩ বা ৩-৪-৩ র ক্রুয়েফ ফর্মুলা থাকলেও উনার ডিফেন্স ছিল শক্ত বেশি। ডাচ মিডিয়া ডাকত ‘ট্যাকটিকাল টোটাল ফুটবল’, আক্রমণাত্মক খেললেও লাগামছাড়া আক্রমণে যেতেন না। এডজার ডেভিডস ছিল তার দলের আসল স্তম্ভ। চেলসির কান্তের খেলার সাথে ক্রুসকে মিক্স করলে যা হয় তাই ছিল ও । প্রত্যেকটা প্লেয়ার এটাক করতে পারত তবে এক্সট্রা ডিফেন্সিভ দায়িত্ব নিয়েই করতে হত।

দলটা দাড়ায়ে যাবার পর জাস্ট ছিড়েখুড়ে খেত, ৩৪ ম্যাচে ১১৬ গোল, এভারেজ তিন এর উপর। দলটার এভারেজ এজ ২৩ বছর। সেবার আয়াক্স লীগে আনবিটেন চ্যাম্পিয়ন , হল্যান্ডে তখন ভ্যান গাল ক্রেজ শুরু হয়েছে। তখনো চ্যাম্পিয়ন্স লীগে সেমির গেরো পের হতে পারেনি আয়াক্স। এর পরের বার গ্রুপ পর্বে বার্নাব্যুতে রিয়ালকে ২-০তে হারিয়ে জেতার আসল সংকেত দেয়। বার্নাব্যুর একটা সেকশন সেই আয়াক্সকে সুন্দর খেলার জন্য মাঠেই দারুন এপ্লড করে। সেবার বায়ার্নকে সেমিতে পায় আয়াক্স। ফার্স্ট লেগ এওয়ে তে টিপিকালি ভ্যান গাল ডিফেন্ডিং এ ০-০ ড্র হয় আর হোমে ৫-২ এ হারিয়ে ফাইনালে উঠে যায়। ফাইনালে কাপেলোর মিলান, যারা বার্সাকে চারটা দিয়ে ড্রিম টিমের পতন ঘটিয়েছে এই কেবল আগেরবারই। মালদিনি বারেসি আলবার্টিনিদের গড়া ডিফেন্স গোল খাওয়া ভুলেই গেছে।
ওদিকে সম্পূর্ণ নতুন দের দল আয়াক্স, এটাই প্রথম ফাইনাল সিডর্ফ, ভ্যান ডার সার দের। ভ্যান গালের ভাষায় ডিফেন্ডিং অন দ্যা বল স্ট্রাটেজিতে প্রায় একটা ঘ্যান ঘ্যানে ফাইনাল হচ্ছিল, বল আয়াক্সের পায়ে, গোল না খাওয়ার মরণপণে কেবল পাস আর পাস দিচ্ছে। সেই এডজার ডেভিডস মিলানের তারকা প্লেয়ার ডোনাডূনিকে বোতলবন্দী করে রাখছিলেন। সেই মিলান ডিফেন্সের কোস্তাকুর্তার সমস্যা ছিল শেষদিকে একটু স্লো হয়ে যেত। ভ্যান গাল এটা জানতেন, তাই স্টার্ট না দিয়ে ৭০ মিনিটে ইয়াং স্পিডি প্লেয়ার ক্লূইভার্টকে নামান আর ৮৫ মিনিটে তারই গোলে চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জেতে আয়াক্স। জয়রথ থামেনি তাঁর দলের, তার পরের বারও লীগ জিতে নেয় অবলীলায় আর আবারো চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ফাইনালে। এবার সবাই ধরেই নিয়েছিলেন যে, আয়াক্সই জিততে যাচ্ছে। পেনাল্টিতে হেরে যায় জুভেন্তাসের কাছে। ভ্যান গালের ভরসার প্রতীক সেই এডজারই মিস করেন পেনাল্টি। এই ব্যর্থতা আয়াক্স সহজে ভুলতে পারেনি। এরপরই ছন্দপতন আর পরের বছর লীগ হেরে কন্ট্রাক্ট শেষে ভ্যান গাল আয়াক্স ছাড়েন। ছাড়ার আগে আয়াক্স নাইটহুড পান তিনি। টানা তিনটা লীগ, দুটো চ্যাম্পিয়ন্সলীগ ফাইনাল , একটা উয়েফা কাপ আর ঘরোয়া সকল প্রকার কাপ জিতে বিদায় নেন তিনি।

এরপর আসেন বার্সায়। আরেক ডাচ ক্রুয়েফ-বিপ্লবের পর তিনবছর বার্সার লীগ ভাড়ে ভবানী। আয়াক্সকে তখন বার্সা চোখ বুজে ট্রাস্ট করে। ভ্যান গালকে রিয়াল বার্সা চোখে চোখে রাখলেও বার্সায়ই আসেন তিনি। একে লীগ মন্দা সাথে অদ্ভুতভাবে ফেনোমেনন রোনালদোর বার্সা ত্যাগ, সব মিলিয়ে বার্সা বিপদে। ভ্যান গাল সাথে নিয়ে আসেন আয়াক্সের রিজগার, ডি বোর দুই ভাইকে যারা ছিল তাঁর আয়াক্স সাফল্যের ভিত্তি। সাথে ছিল রিভালদোও। ডেব্যু সিজনে লীগ ও কোপা দেল রে ডবল আর সুপার কাপ জিতে শুরু, দুরাবস্থা কাটিয়ে বার্সা আবার সাফল্যের পথে। বেস্ট স্কোরিং আর ডিফেন্ডিং স্ট্যাট- দুইটাই বার্সার। কিন্তু বিপত্তি অন্য জায়গায় বাঁধল।
আমার কাছে মনে হয় ভালো কোচ হবার প্রথম শর্ত থাকা উচিত প্রেস এর সাথে খাতির রাখা। বার্সায় তাঁর ছিল ঠিক উল্টোটা, সাপে নেউলে খাতির। তার পরের বার আবার লীগ জিতলো তাঁর বার্সা। লা লীগায় টানা দুই লীগ, লিখে ফেলাটা সহজ কিন্তু সেই রিয়াল মাদ্রিদের মতো দলের সাথে ৩৮+৩৮=৭৬ ম্যাচের এক উপাখ্যান দুটো লীগ। কিন্তু তাঁর বদমুখো কনফারেন্স মিডিয়াকে তাতিয়ে রাখত, ফলাফল মিডিয়া প্রচার দিল তাঁর চ্যাম্পিয়ন্স লীগে ব্যর্থতাকে আর রিয়ালের চ্যাম্পিয়ন্সলীগ জয়কে। টানা লীগজয়ী কোচকে ধুঁকতে হত প্রেসে। তৃতীয় সিজনে রাফা বেনিতেজের ভ্যালেন্সিয়ার আশ্চর্য উত্থান হয়, লীগ জিতে নেয় ভ্যালেন্সিয়া। সুপার কাপ আর চ্যাম্পিয়ন্স লীগ দুটোতেই বার্সা বাদ পড়ে তাদের কাছে, কোপা ডেল রের সেমি ফোরফিট দেয় ফেডারেশনের সাথে ঝামেলায়।
ঐদিকে রিয়াল আবার চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জেতে! ফলাফল মিডিয়া চাপে বার্সা ছাড়তে হয় তাকে। আর সেই বিখ্যাত প্রেস ব্রিফিং ,“Congrats my press friends, i am leaving! Your job is done.” । উনি ছাড়ার পর বার্সা আবার লীগ জেতে পাঁচবছর পর, রোনালদিনহোর ছোয়ায়।
বার্সা ছাড়ার আগ পর্যন্ত কোচিং এর জ্বলজ্বলে তারা ছিলেন তিনি, তারপরই ছন্দপতন। হল্যান্ডের কোচ হন। অসাধারণ এক স্কোয়াড পেলেন। ক্লুইভার্ট, ডার সার, সিডর্ফ, ডি বোর, বার্গক্যাম্প দের নিয়েও বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করতে পারেন নি। যেটাকে তাঁর সবচেয়ে বড় অসফলতা বলাই যায়।

এদিকে ফার্গি তখন অবসর নেবেন বলে ভাবছেন। তাকে ম্যানইউতে ফারগুসনের রিপ্লেসমেন্ট ভাবা হচ্ছিল। ফার্গি শেষবধি থেকে যাওয়ায় ওনি আবার বার্সায় ফেরেন। সবার সেকেন্ড কামিং এটলিস্ট কাপেলো বা জোসের মত খানিক সুখেরও হয় না। চরম ব্যর্থ হন দ্বিতীয়বার বার্সায় এসে, রিভালদোকে লেফট উইং এ খেলানো নিয়ে ঝামেলা বাধিয়ে বেঞ্চ করেন তাঁকে। আসতে থাকে চরম বাজে ফলাফল, ছয়মাসও টেকেন নি এ দফায়। এরপর আয়াক্সে ফেরেন ট্যাকনিকাল ডিরেক্টর হয়ে, কোচ কোম্যানের সাথে ঝামেলায় সে পদও ছাড়েন। নিজের ভশ্মদশায় আবার যান প্রথম ক্লাব এজেড আলকমারে
সাধারণত ওই ক্লাবটি ইউরোপা লীগ খেলেই খুশি, মানে টপ ছয়ে থাকলেই খুশি। টানা দুই সিজনে তাঁদের রানার আপ বানান ভ্যান গাল। কিন্তু তৃতীয় সিজনে অবস্থা তথৈবচ, লীগে হন ১১তম। ততদিনে মরিনহো, রাফা বেনিতেজ দের মতো কোচের ক্রেজে তাঁর নাম উধাও। ১১ তম হওয়ার পর ক্লাব ছাড়তে চাইলেন। সিনেম্যাটিক স্টাইলে প্লেয়াররা অপোজ করলো, থাকতেই হবে তাঁর! এর পরের গল্পটাও মুভির মতোই। মৌসুমের শুরু হলো টানা তিন হার দিয়ে, এরপর থেকে একদম ৩৩ তম ম্যাচ অবধি অপরাজিত। ঘুণাক্ষরেও লীগ স্বপ্ন না দেখা এজেড তার ইতিহাসের দ্বিতীয় লীগ পেয়ে যায় ভ্যান গাল জাদুতে। এটাকে বলা চলে তাঁর রিবার্থ ট্রফি।
এবার বায়ার্ন মিউনিখ নিয়ে নিল তাকে। টাফ ডিসিপ্লিন দেখাতে গিয়ে লুকা টনিকে দ্বিতীয় দিনেই কলার চেপে ধরার কাহিনিও আছে তাঁর, বেঁচে দেন রোমার কাছে। নিয়ে আসেন রিয়াল ফ্লপ রোবেনকে। মুলার, ব্যাডস্টুবারদের যুবদল থেকে এনে টিমে চান্স দেন, শোয়ানস্টাইগারের মতো এভারেজ উইংগারকে মিডফিল্ডার বানিয়ে যেন ক্যারিয়ারই বাঁচিয়ে দেন। সেবার লীগে বেশ পিছিয়ে, চ্যাম্পিয়ন্স লীগ থেকেও যায় যায় করছে তাঁর বায়ার্ন। জার্মান মিডিয়া ছাড়পত্র দিয়েই দিয়েছে তাঁকে। নাটকীয় ভাবে জুভদের ৪-১ এ হারিয়ে গ্রুপপর্ব পেরোয়। এরপর টানা ভাল রেজাল্টে লীগ জিতে নেয়, সাথে জিতে নেন লীগ কাপ। আর ওদিকে ম্যানইউকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ফাইনালে উঠেন। সব ধারণার বাইরে গিয়ে ৬৫ ভাগ বল পজেশন নিয়েও হারতে হয় তাঁরই কারনে কোচ হওয়া জোসে মরিনহোর কাছে।

বায়ার্ন দারুন খুশি, লংটার্ম রাখবে ভাবছিল। কিন্তু ক্লপের ডর্টমুন্ডের উত্থান হয় সেবার, বায়ার্ন হলো থার্ড। আর ভ্যান গাল স্যাকড।
এরপর আবার হন হল্যান্ডের কোচ। এই স্কোয়াড সেই তাঁর আগের ০০-০২ এর পাঁচভাগের একভাগও না, তবে নয়ম্যাচ জয় আর এক ড্র তে বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করে। আর সেখানে ভাবনাতীত পারফর্মেন্সে স্পেনকে ৫-১ এ উড়িয়ে দিয়ে তাঁদের উপস্থিতি জানান দেয়। উঠে যায় সেমিতে, সেখানে আর্জেন্টিনার কাছে পেনাল্টিতে বাদ।

এরপর আসেন ম্যানইউতে। ততদিনে তাঁকে ভাবা হচ্ছিল ম্যানইউতে সুদিন ফিরায়ে আনবেন। কিন্তু ফারগুসনের ফাস্ট এটাকিং ফুটবলে অভ্যস্ত ফ্যানরা ভ্যান গালের স্লো ফুটবলকে পছন্দ করছিলেন না। সাথে মিডিয়ার ঝামেলা তো আছেই। দুই বছরে তাঁর ম্যানইউ ক্যারিয়ারে সাকল্যে অর্জন একটিও এফ এ কাপ। জোসে মরিনহোকে জায়গা করে দিতে তাঁকে ক্লাব ছাড়তে হয়। আর ততদিনে ইন্টারনেটে সহজলভ্য ট্রলের শিকার হতে থাকা এই কোচকে আধুনিক প্রজন্মের অনেকে যেন ধরেই নেয় অসফল, কাঠখোট্টা এক ঘাড়ত্যাড়া বুড়ো হিসেবে। আসলেই কি তাই?
কিছু কোচ আছে প্লেয়ারদের স্টাইল মাফিক এডাপ্ট করে, ভ্যান গাল খানিক উল্টা। সর্বোচ্চ চেস্টা করে প্লেয়ারকে এডাপ্ট করাতে। ফার্গি ৪-৪-২ আমলের লোক হয়েও সময়ে সময়ে ৪-৪-১-১, ৪-৩-৩, ৪-২-৩-১ সবই খেলিছেন। এডাপ্টাবলি থাকার কারনেই সাফল্য নিয়েই সরতে পেরেছেন। ভ্যান গানের সাম্প্রতিক ব্যর্থতার দুইটাই কারণ। ১। এডাপ্ট করতে না পারা ২। My way or highway নীতি । ভালদেস , জাভি , পুয়োল, ইনিয়েস্তা, মুলার সহ প্রচুর ইয়ং প্লেয়ার যেমন তুলেছে তেমনি জাস্ট ঘাড়ত্যাড়ামো করে রিভালদো, রিবেরি, মারিয়া এমন অনেকের চোখের বিষ হয়েছেন । কিছু জিনিস আপনি অস্বীকার করতে পারবেন না, তার সাফল্য।
চারটা দেশে টোটাল ২০টা ট্রফিজয়। তিনটা দেশে টোটাল সাতটা লীগ, তিনটা চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ফাইনাল, বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল আর প্রচুর ইয়ং ট্যালেন্ট তোলা । বাস্তবতা হলো, আজ আপনি যে কোচের জন্য লাফাচ্ছেন তারও পতন হবে বেশ শোচনীয়ই, প্রায় সবারই তা হয়। ব্রায়ান ক্লো থেকে সাচ্চি, ফার্গি বাদে সবারই প্রায় একই দশা। ভ্যান গালের জাস্ট এটাই হয়েছে। আজ সিমিওনে গ্রেট কোচ,এলেগ্রি বা পচেত্তিনোরাও আজ সবার চোখে অসাধারণ। কি অর্জন তাঁদের? ক্যারিয়ারের শুরুতে ভ্যান গালের কি এর চেয়ে কম ছিল? আজ থেকে বিশবছর পরে তারা কি ট্রলড হবেনা শিওর আপনি? রাইকার্ড বা ডি মাত্তেওরা কোথায়? একটা ফটো এডিটিং সফটওয়ার আর এমন সোশ্যাল মিডিয়া থাকলে আগের অনেক লিজেন্ড কোচই ভালভাবে অবসরে যেতে পারতনা। নিশ্চিত বলে দেয়া যায়, ফার্গি বাদে এমন সুষম ধারাবাহিক সাফল্য পেয়ে অবসরে কেউ যেতে পারবে না। না কন্তে , পেপ , জোসে , ওয়েঙ্গার কেউ ।
আজ যাকে ট্রল করছেন, একটা সময় তাদের ক্রেজ ছিল। আজ যে ভিলেন, তার কোন না হিরোইকসের জন্য একসময় অনেক ফ্যান উদ্বাহু নেচেছে, গর্বিত হয়েছে। ভ্যান গাল এমনই একজন।